এটা এক সৌদী আমেরিকান তরুণীর সাথে আমার ছোটখাট বন্ধুত্বপুর্ণ ক্যাচাল। কিছুদিন থেকে আমি সকালর পরিবর্তে দুপুরের খাবার খেয়ে হাঁটতে বের হচ্ছি, সকালে মানুষ কাজে যায়, রাস্তায় অনেক গাড়ী, ধুয়া সহ্য হচ্ছে না আমার; দুপুরের দিকে রাস্তায় গাড়ী কম। আমি আমার বাসার উত্তর পাড়ায় হাঁটি, এদিকে ফুটপাতগুলো প্রশস্ত ও ভালো; দক্ষিণ পাড়ায় হেসিডিক ইহুদীরা থাকে, স্বামীগুলো কাজে যায়, বউয়েরা সারাক্ষণ রাস্তায় আড্ডা দেয়, ট্রলার ম্রলার নিয়ে হাঁটে, ফুটপাথ ব্লক করে রাখে।
সেদিন, এক ব্লকের মাথা থেকে দেখছি একটা মেয়ে সাইকেলে আমার দিকে আসছে, তার সাইকেলের সামনের চাকার কাঁপুনি ও তার শরীরের পজিশন দেখে আমি দুর থেকেই বুঝলাম যে, উহা সাইকেল শিখছে; আমি পাশ করে দাঁড়ালাম, চলে যাক। সে কাছে আসার আগের থেকেই চীৎকার করে বলছে, "আমাকে ধর, আমাকে ধর, আমি পড়ে যাচ্ছি"।
আমি ধরলাম, একহাতে বাইকের স্টিয়ারিং, অন্যহাতে তার বাহু; ভীষণ মোমেন্টাম ছিলো; যাক, সে পড়েনি; আমাকে ধন্যবাদ দিলো, তারপর আমাকে বললো,
-এই, তুমি আমার গায়ে হাত দিয়েছে কেন?
-তুমি না কাউ কাউ করছিলা, আমাকে ধর, আমাাকে ধর?
-তা তুমি বাইক ধরবা, আমার গায়ে কেন হাত দিয়েছ?
-গা বলতে যা বুঝায়, আমি সেই রকম কোন এলাকায় ধরিনি, আমি তোমার বাহু ধরেছি!
-আমি সৌদী মেয়ে, আমার বাহু ধরাও নিষেধ! জান, এজন্য সৌদীতে অনেক শাস্তি দেয়?
-এটা সৌদী না!
-শোন, আমাদের নিয়ম বদলায় না, আমরা আরব; আমরা আমেরিকা বা লন্ডনে গেলেও পরিবার চায় যে, আমরা সৌদী আরবের মতো থাকি।
-তোমার বয়কাট চুল দেখে তোমাকে মেয়ে বলে মনে হয়নি আমার কাছে!
-এখন তুমি আমাকে রাগিয়ে দিচ্ছ!
-আমি তোমার সৌন্দয্য সম্পর্কে বলছি না, তুমি অনেক সুন্দরী; তোমার চুল দেখে দুর থেকে বুঝা মুশকিল, তুমি ছেলে না মেয়ে!
-এবার কিছুটা ঠিক বলেছ; তবে, তুমি বোধ হয় চোখে কম দেখ! চুল ব্যতিতও কোন মেয়েকে মেয়ে বলে বুঝা যায়; তুমি কোন দেশী?
-বাংলাদেশী!
-অনেক ভালো, অনেক ভালো; রিয়াদে আমাদের বাসায় এক বাংলাদেশী কাজ করে, আমি তাকে ভালোবাসি, সে খুবই ভালো।
-ওকে ছেড়ে এখানে এসেছ কেন, ওকে বিয়ে করে সুখী হলে পারতে!
-শোন, ঐলোকটার বয়স ৫০'এর উপরে, আমাদের ঘরের কাজে সাহায্য করে, আমি তার প্রেমে পড়িনি, ওর স্বভাব ভালো, আমাদের সাথে সম্পর্ক ভালো, সেটা বলছিলাম।
-এখানে কি করছ?
পড়তে এসেছি; আমার চাচার বাসায় থাকি; সৌদীতে আমাকে সাইকেল শিখতে দেয়নি, আজকে শিখছি। তুমি ব্যস্ত?
-না, আমি ব্যস্ত না।
তা'হলে, আমাকে সাহায্য কর, আমি বাইকে উঠি, তুমি ঠেলে দাও; ঐ পাশে আমার কাজিন আছে, সে আমাকে সাহায্য করছে; তুমি এখানে থাক, আমি ফিরে আসবো, ফিরে এলো, দরকার হলে আবারো ধরবা।
-ঠিক আছে; বাহু ধরা যাবে তো?
-না, আমাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করো না।
সে ৫/৬ বার আসার পর, মোটামুটি সহজ হয়ে গেছে; শেষবার কাছে আসতে আমি বললাম,
-আস্তে আস্তে ব্রেক কর।
সে কড়া ব্রক করলো, পড়ার আগে আমি তাকে ধরে ফেলেছি; সে লাফাতে লাগলো:
-আমি শিখে ফেলেছি, আমি শিখে ফেলেছি!
-এবার নিজে নিজে চেষ্টা করো।
-আমাদের বাসায় এসো, ২০২ নম্বর বাসা; আমি আমি স্প্রিং'এ স্কুলে যাবো; এখন ফ্রি আছি।
-আমি তোমাদের বাসায় গেলে, তোমার চাচা আমাকে কাবাব বানাবে!
-হেই, আমরা আরব, আমরা মেহমান ভালোবাসি, আমরা কাউকে কাবাব বানাই না।