সোস্যালিজম, রাজনীতি ও অর্থনীতির সমন্ময়ে গঠিত একটি রাজনৈতিক তত্ব,যার সংক্ষপিত ধারণা হলো, দেশের সামাজিক অর্থনীতির সদস্য হিসেবে একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার অন্যদের সমান থাকবে; এরপর, নাগরিক নিজের অবদানের সামানুপাতে ভোগ করবেন; এই ডেফিনেশনটা মার্কস ও লেনিন থেকে একটু আলাদা; তবে, সঠিক। যিনি সোস্যালিজমে বিশ্বাস করেন, তিনি সোস্যালিস্ট মনোভাবের মানুষ।
কম্যুনিজম আসলে সোস্যালিজমের উপরের স্তর; এটা ছিল থিওরিটিক্যাল; কারণ, কোন দেশ এই তত্বানুসারে চলেনি; কম্যুনিজমও রাজনীতি ও অর্থনীতির সমন্ময়ে গঠিত জ্ঞান-ভিত্তিক সমাজের রাজনৈতিক তত্ব; যেখানে সমাজ জ্ঞান, অর্থনীতি ও টেকনোলোজীর সমন্ময় ঘটায়ে মানুষের জীবনের মান উন্নত করবে, মানুষের মৌলিক অধিকার সমান থাকবে; এরপরও মানুষ নিজের প্রয়োজন অনুসারে ভোগ করবেন; এটা মার্ক্সের থিওরী; এটা তিনি কোথায়ও এক বাক্যে বলেননি, "ডাস ক্যাপিটেল" বইয়ের সারমর্ম থেকে এটা বুঝা যায়।
কম্যুনিস্ট পার্টির সদস্যদের কম্যুনিস্ট বলা হয়েছে, যদিও বিশ্বে কোন দেশে কম্যুনিজম আসেনি। সেদিক থেকে প্রাক্তন সোভিয়েতের কম্যুনিস্ট পার্টির সদস্যদের সোস্যালিস্ট বললে আরো সঠিক হতো। চীন সোস্যালিজমকে উগ্রভাবে প্রয়োগ করেছিল; এর পেছনে কারণ ছিলো জাতি হিসেবে তারা বেশ নির্দয়।
আমাদের দেশে, সাধারণ মানুষ কোনটা সোস্যালিজম, কোনটা কম্যুনিজম, তেমন বুঝেন না; ফলে, টার্ম ২টিকে অদলবদল করে চালিয়ে যান। মানুষ ভুত না দেখেও ভুতের ভয়ে থাকেন; তেমনি বাংলাদেশের মানুষ সোস্যালিজমকে ভয় পেয়ে থাকেন; যেখানে দারিদ্রতা নির্মুলের জন্য সোস্যালিজম খুবই কার্যকর, সেখানে দরিদ্ররাই সোস্যালিজমকে বেশী ভয় পায়, ও সোস্যালিজমের বেশী বিরোধীতা করেন; কারণ কি?
একটি মুল কারণ, শিক্ষা ও জ্ঞানের অভাব; অন্য কারণ হলো, সোস্যালিজম ও ধর্ম নিয়ে ভুল ধারণা। কোন কারণে, আমাদের মানুষদের ধারণা হয়ে গেছে যে, সোস্যালিজম মানুষের ধর্মীয় অধিকার কেড়ে নেয়, এবং নাস্তিকতার বিস্তার ঘটায়। এটা কিভাবে প্রাক্তন ভারতে প্রবেশ করলো?
মার্ক্স ধর্ম নিয়ে বলতে গিয়ে, ধর্মকে আফিমের সাথে তুলনা করেছেন; সেটার কোন সম্পর্ক নেই সোস্যালিজমের সাথে। মার্ক্স ব্যক্তিগতভাবে ধর্মের প্রভাবকে পছন্দ করতেন না; "ডাস ক্যাপিটেল" না লিখলেও, ধর্ম নিয়ে উনার ধারণা ঐ রকমই থাকতো। আবার, অনেক দেশের সোস্যালিস্টরা মনে করতো যে, ধর্ম সাধারণ মানুষকে রাজতন্ত্রের প্রতি আস্হাশীল করে; কারণ, সব ধর্মের উৎপত্তি হয়েছে রাজতন্ত্রের সময়। আসলে সোস্যালিজম, রাজনীতি, সামাজিক ও অর্থনীতির সমন্ময়ে একটি তত্ব, যাহা রাজনীতির বিবর্তনের ফল মাত্র।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ৭:৫৮