ভুলোদা আমাদের স্কুলের একমেবাদ্বিতীয়ম আদুভাই। ঠিক কয় বছর স্কুলের গরাদে আটকে আছেন সেটা ভুলোদারও মনে নেই। নবম শ্রেণীতে উঠেই আমরা ভুলোদাকে পাই। আমরা মানে, আমি, মধু, করিম ও নীল। ভুলোদা সমেত পাঁচ রত্ন!
একই এলাকায় থাকার সুবাদে একসাথে চলাচল শুরু হয়। সঙ্গে চা পানের মতোই লুকিয়ে-চুরিয়ে সিগারেট পান । লিডার ঐ ভুলোদাই । চায়ের দোকানের এদিকটায় তেমন লোকজন আসে না। সুতরাং স্যারেরও ভয় নেই। এমনিই এক দিনে গল্প হচ্ছে। যথারীতি ভুলোদা তার কথার তোড়ে পপকর্ণ ফুটিয়ে দিচ্ছেন।
"স্কুলের ক্লাসগুলো একেকটা তলা। আমার হাইট একটু কম হওয়ায় ৯ তলায় লাফ দিতে সময় লাগলো। শাহেদ তো লম্বা ঢ্যাঙা সহজেই ৮ তলা পেরিয়ে যায়। আর মধু তো মোটাসোটা ওই পেটটা ফুলিয়েই উড়ে যায় ", ভুলোদার কথার গাড়ি চলছে। মধুই আটকালো। "আচ্ছা ভুলোদা, নীল কিভাবে ওপর ক্লাশে যায়? ওর হাইট তো তোমার মতোই "। ভুলোদা কটমট করে তাকান। আমরা চুপ মেরে যাই।
"বিল মিটিয়ে দে। আজকেও মানিব্যাগটা হোস্টেলেই রেখে এসেছি ", ভুলোদার আদেশ অমান্য করা আমাদের কম্ম নয়। "বাঃ কবেই আনলে তুমি! ", বলে মধুই বিল মিটিয়ে দেয়। আমরা উঠি। সবার অলক্ষ্যে মধুর পিঠে একটা কিল পড়ে। চায়ের দোকানে বচসা ভালো না।
সেই ভুলোদা কিভাবে ১০ তলা বিল্ডিংকে এক মোক্ষম প্যাঁচে ফেলে কলেজ উপড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলো সে এক রূপকথাই। এরপর বিভাগীয় প্রথম হয়ে যখন স্কলারশিপ বাগিয়ে ফেললো, তখন কলেজ ফেল নীল সুদ্ধ হা। তারপর বহুদিন আর দেখা নেই। করিম বিসিএস দিলো। আমি এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। মধু শুরু করলো ব্যবসা।
স্কুলের এক পুনর্মিলনীতে ভুলোদার সঙ্গে আবার দেখা। রূপবতী স্ত্রী এবং পুত্র সমেত। আমরা সবাই আবারো হা।" ভুলোদা দেখছি এখানেও গোল দিয়ে বসে আছে!", আমিই বলি। পুরনো দিনের স্মৃতিচারণা শুরু হয় । এই কথা সেই কথার মাঝেও ভুলোদা চুপচাপ। "ব্যাপার কি ভুলোদা! কথা বলছো না কেন? " করিম শুধোয়। ভুলোদা শুরু করেন।
ভালোই এগোচ্ছিলো। বাগড়া দিলেন মিসেস ভুলো স্বয়ং। "এখানেও রাজাউজির মারতে শুরু করেছ! "। ভুলোদা স্পিকটি নট হয়ে উঠে যান।"ভুলোদা গোলটা তাহলে নিজের জালেই..... ", মধু বলতেই আমরা হেসে উঠি। বেচারা ভুলোদা!
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০২০ সকাল ৮:০৮