এই পোস্টটা গতরাত্রে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু (খুব সম্ভবত) এডিট করতে গিয়ে নেটওয়ার্ক সমস্যার কারনে পোস্টটি মুছে যায়। এখনও প্রাসঙ্গিক বিধায় এটা আবার দিচ্ছি। আগের পোস্টে পক্ষে- বিপক্ষে যারা মন্তব্য করেছিলেন তাদের কাছে আন্তরিক দু:খ প্রকাশ করছি।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
গত দুই বছর ধরে একটা ব্যাপার লক্ষ্য করছি এই ব্লগে। সামুতে বিশেষ কয়েকটা দিনে ব্লগের ড়াজাকার নিকগুলো খুবই তৎপর হয়ে উঠে। দিনগুলো হল ৭ই মার্চ, ২৬ শে মার্চ, ১৫ই আগস্ট, ১৪ ও ১৬ ডিসেম্বর ইত্যাদি। প্রতিটা দিনের সাথেই আমাদের বাঙ্গালী জাতির আবেগ ভীষন-ভাবে জড়িত। আজ সেই বিশেষ দিনের একটা। আজ শোকাবহ ১৫ই আগস্ট।
কিন্তু এই বিশেষ দিনগুলোতে অসংখ্য অপরিচিত নিক শুরু করে নোংরা পোস্ট ও কমেন্ট দেয়া। এবং সেই কুৎসিত পোস্ট/কমেন্টের ভাষা ঠিক একরকমই থাকে প্রতি বছর। শুধু নিক পরিবর্তন হয়। সময় যায় কিন্তু নোংরামির শেষ হয়না। ব্লগাররা নিশ্চয়ই এতক্ষনে লক্ষ্য করেছেন যে আজও নানাও উস্কানিমূলক পোস্ট আসছে একের পর এক।
গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় থেকে ১৫ই আগস্টে ফ্যসিবাদী জামাত শিবির নতুন এক ফাজলামি শুরু করেছে। সেটা হল এইদিন নাকি তাদের শিক্ষা দিবস। যেটা ২ বছর আগেও রাজাকার/ আলবদর ছাড়া কেউ শোনে নাই।
আর খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সাল থেকে তার জন্মদিন ১৫ই আগস্টে পালন করে আসছেন।
এই বিষয়ে প্রমানসহ আরেকটি পোস্ট দিয়েছিলেন ইফতেখার আমার ব্লগে। সেটি আমি সামুতে কপিপেস্ট করেছিলাম - তাই এই ব্যপারে আর বিস্তারিত বলছি না এই পোস্ট। বিডিনিউজে পড়লাম এইবারের ৬৫ পাউন্ড ওজনের জন্মদিনের কেকের খবর।
খালেদা জিয়া সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মাননি....এসেছিলেন একদম সাধারন একটা পরিবার থেকে। কিন্তু ক্রমান্বয়ে তিনি জনমানুষের ২ মূল নেত্রীর একজন হয়ে উঠেছিলেন এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময়.... কিন্তু যে জাতির জনকের ঔদার্যে একদিন তার সংসার রক্ষা পেয়েছিল আরও অনেক পরিবারের মত, তাঁরই শাহাদাত দিবসে নিজের জন্মদিনকে নিয়ে এসে পালন করা - কতটা নীচ মানসিকতা ধারন করলে একজন মানুষ এই কাজটা করতে পারেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এখন তিনি জনমতকে কতটা তুচ্ছ করেন তা বুঝা যায়, এত লেখালেখি এত প্রমানের পরও এই পরিবর্তিত জন্মদিন পালনে তার আনন্দিত মুখ দেখে।
যাই হোক আমি আমার অন্তরের অন্তস্থল থেকে ১৫ আগস্ট শাহাদাত বরনকারী সবার আত্মার শান্তি কামনা করি। আর ঘৃনা জানাই সেই মানুষরুপী পশুদের যারা এমন একটা সময় নিয়েও ফাজলামো ইতরামো করতে পারে।
ঠিক এই প্রসঙ্গে সুব্লগার আরিফ ভাইয়ের (আরিফ জেবতিক) একটা পোস্ট পড়েছিলাম গতবছর। সেটি নিচে পাঠকদের জন্য দিচ্ছি।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
১৫ আগস্টকে দখল করতে আর কী কী ইতরামি করা যেতে পারে?
- আরিফ জেবতিক
পারিবারিকভাবে আমাদের মাঝে বিএনপির সাপোর্টার কম ছিল না । যে মহল্লায় বেড়ে উঠেছি সেখানেও বিএনপির সমর্থকরাই সংখ্যায় অনেক বেশি ছিলেন । সুতরাং জীবনের শুরু থেকেই বিএনপি পরিমন্ডলের সাথে আমার যোগাযোগ ছিল । ছাত্র জীবনে নিজেও ছাত্রদল করেছি , মফস্বল শহরে যতোটুকু করা যায় তারা পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলে রিজভী ভাই -ইলিয়াস ভাইয়ের কাউন্সিলের আগেও অনেক খাটাখাটনি করেছি । এই দীর্ঘ সময়ে কখনোই খালেদা জিয়ার জন্মদিন যে ১৫ আগস্ট সেটা কোথাও বলা হয়েছে বলে স্মরণ করতে পারি না ।
কিন্তু পরবর্তীতে কিভাবে যেন ধীরে ধীরে খালেদা জিয়ার জন্মদিন হিসেবে ১৫ আগস্টটা মিডিয়ায় আসতে থাকল । গত কয়েক বছর তো দেখতাম ঢাকা শহরের সব বড়ো বড়ো কেকের দোকানগুলো ১৫ আগস্ট এলেই ব্যস্ত হয়ে পড়ত এমপি মন্ত্রীদের কেকের অর্ডার নিতে । মির্জা আব্বাস সাহেব নাকি একমন ওজনের বেশি কেক কেটেছিলেন একবার , সেটাও আবছা ভাবে মনে পড়ছে ।
এই হচ্ছে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ।
আমি বলছি না যে ১৫ আগস্ট কেউ জন্মাতে পারবেন না । খালেদা জিয়ার জন্মদিনও ১৫ আগস্ট হতেই পারে ,যদিও ব্যাপারটা উনি নিজেই বোধহয় জানতেন না , অন্তত প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সময়ও উনি জানতেন না যে উনার জন্মদিন ১৫ আগস্ট , উনি সেটাকে ১৯ আগস্ট হিসেবেই লিখেছিলেন ।
কিন্তু বয়েস বাড়ার সাথে সাথে উনার মনে পড়েছে যে উনার জন্মদিন আসলে ১৫ আগস্ট । হতেই পারে এটা , আমি খারাপ হিসেবে দেখি না । কিন্তু্ এটাও মনে রাখতে হবে যে ১৫ আগস্ট আমাদের জাতির জীবনে একটি বেদনাবিধূর দিন , একটি কলংকিত অধ্যায় ।
শেখ মুজিব এবং তার পরিবারের করুণ মৃত্যুতে আমি শোকগ্রস্ত না হতে পারি , কিন্তু এটা যে কলংকিত একটি পর্ব সেটাকে অস্বীকার করার কোন জো নেই ।
এরকম একটা জাতীয় দিবসে হইচই করে নিজের জন্মদিন পালনে খালেদা জিয়া এবং উনার চামচাদের উৎসাহ মনের মাঝে বমি উগলানো ঘৃণার জন্ম দেয় আমার ।
মজার ব্যাপার হচ্ছে জামাতিরা দেখছি এখন একই ভাবে ১৫ আগস্টকে তাদের দখলে নেয়ার জন্য জোটবদ্ধ চেষ্টার বাইরে আরেকটা চেষ্টা শুরু করেছে । সেটা হচ্ছে শহীদ আব্দুল মালেক দিবস!
এই বস্তুটির কথা আগে জানা ছিল না , এটা এবছরই জানতে পারলাম । ৬৯ সালে উনি মারা গিয়েছিলেন , মারা যাওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চাই না , শিবির অধ্যূষিত ক্যাম্পাসগুলোতে বা শিবিরের সংস্পর্ষে যাদের অভিজ্ঞতা আছে ,তারা বিষয়টি আন্দাজ করতে পারেন । ডাকসু আয়োজিত অনুষ্ঠানে গুন্ডামি করতে গিয়ে উনার মৃত্যু হয়েছে বলে তখনকার এক ছাত্রনেতা আমাকে জানালেন আজকে । সেটা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার হতে পারে , কিন্তু শিবিরের আরো অনেক লোকের মৃত্যুর মাঝে আব্দুল মালেক হঠাৎ করে আজকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলেন তার একটা সৌভাগ্যের জন্য । উনি ১৫ আগস্ট মারা গিয়েছিলেন ।
সুতরাং শিবিরের কাছে আজ হচ্ছে '' ইসলামী শিক্ষা দিবস ।" সুবহানাল্লাহ , এই দেশে ইসলামী শিক্ষা কায়েক হোক , আমার বলার কিছু নেই ।
প্রশ্ন হচ্ছে এই যে ইতরামির রাজনৈতিক সংস্কৃতি আমাদের মাঝে জন্ম নিয়েছে গত কয়বছর ধরে , এর শেষ কোথায় ?
এখন আওয়ামীলীগের একটা ১৫ আগস্ট আছে , বিএনপি'রও একটা আছে , জামাতিদেরও দেখা যাচ্ছে একটা আছে । তাহলে বাকী দলগুলো কী করবে ?
জাতীয় পার্টির জন্য একটা ১৫ আগস্ট , কমিউনিস্ট পার্টিদের জন্য একটা ১৫ আগস্ট , এলডিপি মার্কা দলগুলোর একটা ১৫ আগস্ট , ইসলামী ঐক্যজোট আর ইসলামী শাসনতন্ত্র-খেলাফত মজলিশ-চরমোনাই অলাদের ১৫ আগস্ট , নবগঠিত পিডিপি-কল্যানপার্টি-১/১১ বাস্তবায়ন পরিষদ অলাদের ১৫ আগস্ট ...এভাবে অনেকগুলো ১৫ আগস্টের প্রয়োজন পড়বে নিকট ভবিষ্যতে ।
একজন দর্শক হিসেবে আমি ভেবে পাচ্ছি না , আর কোন কোন ইতরামির মাধ্যমে সেই দিবসগুলোকে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে ।
দেখা যাক । ভবিষ্যতই শুধু এর জবাব দিতে পারবে ।