এ প্রযুক্তির মাধ্যমে হাজার হাজার আলোকবর্ষ দুরের পথ পাড়ি দেয়া যাবে কয়েক মুহূর্তের মধ্যে
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
সাল ৪১২০, পৃথিবী। কয়েক মাস হয়ে গেল নানান ব্যস্ততার জন্য জেনি দেখা করতে পারছে না তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু রউ-এর সাথে। আজ জেনির ছুটি। এই সুযোগে সে দেখা করে আসবে রউ-সাথে। ঘরের পাশে থাকা এক বিচিত্র যানের মধ্যে বসলো জেনি। মেশিনে তার দেয়া আছে পুরো মহাবিশ্বের মানচিত্র। ৭৮০ আলোক বর্ষ দূরে থাকা “ফুসচ” গ্রহের নাম চেপে জেনি অপেক্ষা করছে মেশিন চালু হবার। হঠাৎ করেই সে গায়েব !!
কয়েক মিনিট পর, “ফুসচ” গ্রহের স্পেসস্টেশন। “ স্বাগতম জেনি, ফুসচ গ্রহে তোমাকে স্বাগতম”
ঘটনা না খুব অদ্ভুত ও অবাস্তব মনে হলেও হয়তো দুই হাজার বছরের মধ্যে এমন প্রযুক্তিই আমাদের চিরাচরিত সমাজ ও জীবন ব্যবস্থাকে বদলে দিবে। আর প্রযুক্তিটির নাম “ কোয়ান্টাম ট্রান্সপোর্টেশন” ।
প্রথমে একটা বিষয় বুঝিয়ে বলি। যা প্রতিটি পদার্থের ভিতরে প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে।
ধরুন, আপনার হাতের পাশে থাকা একটা গ্লাসে পানি আছে। কিছুক্ষণ পর তৃষ্ণার ওজুহাতে হয়তো এই পানিই আপনার পেটে জায়গা করে দিবে। আমরা সবাই জানি এই পানির মৌলিক উপাদান হচ্ছে ২ অনু হাইড্রোজেন ও এক অনু অক্সিজেন। এখন আরও ভিতরে প্রবেশ করি। এই হাইড্রোজেন বা অক্সিজেন এর পরমানু তৈরি হয় ইলেকট্রন, নিউট্রন ও প্রোটন দিয়ে। আরও ভিতরে যাওয়া যাক, যা কিনা এই সব ইলেকট্রন, প্রোটনকেও রূপ দিয়েছে। সেই জগতটি হল অতি-পরমানুর জগত। এ জগতে প্রতিটি অতি-পরমানুগুলো কিছু মুহূর্তের জন্য অস্তিত্ব পায় আর হঠাৎ উধাও হয়ে যায়। আবার হঠাৎ অন্য কোন জায়গায় আবার একে দেখা যায়।
ঘটনাটি কি শুধু গ্লাসের পানিতেই হচ্ছে তা নয় এই ধর্ম আছে মহাবিশ্ব-এর প্রতিটি জিনিসের মাঝে, আপনার মোবাইল বা পিসির স্ক্রিন থেকে আপনার শরীরের প্রতিটি অংশ পর্যন্ত।
এখন হয়তো আপনার কাছে প্রথম যে প্রশ্নটা আসবে তা হল “ তাহলে ঐ অতি-পরমানুগুলো উধাও হয়ে কোথায় যায় ? আমাদের মতো কি আরেকটা জগত আছে?”
উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ। যাকে বিজ্ঞানীরা বলে “প্যারালাল ইউনিভার্স” তবে ওটা কোন অন্য রকম জগত না। ঐ জগতটা ( বা জগতগুলো ) ঠিক আমাদের জগতের মতোই। ঠিক যেন আয়না।
“তাহলে কি আমরা একসাথে একাধিক দুনিয়াতে আছি ?”
উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ। প্রতিটি পরমানু থেকে বড় বড় গ্রহ সবই একসাথে একাধিক জগতে অস্তিত্বময়।
এখন হয়তো প্রশ্ন আসতে পারে “এই বিষয়ের সাথে হাজার হাজার আলোক বর্ষ পাড়ি দেয়ার কি সম্পর্ক? ”
উত্তরটা বেশ জটিল। তবে আমি চেষ্টা করছি উদাহরণ দিয়ে বুঝাতে।
ধরি, প্যারালাল ইউনিভার্স মোট ২ টা। এখন প্রথম ইউনিভার্স এ একটা অতি-পরমানু চলে গেল দ্বিতীয় ইউনিভার্স এ।
০.০০০০০০০১ সেকেন্ডের মধ্যে সেটা আবার চলে আসলো প্রথম ইউনিভার্স এ। কিন্তু এখন মাত্র ১২ ন্যানোমিটার দূরে এটা ফিরে আসল। অর্থাৎ কোন দূরত্ব অতিক্রম না করেই অতি-পরমানুগুলো এই যাত্রা সম্পন্ন করতে পেড়েছে। যেখানে দ্রুততার নায়ক আলোকেও পথ পাড়ি করে আসতে হবে নতুন জায়গায়।
“তাহলে কি আলোর গতি থেকেও দ্রুত ?”
অবশ্যই না। আমরা জানি আলোই সবচেয়ে গতিময়। আর অধিকাংশ বিজ্ঞানীরাই এটা মানবে। আর যেখানে প্রশ্ন দ্রুততার, আলো কখনোই কোয়ান্টাম ট্রান্সপোর্টেশনের সব্জাতি নয়। কেননা কোয়ান্টাম ট্রান্সপোর্টেশন ঘটে কোনরকম গতি ছাড়াই আর আলোকে অতিক্রম করতে হয় স্থানের।
“ কি কি লাগবে কোয়ান্টাম ট্রান্সপোর্টেশন এর জন্য ?”
কোয়ান্টাম ট্রান্সপোর্টেশন এর জন্য আমাদের আগে নিয়ন্ত্রন করতে হবে কোয়ান্টাম ট্রান্সপোর্টেশন-এর পোর্ট। অর্থাৎ যে পথ ধরে এই অতি-পরমানু গুলো প্যারালাল ইউনিভার্স এ যাত্রা করতে পারে। এর আগ পর্যন্ত এটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
ধরুন, মানুষ এখন কোয়ান্টাম ট্রান্সপোর্টেশন করতে পারে তবে নিয়ন্ত্রন করতে পারে না কোথায় যাবে সেটা। ধরুন একটা নভোযান তৈরি করা হল যেটা যেকোন তাপমাত্রাকে সহ্য করতে পারবে। মেশিনটি মহাবিশ্বে ছেড়ে দেয়া হল কিন্তু দেখা গেল যানটি কোন ব্লাকহলের মধ্যে পরে গেল বা কোন গ্রহের কঠিন কোন স্থানে । তখন না সেটা ফিরে আসতে পারবে আর কোটি কোটি ডলারের প্রোজেক্টও বিফলে যাবে
তাই প্রথমে আমাদের কোয়ান্টাম ট্রান্সপোর্টেশন এর পোর্টকে নিয়ন্ত্রন করতে হবে। আর মহাবিশ্বের যে জায়গাই যাই না কেন আমাদের উদ্ঘাটন করার ক্ষমতা থাকতে হবে কোন স্থানে আমরা আছি।
“এর প্রযুক্তি আসার জন্য ২ হাজার বছর লেগে যেতে পারে!! কেন?”
উদ্ভাবন সময় বুঝে আসে না। এমনও হতে পারে আগামীকাল পত্রিকা খুলে দেখবেন কোয়ান্টাম ট্রান্সপোর্টেশন এর পথ মানুষ পেয়ে গিয়েছে। তবে এখনকার সমাজ এই প্রযুক্তির জন্য কতটা প্রস্তুত তা আসলে একটা চিন্তার বিষয়। আর কোয়ান্টাম ট্রান্সপোর্টেশন উদ্ভাবনের সাথে সাথে আমাদের পুরো মহাবিশ্ব-এর ম্যাপ, যেকোন আবহাওয়াতে মানানসই নভোযান, এক বৈশ্বিক শক্ত অর্থনৈতিক ক্ষমতা লাগবে এই প্রযুক্তিতে বাস্তবে নিয়ে আসার জন্য ও সার্বক্ষণিক সহযোগিতা দেয়ার জন্য।
এক সুন্দর ভবিষ্যতের আশার বিদায় জানাচ্ছি। ধন্যবাদ।
ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্লগঃ
ভবিষ্যৎ পৃথিবী (পর্ব-১) ( ২০১৩ থেকে ২২০০)
ভবিষ্যৎ পৃথিবী (পর্ব-২) ( ২২০০সাল থেকে ২৭০০)
ভবিষ্যৎ পৃথিবী (পর্ব-৩) ( ২৭০০ থেকে ৪০০০)- শেষ পর্ব
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?
স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন