আমাদের দেশে সবচেয়ে সমস্যা গুলোর একটা আবর্জনার অব্যবস্থাপনা। রাস্তার পাশে, বাড়ির সামনে, পুকুরের ধাঁরে সব জায়গায় আমরা শুধু দেখি আবর্জনা আর আবর্জনা। কিছু কিছু রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় তো নাক ধরে যেতে হয়। আর ধরুন ঠিক ডাস্টবিন এর সামনে পরা অবস্থায় জ্যামটা পড়লো তাহলে আর কথাই নাই। বুঝেন ঠ্যালা।
এই আবর্জনা আমাদের নগর জীবনের দুর্ভোগের একটি অন্যতম কারন। রাজধানী ঢাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা এখন প্রায় অচল, বুড়িগঙ্গা এখন এক বিষাক্ত কালো নদী। দেশের সবগুলো ব্যস্ত শহর ওর তার পাশে বয়ে চলা নদীর আজ এক ভয়াবহ অবস্থা। এর থেকে মুক্তি পাওয়া খুবই প্রয়োজন। আবর্জনা ব্যবস্থাপনা ও রিসাইকেলিং-ই এই সমস্যার সমাধান
আবর্জনা ব্যবস্থাপনা ঃ
আবর্জনা ব্যবস্থাপনা বলতে এমন এক সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিকে বুঝায় যার আধারে আবর্জনাকে গ্রহণ, স্থানান্তর করা হয় এবং আবর্জনার ব্যবহারযোগ্য উপাদানগুলো পৃথক করা হয় ।
রিজাইকেলিং ঃ
আবর্জনার উপাদানকে ব্যবহারযোগ্য করার পদ্ধতিই হল রিসাইকেলিং।
আবর্জনা আমাদের কাছে অব্যবহারযোগ্য কিছু। এটাই স্বাভাবিক। কারন আমরা ময়লার ডাব্বায় এগুলো ফালাই এ জন্যই। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বের করেছে আবর্জনা আসলে অব্যবহারযোগ্য না। ৯৫ ভাগের বেশি উপাদান আমরা পুনরায় ব্যবহার করতে পারি। হোক সেটা কালিভরা কাগজ, বউয়ের সাথে ঝগড়া করে ভাঙ্গা প্লেট বা বদহজমের পরিনামে আসা মল।
আমাদের দেশের আবর্জনার প্রায় ৬২ ভাগ আমাদের গৃহস্থলের তরিতরকারি-খাবারের অতিরিক্ত অংশ ইত্যাদি, কাগজ ও কাগজজাত সামগ্রি ৯ ভাগ , প্লাস্টিক পদার্থ ২০ ভাগ, ধাতব পদার্থ ৩ ভাগ, কাচ ও সিরামিক ০.২৫ ভাগ, কাচ ১ ভাগ ও অন্যান্য প্রায় ৪ ভাগ।
আবর্জনার প্রায় ৫৫ ভাগই তরল। তরল উপাদান গন্ধ বেশি ছরায় তাই এগুলো দ্রুত জনবহুল জায়গা থেকে নিরসন না করলে অনেক সমস্যা হয়, যা আমরা রোজই টের পাই।
আমরা আবর্জনার কিছু সমস্যাগুলোর কারনে খুব বিরক্ত। ব্যতিক্রমধর্মীভাবে তার কিছু তুলে ধরা হল হল ঃ
জনগণের ক্ষেত্রে,
১) আমাদের নিজেদের মধ্যে কোন সচেতনতা নেই। আলসেমির কারনে আমরা জানলা নিয়েও ময়লা ফালাই।
২) আমাদের বাসার পাশে কোন পুকুর বা ছোট জলাশয় থাকলে আমরা ক্রমেই তাঁকে ডোবায় পরিণত করি। এক ঋণাত্মক উদ্ভাবন বটে।
৩) পার্কে, পাবলিক প্লেসে যখন হাতে বাদাম থাকে তখন খোসা পায়ের নিচেই ফালাই। ঐ স্থানে ডাস্টবিন থাকুক বা না থাকুক। মাঝে মাঝে মনে হয় সিমেন্টের পেঙ্গুইনে কেন যে “আমাকে ব্যবহার করুন” লেখা থাকে আমরা জানিই না।
ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে,
৪) তাদের ধারনা ডাস্টবিন জনবহুল স্থানে রাখলে হয়তো ভাল। জনগন দুর্গন্ধ গ্রহণ করবে, রোগবালাই বাড়বে। আয়ু কমবে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনে থাকবে। চরম থিয়রি।
৫) ব্যবস্থাপনার ধারনা বাসা থেকে রোজ রোজ আবর্জনা নেয়ার কি দরকার। তাদের তো ঠ্যাকা পরে নাই। যার ঘর পরিস্কার রাখার নিজের উদ্যোগে নিয়ে আসুক ।
৬) কারখানার মালিকদের ধারনা হয়তো তাদের মিলস থেকে আসা বর্জ্য হয়তো নদীর মাছ সুস্বাদু খাবার মনে করে খেয়ে ফেলবে। অথবা জলাশয়গুলো অনেক আরও বিশুদ্ধ হবে। রঙ্গিন করতে চায় তারা আমাদের নদীগুলোকে। “এমন দেশটি কোথাও খুজে পাবে নাকো তুমি,কালো নদীর পানির যেদেশ- আমার জন্মভুমি” এমন ধারনা থাকলেই মনে হয় তারা এমন করতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৩৭