প্রথম পর্বে মানব জাতির কিছু সংকটময় অবস্থার কথা বর্ণনা করা হয়েছিল। বিজ্ঞানীদের মতে ১৭০০ থেকে ২৫০০ সালকে বিজ্ঞানের উন্নতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় ধরা হয়। এই সময়েই মানুষের দূর ভবিষ্যতের পথ দেখিয়ে দিবে। গত পর্বে ২০১৩ থেকে ২২০০ সালের যে বর্ণনা দেয়া হয় তার মাঝে কিছু রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট যেমন ৩য় বিশ্বযুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের আফগান ত্যাগ এমন অনেক কিছু বলা হয়েছে। আসলে আদিম যুগ থেকে আমরা দেখে আসছি যুদ্ধ-বিগ্রহ। তবে ২২০০ এর মানুষ অনেক বেশি সচেতন
গত ২ শতকে পারমাণবিক ধ্বংসলীলা, বৈশ্বিক মন্দা, বৈশ্বিক দুর্ভিক্ষ ও সমুদ্রপৃষ্টের বৃদ্ধির পর মানুষ বুঝতে পারল পারস্পারিক সহযোগিতা, মানবতা ও ভালবাসা ছাড়া মানব জাতি অস্তিত্বের লড়াইয়ে কখনো টিকে থাকতে পারবে না। ২২০০ এর পরবর্তী যুগ আসলে শান্তির যুগ যাতে বিশেষজ্ঞরা Messianic Age হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে থাকে। ২২০০ সালের পরবর্তী কিছু সম্ভাব্য ঘটনা নিম্নরুপঃ
২২০৯:
পৃথিবী থেকে হ্যালির ধুমকেতুকে আবার দেখা যাবে।
২২২০:
Mind-Uploading অর্থাৎ ডিজিটাল সিগন্যালের মাধ্যমে মানুষের মস্তিষ্কে তথ্য প্রদান করার পদ্ধতি বিকাশ লাভ করবে। ২২ শতক পর্যন্ত যেখানে মাত্র মস্তিষ্কের ৭ ভাগ ব্যবহার করতে পারতে এখন এখন তারা ৭০ ভাগের বেশি ব্যবহার করতে পারবে। মানুষের সৃজনশীলতা, কর্মদক্ষতা, উদ্ভাবনী ক্ষমতা এখন এত বৃদ্ধি পাবে যা হয়তো গত শতকের পর্যন্ত সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানীদেরও ছিল না।
২২৩০ঃ
Antimatter-Fueled নভোযান তৈরি করা হবে যা আলোর .৯৯ ভাগ গতিতে চলতে পারবে।
২২৪০ঃ
বিখ্যাত গবেষণা সাময়িকী Gallup অনুযায়ী এই সময় আমেরিকাতে কোন খ্রিস্টান ধর্মালম্বি থাকবে না।
২২৫০ঃ
পৃথিবীতে সত্যিকারের জুরাসিক পার্ক তৈরি করা হবে। DNA এর মাধ্যমে শত কোটি বছর আগের প্রাণী সহ এতে থাকবে হাইব্রিড প্রজাতির অনেক প্রাণীও। এখন মানুষের কাছে এমন প্রযুক্তি আছে যে DNA সংরক্ষিত কোন প্রাণী বিলুপ্ত হবে না।
২২৯০ঃ
মানুষের একক রাজ্যের সূচনা। পৃথিবীর এখন আন্তর্জাতিক সীমানা বলতে কিছু নেই। এখন মানুষের একটাই দেশ আর সেটা সমগ্র পৃথিবী জুড়ে।
২৩০০ সালঃ
পৃথিবীর জনসংখ্যা এখন ১০ বিলিয়ন। চিকিৎসাগত উন্নতির কারনে মানুষের আয়ু বাড়লেও নতুন অনেক জটিল রোগ (অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রযুক্তি-সৃষ্ট রোগ) আবিষ্কৃত হয়। তা ছাড়া পৃথিবীর সমুদ্র পৃষ্টের উচ্চতা ও বৈশ্বিক দুর্ভিক্ষের কারনে গত শতকে পৃথিবীর জনসংখ্যা অনেক কমে যায়
২৩৫০ সালঃ
স্টিমসেল এখন চরম বিকাশ লাভ করবে। শরীরের যেকোন অঙ্গ প্রতঙ্গ এখন কৃত্তিম ভাবে তৈরি করা সম্ভব। এক কথায় বলা যায় এখন পৃথিবীতে পঙ্গু, বিকনাঙ্গ বলতে কোন শব্দ নেই।
২৪০০ সালঃ
এই সময়ে মানুষ অত্যন্ত বাস্তববাদী। অধিকাংশ মানুষ ধর্মীয় রীতি নীতি ত্যাগ করেছে। পৃথিবীতে এখন প্রতি ১০ জনে ৭ জন ধর্মহীন, ২ জন মানুষ মডার্ন মোনোথিস্ট ( মুলত কোন প্রচলিত ধর্ম মানে না, শুধু একক স্রস্টায় বিশ্বাস করে আর তাদের ধারনা বিজ্ঞান স্রস্টাকে এজন্য ব্যাখ্যা করতে পারে না কারন স্রষ্টা সৃষ্টি থেকে আলাদা এবং জাগতিক বিষয় না) আর ১ জন ২১ শতকের প্রচলিত ধর্মাবলম্বী।
২৪৪০ঃ
সমগ্র পৃথিবীতে এখন ফিউশনের মাধ্যমে শক্তি সঞ্চয় করা হয়। এখন পৃথিবীতে প্রতিদিন ৫২ পেটাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়।
২৫০০ সালঃ
আনুমানিক এই সময়ের মধ্যে মঙ্গল গ্রহের Terraforming এর কাজ শেষ হবে। পৃথিবীর এক বড় জনগোস্টির কর্মসংস্থান হয়। নতুন ব্যবসায়ের মাধ্যম, সমাজ ব্যবস্থা তৈরি হয় তাছাড়া গত একশ বছর ধরে বসবাস যোগ্য জমির অভাবে যে দেশ গুলো Floating Cities গুলোর উপর নির্ভর করে ছিল তাদের এক নতুন আশার আলোর সন্ধ্যান পায়। তবে নতুন এই গ্রহে বিত্তবানরাই জায়গা করে নেয়।
২৬০০ সালঃ
একবিংশ শতাব্দীর অধিকাংশ বর্জ্য, প্লাস্টিক, তেজস্ক্রিয় বর্জ্য, কৃত্তিম পদার্থ এই সময়ের মধ্যে বিশ্লেষিত হবে ও মাটির সাথে মিশে যাবে।
২৭ জানুয়ারী ২৭০০সাল (আনুমানিক) ঃ
আজ মানব জাতির ইতিহাসে অদ্বিতীয় এক মাইল ফলক । এখন পর্যন্ত Interstellar Travel সম্ভব হবার পর মানুষ পারি দিয়েছে হাজার হাজার গ্রহ, উপগ্রহে। সত্যের পিছনে ছুটতে ছুটতে আজ আমরা এমন কিছু সন্ধান পেলাম যা এতদিন কল্পদুনিয়াতেই সম্ভব ছিল। সকাল ৮ টা Earth Space Station এ ৫০ আলোকবর্ষ দূরে পাঠানো একটি নভোযান থেকে সংকেত আসলো
“WE'VE FOUND LIFE”.
পরের পর্ব
ভবিষ্যৎ পৃথিবী (পর্ব-৩) ( ২৭০০ থেকে ৪০০০)- শেষ পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:০২