somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুইজারল্যান্ড থেকে বলছি - ৫ - ভেনিস পর্ব

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[এই পর্বটা অনেক পরে আসার কথা ছিলো। তবে স্ত্রীর কথা শিরোধার্য করে এখনি লিখে ফেলা ভালো মনে হল। আমি এতে একটু খরচাপত্তরের হিসেব ও দেওয়ার চেষ্টা করব।]


সবে ঘুরে এলাম ভেনিস।হাতে আর সময় নেই। দেশে ফেরার তাড়া। তার মধ্যেই যতটা ঘোরা যায় আর কি। তাই এ মাসের মাইনে পড়তেই দৌড়লাম স্টেশন। এখানকার রেলওয়ের নিজস্ব ট্যুর উয়িং আছে। রেলট্যুর। তাদের অফারেই বুকিং করলাম। লসান থেকে ডিরেক্ট ট্রেনে ভেনিস। সেখানে একরাত হোটেলে থাকা, ব্রেকফাস্ট সহ। পরদিন বিকেলের ডিরেক্ট ট্রেনে লসান ফিরে আসা। আমাদের দুজনের মিলিয়ে পড়ল ৫১৮ ফ্রান্ক।শুক্রবার সারাদিন লসানে ভীষন বরফ পড়েছে।খুব ঠান্ডা। তার মধ্যেই শনিবার সকালে উঠে রেডি হয়ে লসান স্টেশন পৌঁছলাম। ৮:২০ তে ট্রেন। ইউরো রেল।টিকিটে কোচ নম্বর, সিট নম্বর মিলিয়ে বসলাম। আমার এখানে এখনো অবধি চাপা সবচেয়ে ভালো ট্রেন। আমাদের সিট দুটো মুখোমুখি। জানলার পাশে। সময়ে ট্রেন ছেড়ে গেলো। সকালের আলো ফুটেছে।আমরা লসান ছাড়ছি। বরফ আবার পড়তে শুরু করেছে। চারপাশ সাদা। সাদা বলে সাদা, শ্বেতশুভ্র যাকে বলে! বাড়ির ছাদ সাদা, পাশের জমি সাদা, স্ট্যান্ডের গাড়ি সাদা, রেললাইন সাদা, মরা আঙুরবন সাদা!
কিছুক্ষন ভালো লাগে। তার পরে কেমন একঘেঁয়ে হয়ে যায়। বেশ কয়েকটা স্টেশন পেরোবার পর ট্রেন থামল প্রথম ইটালীয়ান স্টেশনে। জায়গার নাম "ডুমাডোসোলা"। বিড়ি খেতে নামলাম। প্রচুর পুলিশ ঘুরছে। বাইরে তাকিয়ে মনটা ভরে গেল। ঝকঝকে রোদ উঠেছে। পুরো পাথরের তৈরী বেশ কয়েকটা বাড়ি দেখলাম।ছাদ অবধি পাথরের।পরের স্টপেজ "মিলান"। দেখলাম লোক বাথরুমের সামনে লাগেজ রেখে তার সামনেই দিব্বি বসে চলেছে। স্ট্যান্ডিং প্যাসেন্জারও অনেক। এখান থেকে মিলান অবধি পথ চোখ জুড়িয়ে দিয়েছে। মিলান থেকে "ভেনেসিয়া সান্টা লুসিয়া" অবধি প্রায় ২.৫ ঘন্টা সময় লাগে। তার আগের স্টেশন হল "ভেনেসিয়া মায়েস্ত্রো"। এখান থেকে সান্টা লুসিয়া অবধি রেল লাইনটা সমুদ্রের ওপর দিয়ে পাতা। সে এক অদ্ভুত দৃশ্য। লাইনের দু দিকে সমুদ্র। সামনে ভেনিসের অজস্র রঙিন বাড়ি।আস্তে আস্তে ট্রেন ভেনিস ঢুকলো। ঘড়িতে সময় ২.২০। কিন্তু আকাশ মেঘলা।হাড় কাঁপানো ঠান্ডা। বৌ নেমেই স্টেশনের সুভেনির শপে ঢুকে পড়লো। তাকে কোনো মতে নিরস্ত করে বেরোলাম আমাদের "হোটেল ভিলা রোসা" খুঁজতে। গুগল ম্যাপে লোকেশনটা দেখে নিয়েছিলাম। কিন্তু বেরিয়ে চরম ঘেঁটে গেলাম। আগে দেখা রুট ধরে গিয়ে কোনো গলিই আর চিনতে পারি না।হঠাৎ শুনলাম পাশেই কে যেন বাংলায় কথা বলছে। তাকিয়ে দেখি এক বাংলাদেশী ভাই ফোনে কথা বলছে। হাতে যেনো চাঁদ পেলাম। তার কাছে গিয়েই হোটেলের ঠিকানা বুঝে নিলাম। তার পর চেক-ইন, একটু ফ্রেশ হতে হতেই আমার জুরিখের বন্ধু এসে হাজির। আর কি , চলো ঘুরি ভেনিসের পথে পথে। প্রথমেই গেলাম স্টেশনের উল্টোদিকে "হ্যালো ভেনেসিয়া"র কাউন্টারে। ২৪ ঘন্টার পাস, ২০ ইউরো।পাস কেনা হলে চেপে পড়লাম "২" নম্বর বোটে। "গ্রান্ড ক্যানাল" বেয়ে চললাম "সেন্ট মার্ক স্কোয়ারের" দিকে। সন্ধ্যের ভেনিস তখন সেজে উঠছে অপূর্ব আলোয়। জলের রাস্তা, দু ধারে পুরনো বাড়ির ভিড়, জলের মাঝে মাঝে মোটা মোটা কাঠের গুঁড়ি পোতা, তার ওপরে আলোক স্তম্ভ। হালকা হলুদ আলো পড়ছে সবজে জলের ওপরে, আমাদের বোট চলছে জলের ওপর দিয়ে, পাশের ইমারত, এক ঐতিহাসিক শহর কে চিড়ে চলেছে আমাদের বোট। পারত। শহরটাকে আলো মুড়ে দিতে পারত এরা। করেনি। করতে চায়নি। আর সেজন্যই একটা আলো আধাঁরি, রহস্যময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে সারা শহর জুড়ে। কোলাহল নেই। প্রচুর লোক আছে। ছায়ামাখা গলিগুলো চলে গেছে এদিক ওদিক। হঠ করে কোনো গলি থেকে বেড়িয়ে সামনে চলে আসে চার্চ। মুগ্ধঝয় দু চোখ।সেন্ট মার্ক স্কোয়ার সবাই টিভিতে বা সিনেমায় দেখে ফেলেছেন আশা করি। গ্রান্ড ক্যানালের ধারে বিশাল পাথরে মোড়া চত্তর। অনবদ্য স্থাপত্যের নিদর্শন চারদিকে। সুউচ্চ টাওয়ার, চার্চ, ফ্রেসকো, দুর অবধি ছুটে চলা বারান্দা। স্কোয়ারের মাঝখানে দাঁড়িয়ে নিজেকে বড়ো ক্ষুদ্র লাগে। তবে অস্বস্তি লেগেছে স্কোয়ারে লাগানো বিশাল "ভারসাচে"র পারফিউমের আ্যড দেখে। আমাদের তাজমহলে কেউ এসব ভাবতে পারবে ?
বেশ কিচ্ছুক্ষন এখানে কাটালাম। এবার যাব "রিয়াল্টো"। জেটিতে বসে একথা সেকথা হচ্ছে। হঠাৎ মৌ আমার বন্ধুটিকে প্রশ্ন করে "বাথরুমে কোমোডের পাশেই আরেকটা যে কোমোডের মতো জিনিস আছে দেখেছো?"
সেও মাথা নাড়িয়ে বলে "পা ধোওয়ার জায়গাটা তো?"
আমাদের তো হাসতে হাসতে দম বেড়িয়ে যাওয়ার অবস্থা। শুভাগত যুক্তি দিতেই ব্যস্ত -
- "আরে যাতে মাটিতে জল না পড়ে সেজন্যই এমন ব্যবস্থা"
- "আরে শাওয়ারের ওখানে তো ট্যাপ নেই"
আমরা ততই হাসি আর ওকে বোঝাই ট্যাপ টা ঘোরানো যায় কেনো ? ওখানে পা ধুতে গেলে জল তো গোড়ালীতে পড়বে পায়ের পাতায় নয়।
কিন্তু কে শোনে কার কথা। শেষে আমি বললাম, "তোর ছেলে এলে তো ঐটা ওর হাইটের হবে, ও সেখানে কুলকুচি করে এসে তোকে বলত - বাবা দেখেছ এরা কি চালাক, আমার মতো পুচকিদের যাতে অসুবিধে না হয় তার জন্য ছোট্ট বেসিন বানিয়ে রেখেছে"।
যাই হোক, এভাবে হাসতে হাসতেই আমরা পৌঁছলাম "রিয়াল্টো" ব্রীজ, গন্ডোলা, টুরিস্ট, দোকানীদের ভিড়ে এক জমজমাট জায়গা, যার মাঝে এপাড় থেকে ওপাড় অবধি দাঁড়িয়ে আছে দুধসাদা সেতু...



বুরানো আইল্যান্ড



ভেনিসের বিখ্যাত গলি



সেন্ট মার্ক স্কোয়ার



"রিয়াল্টো" ব্রীজ
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ২:০২
১১টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবশেষে মায়ের বাড়ি ফেরা ও তুরিনের ভুয়া ডিগ্রি কাহিনী—এক আলোচিত আইনজীবীর পতনের গল্প

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই মে, ২০২৫ সকাল ৯:৪৭

অবশেষে মায়ের বাড়ি ফেরা ও তুরিনের ভুয়া ডিগ্রি কাহিনী—এক আলোচিত আইনজীবীর পতনের গল্প

ছবি যুগান্তর অনলাইন থেকে সংগৃহিত।

আলোচিত আইনজীবী ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বিতর্ক বর্তমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রহস্যঃ কী হলেছিলো মেরি সেলেস্ট জাহাজটির সাথে?

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৬ ই মে, ২০২৫ সকাল ১০:৫০



১৮৭২ সালের নভেম্বর মাসের এক শীতের সকালবেলা। সমুদ্রপথে যাত্রা পথে ব্রিটিশ ব্রিগেন্টিন জাহাজ ‘দেই গ্রাটিয়া’র নাবিকরা একটা অদ্ভুত ব্যাপার খেয়াল করল। তারা তাদের সামনে একটা জাহাজকে এলোমেলো ভাবে চলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।।খালেদা জিয়া এখন ঢাকায়

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৬ ই মে, ২০২৫ সকাল ১১:৪৫









দীর্ঘ চার মাস পর যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে আজ মঙ্গলবার দেশে ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাঁর সঙ্গে দেশে আছেন দুই পুত্রবধূ জুবাইদা রহমান ও সৈয়দা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবিক করিডোর: আশীর্বাদ না অভিশাপ?

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৪১

মানবিক করিডোর: আশীর্বাদ না অভিশাপ?

ছবি, এআই দ্বারা তৈরিকৃত।

রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের জন্য মিয়ানমারের অভ্যন্তরে একটি নিরাপদ ত্রাণপথ বা "মানবিক করিডোর" স্থাপন নিয়ে সাম্প্রতিক কূটনৈতিক আলোচনা নতুন মাত্রা... ...বাকিটুকু পড়ুন

গেলো বসন্ত এলো বৈশাখ এলো নতুন বাংলা বছর ১৪৩২

লিখেছেন শায়মা, ০৬ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:২০


রঙে রঙে রঙিন বসন্ত ফুরোতে না ফুরোতেই চলে এলো বাঙ্গালীর প্রানের উৎসব নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়া পহেলা বৈশাখ। সেই উৎসব ঘিরে কেটে গেলো বেশ কিছুদিন। ব্যস্ততায় কাটলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×