somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুইজারল্যান্ড থেকে বলছি -৪

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৮:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[ভীষন বরফ পড়ছে এখানে। -১২ অবধি নেমে যাচ্ছে তাপমাত্রা। অপেক্ষা করছি কবে দেশে ফেরার প্লেনে বসব।]

টিটলিস -

তখন এখানকার সামার। মানে গরমকাল। তার মধ্যেই শনিবার সাত সকালে উঠে রেডি হয়ে পৌছলাম লসান স্টেশন। আরেক কলিগ বন্ধুও যথা সময়ে হাজির। পুরো প্যাকেজের টিকিট কাটা আছে। এখানে ট্রেন একদম ঘড়ির কাঁটায় চলে। আগেও বোধহয় বলেছি সে কথা। ট্রেনে যখন চেপেছি তখনো দিনের আলো সে ভাবে ফোটেনি।লসান শহর ছেড়ে বেড়োবার ঠিক আগে ট্রেনটা লেকের পাশ দিয়ে যায়। ঠিক তখনও সূর্য উঠছিল। ফ্রান্সের দিকের পাহাড়ের কোল বেয়ে উঁকি মারছিল সোনা রোদ। আমাদের দিকে তখনো সকালের কুয়াশা কাটে নি। হালকা শিশির মাখা সে বাতাসে সকালে প্রথম রোদের আলো চোখে ধাঁধা লাগিয়ে দিচ্ছিল। টলতে টলতে চলতে থাকে ট্রেন থেকেই বেশ কিছু ছবি তুলে ফেললাম। খানিক পরে শুরু হল মাঠ। বহুদুর অবধি ছড়ানো সবুজ গালিচা। জায়গায় জায়গায় টিলা, পাহাড়, উঁচু-নিচু। তার মাঝে মাঝে বাড়ি, ফার্মহাউস।মাঠের ফসল কাটা হয়েছে যন্ত্র দিয়ে। গোল করে পাকানো ফসল বস্তা বন্দি হয়ে পড়ে আছে মাঠের মাঝে। চকচকে কালো ফিতের মতো রাস্তা কোথাও পিছু নিয়েছে ট্রেন লাইনের। যেখানে একের পর এক গাড়ি গতির খেলায় হারিয়ে দিচ্ছে আমাদের ১০০ কিমির বেশী স্পীডে ছুটে চলা ট্রেনকেও।
ভালো লাগতে শুরু করল এই দেশটাকে। জানলার কাঁচে নাক ঠেকিয়ে দু চোখ দিয়ে গিলতে লাগলাম প্রকৃতির এই অপূর্ব রূপ।সোয়া দু ঘন্টা যাত্রা শেষে এসে নামলাম লুসার্নে। ১ ঘন্টা সময় আছে হাতে। জুরিখ থেকে আরেকজন এখানে এসে যোগ দেবে আমাদের সাথে। স্টেশন থেকে বেড়িয়ে পড়া গেল। লেকের আগে বিশাল এক তোরন। সুন্দর শিল্প। আধুনিক যুগে পুরোনো স্থাপত্যের ছোঁওয়া তাতে। অল্প হেঁটে লেকের পাড়। সুবিশাল সাদা রংএর স্টিমার ভাসছে। রাস্তা পেরিয়ে উল্টো দিকে গেলাম আমরা। লেকের পাশে ফুটপাথে ফুলের পশরা সবে সাজিয়ে বসছে যুবতীরা। লেকের ওপরে কাঠের চ্যাপেল ব্রীজ। তার গা বেয়ে লাগানো না জানা ফুলের ভীড়ে ব্রীজ অদৃশ্যপ্রায়। সুন্দরী দোকানির অনুমতির পরোয়া না করেই তার পসরার সূর্যমূখী ফুলের ছবি চুলে ফেললাম।ব্রীজের ওপর একচক্কর মারলাম। লেকের দুপারে সাজানো ছবির মতন শহর। এই করতেই পেরিয়ে গেলো ১ ঘন্টা।
ফিরে এলাম স্টেশনে।এবার আমরা ১৪ নম্বর প্লাটফর্ম থেকে চাপবো এন্গেলবার্গ গামি ট্রেনে। এটা প্যানোরামিক ট্রেন। মানে মেঝের একটু ওপর থেকে ছাদ অবধি বিশাল কাঁচের জানালা।ঝকঝকে পরিস্কার। ছোটো লাইন। ছোট্ট ট্রেন। দারুন সুন্দর সেই জার্নি। মিনিট ৩০ চলার পরে আমরা ঢুকে গেলাম একটা টানেলে। বিশাল লম্বা সেই টানেল পেরোতেই চোখে পড়ল টিটলিসের পাহাড়।
পাহাড়ের কোলে জনপদ। টুরিস্টদের জন্য হাজারো ব্যবস্থা।এই জায়গাটা মূলতঃ বিখ্যাত করে দিয়েছে আমাদের সিনেমাগুলো। আজকাল আমাদের কলকাতার সিনেমার গান মানেই ইউরোপ। আর ইউরোপ মানেই সুইজারল্যান্ড। তবে সবচেয়ে বিখ্যাত করেছে বোধহয় ডিডিএলজের "যারা সা ঝুম লু ম্যায়" গানটি।
পায়ে পায়ে হেঁটে পাহাড়ের পাদদেশে পৌঁছলাম। এখান থেকে তিনটে রোপওয়ে বদলে ওপরে যেতে হবে। সামনেই ভারতীয় খাবারের দোকান। সেখান থেকে সামোসা, পাওভাজী, চা খেয়ে রোপওয়ের লাইনে দাঁড়ালাম। ৬ সিটের রোপওয়ে। দরজা অটোমেটিক খোলে - বন্ধ হয়। আমাদের তিন জনের সাথে উঠলেন এক বয়স্ক দম্পতি। ভদ্রলোক ইটালিয়ান, ভদ্রমহিলা ফ্রেন্চ। বিয়ে করেছেন ভেনিসে। বাড়ি করেছেন সুইজারল্যান্ডে। অনেক গল্প করতে করতে প্রথম স্টপেজ চলে এল। এবার রোপওয়েতে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। ৮০ জনের ক্যাপাসিটি।
পরের স্টপেজ থেকে টপে যাওয়ার রোপওয়েটি "রোটেটিং"। রোপওয়ে চলতে শুরু করলে তার মেঝে খুব ধীরে ধীরে ঘুরতে থাকে। অসাধরন অভিন্গতা। ৯০০০ ফিট ওপর থেকে নীচের পৃথিবীকে ৩৬০ ডিগ্রীতে দেখা। ওপরে পৌছেই আপনাকে স্বাগত জানাবে শাহরুখ - কাজলের কাট আউট। রয়েছে রেস্টুরেন্ট, গ্লেসিয়ার। স্কী করে বেড়াচ্ছে বাচ্চা - বুড়ো। বরফ নিয়ে ছোঁড়া ছুঁড়ি খেলছে। আমরাও খানিক এদিক ওদিক করে গেলাম "আইসফ্লায়ার" এ চাপতে। এটা একদম খোলামেলা ৩ সিটার একটা কেবলকার। এ চুড়ো থেকে ও চুড়ো নিয়ে যায়। থ্রীলিং, কিন্তু স্পীড খুব কম থাকায় খানিক পর থেকে বোর লাগতে শুরু করে। ও চুড়োয় পৌছে দেখি প্রচুর জনতা প্লাস্টিকের ডোঙায় করে একটা বরফে ঢাকা ঢাল বেয়ে নামছে। আবার ঐটা বেয়েই হেঁটে হেঁটে উঠছে। আমরাও তাই করলাম। ভারি মজা। মাঝে মাঝে ঢেউ খেলানো বরফ। যদিও দুবার হড়কে নেমে উঠে কোমরে আর পিছনে ব্যথা শুরু হয়ে গেছিলো।
এসব করতে করতেই ফেরার সময় ঘনিয়ে এল। হঠাৎ বাঁ দিকে তাকিয়ে দেখি সারি সারি আল্পসের চুড়ো। এতদিন ঘাড় উঁচু করেই পাহাড় দেখে এসেছি। আজ ঘাড় নামিয়ে পায়ের নিচে অসংখ্য পাহাড় দেখতে পেয়ে কি অনুভুতি যে হয়েছে সেটা বলে বোঝানো যাবে না।
নিচে নেমে আবার এক প্রস্থ চা খেয়ে খলবলে সরু নদীর পাশ ধরে ফিরে আসি স্টেশনে।
বেলা শেষ হতে চায় না। এ সময়ে এখানে ৯ টা নাগাদ সূর্য ডোবে। তাও লসান পৌঁছতে রাত হয়ে যায়....
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৮:৩৪
১২টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এনসিপিকে আমাদের দেশের তরুণ-যুবা'রা ক্ষমতায় দেখতে চায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ০৩ রা মে, ২০২৫ রাত ১২:৪৫

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধে পাড়া-মহল্লায় জনতার আদালত গঠনের ডাক দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি তথা এনসিপি। দেশের বৃহত্তম ইসলামী দল 'ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ' তথা চর মোনাইয়ের পীর সাহেবের দল এনসিপিকে আগে থেকেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাতৃ ভাণ্ডার

লিখেছেন ঠাকুরমাহমুদ, ০৩ রা মে, ২০২৫ রাত ৩:২৬



আমাদের দেশে মিষ্টি পছন্দ করেন না এমন মানুষ পাওয়া বিরল ব্যাপার। ঢাকা চট্টগ্রাম রুটে যারা যাতায়াত করেন মাতৃ ভাণ্ডারের সাথে পরিচিত নন এমন মানুষও মনে হয় খুব বেশি নেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

এনসিপি জামায়াতের শাখা, এই ভুল ধারণা ত্যাগ করতে হবে

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ০৩ রা মে, ২০২৫ সকাল ১০:৪৪

প্রিয় রাজীব ভাই,
আপনি আমার আগের পোস্টে কমেন্ট করেছেন যে, এনসিপি জামায়াতের শাখা। আপনার এনালাইসিস ভুল! ওরা জামায়াতের শাখা নয়। এনসিপি-কে বুঝতে হলে, আপনাকে জামায়াতকে জানতে হবে। আমি একটু বিস্তারিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাশ্চাত্যের তথাকথিত নারীবাদ বনাম ইসলাম: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৩ রা মে, ২০২৫ বিকাল ৪:২৪

পাশ্চাত্যের তথাকথিত নারীবাদ বনাম ইসলাম: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ

ছবি কৃতজ্ঞতা এআই।

ভূমিকা

নারীর অধিকার নিয়ে আলোচনা ইতিহাসের এক দীর্ঘ অধ্যায়। পাশ্চাত্যে নারী আন্দোলন শুরু হয় ১৮শ শতকের শেষভাগে, যার ফলশ্রুতিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি স্মার্ট জাতির অন্তঃসারশূন্য আত্মজৈবনিক !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩৪


একটা সময় ছিল, যখন জাতির ভবিষ্যৎ বলতে বোঝানো হতো এমন এক শ্রেণিকে, যারা বই পড়ে, প্রশ্ন তোলে, বিতর্কে অংশ নেয়, আর চিন্তা করে। এখন জাতির ভবিষ্যৎ মানে—ইনফ্লুয়েন্সার। তারা সকাল ১০টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×