somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুইজারল্যান্ড থেকে বলছি - ৩

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[সুইজারল্যান্ডে আমার থাকার শেষ মাস চলছে। সামনের মাসে দেশে ফিরে যাব। ফিরে গিয়ে এই সিরিজের নামটা বদলাব। তবে সিরিজটা শেষ করব। সাথে থাকবেন। ]

এখানকার পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বেশ ভালো। নিজের গাড়ি না থাকলেও কোনো অসুবিধে হয় না। প্রতিটি শহরে বাস, ট্রাম ও মেট্রো আছে। আছে সিটি পাসের ব্যবস্থা।আমি যেখানে থাকি সেখান থেকে অফিস বেশ দুরে। দুটো মেট্রো বদলে যেতে হয়। তাই যাই।কি আর করা।
এরা বেশ পার্টি পাবলিক। শুক্রবার রাত আর শনিবার সারাদিন এরা পাগল হয়ে যায়। রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে বিয়ার খাওয়া আর উত্তাল জোরে হর্ন বাজানো এদের আনন্দের একটা ধরন।

এ দেশে তিন দিকে তিনটে ভাষা চলে। আমি যে দিকে থাকি সে জায়গায় ফ্রেন্চ চলে। বিয়েল থেকে জুরিখের দিকটায় জার্মান। আর ইটালি বর্ডারে কাছে ইটালিয়ান। অদ্ভুত লাগে ট্রেনে জুরিখ যাওয়ার সময়। আধ রাস্তা থেকে ঘোষনার ভাষা বদলে যায়।

সারা সপ্তাহ কাজ কাজ করে শনি রবি ফাঁকা পেলাম। এদের ব্যবসাও আলাদা ভাবে চলে। মিগ্রোস, কুপ ও ডেনার বলে তিনটে চেইন শপ আছে।
কিন্তু সেগুলোও অফিসের মতন চলে। মানে ৯ টায় খোলে, সাড়ে ৬ টায় বন্ধ। শনিবার হাফ ডে আর রবিবার পুরো ছুটি। আপনাকে এক মধ্যেই সময় ম্যানেজ করে সপ্তাহের কেনাকাটা সেরে ফেলতে হবে। শনি আর রবিবার সকালে সাবওয়ে গুলো দিয়ে হাঁটা যায় না বমি আর আরো বাজে কিছুর গন্ধে। তার মধ্যেই ক্যামেরা নিয়ে বেরোই। লেক লেমানের ছবি তুলি।জায়গাটা খুব সুন্দর। খোলা মেলা লেক। প্রচুর হাঁস আর পেলিক্যান। কত লোক আসে। রোলার স্কেটিং করে। লেকের উল্টো দিকেই ফ্রান্স। এভিয়ান বলে একটা শহর। এভিয়ানের গল্প অন্যদিন হবে। তবে লেকের এপাড় থেকে ফ্রান্স দেখতে বেশ ভালো লাগে। সন্ধ্যে যখন হয়ে আসে, ওপাড়ের আলোগুলো একে একে জ্বলে উঠতে থাকে। জল থেকে ওঠা বাষ্পে আলোরা টল টল করতে থাকে। লেকের ধারে পাথরের ওপর বসে বিয়ারে চুমুক মারি আমি।মনে হয় সারা দিনটা এখানে কাটাতে পারলে বেশ ভালো হত।

কিন্তু সে কপাল কই! বাড়ি ফিরে রান্না করতে হয়। দেশে ফোন, স্কাইপ। মাঝে মাঝে সিনেমা। সময় পেরিয়ে যায়। অপেক্ষা করি কবে বৌ আসবে। একা একা ছোট্ট ঘরটাও কখোনো কখোনো গিলে খেতে আসে।

আমার ১.৫ ফ্ল্যাট। ২৮ স্কোয়ার মিটার। তার মধ্যে ইলেকট্রিক ওভেন, মাইক্রো ওভেন, মডিউলার কিচেন, ডাইনিং টেবিল, একটা সোফা, একটা ডবল বেড, দেওয়ালে টাংগানো এল.সি.ডি, একটা সেন্টার টেবিল, আর ওয়ার্ডরোব শ কিছু খুচ খাচ ফার্নিচার।

এদের আর্টের সেন্স খুব একটা আছে বলে মনে হয় না। তাও কে যেনো মাথার দিব্যি দিয়েছে ঘরে কিছু না কিছু রাখতেই হবে। তাই আমার বিছানার ওপরে দেওয়ালে একটা জেব্রার ছবি। বহুদিন দেখে দেখে ভেবেছি একটা জেব্রার তিনটে চোখ হয় কি করে! বৌ এসে উদ্ধার করে ওটা একটা বিশাল রোম্যান্টিক ছবি। দুটো জেব্রা আছে ঐতে। একটা আরেকটার গালে হামি খাচ্ছে। তাই পিছনের জেব্রাটার এক চোখ গেছে ঢেকে। কি বিপদ।

আর আছে বিছানা পাশে দাঁড় করানো একটা ম্যানেকুইন জাতীয় পুতুল। আর মাথা নেই, হাত নেই, সারা গায়ে কুচি কুচি কাঁচ লাগানো। আমার এমনিতেই ভুতের ভয়। আলো জ্বালিয়ে ঘুমাতে হয়। রাতের বেলা হঠাৎ ঘুম ভেঙে কিচেনের হাল্কা আলোয় ঐ কিম্ভুত মূর্তি দেখে বেশ কয়েক বার আঁৎকে উঠতে হয়েছে। অফিস, লেকের পাড়, বাজার হাট করে দিন চলে। বৌ এর আসার সময় ঘনিয়ে আসে।

এমন সময় আসে রেলওয়ের এক অফার। মাউন্ট টিটলিস ট্রেনে যাতায়াত ও টিটলিসে সব কেবলকারে (এখানে বলে ফুনিকুলার) চাপার টিকিট বেশ সস্তায়। মাঝে লুসার্নে ব্রেক করতে হবে। সেই সুযোগে দেখে নেব লুসার্ন।
একঘেঁয়ে জীবন থেকে একটু ভিন্ন ধরনের সেই শনিবারটা চলেই এলো...
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:৩৫
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

'লেখা আছে অশ্রুজলে’......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৬ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:৩৭

আমার গুম নির্যাতনের উপর লেখা 'গুম এবং অতঃপর' বইয়ের পাঠপ্রতিক্রিয়া লিখেছেন এসোসিয়েট প্রফেসর ডক্টর মো: আদনান আরিফ সালিম( Md. Adnan Arif Salim) । লিংক পাঠিয়েছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক Mesbah Shemul লিংক-... ...বাকিটুকু পড়ুন

টরন্টোর চিঠি - "অতএব জাগ, জাগ গো ভগিনী!"

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই মে, ২০২৫ ভোর ৬:৩৭


গত বছর গ্রীষ্মের শুরুতে টরন্টোয় বসবাসরত আমার জন্মস্থান জেলা-শহর থেকে আগত অভিবাসীদের একটি পিকনিকে গিয়েছিলাম। ৫০–৬০ জন নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোরের অংশগ্রহণে আয়োজিত সেই অনুষ্ঠানের আয়োজকদের সকলে ছিলেন নারী। তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামাসকে দিয়ে গাজায় ঠিক কী কী উপকার হয়েছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ১৭ ই মে, ২০২৫ সকাল ৯:২৫



ইসরায়েলের বিমান হামলায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নিহত হয়েছেন ১১৫ জন ফিলিস্তিনি এবং আরও অন্তত ২১৬ জন আহত হয়েছেন।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্টারের কাচ্চি বিরিয়ানী

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৭ ই মে, ২০২৫ সকাল ১১:৩১



শেষ কবে স্টারের কাচ্চি খেয়েছিলাম আমার মনে নেই। আগে একটা সময় ছিল যখন কাচ্চির নাম নিলে যে নামগুলো সবার প্রথমে সামনে আসতো তার ভেতরে এই স্টারের নাম থাকতো। এখনকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

নটীদের আড্ডাখানা ছিল সংসদ!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৪


বাজারে যত নটী আছে হাসিনা সবগুলোকে একছাদের নিচে দক্ষতার সংগে জমায়েত করতে পেরেছিল। সেই নটীদের ছিলনা কোন যোগ্যতা কিংবা না ছিল কোন রাজনৈতিক ব্যকগ্রাউন্ড; তারপরও নটীরা সংসদে যেতে পেরেছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×