১৩-ই জুন, ১৯৭১!! বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা যখন জীবন দিয়ে দেশের মুক্তির জন্য যুদ্ধ করছিল, পৃথিবীর আরেক প্রান্তে তখন New York Times পত্রিকাটি US Department of Defecne এর টপ সিক্রেট "পেন্টাগন পেপারস" রিপোর্ট এর উপর ভিত্তি করে সিরিজ আকারে কয়েকটি রিপোর্ট প্রকাশ করা শুরু করে। রিপোর্টগুলো ছিল মূলত ১৯৪৫-৬৭ পর্যন্ত ভিয়েতনামে আমেরিকার ভূমিকা আর এইটা নিয়ে জনসন (আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট) এডমিনিস্ট্রশনের মিথ্যাচার নিয়ে। "পেন্টাগন পেপারস" রিপোর্টটি ক্ল্যাসিফাই করা ছিল "টপ সিক্রেট" হিসাবে কিন্তু ড্যানিয়েল এলসবার্গ নামের একজন হুইসেল ব্লোয়ার সেটা টাইমস আর ওয়াশিংটন পোষ্টের কাছে দিয়ে দেয়। ৩টি রিপোর্ট পাব্লিশ করার পরে, "জাতীয় নিরাপত্তা"র কথা বলে এই রিপোর্টগুলো আর প্রকাশ না করার জন্য Department of Justice টাইমস-কে কোর্টে নিয়ে যায়। কিন্তু কোর্টে দুই সপ্তাহ মামলাটা লড়ার পরে, ৩০-এ জুন U.S. Supreme Court ঐতিহাসিকভাবে মামলাটি খারিজ করে দেয় আর টাইমসকে সিরিজের বাকী রিপোর্টগুলোও প্রকাশ করার অনুমতি দেয়।
রাষ্ট্রের "টপ সিক্রেট" রিপোর্ট প্রকাশ করার জন্য আমেরিকার কোন ল-এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি New York Times এর সাংবাদিককে ধরে নিয়ে যায়নি বা হয়রানিও করে নি। কিন্তু স্বাধীনতা দিবসে দ্রব্যমুল্য এর উর্ধগতি নিয়ে কথা বলার জন্য সাংবাদিক শামসুজ্জামান কে মধ্যরাতে মাফিয়া স্টাইলে তুলে নেওয়া হয়! দেশের পাওয়ার বাবলের লোকজন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য এর উর্ধগতি কমাতে যত না তৎপর, তার চেয়ে কয়েকশগুন বেশী তৎপর কোন সাংবাদিক এইটা নিয়ে কথা বললে তাকে তুলে নিয়ে যেতে।
বাংলাদেশ কি রকম ইমেজ সংকট ভোগে, সেটা বোঝা যায় তখন আমরা বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে অন্য দেশের বর্ডার ক্রস করি! সাংবাদিক শামসুজ্জামান এর ঘটনা অতন্ত নেগেটিভভাবে ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়াতে এসেছে। তার মানে এইটা বাংলাদেশের ইমেজে আরেকটা কালো দাগ ফেলল।
দেশের অতি উৎসাহী ভাইলোক যারা এই ভয় দেখিয়ে সংবাদ মাধ্যমের গলা চেপে ধরতে চাচ্ছেন, তারা ভালো করেই জানেন ভয় দেখিয়ে মানুষকে বেশীদিন দমিয়ে রাখা যায় না। এর প্রমান আমরাই ৭১-এ পাকিস্থানকে দিয়েছি। তবে হ্যা, ভয় দেখিয়ে অন্ধকারের দিকে নিয়ে নেওয়া যায়। তবে দেশ অন্ধকারে গেলে, সেই অন্ধকার আপনাকেও গ্রাস করবে। তাই বলি - আসুন আলোর দিকে যাই, সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে মুক্তি দিন, সংবাদমাধ্যমের গলা চেপে ধরা বন্ধ করুন কারন সংবাদমাধ্যম আমাদের গণতন্ত্রের জন্য, আমাদের রাষ্টের মানবিক হওয়ার পথে অন্যতম স্তম্ভ!