ব্লগে সবার জ্ঞানী জ্ঞানী টিউটোরিয়াল পড়তে পড়তে আমারও মাঝে মাঝে জ্ঞানী জ্ঞানী টিউটোরিয়াল লেখতে ইচ্ছা করে। কিন্তু আমার মাথায়তো জ্ঞান নাই, তাইলে জ্ঞানী জ্ঞানী টিউটোরিয়াল কিভাপে লেখপ?

পা ভাঙ্গতে যা যা লাগপেঃ
চলমান একখান শরীর, ব্যাথলেটিক মানে বাতের ব্যাথাওয়ালা শরীর হলে ভাল হয়,
একটা ভারী পাটের বস্তা (স্লীপিং ব্যাগ),
এক জোড়া ঢালিউডি জুতা যেইগুলো খুব ভারী কিন্তু কোন কাজের না, শুধু কোনমতে হাটা যায়,
এক জোড়া হলিউডি বুট (হাইকিং বুট), বলিউডি হইলেও চলপে যেইগুলা হাল্কা এবং পাহাড়ে-জংগলে হাটার জন্য খুব কাজের,
হাওয়া নিরোধক, ফার্নিচারবিহীন, তলাযুক্ত একটা ভাসমান ঘর(তাবু)
এক বস্তা জামা-কাপড় (আপনি যদি ক্ষ্যাত না হন আর আপনি যদি খুব পোষাক সচেতন হিশ্মার্ট হন তাইলে আপনি নিজের পা ভাঙ্গার যোগ্যতা রাখেন না, সোজা কথায় আপনে বাদ

কয়েক পাহাড় শীত (শীত না থাকলে আপনি শুধু চেষ্টাই করবেন কিন্তু আপনার পা ভাঙ্গপে না),
কয়েকজন নাডা বন্ধু, পুতুপুতু বন্ধু না আবার। নাডা বন্ধু না থাকলে আপনি পা ভাঙ্গতে গিয়ে দেখবেন আপনি এমন ঘুম দিছেন যে সে ঘুম আর নাও ভাঙ্গতে পারে,
শুকনা কুখাদ্য, মনে রাখবেন খাবার যত কম নিবেন আপনার পা তত তাড়াতাড়ি ভাঙ্গপে । তবে আমাগো মত নাডা হইলে রান্না করার জন্য পুরা চুলাই সাথে নিতে পারেন।
জরুরী না কিন্তু থাকা ভালঃ
মশা-মাছি মারার কামান (বাগ স্প্রে),
হেলের ট্রয় সরি আপনের টয়লেট কিট। ভুল করেও যদি কোন ছৌন্দর্য-প্রসাধন ব্যাগে নেন তাইলে দয়া এখনই ফেলে দেন। আপনে পা ভাঙ্গতে যাচ্ছেন, কোন পার্টিতে না। ছৌন্দর্য বাড়াইতে হলে পা ভাঙ্গা বাদ দিয়ে এখনই বিউটি পার্লারে দৌড় দেন,
কান গরম করা থাপ্পড় না মানে কান গরম করা টুপি, এবং
হালকা- পাতলা হাবিজাবি।
প্রস্তুত মানে ভাঙ্গা প্রনালীঃ
উপরের সব কিছু সংগ্রহ করার পরে একটা ব্যাকপ্যাকে ভরে কোন এক বৃষ্টির দিনে ড্রাইভ করা শুরু করেন বা বাসে বা ট্রেনে বা ট্রাকে বা গরু/ঘোড়ার গাড়িতে উঠে পড়েন। আপনার গন্তব্য হবে কোন এক ছোটখাট পাহাড়ের পাদদেশ। গন্তব্যে পৌছেই বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে আপনার ভাসমান ঘরখানা বেসক্যাম্প হিসাবে সেট করে ফেলেন। কিভাবে সেট করতে হয় না জানলে, কাক-পক্ষীকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। গন্তব্যে সকালে পৌছালে নাডামি শুরু করেন আর বিকালে পৌছালে আপনার ঢালিউডি জুতা পরে পাশের জংগলের ২/৩ মাইল ভচভচে কর্দমাক্ত ট্রেইল হেঁটে আসুন। সন্ধ্যায় আপনার ভাসমান ঘরে ফিরে এসে রান্না শুরু করেন বা শুকনা কুখাদ্য থাকলে সেইটা খেয়ে তাস পিডায়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। কিন্তু আপনার পাটের বস্তা পাতলা হলে দেখবেন শীতে আপনার ঘুম আসপে না। ঘুমিয়ে পড়লেও দেখবেন আপনার নাডা বন্ধু আপনাকে ধাক্কা দিয়ে বলবে-
- "দোস্ত, ঘুমাস নি?" বা
আপনার ঘুমন্ত ফডু তুলে মুখবইয়ে আপলোড করে আপনাগো কমন সব বন্ধুদের সেই ফডুতে ট্যাগ করে আপনার অজান্তে আপনাকে পচানো শুরু করবে। "তাবুর শত্রু বিভীষন" বলে বাংলায় একটা কথা আছে সেইডা পরের দিন সকালে আপনার মুখবই খুলেই বন্ধুদের কমেন্টে কমেন্টে টের পাইবেন।
আপনার বল্টুরা ভদ্র হলে হয়ত দেখপেন আপনার পাশের ভাসমান ঘর থেকে ভেসে আসা চান্তেকদের হাউ-কাউতে( এই হাউ-কাউকে ওরা বলবে "গান") আপনার ঘুমের ভোর ৪টা বেজে যাবে। ভোর ৪টা উঠে ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে নাস্তা বানাইবেন। ঘন্টা খানেকের মধ্যে রেডি হয়ে দেখবেন আপনার ২/৩ জন বন্ধু বলবে তাদের শইলডা ভালা না, গতকাল ২/৩ মাইল হাঁটার কারনে তাদের চুলে ব্যাথা, শার্টে ব্যাথা। এদেরকে বেইস ক্যাম্পে রেখেই অন্য নাডাদের সাথে আপনার মেইন পা ভাঙ্গা পর্ব শুরু হবে।
ধুর!! পোষ্ট এত বড় হয়ে গেছে !! ভাবছিলাম এক পোষ্টেই পা ভাঙ্গা শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু এখন দেখছি পা ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে পোষ্টটাকেও ভাঙ্গতে হবে। আফসুস।
পরের পর্ব আসলেও আসতে পারে !!
উৎসর্গঃ নাআমি আপুকে, উচ্ছল, প্রানবন্ত, মমতাময়ী একজন বোনকে, একজন দূরন্ত, মেধাবী ব্লগারকে। ব্লগিং শুরু করার পর থেকে কিছু প্রিয় মানুষ আমার মত একজন নগন্য মানুষকে, ঠিক মত টাইপ করতে না জানা একজন ব্লগারকে(?) এত ভালবাসা দিয়েছে যে আমার মাঝে মাঝে মনে হয় জীবন খুব বেশী সুন্দর !! শ্রদ্ধায়, ভালবাসায় সেই সব প্রিয় মানুষদের সাথে সব সময় আমার একটা অদৃশ্য আত্মিক বন্ধন থাকে যা আমাকে বেঁচে থাকার প্রেরনা দেয়, ভাল মানুষ হওয়ার প্রেরনা দেয়। নাআমি আপু তাদের একজন। থ্যাঙ্কু আপু।