
১।
ইস্কুলে পড়ার সময় ফারুক নামের এক বন্ধু মাথায় প্রেম নামক পাথর পড়ে তার মাথার সবগুলো নিউরন ভাইরাসে পরিনত হয়েছিল। সেই ভাইরাসের অত্যাচার সহ্য করতে হচ্ছিল আমাদের। কিছুদিনের মধ্যে বুঝলাম এই ছেলের জন্য কিছু না করলে ছেলেটা মেট্রিক পরীক্ষায় জিপিএ-ফাইভ না পেয়ে জিপিএ-ভাইরাস পাবে। আমাদের তখনকার ওস্তাদ মিস্তার প্লেবয় অসুস্থ থাকাতে এক সন্ধ্যাবেলায় বন্ধুরা মিলে ফারুকের নিউরনবাহিত রোগের বিস্তারিত বিবরন দিয়ে ফারুকের মিস ডাক্তারের কাছে চিঠি লেখলাম। কিন্তু হঠাৎ করে আমাদের বন্ধুক নম্বর-১ এসেই চিঠিটা ছিড়ে ফেলে বলল,-
'গাধার দল, বয়েজ স্কুলে পড়িস বলে তোদের একটারতো মেয়ে বন্ধু নাই আর সেই তোরা ফারুকের জন্য চিঠি লেখতে গেলি কোন সাহসে !!'
তার নিজেরও যে তখন কোন মেয়ে বন্ধু নাই সেইটা ভয়ে বলি নাই। পরে দেখি সে রবীন্দ্ররচনাবলী বের করে ছাতা-মাথা কি একটা কবিতা লেখছে।
মনে পড়ছে ওই পদটা—
‘ রজনী শাঙন ঘন , ঘন দেয়া - গরজন—
স্বপন দেখিনু হেনকালে । '
সেদিন রাধিকার ছবির পিছনে
কবির চোখের কাছে
কোন্ একটি মেয়ে ছিল ,
ভালোবাসার - কুঁড়ি - ধরা তার মন ।
মুখচোরা সেই মেয়ে ,
চোখে কাজল পরা ,
ঘাটের থেকে নীলশাড়ি
‘ নিঙাড়ি নিঙাড়ি' চলা ।
আজ এই ঝোড়ো রাতে
তাকে মনে আনতে চাই—
প্রথম তিন লাইন পড়েই আমার মাথা ঘুরানো শুরু হল। এই ব্যাটা যে এত ম্যাচিউরড আগেতো বুঝি নাই। আমি তাকে বগা, বিলাই, মাথাহীনসহ আরও কতকিছু বলে যে ক্ষ্যাপাইতাম !! আফসুস
২।
একবার তাকে কথায় কথায় বলেছিলাম আমি কবুতরের মাংশ ভয়ানক পছন্দ করি। পরের সপ্তাহে দেখি সে কেমনে কেমনে আমিসহ ৪ বন্ধুর জন্য হোস্টেলের মধ্যে কবুতরের মাংশ রান্না করে ফেলছে অথচ হোস্টেলের মধ্যে রান্না করা নিষেধ। আমি সব সময় ছিলাম আউলা টাইপের। খাওয়ার সময় বললাম, -
'কবুতরের মাংশ দিয়ে মুড়ি চানাচুর বানা। খাইতে জোশ হবে'।
আমি কথা শেষ করার ৫ মিনিটের মধ্যে সে কবুতরের মাংশের মধ্যে মুড়ি চানাচুর ঢেলে মুড়ি-মাংশ-চানাচুর বানাইছিল।
আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম আমরা
গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান
মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদী গাইতাম
হায়রে !!! মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদী গাইতাম ।
৩।
এসএসসি পরীক্ষার কিছুদিন আগে এক সুন্দরী কন্যা সেই বন্ধুক-১ কে বিরাট এক ভুলেভরা চিঠি দিয়ে জানাল যে সেই কন্যা নাকি ইদানিং মধ্যে রাতে বন্ধুর জন্য গান একা একা গান গায়। বন্ধু চাইলে সেই কন্যা বন্ধুর জন্য ওয়ান-টু-ওয়ান লাইভ কনসার্টের ব্যাবস্থা করবে। আমার সাথে এইটা নিয়ে কথা বললে আমি তাকে সুশীল পন্ডিতের মত বলছিলাম, - 'শোন, চিঠিটা এখনই ছিঁড়ে ফেল। যেই মেয়ের চিঠির প্রতিটা লাইনে বানান ভূল, সেই মেয়ের ভালবাসার গানের প্রতি লাইনেও ভয়ানক ভয়ানক উদ্ভট চিৎকার থাকবে যেই চিৎকার দুঃস্বপ্ন আকারে তোর পরীক্ষার খাতায়ও আক্রমন করে তোর ফাইনাল পরীক্ষার চৌদ্দটা বাজাবে।'
আমাকে অবাক করে দিয়ে বেদ্দপ ছেলেটা সাথে সাথে চিঠিটা ছিড়ে ফেলেছিল। আমার মত পোকা-মাকড় টাইপ মানুষের কথায় কেউ এত বিশ্বাস করে বলে আমি তাদের আবেগের কাছে, ভালোবাসার কাছে নত হয়ে যাই। বন্ধুগুলোও আমার মত পোকা-মাকড়কে এত আলোকিত করে রাখে যে মাঝে মাঝে মনে হয় এতগুলা ফেরেশতার মাঝে আমার মত পোকা কিভাবে ঢুকল !!
পোষ্টের সাথে ছবির কোন সম্পর্ক নাই। ছবিটা ননাফসুসিত বলে শেয়ার করতে ইচ্ছা হল।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১১ সকাল ৭:৫৪