somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুয়াকাটার পথে ........

০৬ ই নভেম্বর, ২০১০ সকাল ৯:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশে অনেক জায়গা থাকতে পারে যেখানে রিকশা চলে না, আমার দেখা এটাই প্রথম। ঢাকা থেকে বরিশাল , অতঃপর কুয়াকাটা।

কুয়াকাটার পথে দীর্ঘ (১৬৯+১১০) ২৭৯ কি . মি. পাড়ি দিতে গিয়ে আমরা ৫ বন্ধু রাত ১১ টার সায়দাবাদ টু বরিশাল এর টিকিট কিনি , এবং ধরা খাই। দূর্ভাগ্য টা পকেটে নিয়েই যাত্রা শুরু। মাওয়া ঘাটে পৌছে দেখি কুয়াশার কারনে ফেরি বন্ধ। ভালই হল, ঘটে বসে খুব মজা করে পদ্মার ইলিশ মাছ ভাজা খেলাম। সারারাত পদ্মার সাথে আমাদের গান গাওয়ার প্রতিযোগিতা চলল। হাতে চায়ের কাপ , মুখে বাংলা গান , অবিরাম পদ্মার গর্জন , শীতের ঠান্ডা বাতাস; ভোরের আলো দেখার জন্য যথেষ্ট।

সূর্য মামার সাথে দেখা হওয়ার আগেই স্পিড বোটে পার হলাম পদ্মা। এ পারের কাহিনি আরো ভয়ানক; ফেরি বন্ধ থাকায় বরিশাল যাওয়ার বাস নাই। এবার , ফিরে যাব ? নৈবচ ! নৈবচ !

এবার শুরু মাইক্রো কাহিনি। পথে হল এক্সিডেন্ট(মাইনর), অবশ্য আমাদের কিছু হয় নি । রাস্তার কাজ চলছিল , মাইক্রোর সাথে সেলু মেশিন এর সরাসরি সংঘর্ষ। ফলাফল উভয়েই আহত। এবার বাবাধন তুমি যাবা কোথায়, ১৫ হাজার টাকা জরিমানা দিলে তবেই যেতে পারবা! অনেক তর্কাতর্কির পর আমরা ১৫ হাজার টাকা, ৫০০ টাকায় নিয়ে আসলাম। যাই হোক আমাদের জন্য মাইক্রো ড্রাইভার এ যাত্রায় ৫০০ টাকা গুনেই বেচে গেলেন। কিন্তু এবার , মাইক্রোর অবস্থাও তো খারাপ। কোনোরকমে লুলা মাইক্রো আমাদের বরিশাল এর গরিয়া হাটের মোড়ে নামিয়ে দিল। পথে দুইবার ফেরি পার হইতে হইসে। লোকাল বাসে চড়ে বরিশাল বাসস্ট্যান্ড এ এসে নামলাম দুপুর ১২ টায়।

বরিশালের রুপাতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে কুয়াকাটা উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম ১২:৩০ এ। ১১০ কি.মি. পথ , ভাবলাম অন্তত সূর্যাস্তটা দেখতে পারব। বাসের অবস্থা খুব খারাপ , যে কোনো সময় নাট-বল্টু খুলে যেতে পারে। এবং রাস্তার বর্ণনায় বলা যায় , মাটির রাস্তা হইলেও বাসগুলো মনে হয় আরো দ্রুত চলতে পারত! তার উপর পথে পরল ৫ টা ফেরি! পথে পরিচয় হল আরিফ ভাইএর সাথে। উনি একাই এসেছেন। প্রায় ১৯-২০ ঘন্টার ভ্রমন শেষে শরীরের সবগুলো হাড় নিয়ে ৬:৩০ এ যখন কুয়াকাটা পৌছলাম, সূর্যমামা আমাদের বিদায় জানিয়েছেন।

বেশ সস্তায় হোটেল ভাড়া করলাম। নিজেদেরকে একটু ঘষা-মাজা করে সমুদ্রের তীরে ছুটলাম। জোয়ারের সময় চলছিল; রাতের অন্ধকার , সমুদ্রের গর্জন , হাতে চটপটি , আর বিচের চেয়ারে বসে আড্ডা; মনে ভাবের উদয় করে। তীরের পার ধরে হাটতে আর কাশতে(নতুন সিগারেটখেকো) লাগলাম , মনটা পুরো নস্টাজিক হয়ে গেল।
রাতের খাবার শেষে হোটেলে ফিরে এসে সারাদিনের ক্লান্তির শোধ নিলাম।

পরদিন সূর্্যোদয় দেখার জন্য খুব তারাতারি সাধের ঘুম থেকে উঠলাম। বিচ থেকে ৭ কিমি. পূর্বে ঝাউবন পেরিয়ে মটরবাইকএ করে গঙ্গামতির তীরে গেলাম সূর্্যোদয় দেখার জন্য (মটরবাইক ভাড়া পাওয়া যায়, হোটেলের বয় কে বলে আগে থেকে যোগাড় করা হয়েছিল)। স্নিগ্ধ সূর্য আর সমুদ্রের উঠতি মিলন আমার জীবনে প্রথম।

খাল পেরিয়ে দেখতে গেলাম লাল কাকড়ার চর। লাল কাকড়াদের সাথে কিচ্ছুক্ষন খেলা করার পর দেখতে গেলাম ৩৬ ফুট উচু বৌ্দ্ব মূর্তি (মিশ্রপাড়ায় অবস্থিত এই বৌ্দ্ব মূর্তিটি বাংলাদেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ - স্থানীয় সূত্তমতে)।

সকাল ১১:০০ টায়, আমাদের নেক্সট মিশন ফাতরার বন ও সুন্দরবনের পূর্বাঞ্চল (মানে সুন্দরবনের শুরু) । গেওয়া , সুন্দরি গাছের সাথে অনেক্ষন ধরে ফটোসেশন চলল। শুটকি উৎপাদন আর ঝিনুক সংগ্রহ , পর্যবেক্ষন শেষে ফিরে এলাম মূল বিচে।

কুয়েটের কিছু বন্ধুদের সাথে পরিচয় হল বিচে। বিচ ফুটবল খেলার শেষে ক্লান্ত দেহকে উজার করে দিলাম সমুদ্রের বুকে। খালি পেটে ততক্ষনে ছুচো ডন মারছে। আস্ত এক রূপচাদা আর শুটকি ভর্তা দিয়ে উদর পূর্তি করলাম (এখানের খাবারের দাম কক্সবাজার , সেন্টমার্টিন এর তুলনায় সস্তা)।

সন্ধার আগে ঘুম থেকে উঠে গেলাম সূর্যকে বিদায় জানাতে। সমুদ্রের পার ধরে খালি পায় প্রায় ২ ঘন্টা ধরে হাটলাম। এরকম সুন্দর মুহুর্ত মানুষের জীবনে খুব কমই আসে। রাখাইনদের মার্কেট থেকে আচার আর পাঞ্জাবি কিনে রুমে ফিরে আসলাম।

আর একটা কথা না বললেই নয়, এখানের উপজাতীয়দের মধ্যে রাখাইন সম্প্রদায়ই সংখ্যগরিষ্ঠ। রাস পূর্ণিমা তাদের প্রধান উৎসব(একটা বিশেষ অনুষ্ঠান হয়, যেখানে মেয়েরা-ছেলেরা জলকেলি খেলে) । এই সময় কুয়াকাটা হয়ে উঠে আরো প্রাঞ্জল। স্থানীয় লোকদের প্রার্থনার জন্য আরো ছোট-বড় কিছু বৌদ্ধ মন্দির আছে।
পরদিন সকালে সমুদ্রকে আরো একবার বিদায় জানিয়ে বরিশালের উদ্দেশ্যে ৯:৩০ এ রওনা দিলাম। বেলা ৩:০০ টায় ১১০ কিমি. পাড়ি দিয়ে বরিশাল এসে পৌছলাম। এবার আর রোড ওয়ে তে যাওয়ার সাহস হল না। সরাসরি লঞ্চঘাটে গিয়ে ঢাকার টিকিট করলাম।

হাতে সময় ৫ ঘন্টা । বরিশালের বন্ধুদের ফোন দিলাম । উদ্দেশ্য, বরিশাল শহর ঘুরে দেখব , আর যাব গুঠিয়া মসজিদে। ব্যাটারীবাইকে চড়ে গুঠিয়া যেতে ১ ঘন্টা সময় লাগল। মসজিদ দেখে ত আমরা সবাই থ। এরকম সুন্দর মসজিদ বাংলাদেশে আর একটা আছে কিনা সন্ধেহ।

রাত ৮:৩০ এ খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বরিশারের লঞ্চে উঠলাম। আগেই বলেছি , ভাগ্য খারাপ , তাই আবার লেট । ৮:৩০ এর লঞ্চ ছাড়ল ১০:৩০ এ। যাই হোক আর কোনো দুর্ঘটনা ঘটে নাই .... । আসার পথে কুয়াকাটা বিচের উথতি লাল আর নিম্নগামি লাল বলয়ের কথা খুব মনে পরছিল।

পরদিন সকাল ছয়টায় আমার বন্ধু ঘুম থেকে তুলে বলে, এই উঠ , আমরা ঢাকা চলে আসছি।

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ; ঘুরলাম, দেখলাম, জানলাম। একই স্থান থেকে সূর্যোদ্য় আর সূর্যাস্ত দেখার জন্য কুয়াকাটা এক অনন্য সুন্দর নাম। কুয়াকাটার পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি, বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে করবে আরও শক্তিশালী।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০১০ সকাল ৯:৩৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ডায়েরী- ১৫২

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৯ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৫:২৩



এনসিপি আওয়ামীলীগকে এত ভয় পাচ্ছে কেন?
অলরেডি আওয়ামীলীগের তো কোমর ভেঙ্গে গেছে। তবু রাতদুপুরে এত আন্দোলন কেন? দেশে ১৮/২০ কোটি মানুষ। তারা তো আওয়ামীগকে ভয় পাচ্ছে না। তাহলে এনসিপির এত... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৃথা হে সাধনা ধীমান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৯ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:৩২

বৃথা হে সাধনা ধীমান.....

বিএনপি মিডিয়া সেল এর সদস্য সচিব ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদউদ্দীন চৌধুরী এ্যানী সকল পত্রিকা কতৃপক্ষের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ কর্মসূচি শুরু করেছেন- বিএনপির এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি কি দু’জন ভারতীয়র আচরণ দিয়ে পুরো ভারতকে বিচার করব?

লিখেছেন প্রগতি বিশ্বাস, ০৯ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:৩৬

সাম্প্রতিককালে একটি আন্তর্জাতিক কমিউনিটিতে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার সুযোগ হয়েছে। এই আন্তর্জাতিক কমিউনিটিতে ভারত এবং চীনের জনসংখ্যাগত আনুপাতিক কারণে অংশগ্রহণ বেশি। এই কমিউনিটিতে ভারত, চীন ছাড়াও পাকিস্তান, নেপাল, ইউক্রেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুদ্ধের মঞ্চে রাজনীতির খেলা: জনগণের বেদনা ও শাসকের বিজয়গাথা

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১০ ই মে, ২০২৫ রাত ১২:০৮


দীর্ঘ তিন বছরের কূটনৈতিক আলোচনার পর ৬ মে ভারত ও যুক্তরাজ্য একটি ঐতিহাসিক বাণিজ্য চুক্তি সাক্ষর করে, যা উভয় দেশের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির অনিশ্চয়তার মাঝে... ...বাকিটুকু পড়ুন

"মা বড় নাকি বউ বড়", প্রসঙ্গ এএসপি পলাশ সাহার মৃত্যু

লিখেছেন সোহানী, ১০ ই মে, ২০২৫ সকাল ৭:৫৮



এএসপি পলাশ সাহার আত্মহত্যা নিয়ে অনলাইন গরম। কেউ মা'কে দোষারোপ করছে কেউ বউকে। আর কেউ অভাগা পলাশকে দোষ দিচ্ছে। অনেকটা শাবানা জসিমের বাংলা ছবির মতো, "মা বড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×