বিভিন্ন কুস্তির আখড়ায় তাদের দেখা যায় ৷ স্বল্পবেশি সাস্থবান যুবকেরা ব্যায়াম করছেন, পেশী সঞ্চালন করছেন, মুগুর ভাঁজছেন, কেঊ বা বালির ওপর সঙ্গীর সাথে কুস্তির মহড়া দিচ্ছেন ৷ ঊত্তর ভারতের ও পাকিস্তানের কুস্তির আখড়াগুলোতে এ দৃশ্য খুবই সাধারণ ৷ এক সময় সারা ভারতীয় ঊপমহাদেশ জুড়ে কুস্তির চল থাকলেও এখন এর চল অনেকাংশেই শুধু ঊত্তর ভারত ও পাকিস্তানে সীমিত হয়ে পড়েছে ৷ বাকী জায়গায় স্থান দখল করেছে পাশ্চাত্য রীতিতে তৈরী আধুনিক সব জিমন্যাসিয়াম ৷ সেখানে অবশ্য কুস্তি হয় না, শুধু শরীরচর্চা হয় ৷ তবে বাঙালীরা কুস্তির থেকে একেবারেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ৷
পাকিস্তান ও ঊত্তর ভারতের বেশিরভাগ আখড়াতেই ভারতীয় পদ্ধতিতে কুস্তি শেখানো হয় ৷ গ্রীকো-রোমান পদ্ধতি এখানে বিরল ৷ পালোয়ানরা আসেন খুব ছোট বয়সে ৷ প্রথমে শুধু শরীরচর্চা ও পরে কুস্তির বিভিন্ন অঙ্গ সঞ্চালন পদ্ধতি তাদের শেখানো হয় ৷ যেমন একটা হল মছলি পাকড় ৷ প্রতিদন্দ্বী দাঁড়িয়ে আছে সামনে ৷ তুমি ঝপ করে বসে যাও ৷ নিজের একটা কাঁধ রাখো তার দুই পায়ের মাঝখানে ৷ তারপর প্রতিদন্দ্বী কিছু বোঝার আগেই ঊঠে দাঁড়াও ৷ প্রতিদন্দ্বী তাল সামলাতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়বে ৷ হাত দিয়ে ছোট ও কম গভীর নদীতে মাছ ধরার পদ্ধতির সঙ্গে সাদৃশ্যের জন্যই এই পদ্ধতির এমন নামকরণ হয়েছে বোধহয় ৷
পালোয়ানরা আবার বজরঙ্গবলী বা হনুমানের খুব ভক্ত ৷ তারা রোজ পূজা করেন বজরঙ্গবলীকে ৷ হিন্দু পালোয়ানরাতো বটেই এমন কী ভারতের বিখ্যাত মুসলমান পালোয়ান গোলাম সাবির বা ইউনুস পালোয়ানরাও মাঠে নামার আগে পূজা করেন বজরঙ্গবলীর ৷ এই নিয়ে উত্তর ভারতে একটা গল্প প্রচলিত আছে ৷ একবার হিন্দু পালোয়ান আর মুসলমান পালোয়ানদের মধ্যে লড়াই লেগে গেল ৷ বজরঙ্গবলী কার এই নিয়ে বিতর্ক ৷ হিন্দু পালোয়ানরা বলেন যে, হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণে বজরঙ্গবলীর উল্লেখ আছে ৷ তাই বজরঙ্গবলী হলেন হিন্দুদের দেবতা ৷ মুসলমান পালোয়ানের পাল্টা যুক্তি দেখান যে, হনুমান নামটা মুসলমাদেরই হয় ৷ এই ধরনের সব নামই মুসমানদের, যেমন উলেমান, সুলেমান, রহমান ইত্যাদি ৷ তাই হনুমান মুসলমানদেরই একজন ৷ হিন্দুরা তাঁর বিদ্যা বুদ্ধি ও শক্তিতে মুগ্ধ হয়ে মুসলমানদের থেকে হনুমানকে কেড়ে নিচ্ছে ৷
কুস্তিগীররা বলেন কুস্তি হল সম্প্রীতির প্রতীক ৷ তবে এর একটা ব্যতিক্রম দেখেছি ৷ ভারতের নানা অংশে হিন্দু মুসলমান একসাথে কুস্তির আখড়ায় কুস্তি শিখলেও বারাণসীতে হিন্দু ও মুসলমানেরা আলাদা আলাদা কুস্তি শেখেন ৷ কোনোটা হিন্দু আখড়া আবার কোনোটা মুসলমান আখড়া ৷ তবে সম্পীতির নামে পালোয়ানরা যাই বলুন, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় এরা পেশী শক্তির অপব্যাবহার কবেন ৷ কেঊ কেঊ গুন্ডা হয়ে যান, কেঊবা রাজনীতিতে এসে অত্যাচার শুরু করেন জনগণের ওপর ৷
মহিলারাও অনেকদিন থেকেই ভারতীয় কুস্তিতে আছেন ৷ বিংশ শতকের বিখ্যাত ভারতীয় মহিলা পালোয়ান ছিলেন হামিদা বানু ৷ তাঁর সাথে (পুরুষ) বাব পালোয়ানের লড়াই ভারতীয় কুস্তির ইতিহাসে এক অন্য মাত্রা পেয়েছে ৷ হামিদা বানু ছিলেন গুজরাতের বরোদা শহরের নিবাসী ৷ হামিদা বলেছিলেন যে, যদি বাব তাঁকে হারাতে পাবেন তবে তিনি বাবের অর্ধাঙ্গিনী হবেন যদি বাব তাঁকে স্ত্রী রূপে গ্রহন করেন ৷ তবে বাব পালোয়ান প্রথমে কোনো মহিলার সাথে লড়তে রাজী ছিলেন না ৷ পরে তিনি রাজী হন এবং ঘোষনা করেন যে হামিদার কাছে হারলে তিনি কুস্তি লড়া ছেড়ে দেবেন ৷ ভারতের ও বিদেশের এত বড় বড় পালোয়ানদের হারিয়েছেন বাব তাহলে একজন মহিলাকে হারাতে কি আর পারবেন না? সবাই ভেবেছিলেন হামিদা গো-হারান হারছেন ৷ তবে ইতিহাসে অন্য ঘটনা লেখা হবে সে কি আর তখন কেউ আন্দাজ করতে পেরেছিলেন? গোটা বরোদা শহর তথা সারা ভারতকে অবাক করে লড়াই শুরু হবার মাত্র দেড় মিনিটের মধ্যে বাবকে পরাজিত করে হামিদা প্রমান করেন যে মেয়েরা অবলা নয় ৷
বর্তমানে বিহারের মহিলা পালোয়ান ঊষা খবরে এসেছেন ৷ তিনিও হামিদার পথ অনুসরণ করতে চলেছেন ৷ শোনপুরের আগামী পশুমেলায় যে পুরুষ পালোয়ান তাকে হারাতে পারবেন তার সাথেই ঊষা মালাবদল করবেন ৷ দেখা যাক ঊষার ভাগ্যে কি লেখা আছে !