মহামারী করোনা চলছে বিশ্ব জুড়ে। প্রাণঘাতি এ মহামারীর কোন ঔষধও নেই। তাই শতর্ক থাকতে হবে নিজের জন্য। দেশের সরকারের নির্দেশ ও পরামর্শ মানতেই হবে। সামান্য শর্ত - জনসমাগম বন্ধ,পরিচ্ছন থাকা-স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা। এইতো নিজেকে সুরক্ষিত রেখে বাঁচাতে হবে নিজের পরিবারকে। তাহলেই বাঁচবে দেশ। বাঁচবে বিশ্ব।
এইতো বর্তমান সময়ের মুগ্ধা কথা।
এটা কারোরই না বোঝার কথা নয়। সরকারকে কেন বাধ্য করতে হবে আমার বুঝে আসেনা।
প্রত্যেক নাগরিককে তার নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে পৃথিবীর শান্তিময় পরিবেশ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। বাকিটা সৃষ্টিকর্তার হাতে।
ধর্ম আর কর্ম মিলেই পার্থিব জীবন।
আর সৃষ্টি কর্তার দয়ার জন্য সকলকে পাপাচার,মিথ্যা,জুলুম,নির্যাতন থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমিত্বের অহংকার ছেড়ে দিতে হবে। যে যত শক্তিই সঞ্চার করো,যত অর্থ বৃত্তের অধিকারীই হওনা সৃষ্টিকর্তা রুষ্ঠ হলে উপায় নেই এটা মনে প্রাণে বিশ্বাস আনতে হবে। সৃষ্টি কর্তার দয়া ফিরেপেতে প্রত্যেকেই অন্যায়ের জন্য অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে সৃষ্টিকর্তার কাছে।
উন্নত রাষ্ট্র ইতালীর দিকে লক্ষ করুন। তারা আজ বুজেছে এ মহামারী সৃষ্টিকর্তার শাস্তির নিদর্শন। সে দেশের রাষ্ট্র প্রধান আজ অসহায় ভাবে বলছেন আসমানী সহযোগিতা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। আসমানী সহযোগিতা মানেই একমাত্র সৃষ্টি কর্তার সহযোগীতা।
মুসলমান ভাইয়েদের শতর্কতার পাশাপাশি এই পৃথিবীসহ সকল সৃষ্টির শ্রষ্ঠা এক আল্লাহর সিজদায় পড়ে যেতে হবে। খোদার দয়ার জন্য আমল বাড়িয়ে দিতে হবে। অন্তরে যপতে হবে দরুদ শরীফ ও তওবা। কমাত্র খোদাই পারেন এ মহামারীর কবল থেকে আমাদের রক্ষা করতে। খোদা চাইলে আমি যে প্রান্তেই থাকিনা সেখানেই পৌঁছে যাবে শাস্তি স্বরূপ এ মহামারীর সংক্রামণ। সুদূর চীন থেকে মুহর্তেই আজাব চলে আসবে আপনার আমার সামনে। আমরা পাকড়ও হয়ে যাব। পড়ুনঃ
✪পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলছেনঃ-
কুল্লু নাফসিন জাইকাতুল মউত,
অর্থাৎ,
প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।
মৃত্যু থেকে বাঁচার সকল রাস্তা বন্ধ।
✪আপনি ভাবছেন করোনা ভাইরাস সংক্রমণের জন্য শহর ছেড়ে পালাবেন কিন্তু-
হাদীসে বলা হয়েছেঃ-
যখন মহামারী ছড়িয়ে পড়বে, আর তুমি যেখানেই রয়েছো, তখন সেখানেই অবস্থান করবে। মহামারী এলাকা থেকে পলায়ন করা জিহাদের ময়দান হতে পলায়ন করার মতোই অপরাধ।
(মিশকাতুল মাসাবীহ-৬১)
✪আপনি বলছেন মহামারীতে (করোনা ভাইরাসে)
আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে আপনি জানাযা পাবেন না আর-
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেনঃ-
মহামারীতে মারা যাওয়া প্রত্যেক মুমিনই শহীদ।
(মিশকাতুল মাসাবীহ-১৫৪৬)
✪আপনি খাদ্য সংগ্রহ করছেন করোনা ভাইরাসের ভয়ে, যেন পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়ে গেলে আপনাকে খাদ্যের অভাবে মারা যেতে না হয়।
কিন্তু- কুরআনে পাকে বলা হয়েছেঃ-
“যমীনের উপর বিচরণশীল এমন কোনো জাতি নেই, যার রিযিক আল্লাহ পাক নির্ধারণ করেন নি।”
(সূরাঃহূদ-৬)
আপনার ঘর ভর্তি খাবার মজুদ আছে অথচ। যেদিন মৃত্যুর ফেরেশতা (মালাকুল মউত) এসে হাজির হয়ে বলবেঃ-
ওহে! আমি পুরো পৃথিবী সন্ধান করে আপনার জন্য এক ফোটা পানির ব্যবস্থা করতে পারি নি, এক টুকরো রুটি পর্যন্ত সংগ্রহ করতে আমি ব্যর্থ হয়েছি, সুতরাং আমাকে এখন আপনার জান কবজ করতেই হবে।
✪অতঃপর-
ধৈর্য্য ধারণ করুন।
আর আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ মরতে পারে না-সেজন্য একটা সময় নির্ধারিত রয়েছে।
সূরা: আল-ইমরান (آل عمران), আয়াত: ১৪৫
মৃত্যু যেমনই হোক প্রস্তুত থাকুন ঈমানের সাথে, পবিত্রতার সাথে আল্লাহ পাকের ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য।
আমিন।
#
মহামারীতে করনীয়ঃ
হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি নিম্নোক্ত দোয়াটি সন্ধ্যায় তিনবার পাঠ করবে সকাল হওয়া পর্যন্ত তার প্রতি কোনো বিপদ হঠাৎ চলে আসবে না। আর যে তা সকালে তিনবার পাঠ করবে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার ওপর কোনো হঠাৎ বিপদ আসবে না। দোয়াটি হলো, ‘বিসমিল্লা-হিল্লাজি ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইউন ফিল আরদি ওয়ালা ফিস সামা-ই, ওয়াহুয়াস সামিউল আলিম’, অর্থ: ‘আল্লাহর নামে যার নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো বস্তুই ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৫০৮৮)
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, (রোগ-ব্যাধি থেকে বাঁচার জন্য) নবী (সা.) পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বিকা মিনাল বাসারি ওয়াল জুনুনি ওয়াল জুজামি ওয়া মিন সাইয়্যিল আসকাম’, অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই শ্বেত, উন্মাদনা, কুষ্ঠ এবং সব দুরারোগ্য ব্যাধি হতে।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস: ১৫৫৪)
করনীয়ঃ
যেকোনো বিপদে বান্দা আল্লাহমুখী হোক এবং তার কাছে ক্ষমা ও আশ্রয় প্রার্থনা করুক এটাই মহান প্রতিপালক আল্লাহর প্রত্যাশা। পবিত্র কোরআনের একাধিক স্থানে বিপদে আল্লাহমুখী হওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। তাই মহামারি দেখা দিলে মুমিনের প্রধান কাজ হলো নিজের ভুল ত্রুটির জন্য আল্লাহর কাছে বিনীত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করা। আল্লাহ বলেন, ‘আমি তাদের শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করলাম, কিন্তু তারা তাদের প্রতিপালকের প্রতি বিনীত হলো না এবং কাতর প্রার্থনাও করে না।’ (সুরা: মুমিনুন, আয়াত: ৭৬)
বেশির ভাগ মহামারিই সংক্রামক। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) মহামারির সংক্রমণ রোধে আক্রান্ত অঞ্চলে যাতায়াত নিষিদ্ধ করেছেন। মুমিন ঈমান ও ইখলাসের সঙ্গে ধৈর্য ধারণ করবে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘কোথাও মহামারি দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা থেকে চলে এসো না। অন্যদিকে কোনো এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করলে সে জায়গায় যেয়ো না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১০৬৫)
সহিহ বুখারির বর্ণনায় পাওয়া যায় শামে মহামারি দেখা দিলে ওমর (রা.) তার গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সফর স্থগিত করেন। (হাদিস: ৫৭২৯)
পরিশেষে বলবো খোদা রহমাতুল্লিল আলামীন আমাদের সকলকে বোঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুক। বেশি বেশি সিজদায় পরে যাই। বেশি বেশি পাঠ করি--