somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারী বিষয়ক সংবাদ পর্যালোচনা

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১০ বিকাল ৫:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০১০ সালের জুন মাসে রাজধানীর আদাবরে শিশু সামিউল আজিম হত্যাকান্ডে তার মা আয়েশা হুমায়রা এশা এবং এ বছরই আগষ্টে খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগে শিশুকন্যা জেনিফার ইসলাম তানহা হত্যার সাথে তার মা হালিমা ইয়াসমিন তমার সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ দুজনকেই গ্রেফতার করেছে।এবং পরকীয়া প্রেম এ দুটো ঘটনার জন্য দায়ী বলে খবরে প্রকাশ।
উপরোক্ত দুটো খবরই বিভিন্ন দৈনিকের প্রথম পাতায় প্রকাশিত হয়েছে এবং বেশ কয়েকদিন ধারাবাহিকভাবে ফলো- আপ খবরও বড় করে ছাপানো হয়েছে।

পাশাপাশি প্রায়শঃই বাবার হাতে শিশু সন্তান খুনের খবরও প্রকাশিত হয়, তবে তা বিভিন্ন দৈনিকের ভেতরের পাতায় এবং অনেক সময় বাবা বাধ্য হয়ে এমন কাজ করেছে বলে খবরটিতে ইঙ্গিত থাকে। যেমন, ৩ নভেম্বর,১০ এর কালের কন্ঠ পত্রিকার ২০ নং পৃষ্ঠায় প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে যে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের কালামপুর গ্রামে অভাবী এক বাবার হাতে ১১ মাসের শিশুপুত্র খুন হয়েছে। পুলিশ ওই খুনের দায়ে বাবা তৌহিদুল ইসলামকে গ্রেফতার ও শিশুপুত্র রিয়াজের খন্ড-বিখন্ড লাশ উদ্ধার করেছে। এখানে অভাবী বিশেষণটি উল্লেখ করার মত এবং বলার অপেক্ষা রাখে না যে খবরটিতে বিশেষণটির ব্যবহার সাংবাদিক ও সম্পাদক সচেতনভাবেই করেছেন।
যেমন করেন নারীদের বেলায় পরকীয়া শব্দটির ব্যবহার।

১৭ নভেম্বর,১০ তারিখের পত্রিকার খবর অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে এক পাষন্ড পিতা নিজ হাতে খুন করেছে ৯ মাসের নিস্পাপ যমজ দুই সন্তান শীমু ও সীমান্তকে। পারিবারিক কলহের জের ধরে খুনের পর লাশ পানিতে ফেলে দেয় ঘাতক পিতা। ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৫ নভেম্বর,১০ মধ্যরাতে সিদ্ধিরগঞ্জের দক্ষিণ কদমতলী এলাকায়। পুলিশ ঘাতক পিতা কাশেমকে গ্রেফতার করেছে।
এখানে পিতাকে ঘাতক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং তার পিতার চেয়েও ঘাতক পরিচয়টিই বেশী প্রাধান্য পেয়েছে।
বাবাদের কর্তৃক সন্তান হুত্যার এমন বহু ঘটনা আমি দৈনিক সংবাদের ভিতরের পাতায় পড়ি, কিন্তু এ নিয়ে আলোড়ন দেখি না। শুনি না। সাধারণত ফলো-আপ খবরও করে না।

সামিউল ও তানহার হত্যাকান্ড নিয়ে দৈনিক পত্রিকার প্রথম পাতায় খবর প্রকাশিত হয়েছিল বলে ঐ দুটো খবরই ছিল ঐ সময়ে ‘টক অব দি টাউন’ পরকীয়া প্রেম গোপন করতে প্রেমিকের সাথে যোগসাজুসে সন্তানকে মেরে ফেলেছে মা।

এ নিয়ে আলোড়ন ছিল বিভিন্ন ঘরোয়া আড্ডায়, সামাজিক অনুষ্ঠানে,অফিসে, আদালতে, থানায়, হাসপাতালে, ভ্রমণে। আর বাবা নামের ব্যক্তিরা অহরহই সন্তানসহ স্ত্রীদের মারছে। এ নিয়ে এমন কোন হৈচৈ নেই। সমাজ ধরেই নিয়েছে মা মানেই অতিমানবিক কোন সত্ত্বা। মা মানেই সব লোভ লালসার উর্ধ্বে এক দেবী চরিত্র। আসলে মা বাবা মানেই সন্তানের প্রতি অপত্যস্নেহ — শুধু মা নয়। এ সত্যটি সাধারণ মানুষ থেকে সাংবাদিকরা পর্যন্ত ভুলে যায়।ব্যতিক্রমী বাবা পাওয়া যায় মিলিয়নে দুয়েকটি আর ব্যতিক্রমী মা পাওয়া যায় বিলিয়নে দুয়েকটি। তারা শরীরে মানুষ হলেও মনে অন্য কোন সত্ত্বা।

এ বিষয়ে পরিবারে, অফিসে, সামাজিক অনুষ্ঠানে, প্রচার মাধ্যমে কোথাও শিশু হত্যাকারী নারীটিকে অপরাধী হিসেবে চিত্রিত করার আগে তার মা পরিচয়কে প্রাধান্য দিয়েছে। বলা হয়েছে– মা হিসেবে এটা কি করে করল? ফলোআপ প্রতিবেদনেও মা হিসেবে নারীর চরিত্র হনন। আমার প্রশ্ন নারী অপরাধীর নয় কেন?

বাবা মারলেও খুনী মা মারলে সে ও খুনী। বাবা মারে নিজ হাতে। আর মায়ের বেলায় মারে যৌথভাবে অর্থাৎ মায়ের যোগসাজুসে সন্তান মায়ের প্রেমিকের হাতে বা পরকীয়া প্রেমের বলি। মূলত মায়ের প্রেমিক পুরুষটিই জড়িত থাকে এবং হত্যায় মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

উপরন্তু সামিউল ও তানহাকে কে মেরেছে তা যখন প্রমানিত নয়, তখন প্রচার মাধ্যমে নারীকে মা হিসেবী উপস্থাপন করে ফায়দা লুটা এবং পত্রিকার কাটতি বাড়ানোর মানসিকতা বর্জন করা উচিত।

নারী মাত্রই তাকে মা ও স্ত্রী বানানোর একটা চেষ্টা সমাজের সব সময়ই আছে।
বোধে, ভাবনায়, ভ্রমণে,বাড়িতে এক সুর —–
কুসন্তান অনেক হয় মা
কুমাতা নয় কখনও তো।
ভক্ত রাম প্রসাদ কালিকে না পেয়ে তার গানের মধ্যে উপরোক্ত আক্ষেপ। এ গানটির লাইনও অনেকে উদাহরণ হিসেবে শুনিয়েছে এবং দেবী কালির রণ রঙ্গিনী মূর্তির রেফারেন্সও দিয়েছেন নেতিবাচকভাবে।
মা কিভাবে সন্তান হত্যার সাথে জড়িত হল? ওরা মা নামের কলঙ্ক। ছিঃ নারীরা সব পারে। নারীরা ছলনাময়ী। কীভাবে সন্তানকে পরকিয়া প্রেমের বলি করল ? এমন স্টেরিওটাইপ কথাবার্তা। নারীকে এর ভেতরে ভরে একটা গতানুগতিক ফ্রেমে বাঁধাই করার নমুনা। বড্ড চকচকে সে ফ্রেম। কাঁচটাও তথাকথিত সামাজিক লেন্সে বেশ স্বচ্ছ।
নারী মা হলেও অপরাধী হতেই পারে। বহু বাবার সন্তানসহ স্ত্রীকে হত্যার ঘটনা পত্রিকার পাতায় অহরহই প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে এত ঘৃণা, এত ধিক্কার শুনি না। তানহার মা হালিমা আর সামিউলের মা আয়েশা অপরাধী। অন্যান্য পুরুষরাও অপরাধী হয়। সে সব অপরাধীদের পুরুষ পরিচয় মোটেই উল্লেখ্য নয়। কারাগারে নারীর চেয়ে পুরুষ বেশি হলেও কেউ পুরুষমাত্রই অপরাধী ভাবে না। হালিমা আর আয়েশা (অভিযোগ প্রমানিত হলে) আইন ও সমাজের চোখে অপরাধী হবে। তাদের জন্য মা নামের দোহাই দিয়ে সমস্ত নারী জাতিকে হেয় করার একটা প্রবণতা প্রতীয়মান —- যা কোনভাবেই প্রত্যাশিত নয়।
অভিযুক্তকে — অপরাধীকে মা বানানোর চেষ্টা যার পরিপ্রেক্ষিতে নারী সমাজকেই দোষারোপ করার সুযোগ সৃষ্টি করা। ব্যক্তি অপরাধীকে গোষ্ঠীর উপর চাপিয়ে দেওয়া।
এ দোষ ও দায় চাপানো থেকে নারীকে অব্যহতি দেওয়া হোক। আমি এর তীব্র নিন্দা করছি।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২০০৮- ২০২৪, হাসিনা ভারতের জনম জনমের ঋণের কিছুটা শোধ করেছেন মাত্র

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১০

২০০৮- ২০২৪, হাসিনা ভারতের জনম জনমের ঋণের কিছুটা শোধ করেছেন মাত্র

এআই দ্বারা তৈরিকৃত রাজনৈতিক কার্টুন—যেখানে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের অসাম্যতা ও রাজনৈতিক নির্ভরতার প্রতীকী উপস্থাপন করা হয়েছে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিক্ষকদের দ্বৈত চরিত্র এবং বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:১৬


বাংলাদেশে শিক্ষার মান নিয়ে সবার মুখে নানা রকম কথা শোনা যায় । কেউ কেউ বলছেন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নতি হচ্ছে , কেউ বলে দিন দিন তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। এপিআই প্ল্যান্ট

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:১৮




ওষুধে দুটো উপাদান থাকে। ওষুধের যে রাসায়নিক উপাদানটি মূলত রোগ সাড়ানোর কাজ করে, সেটিকে বলে এপিআই। দ্বিতীয় উপাদানটিকে সহকারি উপাদান বলে, যেমন— স্টার্চ, রং বা ফ্লেভার।

এপিআইয়ের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাকিস্তান আর চালাক হলো না!

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:৩৬


ওরা আগেও বলদ ছিলো, এখনও আছে। এই বক্তব্যর পর ভারত এখন আরও জোর গলায় বলবে যে কাশ্মীরের সাম্প্রতিক হামলা পাকিস্তানের ইন্ধনেই হয়েছে এবং ফুল ফোর্স নিয়ে স্ট্রাইকে গিয়ে কাশ্মীরকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বাঁধলে বাংলাদেশের কি করণীয় ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:১৬


কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনা বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ নাগরিক মুসলিম হওয়ায় এবং ভারত বিদ্বেষী(যৌক্তিক কারণ আছে) হওয়ায় এই ঘটনাকে সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে মুসলিমদের উপর নির্যাতন থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×