somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বই পুজো খেলা

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথমেই একটি অতি প্রাচীন গল্পঃ


এক দেশে ছিলেন এক রাজা। তার প্রতিদিন নতুন নতুন পোশাক পড়ার বড় শখ।


একদিন সেই দেশে দু'জন কারিগর আসিল। তাহারা রাজার নিকটে গিয়া বলিল, "আমরা আপনার জন্যে চমৎকার একটি নতুন পোশাক বানিয়ে দেব। তবে সমস্যা হইতেছে, কোন মূর্খ লোক এই পোশাক দেখিতে পাইবে না।"


রাজা যার-পর-নাই চমৎকৃত হইলেন। “বাহ ! তাই নাকি ? তবে তো দেখিতে হইতেছে পোশাকটা কেমন ! বানাও তোমরা, টাকা যাহা লাগে লাগুক।“


কারিগররা পোশাক বানানো শুরু করিল। দিনের পর দিন ধরিয়া তাহারা পোশাক বানাইয়া যাইতেছে আর রাজ-কোষাগার থেকে টাকা নিয়াই যাইতেছে।


রাজা মন্ত্রীকে নির্দেশ দিলেন, “যাও গিয়া দেখিয়া আসো, পোশাক কতদূর বানানো হইল। কিন্তু একটা কথা, কোন মুর্খ লোক কিন্তু এই পোশাক দেখিতে পাবে না। হেঃ হেঃ হেঃ। এই সুযোগে জানা যাইবে তুমি বোকা না বুদ্ধিমান।“


মন্ত্রী গেলেন পোশাক দেখিতে। কারিগরেরা মহা উৎসাহে বাতেনি তাঁত যন্ত্রে তাহাকে পোশাক দেখাইতে লাগিলেন।


কিন্তু হায় ! মন্ত্রী যে কিছুই দেখিতে পাইতেছেন না !


কিন্তু না দেখিতে পাইলে তো প্রমাণিত হয় যে তিনি বোকা ! তবে তো লজ্জার অন্ত থাকিবে না !


অতএব হাওয়ায় অংগুলি নির্দেশ করিয়া তিনি বলিলেন, “আহা ! বড়ই সুন্দর পোশাক ! অতি চমৎকার ! রাজা মশাইকে যা মানাইবে না !” বলিয়া কোনো মতে মান-সম্মান নিয়া তিনি পালাইয়া বাঁচিলেন।


বিকালে মন্ত্রী গিয়ে রাজাকে বলিলেন, “অসাধারণ পোশাক বানানো হইতেছে। হাজারের মধ্যে একটি।“


“বটে !” রাজা যার পর নাই খুশি হইলেন। “তবে যেদিন আমি এই পোশাক প্রথম পরিধান করিব, সেই দিন একটি শোভাযাত্রার আয়োজন করা হউক।“


যেমন কথা তেমন কাজ। আয়োজন করা হইল এক বিরাট শোভাযাত্রার। পোশাক তৈরি শেষ হইলেই শোভাযাত্রা হইবে।


অতঃপর কোন এক শুভদিনে সেই পোশাক তৈয়ার শেষ হইল। কারিগরেরা আসিয়া রাজাকে পোশাক পড়াইয়া দিতে লাগিলেন। কিন্তু একি ! রাজাও যে কোনও পোশাক দেখিতে পাইতেছেন না !


আহারে, দেখিবেন কিভাবে ? আদৌ কোনও পোশাক থাকিলে তো !


কারিগরেরা যে প্রতারক, তাহা তো কেহই জানে না ! আসলে কোনও পোশাকই কারিগরেরা বানায় নাই। সবই গায়েবি, সবই ভুয়া।



কিন্তু পোশাক দেখিতে না পাইলে তো প্রমাণিত হয় যে তিনি বোকা! এখন উপায় ?


কারিগরেরা প্রশ্ন করিল, “কেমন হইয়াছে রাজা মশাই পোশাক? দেখিতে পাইতেছেন তো?”


“হেঃ হেঃ হেঃ। কি যে বল ! দেখিতে পাইব না কেন ? আমি কি বোকা নাকি ? অসাধারণ, অপূর্ব এ পোশাক।“


গায়েবানা পোশাক পড়াইয়া দেয়া হইল রাজাকে। তাহা পড়িয়া বিশাল হস্তীর পিঠে চড়িলেন রাজা, রাজকর্মচারীরাও পোশাকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।


পথের ধারে উৎসুক জনতা রাজার পোশাক শোভাযাত্রা দেখিতেছে। সকলেই বলিতেছে, “আহারে ! বাহারে ! কতই না সুন্দর পোশাক!” যদিও কেউই কিছু দেখিতে পাইতেছেন না, তাই বলিয়া যে তাহারা বোকা, এই কথা তো প্রকাশিত হইতে দেয়া যাইবে না। অতএব লাগাও তালি।


ভীড়ের মধ্য থেকে এক বালক রাজাকে পর্যবেক্ষণ করিতেছিল। সে রাজার শরীরে কোন কাপড়ের অস্তিত্ব খুঁজিয়া পাইল না। মজা পাইয়া সে চেঁচাইয়া উঠিল, “এ হে, রাজা ন্যাংটা, রাজা ন্যাংটা !”


হুশ হইল রাজার। আসলেই তো তিনি উলঙ্গ !


কোনমতে লজ্জাস্থান চাপিয়া ধরিয়া পলায়ন করিলেন তিনি ।


গল্পের এই অংশটুকু সবারই জানা। কিন্তু পরবর্তীতে কি হইয়াছিল, কেহ কি জানে ?


রাজার পাইক-পেয়াদারা সেই বালককে শ্বাসরোধে হত্যা করিয়াছিল। এত বড় সাহস ! রাজাকে অপমান করিয়াছিস তুই ?


কিন্তু হায় ! সর্বনাশ যাহা হইবার তাহা তো হইয়াই গিয়াছে !


যাহাই হউক, দিন বদলাইয়াছে। সেই রাজা আজ নাই। নাই সেই বালক।


আজ তবে এই গল্পের প্রয়োজনীয়তা কি ?


হুমম, আসুন, দেখা যাক।


একটি গ্রন্থ অনেক কাল যাবৎ তোলপাড় তুলিয়াছে।


বহু প্রাচীন সেই গ্রন্থ, অন্তত ১৫০০ বছরের পুরানো তো হইবেই। গ্রন্থ যিনি লিখিয়াছেন তাহাকে কেউ দেখে নাই, কিন্তু গ্রন্থ নিজেই দাবি করিতেছে, এটি একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা।


গ্রন্থের লেখক গ্রন্থের অভ্যন্তরে নিজের এবং নিজের রচনার গুণাগুণ বর্ণনা করিয়া যেসব তথ্য দিয়াছেন, তাহা থেকে মানুষ জানিলঃ


১। এটি একটি অতি মহৎ আসমানী গ্রন্থ।

২। ইহার বক্তব্যের অর্থ বাহির করিবার যাবতীয় দায়-দায়িত্ব আপনার।

৩। কিছু কিছু লোক এই গ্রন্থ বিশ্বাস করিবে না।

৪। তাহারা নরকে নিক্ষেপিত হইবে।


এইসব তথ্য বাদে, মানুষ সেই গ্রন্থের বক্তব্য সম্পর্কে পরিষ্কার হইতে পারিল না।


তবে সকলেই এক বাক্যে স্বীকার করিয়া নিলো যে, এই গ্রন্থ অতি মহৎ। করিবে না কেন ? কেউ কি চায় নরকে নিক্ষেপিত হইতে ?


সহসা পৃথিবীতে কিছু মধ্যসত্ত্বভোগী নায়কের আবির্ভাব ঘটিলো।


তাহারা টিভি চ্যানেলে এই বইটির স্বরচিত তর্জমা করিয়া দিতে লাগিলেন। মানুষ দেখিল, “আহা ! কতই না বিজ্ঞ এইসব কোট পরিহিত শীর্ণকায় ভদ্রলোক !”


ভদ্রলোকের বক্তব্য থেকে জানা গেলোঃ


এই গ্রন্থ অতিশয় বিজ্ঞান সম্মত। বিজ্ঞান আজ যাহা আবিষ্কার করিতেছে, তাহার সকল বর্ণনা এই গ্রন্থে বহু পূর্বেই দেখানো হইয়াছে, ইত্যাদি।


যাহাই হউক, "মানবতা" নামে এক বালক এতক্ষণ ধরিয়া নায়কের বক্তব্য শুনিতেছিল।


সহসা তাহার মনে প্রশ্ন জাগিলো, “তাহা হইলে বিজ্ঞানের এতসব কিছু আবিষ্কারের পুর্বেই কেন এই গ্রন্থ সেসব কথা বলিয়া দিল না ? বিজ্ঞান এইসব আবিষ্কার করা পর্যন্ত অপেক্ষা করিবার কি প্রয়োজন ছিল ? তাহাতে করিয়া কি মানব সভ্যতার অগ্রগতি আরও পূর্বেই হইত না ?”


নায়ক হাসিয়া কহিলেন, “ইহার উত্তরও এই গ্রন্থে রহিয়াছে। বলা হইয়াছে, তোমরা জ্ঞানের অন্বেষণ কর।“


আর মিথ্যাচার সহ্য করিতে পারিল না মানবতা।


চিতকার দিয়া উঠিল, “বাহির কর দেখি, এইডস রোগের প্রতিষেধক এই গ্রন্থ কি নির্ধারণ করিয়াছে? এত নীতিবাক্য শুনিবার সময় নাই। এদিকে মানুষের প্রাণ যাইতেছে, আর তোমার গ্রন্থ অনির্দিষ্ট ভবিষ্যতের আশায় মানুষের হাতে আবিষ্কারের দায়ভার দিয়া রাখিয়াছে। কী লাভ তোমার এই মানুষ মারা জ্ঞানের বই দিয়ে ?”


নাহ, চরম বিরক্তিকর ! আর তো পারা যায় না। এইবার তবে এই অর্বাচীনকে উচিত শিক্ষা দেয়া হউক।


মুখোশ ছাড়িয়া বাহির হইয়া আসিলেন নায়কেরা। সবাই মিলিয়া চাপিয়া ধরিলেন মানবতাকে।


হত্যার বিভৎস আনন্দে গগনবিদারী চিৎকার দিয়া উঠিলেন নায়কেরা।


কেহ কহিলেন, “আল্লাহু আকবর”

কেহ কহিলেন, “জয় ভগবান।“


চালাইয়া দিলেন ধারাল ছুড়ি অসহায় বালক মানবতার কন্ঠনালী বরাবর। টপটপ করিয়া রক্ত ঝরিতেছে তাহার গলা বাহিয়া। মারা যাইতেছে মানবতা।


দূরে দাঁড়াইয়া মানবতার মৃত্যুদৃশ্য উপভোগ করিতেছে নায়কেরা। এক হাতে তাদের ধারাল ছুড়ি। অপর হাতে সেই অতি প্রাচীন গ্রন্থ।


১৫টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×