কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার ভারতীয় সীমান্তে পদ্মার বুকে অবস্থিত এই চর। এই চরে গেলে আপনি প্রাচীন বাংলাদেশের অস্তিত্ব প্রতিটি মুহুর্তে অনুভব করবেন। স্থানীয়দের সহজ সরল জীবন ব্যাবস্থা, রাস্তাঘাট, বাড়ী সবখানেই আপনি প্রাচীন বাংলার অস্তিত্ব পাবেন। ফিরে যাবেন প্রাচীন বাংলার এক জনপদে।
দৌলতপুর উপজেলার ১৪ টা ইউনিয়ন এর একটা ইউনিয়ন হচ্ছে চিলমারী যার সম্পুর্ন টা পদ্মার বুকে অর্থাৎ পদ্মা নদীর বুকে জেগে উঠা একটা ভূখন্ড। চিলমারী গ্রাম প্রতিষ্ঠা পায় ১৮৫০ সালের দিকে। তারপর সময়ের সাথে সাথে চর বাড়তে থাকে, বাড়তে থাকে গ্রাম। পরে সেটা একটা পূর্নাঙ্গ ইউনিয়নে রূপ নেয়।
আমার দাদুর বাড়ী দৌলতপুর উপজেলাতে হওয়ায় আমি দৌলতপুর থেকে সরাসরি বাইক নিয়ে গিয়েছিলাম। তবুও যারা দুরে থেকে যেতে চান তাদের নিয়ম টা বলে দিচ্ছি।
ঢাকা থেকে বাসে সরাসরি কুষ্টিয়ার প্রাগপুর যাবেন। সকাল এবং রাতে ২-৩ টা অপারেটর এর বাস যায়। এসি ও নন এসি বাস পাবেন। সার্ভিস খুব খারাপ না হলেও সরাসরি প্রাগপুরের উদ্দেশ্যে বাস সংখ্যা খুবই কম পাবেন। প্রাগপুর থেকে সরাসরি অটোতে করে মহিশকুন্ডি যাবেন।
ঢাকা থেকে যারা আরামে যেতে চান সরাসরি ভেড়ামারা যাবেন। এবং ভেড়ামারার উদ্দেশ্যে বাস প্রতিঘন্টায় কল্যানপুর ও গাবতলি থেকে ছেড়ে যায়। এসি ও নন এসি উভয় বাস পাবেন। বাসের মধ্যে রয়েছে এসবি সুপার ডিলাক্স, হানিফ, শ্যামলী, জে আর, সুপার সনি, বিআরটিসি উল্লেখযোগ্য। ভাড়া গাড়িভেদে ৪০০-১২০০ পর্যন্ত। সবচেয়ে ভালো এসবি।
অথবা ট্রেনে করে বেনাপোল এক্সপ্রেস, সুন্দরবন এক্সপ্রেস, ও চিত্রা এক্সপ্রেস এ সরাসরি ভেড়ামারা নামবেন। ভেড়ামারা থেকে বাসে মহিষকুন্ডী যাবেন, ভাড়া ৩০ টাকা।
আপনি যেখান থেকেই রওনা হোন না ক্যানো আগে মহিষকুন্ডি আসবেন। মহিষকুন্ডী বাজারে নেমে মহিষকুন্ডি বিজিবি ক্যাম্পে ইনফরমেশন দিয়ে যাবেন। যেহেতু বর্ডার এলাকা, এবং পর্যটন এলাকা না হওয়াতে আপনাকে সন্দেহভাজন হিসেবে বিবেচিত করতে পারে।
তারপর মহিষকুন্ডি থেকে অটোতে করে মুন্সিগঞ্জ ঘাট, ভাড়া ১৫-২০ টাকা। সেখান থেকে নৌকাতে করে মূল চর।
শীত মৌসুমে গেলে মুন্সিগঞ্জ ঘাট থেকে বাশের সাকোতে (ফরাস) করে চিলমারী চরে যেতে পারবেন।
চিলমারী চর একটা ইউনিয়ন। চিলমারী চরে পুরোটাই মাটির রাস্তা। সুতরাং চরের মধ্যে যোগাযোগ ব্যাবস্থা কি হবে বা কিভাবে ঘুরবেব সেটা একটা প্রশ্ন। মুন্সিগঞ্জ ঘাটে বাইক পাবেন। তাদের সাথে দিন চুক্তি বা ঘন্টা চুক্তিতে বাইক ভাড়া করে নিবেন অথবা ঘাট পার হয়ে বাইকে করে চরের বাংলাবাজার কিংবা চিলমারী গ্রামে যাবেন। ভাড়া নেবে ৮০-১০০৳। দরদাম করে নিবেন। বাংলাবাজার বা চিলমারী নেমে ভ্যান ও ঘোড়ার গাড়ি পাবেন। যারা ধীরে সুস্থে চরটা দেখতে চান তাদের জন্য বেস্ট অপশন পরের টা।
এবার আসি চরের বর্ননায়। দেখার মত স্পেসিফিক কোন উল্লেখযোগ্য যায়গা নেই। কিন্ত এখানকার পরিবেশ, জীবনব্যাবস্থা, এতই সহজসরল এবং সাদামাটা যা আপনাকে মুগ্ধ করবে এবং নিশ্চিত আপনায় মায়ার বাধনে বেধে ফেলবে।
শুরুতে চরে প্রবেশপথে আমরা পেয়েছিলাম হলুদ শুভেচ্ছা। চরে নামতেই যতদুর চোখ যায় শুধু সরিষার ক্ষেত। সরিষার ক্ষেতের মধ্য দিয়ে চলে গেছে রাস্তা (ভিডিও)। সরিষা ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে কিছুদুর যাবার পর রামকৃষ্ণপুর বিজিবি ক্যাম্প পাবেন। যেহেতু চরে থাকার জন্য কোন হোটেল নেই। সেহেতু থাকার জন্য তাবু করে থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে বিজিবি ক্যাম্পে অনুমতি নিয়ে তাবু করতে পারবেন। আমরা তাবু করিনি, আমাদের এক পরিচিতার বাসায় ছিলাম।
বিজিবি ক্যম্প থেকে বের হয়ে কিছুদুর গেলেই ইন্ডিয়া বাংলাদেশ সীমান্ত যা পদ্মানদী দ্বারা বিভক্ত উভয় দেশ। সেখানে সুন্দর একটা মুহুর্ত কাটিয়ে দিতে পারবেন। নদীর ওপারে ভারতীয় মানুষ দেখতে পারবেন, তাদের রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যানবাহন স্পষ্ট দেখতে পারবেন৷
তারপর আমরা গেলাম বগমারি বাজার। ছোট্ট বাজার। স্কয়ার সাইজের বাজার। গোটা বিশেক দোকান চারিদিক দিয়ে ঘিরে একটা স্কয়ার শেপ করেছে। ওখানে আমরা চা খেলাম। আমাদের কথাবার্তা এবং চালচলন দেখে বাজারের স্থানীয় রা যখন বুঝলো যে আমরা বহিরাগত তখন তাদের কত কৌতূহল ও আন্দরিকতা সেটা লিখে প্রকাশ করতে পারার ক্ষমতা আমার নাই। কারন শুধু ভ্রমনের জন্য কেউ এতদূর থেকে এখানে এসেছে এটা তাদের চোখে অবিশ্বাস্য। একজন মাঝবয়েসী মুরুব্বি সাথে বেশ খাতির হয়ে গেলো, উনি কিছুতেই আমাদের চায়ের বিল দিতে দিলেন না।
চিলমারী চরের মধ্যে বাংলাবাজারে আপনি পাবেন ভারতীয় পন্যের সমাহার। মোবাইল থেকে শুরু করে বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস যন্ত্র এবং থালাবাসন, শাড়ি, কসমেটিক পন্য সহ অনেক কিছুই পাবেন। দামও খুব সস্তা কারন পন্যগুলো সব চোরাইপথে আসা। তবে এখান থেকে পন্য না কেনাই ভালো কেননা চোরাপথ অবৈধ, তাই চোরাপন্য সহ আপনায় পেলে স্থানীয় প্রশাসন আপনাকে চোরাকারবারি হিসবে বিবেচিত করবে।
এখানে (বাংলাবাজার) খাবার হোটেল পাবেন। খুব উন্নতমানের খাবার আশা করা বোকামি। তবে যা যা খেতে চান বলে যাবেন ওরা রান্না করে দেবে। এইসব হোটেলে বল্লে ওরা স্থানীয়দের বাসায় থাকার ব্যাবস্থা করে দেন অনেকসময়।
সন্ধ্যার একটু আগে বাংলাবাজার থেকে সামান্য দুরেই বালুর নদীর পাশে বালুর চরে দারুন সময় কাটালাম। চারিদিকে শুধু বালু আর বালু। শ্বেতশুভ্র বালু। মনে হবে আপনি মরুভূমি চলে এসেছেন।
পরে একে একে চিলমারী, নতুন চিলমারী, চর ভবনান্দ দিয়ার, চল্লিশপাড়া, বাংলাবাজার, বাজুবাজার, পূর্ব ও পশ্চিম আমদানি ঘাট ঘুরে আসতেই সন্ধ্যা লেগে গিয়েছিলো। যেহেতু আমরা দুপুরে গিয়েছিলাম, এবং খুব ভালো লেগেছিলো বিধায় পরিচিত একজনের বাসায় থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম।
চর ভবানন্দপুরে আমরা রাত্রি যাপন করি। সবচেয়ে ভালো মুহুর্ত টা রাতের জন্য অপেক্ষা করছিলো। সন্ধ্যা হয়ে গেলে সমগ্র বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এই চর ও চরে হাজার পচিশেক মানুষ। টাইম মেশিনে পিছিয়ে যাবে ৩০-৪০ বছর পূর্বে। আমরা রাতের খাবার খেয়ে পদ্মার পারে যাই। যানবাহনহীন এবং বিদ্যুৎহীন এক জনপদে নেই কোন শব্দ, নেই আলোর ঝলকানি বা চাকচিক্য। কিন্ত চাদের আলো, ফ্রেশ আকাশে অসংখ্য উজ্জল তারা, পদ্মার পানির ঢেউয়ের গর্জন আর সেই সাথে নদীর পার বেয়ে সরিষা ফুলের মৌ মৌ গন্ধ আপনাকে বিমোহিত করবে বারবার। সে এক স্বর্গীয় অনুভূতি। শুধু এই মুহূর্তটার জন্য বারবার এখানে আসতে মন চাইবে আপনার।
খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে আমরা হাটতে বের হয়েছিলাম। ঠান্ডা ও হিমেল হাওয়ায় শরীরে কাপুনি দিলেও মন ভালো করে দিচ্ছিলো বক, কুয়াশা, পিপরার মত মানুষের মাঠে কাজে যাওয়ার মত দৃশ্য। চরের মাঝে ছোট বড় অনেক ক্যানাল চলে গেছে। বিধায় প্রচুর সাকো ও ডিঙ্গি নৌকা পাবেন। ডিঙ্গি নৌকাগুলোতে শুধুমাত্র একজনের ক্যাপাসিটি রয়েছে। আমি সাতার জানিনা বলে চড়িনি। কিন্ত আমার এক সাথী সে একটু চালিয়েছিলো ক্যানালে। চাইলে আপনিও চালিয়ে দেখতে পারেন স্থানীয় নৌকার মালিকের সাথে কথা বলে। সেক্ষেত্রে লাইফ জ্যাকেট থাকলে ভালো। কারন পদ্মার ঢেউ আর বিশালতা আপনার মনে ভয় ধরিয়ে দেবে মুহূর্তে মুহূর্তে। পরের দিনের ছবি উঠাতে পারিনাই। কেননা মোবাইলে চার্জ ছিলোনা।
আর এখানে আসলে অবশ্যই পদ্মার পানিতে গোসল করবেন। আমরা করিনি কিন্ত আগেরদিন দুপুরে পানি দেখে মনে হলো ইশ যদি গোসল করতে পারতাম।
আমরা যেখানেই গিয়েছি মানুষের সাথে দেখা হলে তারা আমাদের আন্তরিকতা দিয়ে সাহায্য করেছে, জানতে চেয়েছে, কথা বলেছে। ওদের আন্তরিকতার জন্য খুব ভালো লেগেছিলো এই চর।
আমরা সকালেই ওখান থেকে চলে এসেছিলাম। এমন সহজ সরল মানুষ, চরের ২৫-২৭ হাজার মানুষের যাদের সাথেই দেখা হয়েছে তারাই আন্তরিকতার সাথে ডেকেছে, প্রায় প্রতিটি বাসার উঠোন আমাদের সবার জন্য উন্মুক্ত, উন্মুক্ত ছিলো তাদের ভালোবাসা। সেই জনপদ ছেড়ে আসতে সারাক্ষণ সারাদিন মন ছিলো বিষন্ন। এই চরের মানুষের কথা মনে হচ্ছিলো বারবার। আর স্থানীয়দের ভালবাসার কথা নাইবা বল্লাম।
কিছু তথ্যঃ
কেউ হয়তো শুধুমাত্র এই চর দেখার জন্য সুদূর ঢাকা বা ঢাকার বাইরে থেকে আসবেন না। কিন্ত অনেকেই লালন মেলা বা শিলাইদহ দেখার জন্য কুষ্টিয়া আসেন। তারা চাইলে বাড়তি একটা দিন এখানে কাটাতে পারেন। তাদের জন্য পরামর্শ কুষ্টিয়া টার্মিনাল থেকে সরাসরি মহিষকুন্ডী বাস পাওয়া যায়। তারপর মহিষকুন্ডী থেকে যাবার বাকি নিয়ম আগের মতন। আমার বিশ্বাস কুষ্টিয়া জেলা ভ্রমনে গেলে এই চিলমারীর চর ভ্রমন হতে পারে আপনার কুষ্টিয়া জেলার মধ্যে অন্যতম সেরা মুহুর্ত।
ফেব্রুয়ারীর শেষ থেকে মার্চ পর্যন্ত যারা যাবেন তাদের জন্য সুখবর দিচ্ছি। এই চরের প্রচুর তামাক চাষ হচ্ছে। মার্চ মাসে তামাক পোড়ানো শুরু হয়। তামাক কিভাবে পোড়ানো হয় সেটা এখানে এলেই দেখতে পাবেন। আমরা এখানে এসে তামাকের ঘর তৈরী করা দেখছিলান। তামাক পোড়ানোর জন্য তামাক ঘরে টানা ৩-৪ দিন জ্বাল দেওয়া লাগে। এখানে উচু বিল্ডিং নেই, তাই মার্চ মাসের দিকে এলে রাতের বেলা চরের যেদিকেই তাকাবেন শুধু তামাক ঘরের চুলা দেখতে পাবেন। অভূতপূর্ব দৃশ্য। যদিও চরে এই দৃশ্য আমি দেখিনাই কিন্ত আমার দাদুর বাড়ী গ্রামে এই দৃশ্য দেখেছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলছি দারুন হবে।
চরে প্রচুর মহিষ আছে। যারা মহিষের দুধ খেতে চান তারা স্থানীয় বাথান এর মালিক কে বল্লেই তারা বিনামূল্যে খেতে দেবে আপনায়।
সতর্কতাঃ
এখানে বিদ্যুৎ ব্যাবস্থা নেই একেবারে। সৌর বিদ্যুৎ একমাত্র ভরসা। এবং প্রায় বাড়িতেই সৌর বিদ্যুৎ এর ব্যাবস্থা রয়েছে। যবার সময় পাওয়ার ব্যাংক থাকলে মোবাইলে চার্জ দিতে সুবিধা।
যেহেতু ওটা একদম বর্ডার এলাকা সুতরাং ঐ এলাকা খুবই সন্দেহজনক এলাকা। চলাফেরায় অসঙ্গতি পেলে সন্দেহভাজন হিসেবে আপনাকে বিজিবি আটকে দিতে পারে। তবে নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে সেখানে থাকার জন্য আগেই মহিষকুন্ডি বিজিবি ক্যাম্পকে অবশ্যই ইনফো করবেন। তারা জানিয়ে দিবে মুন্সিগন্জ ক্যাম্প, বগমারি ক্যাম্পকে। যদি ইনফো করে না যান তাহলে যেকোন সময় ব্লাকার বা মাদক ব্যাবসায়ী বলে সন্দেহভাজন হতে পারেন। তবে বিজিবিকে ইনফো করলে কোন ইন্ডিয়ার পন্য আনতে পারবেন না। যদিও তল্লাশি করবে না তবুও নিরাপত্তার জন্য এগুলো না করাই ভালো।
এই চরের ৯৯% বাড়ি ঘর টিনের। অল্প কিছু মসজিদ ও বিদ্যালয়ের ইটের দালান রয়েছে। তাই শীতকালে একটু ঠান্ডা লেগেছিলো আমাদের ঘুমাতে।
যেহেতু চরের পুরোটাই মাটির রাস্তা সেহেতু ধুলাবালি প্রচুর তাই মাস্ক ব্যাবহার করতে পারেন। খুব কম রাস্তাতে ধুলাবালি আছে। এবং বর্ষাকালে না যাওয়া উত্তম, কেননা কাদা হয় খুব।
কোন সমস্যার মুখোমুখি হলে বিজিবি ক্যাম্প যোগাযোগ করতে পারেন।
খুব বেশি হইচই করবেন না। নদী থেকে নিরাপদ দুরত্বে তাবু করবেন। এবং যেহেতু এখানে সেইভাবে পর্যটকদের আনাগোনা কম ও রাতে থাকেনা তাই আপনি/আপনারা তাবু করার সময় স্থানীয় কাউকে রাখার চেষ্টা করবেন।
টয়লেট করার জন্য স্থানীয় মানুষের হেল্প নিন।
আর বাইরে থেকে খাবার নিয়ে গেলে যত্রতত্র ফেলবেন না। চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল যেখানে সেখানে ফেলে চরের পরিবেশ বিনষ্ট করবেন না। স্থানীয়দের সাথে ভালো ব্যবহার করবেন ও চরের স্থানীয় জনপদের আচারবিধি মেনে চলবেন। যদিও তারা খুবই সহজসরল।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:৫০