"ভবিষ্যতের চিন্তা করা বুদ্ধিমানের কাজ" কিংবা "আজকের বাদশাহ কালকের ফকির" এই ধরনের উপদেশ সম্বলিত গল্প অনেকেই হয়তো শুনেছেন। এসব ঘটনার প্রধান চরিত্র থাকে একজন ব্যাক্তি। কিন্তু একটা দেশ বা রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে যে একই ধরনের উপদেশ প্রযোজ্য, তার এক চমৎকার উদাহরণ হচ্ছে প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপ রাষ্ট্র নাউরু। আজকের লেখা এই নাউরুকে নিয়ে। একসময়ের সবচেয়ে ধনী দেশ কিভাবে সবচেয়ে দরিদ্র হয়। এবং অভাবে পড়লে রাষ্ট্র কি না করে।
পৃথিবীর তৃতীয় ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র নাউরু। আয়তন ২১ বর্গ কিলোমিটার (৮.১ বর্গ মাইল)। জনসংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। আসলে নাউরু একটা দ্বীপ মাত্র। এই হিসাবে ক্ষুদ্রতম দ্বীপ রাষ্ট্র। বিশাল মহাসাগরে এমন এক জায়গায় নাউরু অবস্থিত যে, এর আশেপাশে কোন দেশ বা দ্বীপ নেই। সবচেয়ে কাছের দ্বীপ হচ্ছে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরের কিরিবাতির বানামা দ্বীপ। নাউরুর আরেকটা বিশেষত্ব হচ্ছে, এটা পৃথিবীর একমাত্র রাষ্ট্র যার কোন অফিসিয়াল রাজধানী নেই।
ধারনা করা হয়, অন্তত তিন হাজার বছর আগে নাউরুতে মানুষের বসবাস শুরু হয়। ১৭৯৮ সালে Jhon fearn নামে একজন তিমি মাছ শিকারি প্রথম ইউরোপীয় হিসাবে এই দ্বীপে পা রাখেন। তিনি এই দ্বীপের নাম দেন Pleasant Island। এর পরে ইউরোপীয় জাহাজ এই দ্বীপে যাত্রা বিরতি করত। দ্বীপের আদিবাসীদের থেকে মদ আর অস্ত্রের বিনিময়ে পানি সংগ্রহ করত। অনেকে আবার এই দ্বীপে থাকা শুরু করেন।
১৮৮৮ সালে ব্রিটেনের সাথে এক চুক্তির মাধ্যমে জার্মানি নাউরু দখল করে। ১৯০০ সালে নাউরুতে ফসফেট পাওয়া যায়। এতে করেই নাউরুর ভাগ্য পরিবর্তন শুরু হয়। নাউরুতে ফসফেট থাকার একটা অদ্ভুত কারন আছে। আগেই বলেছি, নাউরুর আশেপাশে কোন ভূখণ্ড নেই। এর ফলে হাজার হাজার বছর ধরে সামুদ্রিক পাখি তাদের যাত্রা বিরতি এবং টয়লেট হিসাবে এই দ্বীপ কে ব্যবহার করত। হাজার হাজার বছরের পাখির মল ফসিল হয়ে পরিণত হয় ফসফেটে। সার তৈরিতে ফসফেটের বিশেষ গুরুত্ব আছে। নাউরুর ফসফেট ছিল সবচেয়ে উন্নতমানের ফসফেটের মধ্যে একটি। এর শতকরা ৮০-৯০% বিশুদ্ধ ফসফেট। নাউরুর ফসফেটের একটা বড় অংশ ব্যবহার হত অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডের কৃষিকাজে।
১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে অস্ট্রেলিয়া নাউরু দখল করে। যুদ্ধ শেষ হলে লীগ অফ নেশনের অধীনে নাউরুর প্রশাসনিক দায়িত্ব দেওয়া হয় ব্রিটেন, নিউজিল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়াকে। আর ফসফেট তোলার কাজ করে ব্রিটিশ ফসফেট কোম্পানি। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান নাউরু দখল করে। যুদ্ধ শেষে নাউরুর দায়িত্ব আবার ঐ তিন দেশের কাছে চলে আসে। ১৯৬৮ সালে নাউরু স্বাধীনতা পায়।
১৯৭০ সালে ২১ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার দিয়ে নাউরু ফসফেট কোম্পানি কিনে নেয়। ফসফেট কোম্পানি কেনার মধ্য দিয়ে নাউরু পরিনত হয় অন্যতম ধনী দেশে। ঐ সময় মাথাপিছু জিডিপির হিসাবে নাউরুর উপরে ছিল শুধু সৌদি আরব। প্রতিবছর গড়ে ফসফেট বিক্রি করে আয় করত ১০০-১২০ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার। খরচ বাদে উদ্বৃত্ত থাকত ৮০ মিলিয়ন ডলার। রাষ্ট্রের বড় বড় পদে নিয়োগের জন্য অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, নিউজিল্যান্ডের নাগরিকদের নিয়ে আসা হত । ফসফেট খনি তে আবার নাউরুর বাসিন্দারা কাজ করত না, খনিতে কাজ করার জন্য ফিলিপাইন, চীন, কিরিবাতি থেকে শ্রমিকরা আসত।
ফসফেট বিক্রি করে যে আয় হত, তার একটা অংশ আবার জনগন পেত। শিক্ষা, চিকিৎসা, সংবাদপত্র, যানবাহন সব ছিল ফ্রি। কোন ধরনের ট্যাক্সও ছিল না। রাস্তায় বিলাসবহুল গাড়ি চলত। যেই দেশ সাইকেলে চড়ে ১.৫ ঘণ্টায় ঘুরে আসা যায়, সেখানে স্পোর্টস কার চলত। নাউরুর বিমান সংস্থা এয়ার নাউরুর অধীনে ছিল ৭ টা বিমান। সেই বিমান দিয়ে নাউরুর জনগণ অস্ট্রেলিয়া, ফিজি, সিঙ্গাপুর যেত মার্কেট করতে। বোয়িং বিমান চালিয়ে নিখোঁজ জেলেদের খোঁজা হত।
নাউরুকে বলা হত প্রশান্ত মহাসাগরের কুয়েত। ফসফেট বিক্রির একটা অংশ চলে যেত, "নাউরু ফসফেট রয়্যালিটিস ট্রাস্ট" এর কাছে। তারা আবার পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় লাভজনক বিনিয়োগ করত। আমেরিকা, ব্রিটেন, নিউজিল্যান্ড, ভারত, ফিজি, ফিলিপাইন বিভিন্ন দেশে তাদের বিনিয়োগ ছিল। এর মধ্যে ছিল হোটেল, ফ্ল্যাট, গলফ মাঠ, ফসফেট কোম্পানি। মেলবোর্নে ছিল ৫২ তলা বিশিষ্ট ‘নাউরু হাউস’।
এরকম একটা অবস্থা ছিল যে, নাউরুর হারাবার কিছুই নেই। ফসফেট শেষ হয়ে গেলেও বিভিন্ন দেশে যে বিনিয়োগ আছে, তা দিয়ে অনায়াসে চলে যাবে। ১৯৮২ সালে নাউরুর একজন সরকারি উপদেষ্টা বলেন— “ফসফেট শেষ হয়ে গেলেও নাউরুর বিলিয়ন ডলার থাকবে, যা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি। তা দিয়ে একই রকম বিলাসিতায় জীবন চালানো যাবে। এমনকি জনসংখ্যা আরও বেশি হলেও।”
কিন্তু সবকিছু আসলে নিয়ম মেনে চলে না। ৯০ দশকের শুরুর দিকেই নাউরু বুঝতে পারল, তাদের খনি শেষ হয়ে আসছে। আগের মত বিলাসী জীবন চালু রাখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা ঋণ করা শুরু হল। ১৯৮৯ সালে নাউরু আন্তর্জাতিক আদালতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করল, স্বাধীনতার আগে অস্ট্রেলিয়ার প্রশাসন নিয়ে বিশেষ করে, খনি চালাতে গিয়ে পরিবেশের ক্ষতি করার কারনে। কোর্টের বাইরে ৭৫ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে এই মামলার মীমাংসা করা হয়।
১৯৯৩ সালে ডিউক মিঙ্কস নামে একজন অস্ট্রেলিয়ান অর্থ উপদেষ্টা নাউরুর সরকারকে রাজি করান, নতুন ধরনের মিউজিক্যাল ড্রামাতে বিনিয়োগ করার। মিঙ্কস আগে “ইউনিট ৪+২” নামে একটা ব্র্যান্ড দলে ছিলেন। তিনি এবং ঐ ব্র্যান্ডের আরেকজন মিলে লিওনার্দো দা ভিঞ্চি এবং মোনালিসার কল্পিত সম্পর্ক নিয়ে "Leonardo the Musical: A Portrait of Love" নামে একটা নাটক বানিয়ে ফেলেন। লন্ডনের স্ট্র্যান্ড থিয়েটারে নাটকের উদ্বোধন হয়। প্রথম শো দেখার জন্য নাউরুর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা লন্ডনে পৌঁছান। দর্শকের অভাবে কয়েক সপ্তাহ পরেই এই শো বন্ধ করে দিতে হয়। এই শো তে নাউরু ২ মিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করে।
"নাউরু ফসফেট রয়্যালিটিস ট্রাস্ট" যার দায়িত্ব ছিল বিভিন্ন দেশে নাউরুর জন্য সম্পদ কেনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা, ভুল পরিচালনা আর দায়িত্বহীনতায় একের পর এক তাদের প্রজেক্ট লোকসান হতে থাকে। ১৯৯৫ সালে নিউইয়র্কে এক ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকল্পে তারা লোকসান করে ১২ মিলিয়ন ডলার। এর মাঝে প্রতারক চক্র ভুয়া ক্রেডিট আর ব্যাংক নোট দিয়ে ট্রাষ্ট থেকে হাতিয়ে নেয় ৬০ মিলিয়ন ডলার।
ফসফেট উত্তোলনের আগে নাউরুবাসী নারিকেল চাষ আর মাছ ধরে খাবারের জোগান দিত। উর্বর মাটি থাকায় ভাল ফসলও হত। যখন খনির কাজ শুরু হল, তখন তারা কৃষিকাজ ছেড়ে দিল। জমির মালিক ফসফেট বিক্রির একটা অংশ পেত বলে, বলতে গেলে বিনা পরিশ্রমে তাদের কাছে টাকা আসত। খাবার উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়ার বিদেশ থেকে খাবার আসত। ঐতিহ্যবাহী সবজি আর মাছের বদলে তারা খেতে শুরু করল টিনজাত মাংস, আলুর চিপস, বিয়ার। এসব খেয়ে নাউরুতে দেখা দিল স্থূলতা আর ডায়াবেটিকস। সবচেয়ে বেশি অতিরিক্ত ওজনের শিকার নাউরুর জনগন। বর্তমানে ৯৭% পুরুষ আর ৯৩% মহিলা স্থূলতার শিকার। ৪০ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিকসে আক্রান্ত। এর সাথে কিডনি আর হার্টের সমস্যা তো আছেই।
এখন যে আবার কৃষিকাজ শুরু করবে, সেই উপায়ও নেই। কারন একসময়ের চোখের মনি ফসফেট। পুরো নাউরুই আসলে ফসফেটের খনি, এর ফলে দ্বীপের প্রায় ৯০% জায়গা ফসফেটের জন্য খনন করা হয়েছে। যখন ফসফেট শেষ হল, তখন দেখা গেল, পুরো দ্বীপ ধূসর চুনাপাথরের চূড়ায় ভরা। কোন কোন ক্ষেত্রে সেটা প্রায় ৭৫ ফুট লম্বা। ঐ জায়গায় কৃষি কাজ তো দূরের কথা, ভালভাবে হাঁটাও যায় না। সমুদ্রের পানির সাথে ফসফেট মিশে সামুদ্রিক পরিবেশও নষ্ট হয়ে আছে। ফসফেটের খনির কারনে দ্বীপের জলবায়ুও পরিবর্তন হয়ে গেছে। একে তো বিশাল এলাকা জুড়ে গাছ নেই। খনি এলাকা থেকে উঠা গরম বায়ু মেঘ সরিয়ে দেয়, ফলে বৃষ্টি হয় না। এবং মোটামুটি নিয়মিত খরা চলে। এই সমস্যা কিন্তু সহসা হয় নি। যখন ফসফেট ছিল, তখন এগুলোকে কেউ সমস্যা মনে করত না। দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা না বুঝলে যা হয় আর কি।
এদিকে দেশ চালাতে গিয়ে, টাকার অভাবে বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে। সেগুলো সুদে আসলে ক্রমাগত বেড়েই চলছে। এ অবস্থায় ঋণ মেটাতে একের পর এক বিদেশে থাকা নাউরুর সম্পদ বিক্রি করে দেওয়া ছাড়া তাদের আর কিছু করার ছিল না। তারপরও ঋণ শোধ করা যাচ্ছিল না। একপর্যায়ে সব ঋণ শোধ করার জন্য নাউরুর সব আন্তর্জাতিক রিয়েল এস্টেটের বিপরীতে ২৪০ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার ঋণ নেওয়া হয়। স্বাভাবিক ভাবেই সব ঋণ শোধ করা গেলেও ২৪০ মিলিয়ন ডলার শোধ করা যাচ্ছিল না। কারন তাদের তো আয়ের কোন উৎসই নেই। একপর্যায়ে ঋণদাতারা নাউরুর সমস্ত রিয়েল এস্টেট অধিগ্রহনের অধিকার পেয়ে গেল। এক পর্যায়ে এমনকি তারা নাউরুর একমাত্র বিমানটাও নিয়ে গেল। ৭ টা বিমান থেকে তখন শুধু ঐ একটা বিমানই ছিল।
এ অবস্থায় নাউরু নিজেকে ট্যাক্স হেভেন দেশে পরিণত করার চিন্তা করল। এই ধরনের ট্যাক্স ফ্রি সুবিধা অনেক ছোট দেশেই আছে। এক সময় টাকা দিয়ে যে কেউ নাউরুর নাগরিক হতে পারত। ২৫ হাজার ডলার দিয়ে নাউরুতে যে কেউ ব্যাংক খুলতে পারত। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই ব্যাংক শুধুই কাগজে কলমে। ৯০ এর দশকে এই নীতি নাউরুর জন্য সুবিধাই নিয়ে আসল। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ায় পর রাশিয়ান মাফিয়ারা বিপুল টাকা নাউরুর ব্যাংকের সহায়তায় অবৈধভাবে সরিয়ে ফেলে। এভাবে চললে হয়তো নাউরুর অর্থনীতি আবার সচল হত। কিন্তু ২০০১ সালে টুইন টাওয়ারে হামলার পর সারা পৃথিবী জুড়ে এই ধরনের অবৈধ টাকা সরানো নিয়ন্ত্রন করা হয়। আন্তর্জাতিক চাপে পরে ২০০৪ সালে নাউরু তার এই নীতি পরিবর্তন করে।
অল্প দিনের মধ্যে এমন অবস্থা শুরু হল, টাকার অভাবে নাউরুর অধিবাসীরা সাধারন সুবিধা গুলোও পায় না। এবং অন্য দেশ সাহায্য না করলে যাও চলে তাও চলা অসম্ভব। এখন সমস্যা হচ্ছে, নাউরু এমন একটা জায়গায় অবস্থিত, না অর্থনৈতিক না সামরিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। একটা দেশ তো আরেকটা দেশকে শুধু শুধু সাহায্য করবে না।
এক সময় নাউরু আবিস্কার করে, ছোট দেশ হলেও বিশ্বে তারা স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃত। এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বাধীন দেশের একটা ভোট বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তারা তখন টাকার বিনিময়ে তাদের পররাষ্ট্র নীতি পরিবর্তন করা শুরু করল।
২০০২ সালে চীনের সাথে ১৩০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে চুক্তি করে তারা তাইওয়ানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে। ২০০৫ সালে চীনের চুক্তি ভেঙে তাইওয়ানের সাথে আবার সম্পর্ক করে এর চেয়ে ভাল অফার পেয়ে। ২০০৯ সালে তারা রাশিয়ান সমর্থিত আবখাজিয়া আর দক্ষিণ অসেটিয়াকে স্বীকৃতি দেয়। এর পরই রাশিয়া নাউরুকে ৫০ মিলিয়ন ডলার মানবিক সাহায্য করে। ২০১৭ সালে জেরুজালেম কে রাজধানী করা নিয়ে জাতিসংঘে যে ভোট দেওয়া হয়, তাতে ৯ টা দেশ বিপক্ষে ভোট দেয়, তার একটা নাউরু।
ফসফেট যখন সম্পূর্ণ শেষ হয়ে যায়, এবং একের পর এক বিপর্যয়ে পড়ে যখন নাউরুর অর্থনীতি পুরোপুরি শুন্যের কাছাকাছি, তখন আচমকা এগিয়ে আসে অস্ট্রেলিয়া। এটাও বেশ অদ্ভুত ভাবে। অস্ট্রেলিয়ায় অবৈধ অভিবাসীর সমস্যা আগে থেকেই। ২০০১ সালে তারা সিন্ধান্ত নেয়, অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্র সীমায় যেসব অবৈধ অভিবাসী ধরা পড়বে, তাদেরকে তারা অস্ট্রেলিয়ায় রাখবে না, প্রশান্ত মহাসাগর জুড়ে যে ছোট দ্বীপ রাষ্ট্র আছে, সেখানে রাখা হবে।
এই প্রকল্পের অধীনে Nauru Regional Processing Centre বানানো হয়। এবং অভিবাসীদের রাখা হয়। বিনিময়ে অস্ট্রেলিয়া নাউরুকে বিপুল পরিমান আর্থিক সাহায্য করে। এই প্রতিষ্ঠান কে কেন্দ্র করে, নাউরুতে আবার কিছু অর্থনৈতিক কাজ শুরু হয়। ২০০৮ সালে বন্ধ করা হলেও ২০১২ সালে আবার খোলা হয়। বর্তমানে নাউরুতে ৩৬৯ জন অভিবাসী আছে। এই সেন্টারের সাথে নাউরুর প্রায় ১০০ টা পরিবার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িত। বলার অপেক্ষা রাখে না, যেই দেশের অর্থনীতি চলে অন্য দেশের দয়ায়, সেই দেশে এই ধরনের অভিবাসীরা কি ধরনের কষ্টে দিন যাপন করে। সেখানে মৌলিক চাহিদা তো পুরন করা হয় না, তার সাথে আছে পানির সমস্যা, জায়গার সঙ্কট। অভিবাসীরা নিয়মিত বিক্ষোভ করে। ২০১৭-১৮ তে এই সেন্টার চালানোর বিনিময়ে অস্ট্রেলিয়া নাউরুকে প্রায় ২৫ মিলিয়ন ডলার মানবিক সাহায্য দেয়। অস্ট্রেলিয়া থেকে এই রকম সাহায্য তারা প্রতিবছরই পায়। বলা যায়, এই অর্থ ছোট দেশটার জন্য কতটা দরকারি।
নাউরুর ভবিষ্যৎ কি হবে সেটা হয়তো সময়ই বলে দিবে। তবে Pleasant Island হবার কিছু আশা এখনো আছে। নাউরুর বিশাল সামুদ্রিক এলাকা জুড়ে প্রচুর টুনা মাছ পাওয়া যায়। অন্য দেশের জেলেরা টাকা দিয়ে নাউরুর সীমানায় মাছ ধরে। এখনও পর্যন্ত এটা বেশ লাভজনক। অস্ট্রেলিয়ার সাহায্যে জলযান সংস্কার শিল্প বানানোর চেষ্টা চলছে। আশার কথা ২য় স্তরে ফসফেট আবার পাওয়া গেছে। ফসফেট খনির ভয়াবহতার পর আবার তারা ফসফেটের দিকে ফিরে যায় কিনা কে জানে। অভাবে পড়লে সবই সম্ভব।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:০২