somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতঃপর ফেসবুক ও ভারতীয়দের ভালোবাসা।

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৫:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফেসবুক এর একটা বইয়ের গ্রুপ থেকে তার সাথে পরিচয়।
গ্রুপ টা বাংলাদেশের গ্রুপ। আর সে ছিলো একজন ইন্ডিয়ান। আগরতলা শহরের।

প্রথম পরিচয়ের দিন অনেক কথা হলো। অসম্ভব রকমের বাংলাদেশের ভক্ত। বাংলাদেশ এর আনাচে কানাচে তার ভালোই পরিচিত। তার আগ্রহের সুবাদে তাকে ট্রাভেলারস অফ বাংলাদেশ গ্রুপে এড করি। তারপর? তারপর সে মুটামুটি গ্রুপে খুবই পরিচিত মুখ। তার নাম শুভ। শুভজিত চৌধুরী শুভ। আমার বড় ভাই। আমায় খুব ভালোবাসেন। অন্য মায়ের পেটের ভাই।

বই নিয়ে ঘাটাঘাটি করি এটা সে মুটামুটি জানেন। সে সুত্রে ফেসবুকের ভারতের একটা বইয়ের গ্রুপ "বইপোকা" সেই গ্রুপে আমায় এড করেন। তার কিছুদিন পর আমায় সে গ্রুপের এডমিন করেন। আমার কাজ ছিলো শুধু বাংলাদেশ এর সাহিত্য ভারতীয়দের কাছে তুলে ধরা। ব্যাস আর কিছু না।

এমনিতেই আমার ধারনা ছিলো যে ভারতীয় রা বাংলাদেশ কে দেখতে পারেন না বা অন্যভাবে দেখেন, আর সেখানে আমাদের সাহিত্য নিয়ে এত আলোচোনা করলে হয়তো বিরূপ মতামত পেতে পারি। মুটামুটি সেসময় আমার একটা মিশ্র অনুভূতি হলো।

শুরুতেই তাদের সব পোস্ট দেখে এতটুকুই বুঝেছিলাম যে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালী দের কাছে বাংলাদেশের সাহিত্য মানেই হুমায়ূন আহমেদ, জাফর ইকবাল, শামসুর রাহমান, আর নির্মলেন্দু গুন এই কয়জন কেই চেনেই। তারমধ্যে হুমায়ুন আহমেদ এর জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশী। আর আগরতলায় এদের সাথে সাথে সেলিনা হোসেন বেশ জনপ্রিয়।

তো কাজ শুরু হিসেবে আমি এদের বাইরে নিয়মিতভাবে আহমেদ ছফা, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, আবু ইসহাক, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, জহির রায়হান, শহীদুল্লাহ কায়সার, শওকত ওসমান, সৈয়দ শামসুল হক, হেলাল হাফিজ, আরজ আলী মাতুব্বর, ইমদাদুল হক মিলন, শওকত আলী, কাজী আব্দুল ওদুদ, রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল ফজল, কাজী ইমদাদুল হক, হুমায়ূন আজাদ, আনিসুল হক, হরিশংকর জলদাস, অধ্যাপক শাহাদুজ্জামান সহ অন্যান্য এবং তরুন ও উদীয়ামান সব লেখক দের নিয়েই মাঝে মাঝেই পোস্ট দিয়েছি, এখনো দিয়ে যাই। এবং যতটা পারি আমি আলোচনা করে যাই এবং আমি যখনই সময় পাই, যখনই ফাকা থাকি তখনই স্বতঃস্ফূর্তভাবেই কাজগুলো করি।

তাদের থেকে যে পরিমান রেসপন্স পাই তা আমার কল্পনার বাইরে। এদের নিয়ে পোস্ট দেবার সুবাদে ইন্ডিয়া তথা পশ্চিমবঙ্গ থেকে হুড়হুড় করে আমার কাছে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট আসতে লাগলো। আমিও তাদের নিতে লাগলাম। এখন এমন একটা পর্যায় এসেছে যেখানে আমার ফ্রেন্ড লিস্টের প্রায় অর্ধেকই ইন্ডিয়ান।

তারা আমায় নক করে, জানতে চাই অমুক বইটার কোন প্রকাশনীর, দাম কত, অমুক লেখকের কয়েকটা ভালো বইয়ের নাম বলুন, আপনাদের নীলক্ষেত এর ছবি দেন, সহ হাজারো তথ্য তারা জানতে চান। আমি যতটুকু পারি সাহয্য করি। হয়তো সময় আর ব্যাস্ততার জন্য উত্তর করা হয়ে উঠেনা। অনেক মুরুব্বী, আমার বাবা মায়ের চেয়েও অনেক বয়সী আমায় নক করে জানতে চান এই বইটা কোন প্রকাশনীর। শত ব্যাস্ত থাকলেও তাদের আমি সময় দেই। আমি মাথা নত করে থাকি। তারা যে আমায় আগ্রহ ভরে জানতে চান আমার দেশ ও আমাদের সাহিত্য নিয়ে এটা আমার খুব ভালো লাগে। খুব আপ্লুত হয়ে উঠি। এদের মধ্যে থেকে বেশ কজন যোগাযোগ করে বাংলাদেশে এসেছিলেন অমর একুশে বইমেলার সময়।

বই নিয়ে ঘাটাঘাটির সুবাদে আমি এখান থেকেই জেনে গেছি কলকাতার কোথায় কোথায় বাংলাদেশের বই পাওয়া যায় এবং কত শতাংশ ছাড় দেন। বইপোকা গ্রুপের এডমিন হবার দরুন কলকাতার বেশ কিছু প্রকাশনীর সাথে খাতির হয়ে গেছে, এক প্রকাশনীও তো বাংলাদেশ এসেছিলেন, তারা এসে জানতে চান কিভাবে বাংলাদেশের কোন বইগুলোর চাহিদা বেশি। আমার ক্ষুদ্র মস্তিস্ক হয়তো ঠিকভাবে উত্তর করতে পারেনা, তবুও বলি অমুক অমুক বই। পরিচয় হয়েছে অনেক লেখকের সাথে।

একজন আমায় একদিন বলে, আমি আগে জানতাম বাংলাদেশের মানুষ মানেই অহংকারী আর তারা ইন্ডিয়ান দেখলেই গালিগালাজ করেন। কিন্ত আপনাকে দেখে আমার সেই ধারনা পালটে গেছে। আমি কিছুই বলিনা। আমার শুধুই মনে হয় আমি শুধু আমাকে রিপ্রেজেন্ট করছিনা, আমার দেশকেও করছি। আমি যে ব্যাবহার টা করবো তারা কখনোই মনে করবে না যে রাসেল ছেলেটা অমন। বরং তারা মনে রাখবে বাংলাদেশের মানুষ টা অমন বাংলাদেশের মানুষ তেমন।

কেউ কেউ আমায় ভালোবেসে বলেন ভাইয়া, কেও ডাকে দাদা, কেউ আমায় তার আরেক ছেলে বানিয়েছেন, কেউ বানিয়েছেন বন্ধু, কেউ বানিয়েছেন আংকেল। এমন ঘটনা অনেক হয়েছে যে তাদের পরিবারের সাথে আমায় কথা বলিয়ে দিয়েছেন, তাদের পরিবারের সবাই আমার ফ্রেন্ড লিস্টে এড হয়েছে, হয়ে গেছি তাদের পরিবারের একজন। কেউ কেউ কলকাতার বইমেলা আমায় লাইভ করে দেখান। কেউ কেউ আমার জন্য আলাদা একটা একটা ডাক নাম দিয়েছেন, অনেকেই ফেসবুক থেকে হোয়াটস এপ এ এসেছেন। কেউ কেউ আবার সরাসরি মোবাইলেই ফোন দেন। আবার এমনো হয়েছে দেশ ভাগের আগে আমাদের নদীয়া জেলা বাসা ছিলো সেখানের অনেকেই আগ্রহ ভরে আ,আয় দাওয়াত করেন যে তুমি শুধু ইন্ডিয়া আসো আমরা বাকিটা করিতেছি।

আমি কখনোই ভাবিনি যে ভারতীয়রা এতটা ভালোবেসে একজন বাংলাদেশী কে কাছে টেনে নেবেন। আমি বরাবরই তাদের নিয়ে খারাপ ধারনা গুলো এতদিন বয়ে নিয়ে এসেছি। তাদের ভালো দিক টা কখনোই ভেবে দেখিনি। হ্যা আমি জানি আমাদের দুই দেশের মধ্যে অনেক অভিন্ন সমস্যা রয়েছে, অনেক ক্ষেত্রেই আমরা লুজার। আমি, আপনি ফেসবুক বা ব্লগে ক্রিকেট, সীমান্ত, তিস্তা, গরু, ফেলানী, ট্রানজিট নিয়ে লিখে লিখে ফাটিয়ে দিতে পারি কিন্ত এতে কাজের কাজ কতটুকু হয়? তারচেয়ে বরং একে অপরকে আমরা শ্রদ্ধা করি, ইতিবাচকভাবে দেশটাকে তাদের কাছে তুলে ধরি। আমি আপনি সবাই মিলেই তো বাংলাদেশ।

হোক সে ছোট কাজ তবুও নিজের একটা কাজের জন্য যদি নিজের দেশের প্রশংসা শোনেন তাহলে তার যে অনুভূতি তা আপনাকে বলে বোঝানো যাবেনা, এটা এক উপলব্ধির ব্যাপার। একমাত্র বই পারে ভুল বোঝাবুঝি দূর করে সবাইকে এক করতে। কারন যারা বইপোকা গ্রুপে আছেন তারা অবশ্যই রুচিশীল। আর এই রুচিশীল মানুষগুলো বাংলাদেশ কে কি রকম ভালোবাসেন আপনি কল্পনা করতেও পারবেন না।

এতদিন হয়তো তাদের বাঙ্গালীদের বিরাট একটা অংশ আমাদের দেশের বিশাল সাহিত্য সম্ভার এর খোজ পেতেন না বা জানতেন না, তবুও আমার মত নগন্য একজন এর মাধ্যমে যদি একজন ইন্ডিয়ান আমাদের সাহিত্য নিয়েও আগ্রহ দেখায় তাহলে আমার চেয়ে খুশি আর কে হবে। আমি নিশ্চিত জানি আমাদের দেশের সাহিত্য যদি তাদের ভালোভাবে উপস্থাপন করা যায় তাহলে আমাদের দেশের সাহিত্যকে খাটো করে দেখার আর সুযোগ পাবেনা।

আর হ্যা পরিশেষে শুভজিত চৌধুরী শুভ ভাই কে অনেক অনেক ধন্যবাদ আমায় এমন একটা সুযোগ করে দেবার জন্য ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১০:৪০
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×