somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য জমি পাচ্ছে না স্যামসাং ও সনি

৩০ শে এপ্রিল, ২০১১ সকাল ৭:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিনিয়োগে অনুকূল পরিবেশের কথা বলে বিশ্বের বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করলেও কার্যত তাদের চাহিদা মেটাতে পারছে না সরকার। চাহিদা অনুযায়ী জায়গাসহ আনুষঙ্গিক সুবিধা না পাওয়ায় ফিরে যেতে হচ্ছে বৃহৎ শিল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে আগ্রহী বিশ্বের নামি বহুজাতিক কম্পানিগুলোকে। সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক বহুজাতিক কম্পানি স্যামসাং এবং জাপানভিত্তিক সনি করপোরেশন বৃহৎ শিল্পে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশে এসেছিল। কিন্তু অবকাঠামোগত সুবিধা না পেয়ে তাদের ফিরে যেতে হচ্ছে খালি হাতে। তবে এ ব্যাপারে কৌশলগত পরিকল্পনা অনুসরণ করা হলে এ বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ হয়তো এখনো ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
জানা গেছে, গত ১২ এপ্রিল বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) কর্মকর্তাদের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আসা স্যামসাং কম্পানির একটি ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশে বৃহৎ শিল্পে বিনিয়োগের ব্যাপারে তাদের আগ্রহের কথা জানায় এবং এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব পেশ করে। এখানে কম্পানিটি তাদের মোবাইল ফোনসেট উৎপাদনের ইউনিট স্থাপন করতে চেয়েছিল। এ জন্য স্যামসাংয়ের পক্ষ থেকে বেপজায় দুই হাজার একর জমি প্রদানের চাহিদার কথা জানানো হয়। কিন্তু বেপজা থেকে তাদের জানানো হয়েছে, এ পরিমাণ জায়গা তাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। এর আগে গত ৯ এপ্রিল একই উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম কর্ণফুলী ইপিজেডেও (কেইপিজেড) সমপরিমাণ জায়গা চেয়েছিল কম্পানিটি। কিন্তু সেখান থেকেও তাদের একই কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, গত মাসে কেইপিজেডে বিনিয়োগ করার জন্য আসে বিশ্বখ্যাত আরেক জাপানি বহুজাতিক কম্পানি সনি করপোরেশন। কিন্তু তাদেরও জায়গা দেওয়া সম্ভব হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে দুটি বহুজাতিক কম্পানিকেই ফিরে যেতে হয়েছে খালি হাতে। একইভাবে জাপানের আরেকটি বহুজাতিক কম্পানি সুমিতমো করপোরেশনও বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে এসে ৫০০ একর জায়গা চেয়েছে। সূত্র জানায়, তারাও কেইপিজেড থেকে ফিরে যাচ্ছে খালি হাতে।
স্যামসাং ও সনির মতো প্রতিষ্ঠানকে জায়গা দিতে না পেরে কেইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাহমুদ হাসান আফসোস করে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এ ধরনের নামি বহুজাতিক কম্পানিকে বিনিয়োগের সুযোগ করে দিলে ইপিজেডের তথা দেশেরই ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হতো। কিন্তু তাদের দেওয়ার মতো জায়গা কেইপিজেডে খালি নেই।' স্যামসাং ও সনি করপোরেশন এ যাবৎকালে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান বলে বেপজা সূত্র নিশ্চিত করেছে।
উল্লেখ্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে বাংলাদেশে বৃহৎ শিল্পে বিনিয়োগের আগ্রহ নিয়ে ভারতের টাটা গ্রুপ এলেও গ্যাস, বিদ্যুৎসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে বনিবনা না হওয়ায় তাদেরও ফিরে যেতে হয়েছিল খালি হাতে।
বেপজার মহাব্যবস্থাপক (ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন) এ জেড এম আজিজুর রহমান স্যামসাংকে বিনিয়োগের ব্যাপারে কোনো রকম সহায়তা করা যাচ্ছে না নিশ্চিত করে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'স্যামসাংয়ের পক্ষ থেকে ঢাকা, চট্টগ্রামের আশপাশে জায়গা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমাদের এ ইপিজেডগুলোতে তাদের দেওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। আমরা তাদের এটা জানিয়ে দিয়েছি।'
বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ড থেকে প্রাপ্ত এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশে চলতি ২০১০-১১ অর্থবছরে বিনিয়োগের পরিমাণ ব্যাপক হারে বেড়েছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে যেখানে শতভাগ বিদেশি ও যৌথ মালিকানায় ১৬০টি প্রকল্পে ছয় হাজার ২৬০ কোটি টাকার বিনিয়োগ নিবন্ধিত হয়েছিল, সেখানে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত প্রথম ৯ মাসেই নিবন্ধিত বিনিয়োগের পরিমাণ ২৬ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা। এ সময় ১৪৮টি প্রকল্পে প্রস্তাবিত কর্মসংস্থান ধরা হয়েছে ৪৭ হাজার ২৫২ জনের।
হঠাৎ করে বিশ্বখ্যাত কম্পানিগুলোর বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ বাড়ার কারণ হিসেবে গত দুই বছর ধরে লন্ডনভিত্তিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমস গ্রুপের এফডিআই ম্যাগাজিনের জরিপে বাংলাদেশের ভালো অবস্থানকেই চিহ্নিত করেন বিশেষজ্ঞরা। এ প্রসঙ্গে বেপজা সদস্য (অর্থ) এ কে এম মাহবুবুর রহমান বলেন, 'বিশ্বের বড় বড় বিনিয়োগকারীরা এ জরিপের ফলাফলকে প্রাধান্য দেন। এ কারণেই সম্প্রতি বহুজাতিক কম্পানিগুলো বাংলাদেশের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে।'
প্রসঙ্গত, এফডিআই ম্যাগাজিনের জরিপের ফলাফলে ২০১০ সালে মোট প্রকল্প ও বিদেশি বিনিয়োগ বিভাগে প্রবৃদ্ধির হারে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশ শীর্ষস্থান অধিকার করেছে। এর আগে এফডিআই ম্যাগাজিন গত বছরের ৪ জুন সংখ্যায় প্রকাশিত 'গ্লোবাল স্পেশাল ইকোনমিক জোন র‌্যাংকিং'-এর জরিপে 'ব্যয় নিয়ন্ত্রণ' ও 'অর্থনৈতিক সম্ভাবনাময়' ইপিজেডের তালিকায় চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (সিইপিজেড) যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান অর্জন করেছিল। বিশ্বের প্রায় ৭০০ ইপিজেডের ওপর ছয় মাস গবেষণা করার পর এ রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়।
বেপজা সূত্রে জানা যায়, সরকার ইপিজেড সম্প্রসারণের পক্ষে নয়। বরং বিশেষায়িত অর্থনৈতিক এলাকা (স্পেশাল ইকোনমিক জোন) করার জন্য নীতিমালা প্রণয়নের কাজ করছে। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিশেষজ্ঞ জানান, নীতিমালা প্রণয়ন ও জায়গা নির্ধারণ করে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক এলাকা বাস্তবায়নে দীর্ঘসময় লাগবে। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে অনেক কম্পানি বিনিয়োগের জায়গা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে। কোনো নামকরা কম্পানি যদি বিনিয়োগের সুযোগ না পেয়ে ফিরে যায়, সেটা বাংলাদেশের জন্য দুর্ভাগ্যজনক হবে। কারণ এতে বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে বিরূপ ধারণা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে। তিনি বলেন, 'সরকার চট্টগ্রাম স্টিল মিলকে ইপিজেডে রূপান্তরের ধারণাটা অনুসরণ করতে পারে। সরকারের যেসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে, যা আর চালু হবে না কিংবা চালু হলেও লাভবান হবে না, সে ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিক্রি না করে সরকারি মালিকানায় ইপিজেডে রূপান্তর করতে পারে।' এ প্রসঙ্গে তিনি সরকারি মালিকানাধীন করিম জুট মিলের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, প্রায় ১০০ একর জায়গাজুড়ে মাত্র একটি কারখানা রয়েছে, যা শুধু চটের বস্তা তৈরি করছে। কিন্তু এটি বেসরকারি খাতে দেওয়া হলে এই পাট ও পাটজাত পণ্য থেকেই ব্যাগ, শাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি করা সম্ভব।
সম্প্রতি বাংলাদেশে জার্মান দূতাবাসের মাধ্যমে সে দেশের একটি কম্পানিও বাংলাদেশে স্পেশাল ইকোনমিক জোন করার প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু এ বিষয়েও এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। চট্টগ্রাম ইপিজেডের (সিইপিজেড) পশ্চিমে বিশাল জায়গা খালি রয়েছে। বেপজার পক্ষ থেকে সিইপিজেড সম্প্রসারণের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব রাখা হলেও সেটা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না।
গত ১২ এপ্রিল সরকারের সঙ্গে স্যামসাং প্রতিনিধিদলের বৈঠকে উপস্থিত থাকা বেপজা সদস্য (বিনিয়োগ) মোহাম্মদ ময়জুদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'স্যামসাংয়ের কর্মকর্তারা আমাদের কাছে কী কী সুযোগ-সুবিধা দিতে পারব, সে ব্যাপারে জানতে চেয়েছেন।' এর আগে ৯ এপ্রিল স্যামসাংয়ের ঢাকা অফিসের মহাব্যবস্থাপক স্যাংহোয়া সং ও ব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা) সুক হুয়ান কেইপিজেডে আসেন বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়ে। এ ব্যাপারে তাঁরা কেইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক মাহমুদ হাসানের সঙ্গেও দেখা করেন। এ প্রসঙ্গে মাহমুদ হাসান বলেন, 'ইলেকট্রনিঙ্ কারখানা প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁরা আমার কাছে অনেক প্লট চেয়েছে। কিন্তু প্লট খালি না থাকায় দেওয়া সম্ভব হয়নি।'

তথ্য সূত্র:
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্রে মুসলিম চরিত্রের অনুপস্থিতি: এক অনালোচিত প্রশ্ন?

লিখেছেন মুনতাসির, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:০৫

সত্যজিৎ রায়, যিনি বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে পরিচিত, তাঁর চলচ্চিত্র, গল্প এবং গোয়েন্দা সিরিজ ফেলুদা বাস্তববাদী চরিত্র, সমাজচিত্র, এবং গভীর দার্শনিকতা নিয়ে আলোচিত। তবে তাঁর কাজের মধ্যে একটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সুরের জাদু: গিটার বাজালে কি ঘটবে?

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৪১



গাজীপুরের পুবাইলের পুরনো গির্জাটি রাতের আঁধারে যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। এই গির্জার নির্মাণকালে কিছু না জানা কুসংস্কারের অনুসরণ করা হয়েছিল। গাজীপুরের লোককথায় বলা হয়, এই গির্জার নিচে আটটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শুধু হিংস্র, আগ্রাসী নয় ভারত লুটেরা, লোভী এবং সাম্রাজ্যবাদীও বটে.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:১৪

শুধু হিংস্র, আগ্রাসী নয় ভারত লুটেরা এবং লোভীও....

জন্মলগ্ন থেকেই ভারতের হিংস্র ও আগ্রাসী। পাকিস্তানের সাথে যোগ দিতে চাওয়া এবং স্বাধীন থাকতে চাওয়া কিছু অঞ্চল যেমন হায়দ্রাবাদ, ত্রিবাংকুর, ভূপাল, যোধপুর, জুম্ম-কাশ্মীর,... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০০৮- ২০২৪, হাসিনা ভারতের জনম জনমের ঋণের কিছুটা শোধ করেছেন মাত্র

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১০

২০০৮- ২০২৪, হাসিনা ভারতের জনম জনমের ঋণের কিছুটা শোধ করেছেন মাত্র

এআই দ্বারা তৈরিকৃত রাজনৈতিক কার্টুন—যেখানে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের অসাম্যতা ও রাজনৈতিক নির্ভরতার প্রতীকী উপস্থাপন করা হয়েছে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিক্ষকদের দ্বৈত চরিত্র এবং বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:১৬


বাংলাদেশে শিক্ষার মান নিয়ে সবার মুখে নানা রকম কথা শোনা যায় । কেউ কেউ বলছেন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নতি হচ্ছে , কেউ বলে দিন দিন তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×