স্বপ্নাতীত একটা ব্যাপারই যেন ঘটতে চলেছে বাংলাদেশের ফুটবলে! আগামী ৬ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলতে নামছে আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া জাতীয় ফুটবল দল! ঠিকই পড়েছেন। হঠাৎ অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটে গেলে ভিন্ন কথা, নইলে মেসিরা ঢাকায় খেলছেন।
আজ বাফুফের জরুরি সভা ডেকেছেন সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া ম্যাচ আয়োজনের বিষয়টা তিনি নির্বাহী সদস্যদের জানাবেন। আজই গোটা কয়েক বৈঠক আছে তাঁর। সব ঠিক থাকলে আগামীকাল চুক্তি হচ্ছে বিপণন এজেন্ট সেলিব্রেটি গ্রুপের সঙ্গে। এই প্রতিষ্ঠানই আর্জেন্টিনাকে কলকাতায় আনছে। এর আগে ম্যারাডোনাকেও কলকাতায় এনেছিল ওই সংস্থাই।
আগামী ২ সেপ্টেম্বর কলকাতায় ম্যাচ খেলবে আর্জেন্টিনা। কলকাতা থেকে আর্জেন্টিনা ফুটবল দল ঢাকায় আসতে পারে, এই খবর পাওয়া গিয়েছিল আগেই। উদ্যোক্তারা আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া প্রীতি ম্যাচটা আয়োজনের জন্য বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়াকে প্রস্তাব দিয়েছিল। শর্ত ছিল, সুযোগ-সুবিধা যারা বেশি দেবে, ম্যাচটা পাবে তারাই।
একটি বিশ্বস্ত সূত্রের দেওয়া খবর, বাংলাদেশই ম্যাচটা পাচ্ছে। এত দিন বাফুফে দৌড়াচ্ছিল পৃষ্ঠপোষকের পেছনে। আর্জেন্টিনার মতো দল ঢাকায় আনা মানে কোটি কোটি টাকার ব্যাপার। বাংলাদেশের ফুটবলের ভগ্নদশায় কে দেবে অত টাকা? তবু হাল ছাড়েননি সালাউদ্দিন। বাফুফে সভাপতির ঘনিষ্ঠ মহল জানাচ্ছে, তীরে পৌঁছে গিয়েছে তাঁর নেওয়া উদ্যোগ। টাকার একটা ব্যবস্থা হয়ে গেছে।
বিপণন প্রতিষ্ঠান এই ম্যাচের জন্য আনুমানিক ৫০ লাখ ডলার চাইছে। এই টাকার ৬৫ শতাংশ আর্জেন্টিনার, বাকি ৩৫ শতাংশ নাইজেরিয়ার। তবে দর-কষাকষি করে যতটা সম্ভব কমানোর চেষ্টা করছে বাফুফে। টাকার অঙ্ক কমতে পারে। আপাতত এজেন্টকে অগ্রিম ১০ লাখ ডলার দিতে হবে।
চুক্তি অনুযায়ী, পুরো শক্তির আর্জেন্টিনা দলই আসার কথা। টাকার সংস্থান মোটামুটি হয়ে যাওয়ার পর এখন অন্য বিষয়গুলো দেখবে বাফুফে। জানা গেছে, খসড়া চুক্তিতে পুরো আর্জেন্টিনা দল আসবে লেখা থাকলেই মেসির ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো কথা নেই। বাফুফের পক্ষ থেকে ‘মেসিকে থাকতেই হবে’ শর্তটা জুড়ে দেওয়া হবে বলে জানা গেছে একই সূত্রে। সব তারকার উপস্থিতি নিশ্চিত করে তবেই কাল চুক্তি সই করতে যাচ্ছেন বাফুফে সভাপতি। চুক্তি হয়ে গেলে সালাউদ্দিনের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ করিয়ে দেওয়া হবে আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি হুলিও গ্রন্দোনার।
এ ব্যাপারে সালাউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অপেক্ষা করতে বলে আপাতত শুধু এটুকু বললেন, ‘এই উদ্যোগটা আমরা অনেক আগেই নিয়েছিলাম। এত দিন এর পেছনে অনেক সময় ব্যয় করেছি। এখন একটা পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। বলতে পারেন, আমাদের উদ্যোগের ফলাফল ইতিবাচক।’
জানা গেছে, টিকিট বিক্রি থেকে ১৮-২০ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্য আছে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ১০ হাজার টাকা করে টিকিটের দাম রাখার পরিকল্পনা। এই দামে টিকিট কেনার লোকের অভাব হবে না—উদ্যোক্তাদের সাধারণ ধারণা এমনই। এ ছাড়া টিভি-স্বত্ব থেকে আসতে পারে কয়েক কোটি টাকা। ঢাকায় গোটা দুয়েক অনুশীলন সেশন হতে পারে আর্জেন্টিনার। সেখান থেকেও বড় আয়ের লক্ষ্য আছে। সব মিলিয়ে খরচের ৮০ শতাংশ টাকারই এভাবে তুলে নেওয়ার আশা করছে বাফুফে।
বাকি ৫-৭ কোটি টাকা কিংবা বড় জোর ১০ কোটি টাকাও যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে দেশের বড় একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান সেই টাকা দেবে বলে আশ্বস্ত করেছে। ওই আশ্বাস পেয়েই গতকাল থেকে নতুন উদ্যমে নড়েচড়ে বসেছে বাফুফে। সালাউদ্দিনের ঘনিষ্ঠ সূত্র এমনও বলছে, নতুন কোনো সমস্যা দেখা না দিলে লিখে দিতে পারেন আর্জেন্টিনা আসছে।
এখন পর্যন্ত যে খবর, সে অনুযায়ী আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া দুই দলই একই সঙ্গে ৩ সেপ্টেম্বর আসবে ঢাকায়। যাবে ৭ সেপ্টেম্বর সকালে। দুটি দলের নিরাপত্তাসহ আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো নিয়ে সরকারি মহলে কথাবার্তা শুরু হয়ে যাবে দু-এক দিনের মধ্যেই। বাফুফের আশা, ঐতিহাসিক এই ম্যাচের জন্য সরকারি সহযোগিতাও পাওয়া যাবে।


সূত্র: এখানে।