হুট্ করে ফেসবুকে একটা স্টাটাস দেয়া আর ৫ ফর্মার একটা উপন্যাস লিখে ফেলার মাঝে বেশ ফারাক। আবার এক পাতার একটা ব্লগ ও গোটা একটা বইয়ের সাথে কেন জানি যায় না। আমার ধারণা ছিল যারা ব্লগ লিখতে পারে তাদের কাছে ইনিয়ে বিনিয়ে গোটা একটা উপন্যাস লিখে ফেলাটা কোনো ব্যাপার হবে না । ধারণা বেশ ভুল। বুজতে পারলাম ব্লগাররা খুব সহজে ইনিয়ে বিনিয়ে কিছু লিখতে পারে না। যা লিখে সরাসরি। তাই এবার বই মেলায় একটা উপন্যাস লেখার ইচ্ছে করলাম। অনেকটা নিজের ধারণা ভুল প্রমান করতে। উপন্যাস লিখতে গিয়ে প্রথমেই বুজলাম ৫ ফর্মার ৪০ পাতা বেশ লম্বা একটা ব্যাপার । যেটা আসলে ব্লগের মতন না। কিন্তু হাল ছাড়লাম না । নিজের শেখা ফিলিপ কটলারের সূত্র মতে এগুতে লাগলাম । কি লিখবো তার আগেই ঠিক করতে বসে গেলাম টার্গেট মার্কেট নিয়ে । কাদের জন্য লিখবো ঠিক করতে। এখানেই বিপত্তি । অনেক চেষ্টা করেও বের করতে পারলাম না দেশে কোন ধরণের পাঠক বেশি । যতবারই ভাবি মনে হয় ফেসবুকের পাঠক সবচেয়ে বেশি । এখন গোটা একটা উপন্যাস তো ফেসবুক স্ট্যাটাসে কুলোবে না । তবে শেষমেশ মনে হলো টার্গেট মার্কেট ২০ থেকে ৪০ বছরের মাঝে ।
মাঝে ৫ বছর দেশের বাইরে থাকার ফলে দেশের টার্গেট মার্কেট এর হাল গুলিয়ে ফেলাই স্বাভাবিক । আমি যেখানে থাকি এখানকার বাঙালিরা বছরে একবার মন দিয়ে একটা বই পরে । তাদের ট্যাক্স রিটার্ন ফাইল । যাই হোক বুজতে পারলাম যা কিছুই লিখি না কেন বয়স ভিত্তিক লিখতে হবে । এরপর বসলাম কি নিয়ে লিখবো । যদিও আমার জানা নেই এই কটলারীও পদ্ধতিতে কোনো লেখক লিখে কিনা । তবে লিখলে কেমন হবে তা ভাবতেও খারাপ লাগলো না । লেখা লেখির বিষয় নিয়ে কটলার কোনো কিছু লেখেননি । এটা মোটেও ঠিক হয়নি । দুনিয়ার সব কিছু যদি ব্যবসায়িক ভাবে চলে তবে লেখালেখি ব্যাপারটাও চলা উচিত ।
লেখার বিষয় মাথায় আসতে হলে মাথার ভেতর পর্যাপ্ত পরিমান শিল্প থাকতে হবে। এখন এই শিল্প আর কারখানার শিল্পে বেশ তফাৎ। কারখানার শিল্পের কথা বাদ দিয়ে ভাবতে লাগলাম শৈল্পিক শিল্পের কথা । ভাবলেই যে পে অফ লাইন মাথায় আসে তা কিন্তু না । আমার ক্ষেত্রে খেয়াল করে দেখলাম গোসল করার সময় মাথায় উষ্ণ পানি প্রবাহে বেশ শৈল্পিক একটা ভাব আসে । বেশ কয়েকবার মাথায় উষ্ণ প্রবাহের মাধ্যমে একটা চরিত্র মাথায় এলো । পুরোপুরি শৈল্পিক না । কিছুটা কারখানার শিল্প আর কিছুটা শৈল্পিক শিল্পের মাখমাঝি । নয়ন নামের চরিত্র। নীল রঙের শার্ট পড়া এক ২৩ বছরের যুবক। ঢাকা ভার্সিটি থেকে ব্যবসা প্রশাসনে লেখা পড়া । দামি গাড়িতে চড়ে । এখন এই রকম এক চরিত্রের শৈল্পিক দিক কি হতে পারে আমার জানা নেই । চাইলেই নয়ন কাঠফাটা রোদে পাঞ্জাবি পরে ঘুরে বেড়াতে পারবে না । কারণ তার নিজের একটা গাড়ি আছে। শৈল্পিক শিল্পের দিক থেকে নয়নের রাস্তায় দাঁড়িয়ে মামার দোকানের চা খাওয়া উচিত। কিন্তু গ্লোরিয়া জিন্স এ কফি খেলেও যে শিল্প মরে যাবে এমনও না ।
লেখা বেশ ভালো এগুলো । মাঝখানে নয়নের চোখ কোনো এক অদ্ভুত কারণে নীল হয়ে যেতে লাগলো । এই অদ্ভুত শব্দটাও বেশ অদ্ভুত । ব্যবহারের সাথে সাথে একটা সাসপেন্স তৈরী হয় । সাসপেন্স না থাকলে গল্প ভালো এগোয় না। তাই সাসপেন্সের জন্য নয়নের জীবনে এলো সেতু। সেতু চরিত্রটা বেশ অদ্ভুত । তাত্ত্বিক ভাবেই অদ্ভুত । জীবিত আর মৃতের মাঝামাঝি একটা চরিত্র । জীবন্মৃত । গল্প নিয়ে এগুতে এগুতে মনে হলো এই রকম সাসপেন্স বেশ পুরোনো ।এমন একটা সাসপেন্স থাকা উচিত যা পাঠকরা আগে ভাবতে পারেনি । এটা অসম্ভব একটা ব্যাপার । এমন কিছু যা কেউ আগে ভাবেনি । ভাবতে ভাবতে বুজলাম এটা আসলেই অসম্ভব । ফেসবুক আর ইউ টিউবের ফলে আমাদের ভাবনা গুলো এখন আমাদেরকেই ভাবিয়ে তুলে ।
শেষমেশ মাথায় আরো কিছু উষ্ণ পানি প্রবাহের ফলে সাসপেন্সের দরোজায় শেষ পেরেকটা টুখলাম । শুভ্রা আর নিখিল নামের দুটি মানুষ । যেখানে শুভ্রাকে নিখিল একবার নয় বেশ কয়েকবার খুন করে । প্রতিবারই শুভ্রা পরেরদিন সকালে ফিরে আসে নিখিলের কাছে । ভুলে যায় আগের রাতের কথা। নয়ন চেষ্টা করে এই সমস্যা সমাধানের । কিন্তু পারে না । না পারারই কথা । ভালোবাসার টানে মানুষের জীবন্মৃত হওয়া অতটা শৈল্পিক এখনো হয়তো ভাবা হয়না ।
ভাবতে ভালো লাগা ভাবনা গুলু কারখানার শিল্প না শৈল্পিক শিল্প বিবেচনা না করে প্রকাশকের হাতে তুলে দিলাম ৫ ফর্মার ৪০ পাতা । কারখানার শিল্পের কারুকাজে এখন এই ৪০ পাতা একুশের বই মেলায় । শব্দশৈলী প্রকাশনীর স্টলে । আবার রকমারির সাইটেও পাওয়া যাবে । চাইলেই ।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:৫৫