দু বছর হলো দেশ ছেড়ে এসেছি। ঠিক দুবছর হয়নি । দু বছরের কাছাকাছি। দেশ থেকে পকেট পুরে টাকা পয়সা তেমন আনতে পারিনি। ইমিগ্র্যান্ট অফিস পর্যন্ত আমার কাছে ছিলো সর্ব সাকল্যে ৪৭৬ টাকা।
বন্দরের এক কর্মচারী আমার লাগেজের ওয়েট বেশি হোয়াতে মালেরস্পিড মানি চেয়েছিলো।আমার কাছে সর্ব সাকল্যে ছিলো ৪৭৬ টাকা । আমার সাফ কথা ১ টাকাও দিবো না ।না, তাকে আমি কোনো টাকাই দিবো না। দরকার হয় আমার লাগেজ যাবেনা । তারপর তাকে পিলারের কাছে ডাক দিয়ে নিয়ে গেলাম ।
বললাম ভাই কেমন আছেন ?
উনি বললো ভালো।।
আমি বললাম তো ভাই এখন কি আমি যেতে পারবো না । তখন উনি বললেন বুঝেনইতো ব্যাপার টা কি ?
আমি বললাম ।ভাই কিছু মনে কিছু নিয়েন না। আমাদের কাছে যদি টাকা থাকতো তাহলে কি আমরা বিদেশ যেতাম । আপনি যেতেন বলেন ?
বাড়ির ভিটা আর কিছু টাকা সুদের উপরে এনে তারপরে এই বিদেশ যাত্রা( যদিও এইগুলো আমি মিথ্যে বলেছি কিন্তু বাংলাদেশ থেকে যারা প্রবাসী হয়ে বিদেশ যায় তাদের সবারই গল্পটা এই রকম )
বিদেশে গিয়ে যে কি কাজ করবো এটারও কোনো নিশচয়তা নেই ?দালালের খপ্পরে পড়ছি কি না এইটাও জানিনা । বিদেশে গিয়ে যে দু তিন দিন খাবো এই টাকাও আমার কাছে নেই ? এখন বলেন ভাই আমি কিভাবে আপনাকে টাকা দেই ।
উনার চোখের দিকে চোখ রেখে আমি এবার বললাম ।।সব ছেড়ে আমরা যাচ্ছি আর আপনারা যদি এখানে এসব করেন তাহলে কেমন লাগে বলেন ?আপনি হয়ত অন্য কোনো শরর থেকে ঢাকায় এসেছেন ।।আমি জানিনা আপনার কেমন লেগেছিলো আপনার শহর ছেরে এখানে আসতে.।বাস,ট্রেন লঞ্চের জানলা দিয়ে বার বার কি পিছনের দিকে উকি মেরে দেখেননি ফেলে আসা আপনার শহর?বাড়ি ,নদী? আপনি একটি শহর ছেড়ে আসতে পারতেছেন না।।আর আমরা একটি দেশ ছেরে চলে যাচ্ছি ।।কবে ফিড়বো তার কোনো নিশ্চয়তা নেই ।।তার উপরে আছে ভিটেবাড়ি বন্ধক, ঋণের টাকা,দালালের খপ্পর হয়ে নিস্ব হওয়ার ঝুকি ।।আর এমন যদি আপনারা স্বজাতি হয়ে টাকা চান তো কেমন লাগে।।বলেন ভাই
এভাবে মিনিট পাচেক বলার পর দেখি উনার চোখে পানি ।।ঠোটে একটি হাসি দিয়ে বললো ভাই আপনার টাকা লাগবে না।।
আমি প্রতি উত্তরে বললাম ।।না আমার তাকার কথা বলি নাই ।।বলছি প্রবাসী কারো কাছ থেকে আর কোনোদিন টাকা চাইবেন না।।কারণ তাদের টাকা আর অন্যের টাকার মধ্যে অনেক পার্কক্য।।ভিটেবাড়ির টাকা।সুদে আনা ঋণের টাকা। বঊরের গয়না বিক্রির টাকা,মায়ের বালা বিক্রির টাকা।।এগুলো আপনার কাছে শুধু টাকা হতে পারে কিন্তু আমি দেখি এইগুলো রক্ত শুধু রক্ত .।
আর এই নিন ধৈর্য্য ধরে আমার কথা গুলোশোনার জন্যে।।আমার পকেট থেকে তাকে দিয়ে আসলাম আমার সেই শেষ সম্ভল টুকু...নিতে চায়িনি একপ্রকার জোর করেই দিলাম ...বললাম ভাই নিন এইগুলো বিদেশে চলবেনা ,আমি খুশি হয়ে দিলাম...টাকাটা গুঝে আমি ইমিগ্র্যান্ট পার হয়ে ...সরু করিডর ধরে হাতা দিলাম...মনে মনে বললাম ভালো থেকো বাংলাদেশ।।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:০৬