আমাদের যে বাড়ি, গ্রামের মধ্যে বাড়িতে আমার জন্ম ও বেড়ে উঠা সেই বাড়ির কথাই আমি বলছি,,
আমরা হলাম সেই বাড়ির পঞ্চম প্রযন্ম। আমাদের এই বাড়ির যিনি গোড়াপত্তন করেছিলেন তার সৃজনশীলতা ও দুরদৃষ্টির ছাপ আমাদের বাড়ির দিকে গভীর মনোযোগ দিয়ে তাকালে বুঝা যায়,,
সেই ৪০০ বছর আগের বাড়ি,,,স্থাপত্যবিদ্যায় এক অনন্য ও বিরল নযীর।
আমাদের বাড়ির চারপাশ দিয়ে পরিখার মতোন খাল ছিলো যা গত ২০ বছর আগেও সব গুলো খাল সচল ছিলো,
মাছ চাষ বা অন্যান্য কাজের অযুহাতে দ:খিন ও পশ্চিম পাশের খাল বন্ধ করে পুকুর কাটা হয়,,
আমাদের বাড়ির উত্তর ও পূর্বপাশ দিয়ে যে খালটি বয়ে গেছে সেটি অত্র অঞ্চলে বড় খাল নামে পরিচিত,,
যে খালটি ঘুংগুর নদীর নাগাইশ অংশ থেকে উৎপত্তি,,ঘুংগুর নদী হলো গোমতী নদীর উপনদী,,,
আমাদের এই বাড়িতেই আমার জীবনের শৈশব কৈশোর কেটেছে,,আমাদের শৈশবের জন্যে আমরা পেয়েছিলাম দূর্ধান্ত এক সময় এবং তার সাথে উপযোগ হিসেবে ছিলো বাড়ি ভর্তি মানুষ ও ফল ফলাদি পূর্ণ তিনটি ছাড়া বাড়ি,,খেলাধুলার জন্যে ছিলো বাড়িতেই বিশাল মাঠ,,বোনাস হিসেবে
ছিলো আরো তিনটি ছাড়া বাড়ির মাঠ,,,
কি যে এক রংগিন অতীত ছিলো আমাদের,,
এখন যে হেমন্ত হালকা কুয়াশার রাত,, রাত শেষ প্রহরে মসজিদের মুয়াজ্জিনের আযানের আগে সবার ঘরের লাইট জ্বলে উঠতো,,,আম বা লিচু গাছে মুকুল আসলে মৌমাছিরা যেমন ফুলে ফুলে গুন গুন করে মধু আহড়োন করে ঠিক মৌমাছিদের আওয়াজের মতো গুনগুন শব্দে পুরো বাড়ি জেগে উঠতো,, কারণ একটাই সামনে বার্ষিক পরীক্ষা,,,
সেই পড়াশোনার গুনগুন এখন আর নেই,,,মাঝে মধ্যে বাড়িতে গেলে এখন মনে হয়ে সন্ধ্যা নামার আগে রাত নেমে আসে,, রাতের প্রহর শেষ হয়,,,কিন্তু সে গুনগুন শব্দ আর আসে না,,
মাঝে মাঝে পত্রিকায় পড়ি লেখা পড়া নাকি আগের চেয়ে অনেক সহজ করা হয়েছে,,
,সৃজনশীল পদ্ধতি,,,তো এই সৃজনশীল পদ্ধতির কারণে এখন আর পড়ালেখার প্রয়োজন নেই,,
গ্রামের স্কুলগুলোতে কি হচ্ছে,,, লিখতে গেলে আপনি ভাববেন সৈয়দ মুজতবা আলীর রসগোল্লা পড়ছেন,,
শিক্ষক এবং ছাত্রদের নৈতিক দুইটাই নষ্ট করে দিয়েছে,,,ব্যক্তিগত ভাবে মানুষ অসততার আশ্রয় নেয়,, পেশাগত বা রূঢ় বাস্তবতায় ঠেকলে,,আর এখন ছাত্ররা বড়'ই হচ্ছে অসততার চর্যা করে,,শিক্ষক যে ছাত্রদের একটু নৈতকতা বা সততার শিক্ষা দিবে তার উপায়ো নেই কারণ শিক্ষক যে গত পরীক্ষায় প্রাইভেট পড়ানোর সময় করে নিজের ছাত্রদের সাজেশনের নাম করে প্রশ্ন আউট করে দিয়েছেন,,তাই চুতুর ছাত্ররা বুঝে গেছে ভোর রাত্রে লাখ টাকার ঘুম নষ্ট করে পড়া শোনা করে কোনো লাভ নেই,,এই ছাত্ররা যে ঘুমাতে যায় এখন ভোর রাত্রে,,,সন্ধ্যা থেকে এ অব্দি সে ছিলো অন্য অনেক কাজে ব্যস্থ,,কেউ ছিলো স্টার প্লাস নিয়ে,,কেউ আবার জলশা নিয়ে,,কেউ জীবনের মানে খুজেছিলো জী বাংলায়,,কেউ ছিল ফেসবুকে,,আবার কেউ ছিলো জিপির দুরুত্ব কমানো দ্বায়িত্যে,,কেউ ছিলো এয়ারটেলের বন্ধু ছাড়া ইমপোসিবল,কেউ ছিলো আদম সুমারীর দ্বায়িত্যে কার বাড়িতে সুন্দরি মেয়ে আছে তার খোজে।,
সফলতার এখন অনেক তরিকা,,সরকারের বুক পকেটে আছে কিছু মোটিভেশনাল বক্তা,,,যারা মাইক্রো ফোন হাতে নিয়ে খেচতে থাকে কয়েকটা নাম্বার কখনো হতে পারে না আমার মূল্য বা মেধার মাণ,,
এক ঘন্টার পরীক্ষা কখনো আমাকে যাচাইয়ের মান হতে পারে না,,,
তাই এখন দল বেধে পোলাপাইন লাইন ধরে মোটিেেভশনাল স্পিচ শোনে,,এই সব স্পিচ শোনে কার কি উন্নতি হয়,, তা না জানা গেলেও যারা বক্তব্য দিচ্ছিনে তিনারা এখন নাকি এখন ৬ ডিজিট আর্ন করেন,,,
শুরুতেই ছিলাম আমার বাড়ি নিয়ে,,,আমার বাড়ির সেই অতীত আর নেই,,অনেকেই আমাকে বলেন আপনাদের বাড়ি কি শেষ হয়ে গেছে,,,?
আমি তখন তাকে বলি,,নগরে যখন আগুন লাগে দেবালয় কি করে রক্ষা পায় ,,,
জাতি হিসেবে গত ১০ বছর অনেক আমরা এগিয়েছি ইন্টারনেট ফেসবুক আমাদের দূরকে করেছে নিকট,, আর নিকটকে করেছে দূর,,শিক্ষাব্যবস্থার পায়ে নীচে যে টুকুন মাটি ছিলো সেটা বালির মতো সাগরের ঢেউয়ে একটু একটু করে পায়ের নীচ থেকে সরে গেছে,,,
আয়ের দিক থেকে এখন আমরা নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ দাবী করতে পারি,, রাস্তায় ফ্লাইওভার বানিয়ে হান্ডসাম উন্নয়নের প্রবক্তা সাজতে পারি,,কিন্তু তলে তলে ক্ষয়ে যাওয়া প্রযন্মকে আগামী ১০ বছর পর কি কাজে নিযুক্ত করতে পারবে বাংলাদেশ?
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ৭:৪১