হিসেব
কতটুকু ভালোবাসা দিলে,
ক তোড়া গোলাপ দিলে,
কতটুকু সময়, কতটা সমুদ্র দিলে,
কটি নির্ঘুম রাত দিলে, ক ফোঁটা জল দিলে চোখের — সব যেদিন ভীষণ আবেগে
শোনাচ্ছিলে আমাকে, বোঝাতে চাইছিলে আমাকে খুব ভালোবাসো, আমি বুঝে নিলাম তুমি
আমাকে এখন আর একটুও ভালোবাসো না।
ভালোবাসা ফুরোলেই মানুষ হিসেব কষতে বসে, তুমিও বসেছো।
ভালোবাসা ততদিনই ভালোবাসা
যতদিন এটি অন্ধ থাকে, বধির থাকে,
যতদিন এটি বেহিসেবী থাকে।
চোখ
খালি চুমু চুমু চুমু
এত চুমু খেতে চাও কেন?
প্রেমে পড়লেই বুঝি চুমু খেতে হয়!
চুমু না খেয়ে প্রেম হয় না?
শরীর স্পর্শ না করে প্রেম হয় না?
মুখোমুখি বসো,
চুপচাপ বসে থাকি চলো,
কোনও কথা না বলে চলো,
কোনও শব্দ না করে চলো,
শুধু চোখের দিকে তাকিয়ে চলো,
দেখ প্রেম হয় কি না!
চোখ যত কথা বলতে পারে, মুখ বুঝি তার সামান্যও পারে!
চোখ যত প্রেম জানে, তত বুঝি শরীরের অন্য কোনও অঙ্গ জানে!
কোথাও কেউ
কোথাও না কোথাও বসে ভাবছো আমাকে, আমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তোমার,
মনে মনে আমাকে দেখছো, কথা বলছো,
হাঁটছো আমার সঙ্গে, হাত ধরছো,
হাসছো।
এমন যখন ভাবি, এত একা আমি, আমার একা লাগে না,
ঘাসগুলোকে আগের চেয়ে আরও সবুজ লাগে,
গোলাপকে আরও লাল,
স্যাঁতস্যাঁতে দিনগুলোকেও মনে হয় ঝলমলে,
কোথাও না কোথাও আমার জন্য কেউ আছে
এই ভাবনাটি আমাকে নির্ভাবনা দেয়,
ঘোর কালো দিনগুলোয় আলো দেয়,
আর যখন ওপরে ওপরে দেখাই যে পায়ের তলায় খুব মাটি আছে,
আসলে নেই, আসলে পা তলিয়ে যাচ্ছে, তখন মাটি দেয়।
যখন মনে হয় ভীষণ এক ঝড়ো হাওয়ায় উল্টে যাচ্ছি, যেন একশ শকুন আমার দিকে উড়ে
আসছে, হিংস্র হিংস্র মানুষ দৌড়ে আসছে আমাকে খুবলে খাবে — অসহায় আমিটিকে
ভাবনাটি নিরাপত্তা দেয়।
কেউ ফিরে তাকায় না, কেউ স্পর্শ করে না, ভালোবাসে না
দেখেও আমি যে ভেঙে পড়ি না, আমি যে ভেসে যাই না, আমি যে কেঁদে ভাসাই না–
সে তো তোমার কারণেই, কোথাও না কোথাও তুমি আছো বলে।
আছো, কোথাও আছো
যে কোনওদিন আমি ইচ্ছে করলে তোমাকে পেতে পারি,
এই ভাবনাটি তোমার কাছ থেকে দূরে রাখতে পারছে আমাকে,
আমাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারছে।
এ প্রেম নয়
সারাক্ষণ তোমাকে মনে পড়ে
তোমাকে সারাক্ষণ মনে পড়ে
মনে পড়ে সারাক্ষণ।
তুমি বলবে আমি ভালোবাসি তোমাকে, তাই।
কিন্তু এর নাম কি ভালোবাসা?
নিতান্তই ভালোবাসা? যে ভালোবাসা হাটে মাঠে না চাইতেই মেলে!
ভালো তো আমি বাসিই কত কাউকে, এরকম তো মরে যাই মরে যাই লাগে না!
এ নিশ্চয় ভালোবাসার চেয়ে বেশি কিছু, বড় কিছু।
তোমার কথাগুলো, হাসিগুলো আমাকে এত উষ্ণ করে তোলে যেন
হিমাগারে শুয়ে থাকা আমি চোখ খুলছি, শ্বাস নিচ্ছি।
বলবে, আমি প্রেমে পড়েছি তোমার।
কিন্তু প্রেমে তো জীবনে আমি কতই পড়েছি,
কই কখনও তো মনে হয়নি কারও শুধু কথা শুনেই, হাসি শুনেই
বাকি জীবন সুখে কাটিয়ে দেব, আর কিছুর দরকার নেই!
এ নিশ্চয়ই প্রেম নয়, এ প্রেম নয়, এ প্রেমের চেয়ে বড় কিছু, বেশি কিছু।
অভিশাপ
প্রেম আমাকে একেকবারে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিচ্ছে,
আমি আর আমি নেই, আমাকে আমি আর চিনতে পারি না,
আমার শরীরটাকে পারি না, মনটাকে পারি না।
হাঁটাচলাগুলোকে পারি না,
দৃষ্টিগুলোকে পারি না,
কী রকম যেন অদ্ভুত হয়ে যাচ্ছি, বন্ধুদের আড্ডায় যখন হাসা উচিত
আমি হাসছি না, যখন দুঃখ করা উচিত, করছি না।
মনকে কিছুতেই প্রেম থেকে তুলে এনে অন্য কোথাও মুহূর্তের জন্য
স্থির করতে পারি না।
পুরো জগতটিতে এখন অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে,
চাঁদ সুর্যের ঠিক নেই, রাত দিনের ঠিক নেই,
আমার জীবন গেছে, জীবন-যাপন গেছে,
নাশ হয়ে গেছে।
এখন শত্রুর জন্য যদি অভিশাপ দিতে হয় কিছু, আমি আর
বলি না যে তোর কুষ্ঠ হোক,তুই মরে যা, তুই মর।
এখন বড় য়চ্ছন্দে এই বলে অভিশাপ দিয়ে দিই —- তুই প্রেমে পড়।
হাত
আবার আমি তোমার হাতে রাখবো বলে হাত
গুছিয়ে নিয়ে জীবনখানি উজান ডিঙি বেয়ে
এসেছি সেই উঠোনটিতে গভীর করে রাত
দেখছ না কি চাঁদের নীচে দাঁড়িয়ে কাঁদি দুঃখবতী মেয়ে !
আঙুলগুলো কাঁপছে দেখ, হাত বাড়াবে কখন ?
কুয়াশা ভিজে শরীরখানা পাথর হয়ে গেলে ?
হাত ছাড়িয়ে নিয়েছিলাম বর্ষা ছিল তখন,
তখন তুমি ছিঁড়ে খেতে আস্ত কোনও নারী নাগাল পেলে।
শীতের ভারে ন্যুব্জ বাহু স্পর্শ করে দেখি
ভালবাসার মন মরেছে, শরীর জবুথবু,
যেদিকে যাই, সেদিকে এত ভীষণ লাগে মেকি।
এখনও তুমি তেমন আছ। বয়স গেল, বছর গেল, তবু।
নিজের কাঁধে নিজের হাত নিজেই রেখে বলি :
এসেছিলাম পাশের বাড়ি, এবার তবে চলি।
অকাজ
অনেকবার ফোন বাজলো, কেউ ধরলো না
কথা বলতে চাইলাম, কেউ বললো না
সারাদিন কোনও চিঠি নেই, কেউ লিখলো না
কেউ ভাবলো না
মনে করলো না
কেউ জাগালো না
ভালোবাসলো না।
কী জানি, হয়ত এই ফোন করা, কথা বলা, চিঠি লেখা সবকিছুকে এখন বড় অকাজ বলে
মনে হচ্ছে কারও কাছে!
ধীরে ধীরে ভুলে যায় মানুষ, ভুলেই তো যায়, কেউ হয়ত ভুলে যাচ্ছে।
আমার কিন্তু কখনও এসবের কিছুকে অকাজ বলে মনে হবে না,
সকলে ভুলে যাক, আমি ভুলবো না,
ভালো কেউ না বাসুক, নিভৃতে আমিই বাসবো,
এ জগতটিকে, জগতের হৃদয়বান মানুষগুলোকে ভালোবেসে আমি তো অন্যকে নয়,
নিজেকেই ধন্য করি,
এর চেয়ে বড় কাজ আর কী আছে জীবনে?
আমি আছি, দূরে ব হুদূরে, কোথাও, কোনওখানে
এখনও শ্বাস নিচ্ছি, নিঝুম চরাচরে নিজের শ্বাসের শব্দে হঠাৎ হঠাৎ চমকে উঠি,
স্বপ্নটাকে রেখে দিয়েছি খুব যত্ন করে নেপথলিনে মুড়ে
যাবো কলকাতায়
যাবো আবার
দেখা হবে প্রিয় প্রিয় মানুষের সঙ্গে
হাতে হাত রেখে হাঁটা হবে, রাতের কলকাতাকে কোনও কোনও রাতে
ঘুম থেকে তুলে পালিয়ে যাওয়া যাবে,
সারারাত অকাজ করে ভোর হলে আবার অকাজে মন দেব,
সারাদিন অকাজে দিন যাবে,
রাজি?
বালিকার গোল্লাছুট
আমরা বালিকারা যে খেলাটি খেলব বলে পৃথিবীতে বিকেল নামত
সে খেলার নাম গোল্লাছুট।
সারা মাঠ জুড়ে বিষম হই চই-
সেই নিশ্ছিদ্র আনন্দ থেকে
গড়িয়ে গড়িয়ে কবেই এসেছি শতচ্ছিন্ন দুঃখের ছায়ায়,
মনে নেই, মনে নেই কোন দল কোন দিকে ছোটে,
কাকে ছুঁলে হয় নিখাদ বিজয়!
বালিকারা এখনও কি খেলে হাওয়ায় উড়িয়ে চুল গোল্লাছুট খেলা?
আমার আবার ইচ্ছে করে খেলি
এখনও মাঝে মধ্যে আকুপাকু করে পায়ের আঙুল
ধুলোয় ডুবতে চায় গোপন গোড়ালি।
ইচ্ছে করে যাই,
পৃথিবীর সমস্ত বয়স্ক বালিকা দিই গোল্লা থেকে ছুট।
পর্ব ১৩
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:৪৩