প্রচন্ড প্রতিযোগিতার প্রযুক্তির দুনিয়ায় এক মুহুর্তের বিশ্রামও মহা সমস্যার কারণ। কারণ আপনার প্রতিযোগীরা মোটেও থেমে নেই আর তারাও আপনার মতই বা আপনার চেয়ে বেশী পরিশ্রমী। তাই কাছাকাছি প্রোডাক্ট বা সার্ভিস থাকলে নতুন কোন ফিচার একজন আবিষ্কার বা তৈরি করলে খুব দ্রুতই সেটি অন্যান্য প্রতিযোগীদের প্রোডাক্টে চলে আসে। আর আপনার পরবর্তী ভার্সন আসতে যদি দেরী হয় তবে আপনার ভার্সন স্বভাবতই অন্যদের অনুকরণ বলে মনে হবে। ঠিক এই বিষয়টিই ঘটেছিল উইন্ডোজ এক্সপির ব্যাপারে। প্রচন্ড জনপ্রিয় এই অপারেটিং সিস্টেমের পরবর্তী সংস্করণ আনতে বেশ অনেক বছর সময় নেয় মাইক্রোসফট এই চার পাঁচ বছরে সম্পুর্ণ প্রযুক্তিবিশ্বেই যেসব নতুন ধারণা ও আবিষ্কারগুলো এসেছিল তার অনেকগুলোই আরো ছোট লাইফ সাইকেলের অপারেটিং সিস্টেমগুলো নিয়ে এসেছিল। তাই প্রতিবছর নতুন ভার্সন সমৃদ্ধ এপেলের OS-X প্ল্যাটফর্ম তখন মাইক্রোসফটকে নিয়ে বেশ রগড় করত। ২০০৬ সালের ডেভেলাপার কনফারেন্সের তো স্বাগতম ব্যানারেই লিখে ফেলল। “রেডমন্ড স্টার্ট ইয়োর ফটোকপিয়ার্স |” অর্থাৎ আমাদের নতুন ফীচারগুলো দেখে তারপরে তোমাদের সিস্টেমে ঢুকাও। মাইক্রোসফট অপারেটিং সিস্টেমের ভেতরে সার্চ ঢোকানোর বেশ আগেই এপেলের ফাইন্ডার রেডী। উইন্ডোজের ডেস্কটপের গ্যাজেটের বহু আগে থেকেই ম্যাকে আছে উইজেটগুলো। আরো ম্যালাকিছু। এইখানে মাইক্রোসফটের দোষ একেবারেই নেই তা নয়, অনেক অর্থেই ম্যাকের একুয়া ইন্টারফেসের কপিই মনে হবে আজকালকার উইন্ডোজগুলোকে।
তবে সত্যি কথা হল, ঠিক মাইক্রোসফটের বদনাম করার জন্য আজকের পোস্ট না, বরং উল্টোটাই সত্যি। অনেক ক্ষেত্রেই মাইক্রোসফট বহু বছর ধরেই প্রতিযোগীদের ধরার জন্য হাঁসফাঁস করে দৌড়াচ্ছে, বিশেষ করে ইন্টারনেটের তো কথাই নেই। গুগলকে ধরা তো দূরের কথা সুদূর ভবিষ্যতেও ধরতে পারবে তার সম্ভাবনাও নিতান্তই ক্ষীণ তা মাইক্রোসফট নিজেও জানে। এক্কেবারে হোপলেস হবার পরেও প্রথমে এমএসএন সার্চ, তারপরে লাইভ সার্চ ও বর্তমানে বিং সার্চ ইঞ্জিন বেশ চেষ্টা করে যাচ্ছে গুগলের সার্চ দুর্গে ক্ষীণ আক্রমনের। তবে এই প্রথম দেখলাম গুগল তাদের মূল কোন প্রোডাক্টের পরিবর্তন করল যেটি দেখতে মাইক্রোসফটের প্রডাক্টের মত। গুগলের আগেও সার্চ ইঞ্জিন অনেকগুলোই ছিল কিন্তু যতদূর মনে পড়ে ছবি খোঁজার ব্যাবস্থা গুগলই প্রথম বা একদম প্রথমগুলোর মধ্যে ছিল। আর সত্যি কথা হল, এতদিন গুগল ছেড়ে অন্য সার্চ ইঞ্জিনে ছবি খোঁজার কথা চিন্তাও কখনো করিনি। সেই প্রথম উদ্বোধনের পরে এই প্রথম গুগল ইমেজ সার্চের বড়সড় ইন্টারফেসগত পরিবর্তন দেখে প্রথম যেই কথা মনে হয়, তা হল, এইটা মাইক্রোসফটের সার্চ থেকে কপি করা হয়েছে। একেবারে প্রায় দশপাতা পরিমাণে ছবি দেখানো, ছবির ওপরে মাউস রাখলে বড় প্রিভিউ সাথে সাথে সম্পুর্ণ লুক এন্ড ফিল অনেকটাই বিং থেকে ধার করা মনে হয়। (আগের চেহারা আর আজকের চেহারা , বিং চেহারা ) তবে কিছুটা প্রেরণা মনে হয় ফায়ারফক্সের প্রচন্ড জনপ্রিয় ছবির প্লাগিন কুলিরিস থেকেও নেয়া হয়েছে। সাবাশ মাইক্রোসফট!
শুধু একটি বিষয় নিয়ে এতো লম্বা লেখার উৎসাহ থাকতো না যদি না আরেকটি মহা কাজের টুল আবিষ্কার করতাম। উইন্ডোজের রিমোট ডেস্কটপের ব্যাবহারকারী সবাই নাহলেও খুব কম না। শুধু রিয়েল আইপি থাকলেই আপনার মেশিনকে সারা পৃথিবীর যেকোন খান থেকে নিজের সামনের টার্মিনালে নিয়ে আসার বেশ চমৎকার একটি ব্যাবস্থা। আর রিমোট ডেস্কটপের সাথে সংযোগের জন্য উইন্ডজের সাথেই বিল্টইন থাকে “রিমোট ডেস্কটপ কানেকশন ”। সেটিও মোটামুটি কাজের জিনিষ। কিন্তু সমস্যা বাধে যখন আপনাকে বেশকিছু কম্পিউটারে নিয়মিত লগিন করা লাগে, আর একই মেশিনে একাধিক একাউন্টে ঢোকা লাগে, সেই অবস্থায় অথেন্টিকেশন তথ্য গুছিয়ে রাখার জন্য উইন্ডোজের রিমোট ডেস্কটপ কানেকশন মহা ফালতু জিনিষ। প্রতিবার ইউজার বদলানোর জন্য ইউজারনেম আর পাসওয়ার্ড লেখো। কি ঝামেলা! কিছুদিন আগেই খুঁজতে গিয়ে দেখলাম কানেকশনগুলোর তথ্য নিয়ন্ত্রনের জন্য “রিমোট ডেস্কটপ কানেকশন ম্যানেজার ” নামে একটী টুল বের হয়েছে, আর বের করেছে স্বয়ং মাইক্রোসফট আর জেনুইন উইন্ডজ থাকলে একদম ফ্রী! ইচ্ছেমত সার্ভার যোগ করে তাদের প্রয়োজনমত তথ্য সংরক্ষণ করে কাজ করার জন্য দেখলাম এটি চমৎকার টুল। সত্যি কথা বলতে একদম ড্রীম কাম ট্রু টাইপের। বেশী লিখলাম না, যারা রিমোট ডেস্কটপ নিয়মিত ব্যাবহার করেন তারা ঘেঁটে দেখতে পারেন।
তৃতীয় ফীচার যেটির কথা লিখব এখন তা হল এন্টিভাইরাস! সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাইরাসবান্ধব অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে উইন্ডোজের অপারেটিং সিস্টেম পরিবার এখনো অপ্রতিদ্বন্দী। আর তাই যত ভাইরাস ততো এন্টীভাইরাস কোম্পানী। বাংলাদেশে থেকে চুটিয়ে ব্যাবসা করতে পেরেছে এমন রেকর্ড মাইক্রোসফট, এডোবি, সান, এপল কারোরই নেই কিন্তু সেই দুর্গে একমাত্র আঘাত হেনেছে ক্যাস্পার্স্কি আর নড৩২ । সেই রাশিয়া আর পোল্যান্ডের এন্টিভাইরাস কোম্পানী এসে বাঙ্গালীর পকেট থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়ে যাবে কে ভেবেছিল? সম্ভবত মুদি দোকানে বাকী রাখা যায়, ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া যায় কিন্তু চাঁদা দিতেই হয়, নাকি? এই প্রসঙ্গে যা লেখা শুরু করেছিলাম তা হল, সব এন্টীভাইরাস কোম্পানী লুটেপুটে খাচ্ছে দেখে বিলু মামারও শখ হল যে তিনিও এন্টিভাইরাস বানাবেন। তাই লাইভ ওয়ানকেয়ার নামে বেশ খেটেখুটে এন্টিভাইরাস বানালো ডেভুরা। কিন্তু জনগণ মুরগী পাহারার জন্য শেয়ালকে বিশ্বাস করে সারতে পারলো না। তাই গড়পড়তা ভাল হবার পরেও তেমন কেউ কিনলো না সেটি। ফলে মনের দুঃখে কিছুদিন পরে সেটিকে ফ্রি করে দিল মাইক্রোসফট। বর্তমানে মাইক্রোসফট সিকিউরিটি এসেনশিয়াল নামে কাজ ডাউনলোড করা যায় এই এন্টিভাইরাসটি। রিসোর্স খাবার দিক থেকে বেশ হালকা চুপচাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ করে আর গত দেড় বছর ব্যাবহার করছি একই অপারেটিং সিস্টেম নতুন ইন্সটলেশন ছাড়াই আরামে। আর সর্বোপরি ফ্রি। এটিও জেনুইন উইন্ডোজে চলে।
আরেকটি ফীচার যদিও এটি গুগলের সাথে ‘ক্যাচ আপ’। গুগলের ডকুমেন্টস ব্যাবহার করে আসছি প্রায় গত তিন বছর ধরেই। আজকাল সব ফাইলেরই এক কপি থাকে মেঘের ভেলায়। কিছুদিন হয় মাইক্রোসফটও তাদের অফিস লাইভ চালু করেছে। দিব্যি ডকুমেন্ট, স্প্রেডশীট, প্রেজেন্টেশন, নোট ইত্যাদি অনলাইনেই সেরে ফেলা যায় অফিসের পরিচিত ইন্টারফেসে । হটমেইলের স্কাইড্রাইভ থেকেও সারা যায়। আজকাল ২৫ গিগাবাইট যায়গা দিচ্ছে ফাইলপত্র রাখার জন্য। মন্দ না।
আর ওপেন সোর্স ? তাদের সাথেও আজকাল একটু নরম সুরে কথা বলা শুরু করেছে। হাজার হোক তারাও তো কাস্টোমার
[নোটঃ আমেরিকার ওয়াশিংটনের সিয়াটলের রেডমন্ডে মাইক্রোসফট কর্পোরেশনের হেড অফিস। তাই অনেক সময়েই রেডমন্ড ] নামেই ডাকা হয় মাইক্রোসফটকে
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:২৯