একটা ব্যাপার নিয়ে অনেক দিন ধরেই লিখব ভাবছিলাম, কিন্তু এইসেই করে লেখা হচ্ছিলনা। গতকালকের প্রথম আলোর খবরটা পড়ে মনে হল দু-চার লাইন লিখেই ফেলি।
আমাদের একটা কমন অভিযোগ হল তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে সরকার সাহেবের অবদান / প্রতিবন্ধকতা/ বাইরের দুনিয়া থেকে কমপক্ষে বিশ বছর পিছিয়ে থাকা ইত্যাদি। এখন পর্যন্ত আমরা একমাত্র লাইন দিয়ে চলি যেটা প্রায় দেড় দশক দেরী করে পেয়েছি আর সেটারও মেজরিটি ক্যাপাসিটি আনইউজড আর সেইটাও নিয়মিত কোদালের কোপ খেয়ে চেনস্মোকারের লাং ক্যান্সার আক্রান্ত ফুসফুসের মত অবস্থা। আর সরকারী ওয়েবসাইটগুলোর তো কোন কথাই নাই আর অনলাইনে ট্রানজাকশন করা এখনো 'বৈধ' না আর তার কোন সুযোগও নেই। তাই দেশের তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে সরকারকে অগ্রগণ্য করে রাখলে আর সরকারের আশায় বসে থাকলে খবরই আছে।
অনলাইন ট্র্যানজাকশন সুবিধা না থাকার কারণে অনেক কিছুই করি করি করে করা হয়না আমাদের দেশে। এর একটা অল্টারনেটিভ হতে পারে মোবাইলের ফ্লেক্সি/টপআপের মত জেনেরিক একটা সিস্টেম থাকতে পারে যেটির জন্য যেকোন প্রতিষ্ঠিত ভেন্ডার সেলার হিসেবে মেম্বার হতে পারবেন আর যেকোন গ্রাহক কাস্টোমার হিসেবে মেম্বার হতে পারবেন। আর মেম্বার হলে গ্রাহক পাড়ার পানদোকান থেকেও তার সার্ভিস বা পণ্যের জন্য তার একাউন্টে টাকা জমা দিতে পারবেন। আর ভেন্ডার তার পণ্য বা সেবা বিক্রি করে সেই অনলাইন একাউন্ট থেকে তার ব্যাংকে টাকা জমা করে নিতে পারবেন। আর দ্বিতীয় অল্টারনেটিভ হল, বিশ্বস্ত গ্রাহক বিশ্বস্ত বিক্রেতার কাছে অগ্রীম টাকা জমা রেখে অনলাইনে সেবা বা পণ্য কিনে সেটি খরচ করবেন। কারণ বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এখনো ক্রেডিটে কেনা বা বিক্রীর বিস্তৃত পরিসর মনে হয় তৈরি হয়নি।
কিন্তু আমি মনে করি ব্যাক্তিগত পর্যায়ে এবং বেসরকারী পর্যায়েও যদি উদ্যোগ নেয়া হয় তাহলেও এক ধাক্কায় অনেক এগুয়ে যাওয়া যাবে। অনেকদিন দেশে থাকিনা আর দেশের অনেক জিনিষপাতি সম্পর্কে আইডিয়াও কমে গেছে তারপরেও মনে হয় আমরা কিছু আইডিয়া একত্র করতে পারি যেগুলো কাজে লাগানো অসম্ভব না।
বাস/যাতায়তঃ
মূলত ভলভোর RFID কার্ডের সিস্টেম দেখেই লেখা তাই বাস নিয়েই প্রথমে লিখব। দু-তিন অবছর আগেই মনে হয় দেখেছিলাম সোবহানবাগে সোহাগ পরিবহনের অফিসে। উনারা নিজেদের সুবিধার্থেই পুরো টিকেটিং সিস্টেম অনলাইন করে নিয়েছেন নিজেদের জন্য। ফলে সোবহানবাগ থেকে সকাল দশটার চট্টগ্রামের টিকেট বুক করলে সেটা আর কাওরানবাজার থেকে ডবল বুকিং হবার সম্ভাবনা নাই। এখন সেইটাই যদি পাবলিকের জন্য ওপেন করে দেয়া হয় তাহলে অনেক ঝামেলা থেকে দুই পক্ষই বেঁচে যেত। এখানে সমস্যা দুটা মনে হয়, এক হল পেমেন্ট, আর দুই হল ব্ল্যাকমার্কেট ঠেকানো। কারণ ছুটিছাটার সিজনে টিকিট পাওয়া যে কি জিনিষ তা সবাই জানে।
আমার মনে হয় সবার জন্য ইউনিভার্সালি ওপেন না করে দিয়ে কিছু পরিচিত বিশ্বস্ত কাস্টোমার বেজ দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। অনেক পরিবারই আছে ঢাকায় যাদের বছরে ১০-১৫ টা টিকেট লাগে। তারা হয়ত সরাসরি সোহাগের অফিসে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে কিছু টাকা অগ্রীম জমা দিয়ে দিল আর যখন দরকার অনলাইনে টিকেট কিনে ইমেইল প্রিন্ট করে নিয়ে বাসে উঠে পড়ল। আবার জমা দেয়া টাকা কমে আসলে একসময় গিয়ে বাসের অফিসে আবার কিছু এডভান্স জমা দিয়ে দিল। আর সোহাগ, হানিফ, সাউদিয়া এইরকম চারপাঁচটা বড় সার্ভিস যদি একসাথে একসাইটে সুবিধা দেয় তাহলে তো কথাই নাই।
হাসপাতাল/ডায়গনস্টিকঃ
ট্রাফিক জ্যাম যদি এক্সপোর্ট কমোডিটি হত তাহলে ঢাকা এদ্দিনে বিশাল বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন করতে পারত মনে হয়। ঢাকার একমাথা থেকে আরেক মাথায় যাওয়া মানেই দেড়দিনের সফর। আমাদের সব পরিবারেই কমবেশী রুগী আছে তাছাড়া আমাদের নিজেদেরও জ্বরজ্বালা হাবিজাবি লেগেই থাকে। তাই কদিন পরপরেই ব্লাড, ইউরিন হাবিজাবি টেস্ট করতে হয়ই। এই টেস্ট করতে যাওয়া এক ঝামেলা আর সেই টেস্টের রেজাল্ট আনতে যাওয়া হল আরেক ঝাক্কি। আবার অনেক সময়েই দেখা যায় জলদির মধ্যে রেজাল্ট না পেলে ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট মিস হয়ে যাবে অথবা ক্লিনিক বন হয়ে যাবে। আজকালকার বেশীরভাগ ক্লিনিকেই দেখেছি কিছুটা থেকে মাঝারিগোছের কম্পিউটারাইজড। ইনারা যদি এইটুকু সুবিধা দিয়ে দেন যে টেস্টের সময় দশটাকা বেশী নেবেন কিন্তু রেজাল্টের সাথে সাথেই আমার ইমেইলে রেজাল্টের এককপি পিডিএফ চলে আসবে। তারপরে আমি আমার সুবিধামত কাগজের কপি নিয়ে নিতে পারব। তাহলে মনে হয় মন্দ হয়না।
এপাচে বসিয়ে একটা মেইলসার্ভার চালাতে এমন বড়ো খরচ মনে হয় হবেনা কিন্তু সার্ভিস হয়তো অনেকেরই উপকারে আসবে।
স্কুল/কলেজ/ইউনিঃ
বেশী ঝামেলায় না গিয়ে, স্কুলের পক্ষ থেকেই ইয়াহু বা গুগল গ্রুপস মেইনটেইন করে দিব্যি ক্লাস রুটিন, নোটিশ ইত্যাদি পাঠিয়ে দেয়া যায়। বিনিপয়সাতেই বড়সড় ঝামেলা ছাড়া। আর গার্জিয়ানদের ইমেইল নিয়ে সেখানে আরামসে পুত্র/কন্যাধনের রেজাল্ট পাঠিয়ে দেয়া যায়। রিপোর্ট কার্ডে চোরামী দিন শ্যাষ! আরো ম্যালাকিছু মনে হয় করা যায়। গুগল এপস অনেকগুলো ফ্রী টুল দেয় এডুকেশনের জন্য।
বাজারসদাইঃ
অনলাইন শপিং ভিসা/মাস্টারকার্ডের ভায়াঘুইরা বাংলাদেশে আসতে অনেক দেরী। মাগার নিউমার্কেট বা হাতিরপূলের কোন কাঁচাবাজারের দোকান যদি বলত যে বাজার তো আমাগোর থিকাই করেন, যা বাজার দাম তার থিকা ৫০ টেকা বেশী দিয়েন অনলাইনে আমরা মাইপা, প্যাকেট কইরা বাড়িত পৌছাইয়া দিমু যদি বাড়ি ১৫ টেকা রিশকাভাড়ার ভিতরে হয়। মাসের শুরুতে টেকা এডভান্স কইরা যাবেন আর অফিস বইসা লাঞ্চটাইমে অনলাইনে বাজার করবেন।
শিউর একবছরে তাগোর ইনকাম ৫০গুণ বাইড়া যাইব।
আরো কতকিই করা যায়। আপনাদের আইডিয়াও জানান। আর এইসব এলেবেলে আইডিয়াগুলোরও ভালমন্দ কিছু থাকলে শেয়ার করতে পারেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ৩:৪০