শিয়া মসজিদের গুলি করে মুয়াজ্জিনকে হত্যা, ইমাম সব কয়েকজন আহত হওয়া পুরোপুরি ইসলাম সম্মত কাজ। ভবিষ্যতে এইসব শিয়া, কাদিয়ানী মসজিদে আগুন লাগিয়ে ধ্বংস করা হলেও বিন্দু পরিমাণ আহত হবেন না সুন্নী ঈমানদার মুসলিম ভাইরা। এইরকম মসজিদে আক্রমন করা, রক্তপাত, মসজিকে ভেঙ্গে মলমুত্র ত্যাগের পায়খানা বানানো নবী হযরত মুহাম্মদের নির্দেশেই ঘটেছিল। আমাদের প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত ভাল মানুষ। তিনি বলেছে মসজিদে হামলাকারীরা সাচ্চা মুসলমান নয়। রাজনীতি বিষয়ে উনার জ্ঞান নিয়ে কোনকালেই সংশয় ছিল না। কিন্তু ইসলাম বিষয়ে উনার জ্ঞান অনেক সময়ই হাস্যরস জুগিয়েছে। “সাচচা মুসলমানের” সংজ্ঞা কোন সাচ্চা মুসলমানই একমত হতে পারননি। হযরত ওসমানকে যারা খুন করেছিল তারা উনার বুকে কুরআন আকড়ে থাকা অবস্থাতেই তলোয়ার চালিয়েছিল। এতে কুরআন এফোড়-ওফোড় হয়ে গিয়েছিল। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছিল তারা প্রত্যেকেই ছিল মুসলমান। যাদের মদদে ঘটেছিল তারা এতটাই সাচ্চা মুসলমান যে উনারা বেঁচে থাকতেই বেহেস্তে যাবার ঘোষণা শুনতে পেয়েছিলেন! কুরআনের এতবড় অবমাননা ঘটিয়েছিল মুসলিমরাই। এখন আমরা দেখবো নবী মুহাম্মদের নিদের্শে মসজিদকে আগুন লাগিয়ে ধ্বংস করার ঘটনাটি।
এটি ঘটেছিল মদিনায়। “মুনাফিক” এই শব্দটি কুরআনে বহুবার উল্লেখ করা হয়েছে। মূলত যারা এক সময় হযরত মুহাম্মদকে ভাল জানত, তাকে মান্য করত, তার ধর্মে দীক্ষা নিয়েছিল কিন্তু পরবর্তীকালে হযরত মুহাম্মদের সমালোচনাকারী হয়ে উঠেছিল, তার নিন্দা করতো, তার গণিমতের মাল লুট, জিহাদকে অপছন্দ করতো, ইহুদী নিধনকে বাধাগ্রস্থ করতো তাদেরকেই কুরআনে বার বার “মুনাফিক” বলা হয়েছে। এরকম একজন বিখ্যাত মুনাফিক আবদুল্লাহ ইবনে ওবাই। তিনি বার বার অহেতুক আক্রমন, হামলাকে অপছন্দ করতেন। ইহুদীদের উপর জলুম, অত্যাচার, তাদের নিপীড়নকে বাধা দিতেন। উনার হস্তক্ষেপেই বণু নাযির ইহুদীরা প্রাণে রক্ষা পেয়েছিল। বাসতবাটি, সয়সম্পত্তি ফেলে চলে যাবার শর্তে তারা রক্ষা পেয়েছিল ইবনে ওবাইয়ের মধ্যস্থতায়। এরকমই একজন মুনাফিক আবু আমের। তিনি হযরত মুহাম্মদের মদিনায় আসার পর বদলে যাওয়া ইসলামকে মেনে নিতে পারননি। তিনি প্রকাশ্যে সমালোচনা করতে থাকেন মুহাম্মদের। মদিনায় সম্ভ্রান্ত নাগরিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এ বিষয়ে। মুহাম্মদ মদিনায় একজন মেহমান ছিলেন। তখন পর্যন্ত তাই আবদুল্লাহ ইবনে ওবাই বা আবু আমেরকে অগ্রাহ্য বা তাদের উপর শান্তি নাযিল করতে পারেননি। অভিযোগ করা হয় আবু আমের একটি মসজিদ নির্মান করেন কিছু মুনাফিকদের সহায়তায়। সুরা তাওবায় এই প্রসঙ্গে লেখা আছে- ১০৭.) আরো কিছু লোক আছে, যারা একটি মসজিদ নির্মাণ করেছে (সত্যের দাওয়াতকে) ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে, (আল্লাহর বন্দেগী করার পরিবর্তে) কুফরী করার জন্য মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে এবং (এ বাহ্যিক ইবাদতগাহকে) এমন এক ব্যক্তির জন্য গোপন ঘাটি বানাবার উদ্দেশ্যে যে ইতিপূর্বে আল্লাহ ও তার রসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল। তারা অবশই কসম খেয়ে বলবে, ভালো ছাড়া আর কোন ইচ্ছাই আমাদের ছিল না। কিন্তু আল্লাহ সাক্ষী, তারা একেবারেই মিথ্যেবাদী।(সুরা আত তওবা)।
এবার আসুন জানি এই মসজিদের কপালে কি ঘটেছিল। হযরত মুহাম্মদ সাহাবী আমের বিন সকস এবং ওয়াহশীও উপস্থিতে মসজিদে আগুন ধরিয়ে দেয়ার আদেশ দেন…। এবার আসুন এ থেকে মুসলিমদের জন্য কি শিক্ষা ও নজির থেকে গেলো। যখনই যুগে যুগে কোন পক্ষ মুসলিমদের মনে হবে অপর পক্ষ বিদাত করছে, কুফরী করছে, মুনাফিকি করছে, তাদের মসজিদ মুসলমানদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে (স্মরণ করুন শিয়া ও কাদিয়ানীদের মসজিদকে ঠিক এরকমই বলে থাকে সুন্নি মুসলিমরা) তখন তারাও রসূলের অনুসরণ করে সমজিদে আগুন দিবে! হামলা চালাবে! ধ্বংস করবে। আমরা অতিতে কি দেখেছি- কাদিয়ানীদের মসজিদে হামলা হয়েছে। তাদের মসজিদকে “উপসানালয়” সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়েছিল। শিয়াদের মসজিদ বন্ধ করে দেয়া, আগুন লাগিয়ে দেয়ার ঘটনা পাকিস্তানের ইতিহাসে ঘন ঘন দেখা যায়। বেকো হারাম, আইএস মসজিদে কেন হামলা চালায় সেটা কি আর তাহলে ব্যাখ্যা করতে হবে? আমরা গতকাল দেখলাম শিয়াদের মসজিদে গুলি কে মুয়াজ্জিনকে হত্যা করা হয়েছে। এটিকে তাহলে কিভাবে ইসলাম বিরোধী কাজ বলবেন আপনারা? আর হামলাকারীদেরই বা কেন সাচ্চা মুসলমান বলবেন না? বিবেককে এখনি প্রশ্ন করতে না শিখলে সামনে কিন্তু ভয়াবহ দিন আসছে!
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:১৪