মানুষের কেন একজন ঈশ্বরের প্রয়োজন হল? ঈশ্বর তো নিজে কিছু করে দেন না, কেবল মাত্র নির্দেশনাই দেন! এবং সে নির্দেশনার গুলো এমন কিছু নতুন নয় যে মানুষ তার সম্পর্কে অবগত নয়! তবে?
আমার ধারণায় ঈশ্বর এসেছেন পুরুষ ও নারীর ক্ষমতার দ্বন্দ্ব থেকে, কৃষিজীবী মাতৃতান্ত্রিক সমাজ থেকে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে উত্তরনের ধাপে। জমির অধিকার, পশুসম্পদের অধিকার, দাসেদের সত্বাধিকার, নিজ নিজ গোত্রে নেতৃত্বের অধিকার বোধ থেকে।
বিবর্তনের ধারায় সৃষ্ট মানব আর মানবী একে অন্যের পরিপূরক; সৃষ্টিকে অব্যাহত রাখতেই প্রকৃতির প্রয়োজনে। কিন্তু নারীর জন্মদানের ক্ষমতাটিকে সঠিক ভাবে ব্যাখ্যা করতে অসমর্থ পুরুষ মাতৃত্বকে ভয়ানক ভাবে ভয় পায়। অথচ জন্ম অপরিহার্য এবং প্রয়োজনীয়। সৃষ্টিতে নারীর সরাসরি অংশগ্রহন পুরুষকে দেয় inferiority complex. নিজেকে সে ক্ষুদ্র মনে করে, অথচ সে দৈহিক শক্তিতে বলিয়ান! এবং সে এমন যুগ, যখন দৈহিক শক্তির কাছে মেধা শক্তি পরাভুত; জীবন ধারনের স্বার্থেই।
তাই নারীকে নিয়ন্ত্রনে পুরুষের প্রয়োজন হয় এক অপ্রাকৃত শক্তি উদ্ভাবনের; যার নাম হল ঈশ্বর। তাবৎ অজানা প্রশ্নের উত্তর যার কাছে আছে। যে ঈশ্বর ঝড় দেয়, বৃষ্টি দেয়, ভূমিকম্প দেয়, সে অজানা, অচেনা, কিন্তু বড়ই কাছের ঈশ্বর। যে ঈশ্বর সৃষ্টি করে; যে ঈশ্বরকে ব্যবহার করে নারীর জন্মদানের বিশয়টির আপাতঃ ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। কৃষিজীবী মাতৃতান্ত্রিক সমাজ থেকে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে উত্তরনের, ক্ষমতা আর নেতৃত্ব কেড়ে নেয়ার আর কি পথই বা পুরুষের ছিল?
ঈশ্বর ধারনাটি অবশ্যই এক দিনে আসেনি। হঠাৎ একদিন পুরুষ ঈশ্বর সৃষ্টি করেনি। সেটা বললে, সরলিকরন করা হবে। জিজ্ঞাসা অবশ্যই ছিল বহুদিন থেকে। ধারনাটা শক্ত হয়েছে স্বার্থসিদ্ধির প্রণোদনা থেকে। এর পর হাজার বছর ধরে, ঈশ্বরকে ব্যবহার করে, নারীর উপরে পুরুষ আধিপত্য বিস্তার করেছে।এর পর ধর্ম ব্যবসায়ীরা ঈশ্বরের ব্যবহারকে নিয়ে গেছে আরও ভিন্ন মাত্রায়। ক্রমে সৃষ্ট করেছে ধর্মগ্রন্থের, এবং এরপর ধর্মকে পূর্ণশক্তিতে ব্যবহার করেছে রাজনীতিতে।
ক্ষমতা সংহত করার জন্যে, ধরা যায়না, ছোঁয়া যায়না, যায়না তারে দেখার মত একটি কনসেপ্ট, যেখানে শুধু বিশেষ কেউ কেউ কখনও কখনও তাকে অনুভব করতে পারে; শোষণের স্বার্থে, অন্যের অধিকার হরনের স্বার্থে; নিজেকে অন্যের উপরে টিকিয়ে রাখার স্বার্থ; অসীম ও সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী এ ধরনের একটি শক্তি সাধনার কি কোন বিকল্প ছিল, না আজও আছে? !!!
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:০৪