“জোর ইজতেমা” শুরু হয়েছে। এটা মূল ইজতেমা শুরুর আগে তাবলিগি দলগুলোর সফর নির্বাচনের জামায়েত। পাকিস্তান, বার্মা, ভারতসহ নানা দেশ থেকে তাগলিগাররা তুরাগ তীরে জড়ো হচ্ছে। আমাদের টেলিভিশনগুলি আপগ্রেট জানাচ্ছে জোর ইজতেমার। এই মিডিয়াগুলিই নাকি “জঙ্গিবাদ বিরোধী”। ঈদের নামাজ লাইভ টেলিকাস্ট করে পাবলিকের ধর্মীয় সেন্টিমেন্টকে চাগিয়ে দিয়ে এরাই “রবীন্দ্র মেলা” “নজরুল মেলার” আয়োজন করে থাকে। অসাম্প্রদায়িক দেশ নাকি তাদেরও কাম্য! ইসলামী সাওয়াল জবাবের মত অনুষ্ঠান প্রচার করে যারা দেশে কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদ প্রচার করছে তারাই আবার “জিহাদী-জঙ্গিবাদীদের” “জিহাদী বইসহ” গ্রেফতা্রের সংবাদ প্রচার করছে নেগেটিভ দৃষ্টিকোণ থেকে যা আসলেই স্ববিরোধী। এই মিডিয়াগুলি সব মুসলিম দেশের মতই “গুড মুসলিমদের” দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। তাদের স্ববিরোধী ধর্মীয় অবস্থান থেকেই জিহাদী-জঙ্গিবাদকে দেখে থাকে। আল জাজিরা থেকে পাকিস্তানের ডন, জঙ্গিবাদের মূলে কেউ-ই হাত দেয়নি, দিবেও না।
দেশের সরকারকে আমরা সব সময় জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুনি। সরকারের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে জঙ্গিদের “জিহাদী বইপত্র” সহ গ্রেফতার করতেও আমরা প্রায়ই দেখতে পাই। যে বইগুলি মাদ্রাসায় পাঠ্য, ইসলামী ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত, দুনিয়ার সমস্ত ইসলামী স্কলাররা যে বইগুলি ইসলামকে জানার উৎস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন সে বইগুলিই কথিত এইসব জঙ্গি-জিহাদীদের হাতে থাকলেই “নিষিদ্ধ জিহাদী বইপত্র” হয়ে যায়। অথচ এই রাষ্ট্রই জনগণের টাকায় ইসলামী ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বইগুলি প্রকাশ করে থাকে। রাষ্ট্র তার কোষাগার থেকে এই বইপুস্তকগুলো যেখানে একাডেমিকভাবে চর্চা করা হয়, তাদের খরচ নির্বাহ করে থাকে। এটিও স্ববিরোধীতা। রাষ্ট্র একদিকে জঙ্গিবাদ বিরোধী আবার সে নিজেই জঙ্গিবাদের পৃষ্টপ্রষক! এটিও একটি মুসলিম দেশের “গুডমুসলিমদের” সরকারের স্ববিরোধীতা। এই যে দেশের আইন শৃঙ্ঘলায় যেখানে সীমিত সংখ্যার পুলিশ বাহিনী হিমশিম খাচ্ছে সেখানে বিরাট সংখ্যাক পুলিশকে ফালতু একটা “জোর ইজতেমায়” নিয়োগ করে অর্থ ও শ্রমের অপচয় করা হচ্ছে। ইজতেমা হচ্ছে বাংলাদেশে নির্বিঘ্নে জিহাদী আইএস, আল কায়দা, লস্কর এ তেহরিক নামের সব জিহাদীদের প্রবেশের সহজ রাস্তা। গোটা দুনিয়াতেই এখন জিহাদীরা “ভদ্রস্থ ইসলাম প্রচারের” সুযোগ নিচ্ছে। রিফিউজি সেজে রিফিউজিদের সঙ্গে ভিড়ে ইউরোপে শয়ে শয়ে আইএস সদস্য প্রবেশের খবর এখন গোটা বিশ্ব জানে। বাংলাদেশে প্রতিবছর বিশ্ব ইজতেমার সুযোগে অবাধে জিহাদীদের প্রবেশের একটা সুযোগ। পাকিস্তানের ভয়ংকর সব জিহাদীরা তাদের মতবাদ প্রচার করার সুযোগটা নেয় ইজতেমাকে কাজে লাগিয়ে। ইজতেমায় সাধারণ তরুণরা রাজনৈতিক ইসলামের দীক্ষার সহজ শিকার। ইজতেমার মত আন্তর্জাতিক কোন ইসলামী সম্মেলনকে তাই অচিরেই দেশের মধ্যে সীমিত করে ফেলা উচিত। বাইরে থেকে মুসল্লিদের প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা জারি এখন সময়ের দাবী। আমরা যদি সত্যিই জিহাদী-জঙ্গি-খেলাফতীদের নির্মূল চাই তাহলে ইজতেমাকে শুধুমাত্র বাংলাদেশ কেন্দ্রিক রাখতে হবে অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত। কিন্তু আমরা মনে হয় জিহাদীদের নির্মূল করতে চাই না। কোন বিশ্বাসী মুসলমানই সেটা চান না। “গুড মুসলিম” হচ্ছে ভন্ড মুসলিম। এরা মুখের গ্রাসটা মাথার পিছন দিয়ে ঘুরিয়ে খায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:৫৪