ছোটোবেলায় মায়ের মুখে শোনা গল্প------------
একদেশে বহুলুল পাগল নামে এক পাগল ছিলো।একদিন ঐ দেশের রাজা রাণী সহ সভাসদদের নিয়ে ভ্রমণে বের হলেন। হঠাৎ হৈ চৈ করে এক পাগল এসে রাজকীয় পথিকদের যাত্রাই ব্যাঘাত ঘটালো। নোংরা,ছেড়া-ফাটা কাপড় পরিহিত বহুলুল পাগলকে দেখে রাজা সভাসদদের জিজ্ঞেস করলেন "কে এই পাগল,আমার কাছে সে কি চাই?"।তখন বহুলুল পাগল নিজেই রাজাকে বললেন, "রাজামশাই আমার কাছে একটা বেহেশত আছে এবং আমি তা আপনার কাছে বিক্রি করতে চাই,দাম মাত্র ১০০০দিরহাম"।তখন রাজামশাই বিরক্ত হয়ে বহুলুল পাগলকে সরিয়ে দিতে বললেন।
কিন্তু রাণী সাহেবার মন ছিলো উদার। রাণী বহুলুল পাগলের কাছ থেকে বেহেশত টা কিনে নিলেন রাজামশাইয়ের তাচ্ছ্যিল্য উপেক্ষা করে।রাণীসাহেবা ১০০০দিরহামের বদলে পেলেন কিছু ছেড়াঁ-ফাটা কাগজ।সেদিন রাতের বেলায় রাজা-রাণী যে যার মতো ঘুমিয়ে পড়লেন। ঘুমের মধ্যে রাজা স্বপ্ন দেখলেন রাণী একটি সুন্দর,সুশোভিত জায়গায় বিশাল বড়ো আসনে বসে আছেন এবং রাজামশাইকে হাত বাড়িয়ে ডাকছেন। রাজা মশাই অন্ধকার জায়গা থেকে রাণীর কাছে যেতে চাইছেন কিন্তু রাণী সাহেবার সুন্দর জায়গাটার সীমানায় ঢুকতে পারছেন না কিছুতেই।বিছানায় এপাশ-ওপাস করতে করতে একসময় রাজামশাইয়ের ঘুম ভেঙ্গে গেলো।ভোরোরাতে রাজামশাই নিজের ঘরে পায়চারী করলেন এবং ভোর হওয়ার জন্য অপেক্ষাকা করছেন, আর দেখলেন রাণীসাহেবা নিশ্চিন্ত মনে ঘুমুচ্ছেন।সকালবেলা রাজা রাণীর কাছে জানতে পারলেন রাণীসাহেবা রাতের বেলাই খব সুন্দর স্বপ্ন দেখেছেন।রাণীর স্বপ্নটা রাজার স্বপ্নের মতোই ছিলো কিন্তু রাণীর সাহেবার মধ্যে ছিলো বেহেশত লাভের নির্মল আনন্দ।
সকাল হতেই রাজামশাই সভাসদদের ডেকে পাটালেন।রাজামশাইয়ের জরুরী তলব পেয়ে হন্তদন্ত হয়ে সভাসদরা সবাই ভোর হতে না হতেই হাজির হলেন। রাজাসাহেব গুরুগম্ভীর হয়ে বসে আছেন।সভাসদরা কেউ ভয়ে কিছু বলছেন না। শেষ পর্যন্ত উজীর সাহেব নীরবতা ভেঙ্গে রাজামশাইকে জিজ্ঞেস করলেন, "হুজুর কি কোনো বিশেষ কারণে বিচলিত"।তখন রাজামশাই রাতের বেলা দেখা তার নিজের এবং রাণীসাহেবার স্বপ্নের কথা জানালেন সবাইকে। সভাসদদের মধ্যে ২/১জন পন্ডিত ব্যক্তি ছিলেন তারা ব্যাখ্যা করলেন বহুলুল পাগলের কথিত বেহেশতের সাথে এর সম্পর্ক থাকতে পারে।কারণ রাজামশাই রাজামশাই বহুলুল পাগলের বেহেশত তো কিনেন নি উল্টো রাণীকে টিপ্পনী (বেহেশত কেনাটাকে উদ্ভট পাগলামী বলে) কেটেছিলেন।
রাজাসাহেব সভাসদদের কথা শুনে প্রভাবিত হয়ে বহুলুল পাগলকে ডেকে পাঠালেন। কিন্তু বহুলুল পাগলকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।অনেক খোজাঁখুজিঁর পর বহুলুল পাগলকে ধরে আনা হলো।রাজা বহুলুল পাগল আরেকটা বেহেশত বিক্রি করতে বললেন।কিন্ত বহুলুল পাগল বললেন, "হুজুর আমায় মাফ করবেন আমার কাছে একটাই বেহেশত ছিলো"।তারপর রাজামশাই অগ্নিশর্মা হয়ে বললেন, "কালকে ছেড়া-ফাটা কাগজ গছিয়ে যে টাকা পেয়েছিলে তা দিয়ে কি করেছো তুমি?" তখন বহুলুল পাগল মুখ কাচুমাচু করে উত্তর দিলো,"হুজুর একজন বিপদগ্রস্ত মুসাফিরকে বাচাঁনোর জন্য আমি বেহেশতটা বিক্রি করেছিলাম"।তখন রাজামশাই বললেন, "তাহলে আমার এবং রাণীসাহেবার স্বপ্নের মানে কি?" উত্তরে বহুলুল পাগল বললেন, "রাণী সাহেবা আমাকে বিশ্বাস করে একজন মানুষের উপকার করেছেন,তাই স্বপ্নটা ছিলো স্রষ্টার পক্ষ থেকে পুরষ্কার।"
সবশুনে রাজাসাহেব মন্তব্য করলেন,"হুম!!!বিশ্বাসে মিলাই বস্তু আর তর্কে বহুদূর।"
ছোটোবেলার মা এভাবেই আমাকে বিশ্বাস করতে শিখিয়েছিলেন।তাই আমি বিশ্বাস করতে ভালোবাসি।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৩১