আজকাল দেখছি আমার বেশ বই পড়া কমে গেছে। অথচ আমার জীবনে এমনও সময় গেছে ঘন্টার পর পর ঘন্টা জাফর ইকবাল কি তিন গোয়েন্দায় বুঁদ হয়ে থেকেছি। গল্পের বই পড়া শুরু সেই ক্লাস ওয়ান থেকেই। প্রথম পড়া বইটির নাম এতদিন পরে ভুলে গেছি। কি একটা পুজো সংকলন ছিল কোলকাতায় ছাপা ঝুরঝুড়ে একরকম কাগজে, ধরলে ভেঙ্গে যায়। বই কিনে দেয়ার সংগতি ছিল না পিতামাতার কোনকালে। তাই গল্পের বই কেনা হত বছরে একবার। ঈদের টাকা দিয়ে। মাঝে সাঝে জন্মদিনেও মা দিতেন একটা বই। তাই বই পড়তাম এর ওর কাছ থেকে চেয়ে চিন্তে। শীর্ষেন্দুর অদ্ভুতুরে সিরিজ ধরেছিলাম সেই কেলাস ত্রী ফোরে থাকতে। সুনীল, শীর্ষেন্দু, সত্যজিত, লীলা মজুমদার, নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায় আর শিবরাম চক্রবর্তি - এই জনাদের লেখা পড়তাম খুব। আর পড়তাম রাশিয়া থেকে ছাপা মনোমুগ্ধকর সব ছবিওলা বই। মালাইকাইটের ঝাঁপি আর জাদু তীর বোধকরি অনেকেই পড়ে থাকবেন। সেদিন বাজারে গিয়ে বই খানা দাম করলাম। দাম শুনে মাথায় হাত। আটশ টাকা দিয়ে বই কিনে পড়ার সাধ্য নাই। রাদুগা প্রকাশনীর (নাকি প্রগতি?) বইগুলো কিনতাম নীলক্ষেত থেকে। সব সময় পাওয়া যেত না। তাই প্রতিদিন বিকেলে যেতাম বাসা কাছেই ছিল কিনা। পুরোন ঢাকা থেকে হেঁটে যেতে বড়জোর দশ পনেরো মিনিট লাগত আমার। এমন দিন গেছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বই উলট পালোট করছি (আসলে ফাও পড়ার চেষ্টা) ওমনি ফেরিওলা দিল ধমক। আহা এখন কিছুটা উদাস লাগে সেসব সাতরঙ্গা দিনের কথা ভেবে।
যাই হোক এই রাশান বই নিয়ে একটা খুব বাজে স্মৃতি আছে। ক্লাস ত্রিতে কি যেন এক হাঙ্গামায় পুরষ্কার পেলাম। সেবার জন্মদিনে মায়ের দেওয়া একখানা বই - আর্কাদি গাইদারের "ইশকুল"। আমি জ্ঞ্যানত কখনও কারো কাছ থেকে বই ধার নিয়ে মেরে দেই নি। সে আপই যতই টোয়েনীয় উক্তি ঝাড়ুন আমার কেনা বই গুলি ছিল একেবারে আপন সন্তানের মত। চোর ব্যাটা শম্ভুক আমার বইখানা কিনা বেমালুম হজম করে ফেলল। দেখুন দেখি ব্যাপারখানা!
এই পড়ার নেশা এখন গেছে। হুমায়ুন-জাফর ইকবাল পড়া ছেরেছি স্কুল ছাড়ার সাথেই। সেবার অনুবাদ গুলো ভালো হয়। এখন সেও আর ভালো লাগে না। কোনকালেই জ্ঞ্যানের বই ইত্যাদি ভালো লাগেনি। কিন্তু তাই এখন পড়তে হয়। সেবার বাবা যখন আমার এক আলমারি বই নীলক্ষেতে বিক্রি করে দিল তখন থেকেই বুঝেছি...বড় হয়ে গেছি...পাভলুশকা ইউ আর আ গ্রোন আপ নাও...
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:৫৮