somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্ধকারের গান-২: বাংলাদেশে শিশুদের উপর যৌন নির্যাতন ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা-নারী শিশু অধ্যায়

১৯ শে মার্চ, ২০১২ বিকাল ৩:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

----------------------------------------------------------
"I cannot Say how truth may be;
I say the tale as ‘twas said to me"
- Sir Walter Scott, “The Lay of the Last Minstrel

----------------------------------------------------------



শিশুদের উপর যৌন নির্যাতন বাংলাদেশের সবকটি সামাজিক স্তরে ছড়িয়ে আছে। শিশুরা খুব কম বয়স থেকেই নিপীড়িত হবার ঝুঁকির মাঝে থাকে। এই সমস্যার প্রকৃতি ও প্রকরণ এত জটিল যে একটি সুস্পষ্ট শ্রেণীবিন্যাস করা বেশ অসুবিধাজনক। বাংলাদেশের শিশুরা প্রতিনিয়ত নিজেদের কর্মস্থলে, সামাজিক সুরক্ষালয়ে, স্কুলে এমনকি গৃহ অভ্যন্তরে নির্যাতিত হয় এবং হচ্ছে। গত পর্বে আমি দেখাতে চেয়েছিলাম কিভাবে শিশু নিপীড়ন বহুযুগ আগে হতেই প্রচলিত। এমনকি অনেকে শুনে আশ্চর্য হবেন ১৯৭৪ এর আগে এটি লিগালি অপরাধ ছিল না। ব্রিটিশ উপনৈবিশিক আমলে ইংল্যান্ডে অর্থের বিনিময় শিশু সম্ভোগ প্রচলিত ছিল। এই সমস্যাটির প্রকৃতি, ফলাফল, প্রভাব (impact) ছেলে শিশু, মেয়ে শিশু এবং এদের বয়স ও সামাজিক অবস্থার সাথে পরিবর্তনশীল। শিশুরা অত্যন্ত কম বয়স (নিম্ন দুই বছর) থেকেই এই ঝুঁকির মাঝে থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে পুরুষ শিশুটি যেখানে নিজেকে রক্ষার জন্য শারীরিক ভাবে সক্ষম হয়ে যায় নারী শিশুটির ক্ষেত্রে নিপীড়ন কেবল শুরু হয় মাত্র। তাই নারী শিশুরা বিশেষ করে শারীরিক ভাবে অক্ষম শিশুরা (children’s with disabilities) এবং পথ শিশুরা সবচেয়ে বেশী ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করে। নিম্নবিত্ত ও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শ্রেণীর শিশুরাই হচ্ছে যৌন নিপীড়নকারীদের সবচেয়ে সহজ শিকার।


বাংলাদেশে এখনো শিশু বিবাহ প্রচলিত আছে এবং এই বিবাহ গুলি আইনত নিষিদ্ধ হলেও সমাজের নৈতিকতার মানদণ্ডে এই বিবাহ গুলি অবৈধ নয়। এদেশের অভিভাবকরা ১৮ পেরুনোর আগেই মেয়ে শিশুদের বিয়ের ব্যবস্থা করে থাকেন এবং প্রায় সবক্ষেত্রেই শিশুটির মতামত গুরুত্বহীন। তাই এই পর্বের উপজীব্য হল শিশু নির্যাতন কি, শিশু নির্যাতনকারীরা কারা এবং বাংলাদেশে মেয়ে শিশুদের অবস্থান।

শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনকে আমরা মোটা দাগে দুটি ভাগে বিভক্ত করতে পারি – বাণিজ্যিক ও অবাণিজ্যিক। আমি এই লেখাতে কেবল দ্বিতীয়টি নিয়ে আলোচনা করব। প্রথমটির মাঝে চাইল্ড ট্রাফিকিং, সেক্স ট্যুরিজম ও চাইল্ড পর্ণোগ্রাফি অন্তর্ভুক্ত।

যৌন নির্যাতন বলা হচ্ছে কোন কোন কর্মকান্ডকে?

যৌন নির্যাতনের সংজ্ঞা পেশাজীবী ভেদে ভিন্ন। লিগাল প্রাক্টিশানারের কাছে কেবল মাত্র সেই সব কর্মকাণ্ড যৌন নির্যাতনের অন্তর্ভুক্ত যা পেনাল কোড গুলি ভঙ্গ করে। আর সাইকোলজিস্টদের কাছে এটি হল এমন যে কোন কাজ যেখানে একটি শিশুকে যৌন পরিতৃপ্তির জন্য ব্যাবহার করা হয়।

কোন নির্দিষ্ট কর্মকাণ্ডকে যৌন নিপীড়নের অন্তর্ভুক্ত করা মুশকিল। কেবল মাত্র শারীরিক আঘাত (assault) যৌন নির্যাতন নয়। অ-দৈহিক অনেক আচরণ এর মাঝে পড়ে যেমন – যৌন তৃপ্তির জন্য শিশুর দেহের কোন অংশ উন্মোচন (চাইল্ড পর্নোগ্রাফি), শিশুকে পর্ণোগ্রাফি দেখানো, পোশাক পরিবর্তনের সময় শিশুকে পর্যবেক্ষণ এবং শিশুটিকে অশোভন কোন কাজ করতে বাধ্য করা অথবা উৎসাহ দেয়া (স্বমেহন বা Masturbation or to touch Genital Areas)। যৌন নিপীড়নের মধ্যে আরও যেগুলো অন্তর্ভুক্ত – শিশুটির দেহে-জেনিটাল অংশে হাত দেওয়া, মুখ মেহন(oral Copulation), যৌন সঙ্গম (Anal or Vaginal)।

সাধারণভাবে আমরা এটা বলতে পারি যদি কোন পূর্ণ বয়স্ক অথবা কৈশোর এর শেষ পর্যায়ে আছে এমন কোন ব্যক্তি তার যৌন আকাঙ্ক্ষা নিবারণের জন্য অপ্রাপ্তবয়স্ক (সরকারী ভাবে ১৮ বছরকে প্রাপ্ত বয়স্ক ধরা হয়) কোন শিশুকে তার মতের বিরুদ্ধে অথবা তার সরলতার সুযোগ (with or without consent) নিয়ে যে কোন ধরণের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয় তবে আমরা সেটিকে যৌন নিপীড়নের অন্তর্ভুক্ত করতে পারি।

অর্থাৎ এই কাজ গুলি যদি শিশুটিকে প্রলুব্ধ করার মাধ্যমে করা হয় তার মত বিরুদ্ধ নাও হয় তবুও এটিকে যৌন নিপীড়নের অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব।




শিশুদের যৌন নির্যাতনকারী ব্যক্তিরা কে?


শিশু নিপীড়ন কারীরা বিশেষ করে পুরুষ নির্যাতনকারীরা কেন শিশুদের আক্রমণ করে এ সম্পর্কে বেশকিছু তত্ত্ব এবং ব্যাখ্যা আছে। বিষয়টি নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে। প্রায় সবক্ষেত্রে অপরাধী ভিকটিমের নিকট এবং আস্থাভাজন কোন ব্যক্তি। শতকরা নব্বই ভাগ ঘটনায় শিশুটি নির্যাতনকারীকে চেনে। চাইল্ড সেক্সুয়াল এবিউস নিয়ে গ্লোবাল স্টাডি বলছে প্রায় ৩০% ক্ষেত্রে অপরাধী শিশুটির নিকট আত্মীয় (Victims and Abuser are Blood Related) – আঙ্কেল, ভাই, বাবা কিংবা কাজিন। প্রায় ৬০% ক্ষেত্রে ভিকটিম নির্যাতনের শিকার হয় প্রতিবেশী, পরিবারের বন্ধু স্থানীয় কোন ব্যক্তি, শিক্ষক, বেবীসিটার দ্বারা এবং কেবল মাত্র ১০ শতাংশ ক্ষেত্রেই শিশুটি নির্যাতিত হয় সম্পূর্ণ অচেনা কারো মাধ্যমে।


আমেরিকান সেন্টার ফর পিটিএসডির কিছু পরিসংখ্যান দেখুন –



■ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এবিউসার ভিকটিমকে চেনে কিন্তু নির্যাতনের শিকার শিশুটি তার পরিবারের কেউ নয়। যেমন – পারিবারিক বন্ধু,শিক্ষক, প্রতিবেশী। প্রতি ১০ জন অপরাধীর মাঝে ৬ জন এই শ্রেণীতে পড়ে।

■ যৌন নির্যাতনকারী প্রতি ১০ জনের মাঝে ৩ জন হল পরিবারের সদস্য – ভাই, পিতা, চাচা, মামা কিংবা কাজিন।

■ প্রতি ১০ জনে মাত্র ১ জন হল সম্পূর্ণ অচেনা কেউ

■ প্রায় ১৪% ক্ষেত্রে ছেলে শিশুদের যৌন নিপীড়নকারী হলেন নারী এবং মেয়ে শিশুদের ক্ষেত্রে এটি প্রায় ৬ শতাংশ।

শেষ পয়েন্টটির দিকে লক্ষ্য করুন।


পুরুষ শাসিত সমাজে আমরা নারীদের প্রায় স্বতঃপ্রদ ভাবেই ভিকটিম হিসেবে ভাবতে ভালোবাসি। কিন্ত গ্লোবাল ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি রিভিউ (২০০৯) বলছে বেশিরভাগ যৌন নির্যাতনকারী পুরুষ হলেও ছেলে শিশুদের বিরুদ্ধে ঘটা কেস গুলির প্রায় ১৪-৪০% ক্ষেত্রে নির্যাতনকারী একজন নারী এবং মেয়ে শিশুদের ক্ষেত্রে এটি প্রায় ৬ শতাংশ।


এখন আসুন আমরা কিছু শিশুর কথা শুনি –

[ অতিমাত্রায় সংবেদনশীল পাঠকদের চার নম্বর কেস স্টাডি এড়িয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে ]

সকল ঘটনা গুলো ইউনিসেফ বাংলাদেশ ২০১১ রিপোর্ট থেকে নেওয়া


কেস স্টাডি ১

মিনা
বয়স ১২


মিনা যৌথ পরিবারে থাকে। এই পরিবারে আরও থাকেন মিনার দুই চাচা ও তার পরিবার। এক শীতের রাতে বাসার বাচ্চারা টিভি দেখাতে ব্যস্ত মিনা ধর্ষিত হয় ওর এক চাচীর পিতা দ্বারা। মিনা উনাকে “নানা” ডাকে। অপরাধীর বয়স আনুমানিক ৬০ বছর। কিছু দূরেই মিনার মা রান্না করছিলেন। মিনা তার মাকে এ কথা জানালেও যৌথ পরিবারে মিনার মার ক্ষমতা অতি সামান্য। পরবর্তী অংশ শুনুন মিনার মার জবানীতে:

“ আমার স্বামী চান না আমি কিছু বলি এই ঘটনা সম্পর্কে। আর উনার আয়ও ওর ভাইয়ের মত বেশী নয়। আমার বাবাও গরীব। এই “নানা” পয়সাওলা মানুষ আর গ্রামের মাতব্বর শ্রেণীর। আমার জা (ধর্ষকের মেয়ে) বলতে পারেন যে আমরা তাদেরকে হিংসা করি তাই তাদের অর্থ আত্মসাৎ করার জন্য গল্প বানিয়েছি।“


মিনাকে আর স্কুলে যেতে দেওয়া হয়নি। এর মাস ছয়েকে পরেই যখন মিনাকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয় তখন মেয়েটির বয়স বড়জোর ১৩।


কেস স্টাডি ২

আকলিমা
বয়স ১২


ছোট দুই ভাইবোনকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেবার পর আকলিমা বাসন ধুচ্ছিল। আর আকলিমার বাবা-মা গিয়েছিলেন ক্ষেতে কাজ করতে। খোকন (গ্রামের প্রভাবশালী ধনী পরিবারের সন্তান) আর তার বন্ধু এসে ওর কাছে পানি চায়। আকলিমা পানির জগ আর গ্লাস আনতে ভেতরে গেলে ওরা তার পিছু পিছু আসে। তারপর পালাক্রমে আকলিমাকে ধর্ষণ করে।
আকলিমাকে যখন ওর বাবা-মা উদ্ধার করেন তখন ও রক্তের সাগরে ভাসছিল। ওকে নিকটস্থ হেলথ সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়।

কর্তব্যরত যুবক ডাক্তারটি আকলিমার অভিভাবকদের আইনি পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ দিলেও ধর্ষকদের একজনের বাবা (স্থানীয় মাতবর) অভিভাবকদের বাধা দেন এবং তাদের বিশ হাজার টাকা দেওয়ার আশ্বাস দেন। সব খুব দ্রুত ঘটেছিল। আকলিমা যখন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেল ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে। প্রতিশ্রুতি দেওয়া টাকা আকলিমার পিতার পরিবর্তে স্থানীয় প্রশাসনকে দেওয়া হয় যাতে কোন শালিস না বসে।
----------------------------------------------------------
উল্লেখ্য সরকারের তরফ থেকে থানা পর্যায়ে কর্মরত সকল চিকিৎসকদের এধরণের ধর্ষণের ক্ষেত্রে অবশ্যই মেডিকেল সার্টিফিকেট জারী করার জন্য বলা হয় (২০০২)। তবে আর অনেক অধ্যাদেশের মতই এটিও প্রায় ক্ষেত্রেই মানা হয় না। যদি হত তবে আকলিমার অবস্থা ভিন্ন হতে পারত।
----------------------------------------------------------
কেস স্টাডি ৩

“পিতার ওপর প্রতিশোধ নিতে ধর্ষন”



জামালপুর জেলার ছোট একটি শহর। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা থেকে একটি ছেলেকে বহিষ্কার করা হল। ছেলেটির বয়স ১৯। এর দুই মাস পরে ছেলেটি প্রতিশোধ নিতে শিক্ষকটির ১৬ বছর বয়স্কা মেয়েকে ধর্ষন করে। তারপর মেয়েটির বাবার কাছে ফোন করে এবং বলে -
[এ অংশটুকু আমি আর বাংলায় ভাষান্তর করলাম না]

"I just raped your daughter. Come and get her. I want to see your face. You have destroyed my life. I wanted to destroy yours."


মেয়েটির পরিবার কোন মামলা করে নি কোন শালিসের ব্যাবস্থাও করা হয় নি। হাইস্কুলের স্বল্প বেতন ভুক্ত এই শিক্ষকটির পরিবারের জন্য এটি ছিল অত্যন্ত বড় একটি দূর্ঘটনা। মেয়েটির মা যিনি কিনা স্থানীয় NGO এর শিক্ষিকা পরে বলেন-

“আমার স্বামী এবং আমি ভাল কাজে কর্মরত। আমি ভেবেছিলাম যে জায়গায় আমদের বাস, যে পরিবারের
অংশ আমি, আমাদের কাজের সুনাম আমাদের রক্ষা করবে। এরকম একটা ঘটনা যে আমাদের আথে ঘটতে পারে আমরা তা কখনোই ভাবিনি। এ নিয়ে আমাদের পক্ষে কথা বলাও সম্ভব না। আইন আছে, সালিশও ডাকা যায় কিন্তু এই বৃত্ত ভাঙ্গা আমাদের পক্ষে অসম্ভব।“


হাইস্কুলের এই সামান্য শিক্ষকটির পরিবারের পক্ষে এই শেকল ভাঙ্গা সম্ভব ছিল না। কারণ এর সাথে জড়িয়ে আছে পরিবারটির সম্মান। স্কুলের বেতন যত সামান্য এবং পরিবারের পুরুষ সদস্য কেবল তিনি একা। এই সমাজে নারী সন্তানদের দেখা হয় দুর্বলতার প্রতীক হিসেবে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই হয়ত তিনি কোন পদক্ষেপ নেন নি।


কেস স্টাডি ৪

ফরিদা
বয়স ৮


ফরিদা, ঢাকায় কাজ করে। বছরে তিন কিংবা চার বার বাবা-মার কাছে আসা হত। ঘটনার দিন ও নিজের বাসায় ছিল। ফরিদার মা একটি ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন। মা কাজে চলে যাবার পর ফরিদার পিতা কিছু আগেই কাজ থেকে বাসায় ফেরেন। তারপর মদ্যপান এবং নীল ছবি দেখা শুরু করেন। ফরিদা তখন ঐ রুমের মেঝেতে বসে খেলছিল। পরে ফরিদার কাছ থেকে জানা যায় ওর বাবা ওকে গ্লাসে করে কিছু খেতে দেন যা ও বমি করে ফেলে দেয়।


ফরিদার গোঙ্গানি আর কাতরোক্তি শুনে প্রতিবেশী এক মহিলা এসে দেখেন রক্তে ভেজা বিছানায় শিশুটি শুয়ে আছে আর ততক্ষণে ফরিদার বাবা অদৃশ্য হয়েছেন। ফরিদাকে দ্রুত হেলথ সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তার মাকে খবর দেওয়া হয়। সেখানে ওকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং এখানকার ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়। সেদিন ফরিদার ১৩ টি স্টিচ লেগেছিল।

ব্রেকিং দা সাইলেন্সের মতে এধরণের ঘটনা বাংলাদেশে কম ঘটে কিংবা কমই সামনে আসে। এধরণের ঘটনা যেসব পরিবারে ঘটে খুব কম ক্ষেত্রেই তা পরিবারে ভাঙ্গন ধরায় এবং মাকে তার শিশুদের রক্ষার জন্য উপায় বের করতে হয়।
----------------------------------------------------------
এই ঘটনাটিতে আমরা আরও যা দেখি তা হল ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার দ্বারা সমস্যাটির দক্ষ মোকাবেলা। এখানে শিশুটি প্রয়োজনীয় শারীরিক ও মানসিক সাহায্য পায়। ফরিদাকে প্রয়োজনীয় কাউন্সেলিং দেয়া হয় যা এদেশে এধরণের নিপীড়নের শিকার শিশুর শতকরা নব্বই ভাগই পায় না। বাংলাদেশে এধরণের মাত্র ছয়টি সেন্টার রয়েছে। ধর্ষণের শিকার হওয়া বেশিরভাগই ভিকটিমরা এধরণের সুবিধা বঞ্চিত।
----------------------------------------------------------

ইউনিসেফের করা বাংলাদেশের শিশুদের উপর চালনা করা গবেষনা মূলক রিপোর্টে যা উঠে এসেছে তা হল নির্যাতিত শিশুরা আঈনগত সাহায্য পাচ্ছে না। ৬৯ টি কেস স্টাডির মাত্র দুটি ক্ষেত্রে আইনগত সাহায্য নেয়া হয়েছে। এবং কোন ক্ষেত্রেই অপরাধী শাস্তি পায় নি। দুটি ক্ষেত্রেই ভিকটিম ছিল নারী শিশু। কিছু পরিবার আইনগত পদক্ষেপ নিলেও আইন সম্পর্কে অসচ্ছ ধারণা থাকার কারণে অপরাধিরা পার পেয়ে যায়। মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত পরিবারে আইনের উপর শ্রদ্ধা না থাকায় এসব পরিবার থেকে নিপীড়নের ঘটনা চেপে যাওয়া হয়। ধর্ষিতাদের প্রতি সামজিক দৃষ্টিভঙ্গী, পরিবারের অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা, অপরাধিদের স্থানীয় প্রশাসনের উপর প্রভাব বিস্তার এবং আইনের প্রয়োগ না থাকায় এধরণের অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির প্রধান কারণ। একটি নির্দিষ্ট মাত্রা অতিক্রম না করলে এই ঘটনা গুলি লোক চক্ষুর অন্তরালেই থেকে যায়। এর আগের পর্বেও আমরা দেখেছি যে পত্রিকায় আসা দুটি ঘটনার ক্ষেত্রেই তীব্রতার মাত্রা ছিল অত্যাধিক।

বাংলাদেশে ধর্ষিতা যথাযথ আইনগত সুবিধা ছাড়াও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা হতে বঞ্চিত। দারিদ্র পীড়িত এই দেশটিতে হাজার হাজার শপিং মল থাকলেও যৌন নিপীড়নের শিকার শিশুদের সাহায্য করার জন্য ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেণ্টারের সংখ্যা মাত্র ছটি। সেক্সুয়াল হ্যরাসমেন্ট ও আস্যাল্টের শিকার হওয়া প্রতিটি শিশুর আইনগত অধিকার ও উপযুক্ত চিকিৎসা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আর এজন্য সবচেয়ে বেশী যে বস্তুটি দরকার তা হল সব পেশা শ্রেণীর মানুষের নির্যাতনের শিকার হওয়া শিশুটির প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তন এবং অপরাধীকে সাহায্যের মনোভাব পরিত্যাগ।

(চলবে)
প্রথম প্রকাশঃ চতুর্মাত্রিক
----------------------------------------------------------
পুরো পোস্টটি যারা অসম্ভব ধৈর্য সহকারে পড়েছেন তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ
----------------------------------------------------------
পড়ুন - পর্ব ১
----------------------------------------------------------
লেখাটি তৈরী করার জন্য সাহায্য নেয়া হয়েছেঃ
■ Sexual Abuse and Commercial Exploitation of Children (UNICEF, Bangladesh, March 2011)
■ Child sexual abuse - Wikipedia
■ Child Sexual Abuse - NATIONAL CENTER for PTSD (USA)
Predators and Child Molesters By robin Sax
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫৪
২০টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×