দুই
তিন
-নিলয়। এই নিলয়। রুবি বুঝতে পারছে না যে নিলয় কি শুনছে না। নাকি তাকে এভয়েড করছে। সে তারপর ও ডাক দেয়- নিলয়। তারপর একপর্যায়ে দৌড়ে গিয়ে পেছন থেকে নিলয়ের পিঠে হাত রাখে।
-কিরে এত ডাকছি শুনছিস্ না।
নিলয় রুবিকে দেখে মোটেও অবাক না হওয়ার ভান করে নির্লিপ্তভাবে জিজ্ঞেস করে- কিরে কেমন আছিস?
কিন্তু নিলয়ের বিধ্বস্ত চেহারা, মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি দেখে রুবি অবাক হয়। তাই কথার জবাব না দিয়ে পাল্টা জিজ্ঞেস করে- কিরে তোর এ অবস্থা কে করেছে?
-মানে?
-না মানে তোর গার্লফ্রেন্ডের সাথে কিছু হইছে নাকি?
-সে খবর কে রাখে! নিলয়ের অভিমানী জবাব।
-সত্যিই তো। তোর গার্লফ্রেন্ড আছে যে সেইটাই তো জানি না। তা কি নাম? কোথায় থাকে? কিসে পড়ে?
রুবির একসাথে করা এতগুলো প্রশ্নের উত্তর আগ্রহ নিলয়ের থাকে না। সে নির্লিপ্তভাবে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু রুবি সেদিকে খেয়াল করে না।
-কিরে বল না কোথায় পড়ে? চল না আজকে পরিচয় করিয়ে দিবি। বলেই রুবি নিলয়ের হাত ধরে টান দেয় যেন আজকেই তাকে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে।নিলয় নির্লিপ্তভাবে হাত ছাড়িয়ে নেয়- আহ্ রুবি ছাড় না।
-কি গার্লফ্রেন্ডের সাথে বেশি অভিমান হইছে?
-হু অনেক।
-কি নিয়া ।
-জানি না।
-বি সিরিয়াস ম্যান।
-সিরিয়াস।
-এতদিন কই ছিলি?
-জানি না।
-নিলয় কি হইছে তোর বল না।
-কিচ্ছু না।
-তাইলে এতদিন দেখা করিস্ নাই কেন?
-ইচ্ছে করে নাই। তাই।
-ইচ্ছে করে নাই কেন?
-জানি না।
-আচ্ছা কি হইছে তোর ?
-কিচ্ছু না।
-কি পড়াশুনার চাপ বেশি?
-না।
-তাহলে পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হইছে।
-না।
-তাহলে ?
-জানি না।
-কই যাচ্ছিল?
-জানি না।
-ক্লাস আছে?
-না।
-তাহলে বাসায় যাচ্ছিস্?
-জানি না।
-আজব। চল্ কোথাও গিয়ে বসি।
-ইচ্ছে করছে না।
-আমার ইচ্ছে করছে। চল্।
-তুই যা। আমি যাবো না।
-বললেই হলো। বলেই রুবি একপ্রকার জোর করে নিলয়কে নিয়ে একটি রেষ্টুরেন্টে বসে। কোণার টেবিলে জানালার পাশে করে বসে।
-বল তোর সমস্যা কি?
-কোন সমস্যা নাই।
-তাহলে এভাবে কথা বলছিস্ কেন?
-জানি না।
-কি খাবি বল্।
-কিচ্ছু না।
-ঠিক আছে আমার খাইতে ইচ্ছে করছে। আমি অর্ডার দিচ্ছি। তুই চেয়ে চেয়ে দেখ।নিলয় কোন কথা বলে না। সে ঘাড় ঘুরিয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকে।রুবি হঠাৎ তার হাত ধরে।
-এই নিলয় কি হইছে তোর? বল না প্লিজ।
-জেনে কি হবে?
-বল না প্লিজ।
-১৫ তারিখে কি খুব ব্যস্ত ছিলি।
-কই না তো। কেন?
-নাহ্ এমনিতেই।
-নিলয় আজকে তুই এমন করছিস্ কেন?
-কই কিচ্ছু করছি না।
-আচ্ছা বল ১৫ তারিখে কি ছিল?
-আমার বার্থ ডে।
-সরি ইয়ার। আমি জানতাম না।
-জানার ইচ্ছে থাকলে তো জানবে? আমার প্লান ছিল সারাদিন তোকে নিয়ে রিকশা করে ঘুরবো। বাইরে খাওয়া দাওয়া করবো। কিন্তু কিছুই হয়নি।
-ওহ্ এই কথা। তা তুই কি আমাকে কিছু বলছিস্।
-আমি বলতে যাবো কেন?
-আচ্ছা ঠিক আছে বলতে হবে না। চল্ আজকে তোর বার্থডে সেলিব্রেট করি। কেকের অর্ডার দেই?
-না দিতে হবে না।
-আচ্ছা চল্ আমরা রিকশা করে সারা শহর ঘুরি। নিলয় কোন কথা বলে না। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ আকাশের কোণে মেঘ। হঠাৎ মেঘ ভেঙ্গে বৃষ্টি আসে। জৈষ্ঠ মাসের কাল বোসেখী ঝড়। সে বাইরে তাকিয়ে থাকে। বৃষ্টির পানি পড়ে জানালায় কুয়াশার মত জমে। সে হাত দিয়ে তাতে আঁকিবুঁকি কাটে। কেক চলে আসে। রুবি মহা উদ্যমে কেক কাটে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১১ রাত ৮:৫৯