যাই হোক আমি বাংলা ব্লগিং করি শুনে জ্যোতি আমার লেখা পড়ার জন্য
উৎসাহিত হল । আমি গাই গুই করে ওকে আটকাবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলাম ।
"তুমি আমার বয়ফ্রেণ্ড! আমার জান্টুস! আমার প্রাণ্টুস! তুমি আমাকে দেখাবে না?!!" পটানোর সময় সে আমাকে তুমি করে বলে! (ছোটবেলার দোস্তদের সাথে এই কারণে প্রেম করতে নাই! তুই তুমি কত্ত রকম কথা যে এরা বলতে পারে! আমার মত বুদ্ধি শুদ্ধি কম হলে তো বুঝতেও পারবেন না কখন কোনটা কেন বলছে!) আরো কত আল্লাদী শব্দ বলল!
আর ও এমন মুখ ভঙ্গী করে! রাজি না হয় উপায় নাই।
ওকে আমার লিঙ্ক দিলাম ।
জ্যোতি সেদিনই সব পড়ে ফেলল ।
পরদিন আমার কাছে একটা বিশাল খাতা নিয়ে এল।
আমি বললাম "কি এটা?"
ও বলল "আপনার লেখার রিভিউ !"
"এখন আবার আপনি?!!"
"হ্যা । কারণ এখন আমি তোমার গার্লফ্রেণ্ড না! আমি এখন আপনার
সমালোচক! আপনার লেখার উন্নতি সাধনের জন্য আমার কর্তব্য হচ্ছে আপনার লেখার একটি সৎ ও নিরপেক্ষ রিভিউ করা!"
"ও আচ্ছা!!!" আমি ঢোক গিললাম , দোয়া দুরুদ পড়ার চেষ্টা নিলাম ,
কপালে ভালো কিছু নাই বুঝতে পারলাম যখন দেখলাম কোন দোয়া দুরুদ ও মনে নাই! আত্তাহিয়াতু...টা মনে পড়ছে আচ্ছা এইটা কি দোয়া?
"প্রথম কথা আপনার প্রথম লেখা । আপনার লেখায় কেমন যেন একটা নার্সিজম আছে। নিজের ব্যাপারে এত গুলো বিশেষণ যোগ করবার
কোন মানে ছিল না । কিন্তু তবুও আপনি করেছেন । বার বার আমি এই, আমি সেই বলার এই যে প্রবণতা,তা আপনাকে পাঠকদের থেকে
অনেক দূরে ঠেলে দিয়েছে। আপনি নিজেকে পাঠকদের থেকে আলাদা করে ফেলেছেন । লেখকদের প্রধান কাজ ই হচ্ছে পাঠককে কাছে টেনে নেয়া... ।পাঠকরা..."
প্রথম লেখার রিভিউ চলতেই থাকল । আমি তো প্রথম দুই লাইন শুনেই
বুঝে গিয়েছিলাম আজকে আমি গেছি। মাথায় হাত দিয়ে শুনছিলাম।
অনেক ক্ষণ পরে বলল
"এইবার আসি দ্বিতীয় লেখা নিয়ে ।এটি একটি থ্রিলার । আপনার গল্পে একটা ব্যাপার লক্ষণীয় । আপনি পাঠকদের ডাবল শক দিতে ভালবাসেন ।
আপনার আরেকটা* লেখা যেটার গল্প আমাকে পড়তে দিয়েছিলেন সেটার ব্যাপারে বলি লেখাটা ভাল না লাগলেও প্লট ভাল লেগেছিল । সেই গল্পেও একটা ডাবল শক বা সারপ্রাইজ দেবার ব্যাপার ছিল। গল্পটা দিয়ে দিন । আপনার লেখা এমনিতেও কেউ দুই পয়সা দাম দেয় না! সুতরাং যা আছে তাই দিয়ে দিন! লেখা ফাইন টিউন করতে করতে আপনার এই গল্পের থিম পুরোনো হয়ে যাবে। "
"এবার আসি অন্য একটি পয়েন্টে ফার্স্ট পার্সনে লেখেন আপনি । যদিও ফার্স্ট পার্সনে লেখা কঠিন বেশি, আপনি সহজ ভেবে এমন বিশ্রি আর দুর্বল ভাষায় লেখেন যে কী আর বলব?! একটা ক্যারেক্টার কিভাবে বিল্ড আপ করতে হয়,ক্যারেক্টার এর ভাষা কিভাবে গড়ে ওঠে, সে কিভাবে রেসপন্স করে এই সব ব্যাপারে আপনার আইডিয়াএকেবারেই নেই ।"
ও বলতেই থাকল। আমি শুনে গেলাম। প্রথম কয়েক লাইনের পর
আর তাল রাখতে পারলাম না । হঠাৎ ওর আল্লাদী স্টাইলে বলল
"জান্টুস! মন খারাপ করছো না তো?! আমি তো তোমার ভালোর জন্যই
বলছি!"
আমি কিছু বলার আগেই বলল "গুড! এবার আসি তৃতীয় লেখায় ।
আপনার তৃতীয় লেখায় স্বপ্নে তুমি তে আপনি একজন অবিবাহিত ছেলের
স্বপ্নে সেক্স করার কথা লিখেছেন ।
শুনে তো আমি আতকে উঠলাম!আমি বললাম "ইয়ে এই সব কি বলছ?!"
"আপনি কি সেক্স এর কথায় লজ্জা পাচ্ছেন?!আমি একজন রিভিউয়ার । লজ্জার কিছু নেই! "
আমি লজ্জা মিশ্রিত কণ্ঠে বললাম "না না লজ্জা পাবো কেন?! সেক্স করার কথা না । চুমু খাবার কথা ! "
"আমার ধারণা আপনি আসলে সেক্স করার কথাই লিখতে চেয়েছিলেন , কিন্তু বিরূপ পাঠক প্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে সেক্সটাকে চুমুতে রূপ দিয়েছেন!"
আমি দুর্বল ভাবে না বোধক মাথা নাড়লাম ।
"এবার আসি সাইকোলজিকাল পয়েণ্ট অফ ভিউ থেকে আপনার এই লেখাটা কি রকম । তিন বন্ধু এক ফ্ল্যাটে থাকে! মাঝে মাঝে এক বুড়ো আংকেল সেখানে বেড়াতে আসে। সে কি গে সিচুয়েশন! আপনার কল্পনায় দেখা যাচ্ছে পুরুষদের প্রতি তীব্র আকর্ষণ বিদ্যমান!!! (কয় কী !!!) আপনার এক চরিত্র নারীর ফিগারের বর্ণনা দেয় এবং একাধিক নারীর সাথে যৌন ক্রিয়ার লিপ্ত হবার বর্ণনা দেয় । এটিই প্রমাণ করে আপনার যৌন অভিরুচি ভয়াবহ! "
আমি কিছু বলার সুযোগ পাচ্ছিলাম না । ওর কথায় সিম্পলি তব্দা খেয়ে গিয়েছিলাম!
"এবার আসি কেন এমনটা হল । ২৩ বছরের দীর্ঘ জীবনে আপনি এখনো নারী শরীরের স্পর্শ পান নি । একমাত্র গার্লফ্রেণ্ড ও আপনাকে কোন চান্স দেয় না আপনার মধ্যে একটা সেক্সুয়াল ফ্রাসট্রেশন তৈরি হয়েছে... "
উৎসর্গ : বন্ধু রাজি । জ্যোতি বিষয়ে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ যে দিয়েছে, অনলাইনে এবং অফলাইনে ।
একটু দেরিতে হলেও আনসিরিয়াস কথামালার জ্যোতি হাজির! এরপরের পর্বে চমক থাকার সমূহ সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি!
মাত্র খেয়াল করলাম জ্যোতির প্রথম পর্ব ২৫৭৭ বার পড়া হয়ে গেছে!
সবাইকে বৈশাখের শুভেচ্ছা । শুভ নববর্ষ
প্রথম পর্ব
জ্যোতির্ময় বচন, এক রূপবতীর সাথে কথোপকথন
বাজার অথবা পাত্র পাত্রী বিষয়ক কথোপকথন
আলো ও অন্ধকারের গল্প**
শিকার (প্রায়) থ্রিলার গল্প
মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন !!!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১০:২৮