ধর্মতত্ত্ব বা জ্যোতিষ শাস্ত্রের পর সর্বপ্রথম মনোবিজ্ঞানই স্বপ্নের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করছে। এবার আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানেও যুক্ত হতে যাচ্ছে স্বপ্নের ব্যাখ্যা দেওয়ার কৌশল। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তাঁরা এমন একটি ইলেক্ট্রনিক রেকর্ডার আবিষ্কার করতে যাচ্ছেন, যা মানুষের মস্তিষ্ক কোষে স্থাপন করে স্বপ্নের ব্যাখ্যা বের করা যাবে। এমনকি মানুষ কোমায় থাকা অবস্থায়ও কী চিন্তা করছে, তাও বলে দিতে পারবে যন্ত্রটি।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনলজির (ক্যালটেক) একদল বিজ্ঞানী এই যন্ত্রটি উদ্ভাবনে কাজ করছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ন্যাচার সাময়িকীতে তাঁদের এ সংক্রান্ত একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। ইনস্টিটিউটে বিজ্ঞানী ড. মোরেন কার্ফের নেতৃত্বে এ গবেষণাটি পরিচালিত হয়।
বিজ্ঞানীরা জানান, তাঁরা তড়িৎবাহী এমন একটি যন্ত্রের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন, যা মস্তিষ্কের উচ্চতর পর্যায়ের কার্যক্রম রেকর্ড করতে পারবে। এখন পর্যন্ত মানুষ কেবল ঘুম থেকে জাগার পর মনে থাকা স্বপ্নের কথাই বলতেই পারে। কিন্তু সম্ভাব্য যন্ত্রটি আবিষ্কার সম্পন্ন হলে মানুষ তার সব স্বপ্নই রেকর্ডার থেকে আবার দেখতে পারবে। একই সঙ্গে মস্তিষ্কের কার্যক্রমের ইলেক্ট্রনিক দৃশ্যায়নও দেখা যাবে। মস্তিষ্ক কোষে প্রতিস্থাপন করার পর যন্ত্রটি মস্তিষ্কের ইলেক্ট্রনিক উপাত্তের ব্যাখ্যা দিতে পারবে।
বিজ্ঞানীরা জানান, তাঁরা প্রাথমিক গবেষণার অংশ হিসেবে ১২ জন স্বেচ্ছসেবক মানসিক রোগীর ওপর একটি পরীক্ষা চালান। এতে তাঁদের মস্তিষ্কের স্মৃতি ধারণ করার একটি বিশেষ অংশের (মিডিয়াল টেম্পোরাল লোব নামে পরিচিত) কিছু কোষের ইলেক্ট্রনিক ডেটা রেকর্ড করা হয়। এ সময় তাদের প্রত্যেককে কিছু ছবি দেখানো হয়। তাতে দেখা গেছে, রোগীরা তাঁদের মস্তিষ্কের স্মৃতিতে থাকা ছবিগুলোর মধ্যে একটির ওপর আরেকটি প্রতিস্থাপন করে এক ধরনের 'হাইব্রিড ইমেজ' বা সংকর ছবির দৃশ্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে। একপর্যায়ে তাঁরা সফলভাবে ছবিগুলোর সঠিক স্মৃতিচিত্র মানসপটে আনতে সক্ষম হয়েছে। বিজ্ঞানীরা এই সাফল্যের ওপর ভিত্তি করেই স্মৃতিসহ স্বপ্নের রেকর্ড ও ব্যাখ্যা দেওয়ার যন্ত্র আবিষ্কারের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে প্রধান গবেষক ড. কার্ফ বলেন, 'মানুষ কেন স্বপ্ন দেখে, এখন পর্যন্ত এর সঠিক কোনো জবাব নেই। কিন্তু আমরা যদি যন্ত্রটি প্রকৃত অর্থেই উদ্ভাবন করতে সচেষ্ট হই, তাহলে এর সঠিক জবাব পাওয়া যাবে।