somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জেসিকার মহাসাগর জয়

১৮ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘আমি সাধারণ ঘরের অতি সাধারণ এক মেয়ে। ছোটবেলায় খুব একটা রোমাঞ্চ প্রিয়ও ছিলাম না। তবে আমার একটা স্বপ্ন ছিল। আমার মা আমাদের ভাইবোনদের ঘুম পাড়ানোর সময় জেসে মার্টিনের লেখা লায়ন হার্ট: আ জার্নি অব দ্য হিউম্যান স্পিরিট বই পড়ে শোনাতেন। সেই বইয়ের কাহিনি শুনতে শুনতে আমার বয়স যখন ১২ তখন থেকে স্বপ্ন দেখা শুরু করি, একদিন নৌকা নিয়ে সাগর-মহাসাগর পাড়ি দেব। যখন সমুদ্রযাত্রা শুরু করি, তখন আমার বয়স ১৫ বছর। স্বপ্ন ছিল, তাই ইচ্ছাশক্তির জোরে আমি সমুদ্রপথে নৌকা চালিয়ে বিশ্বভ্রমণ করতে পেরেছি।’ ৬ জুলাই জেসিকা জ্যাকসন যখন মাইক্রোসফটের ইমাজিন কাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন, তখন অস্ট্রেলিয়ার সিডনি সম্মেলন ও প্রদর্শনী কেন্দ্রের বিশাল মিলনায়তনে একেবারে পিনপতন নিস্তব্ধতা। শিক্ষার্থীদের জন্য তথ্যপ্রযুক্তির উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতা ইমাজিন কাপে অংশ নেওয়া ৭৫টি দেশের তিন শতাধিক তরুণ-তরুণী মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছেন জেসিকার কথা। তাঁর দীপ্ত উচ্চারণ দর্শকসারিতে বসে থাকা সবাইকে যেন অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলার জন্য অনুপ্রাণিত করছে। জেসিকা নিজেও তখন বলে যাচ্ছেন, ‘আমি আমার অভিযানটা করেছি মানুষকে অনুপ্রাণিত করার জন্যই।’
জেসিকা ওয়াটসন নামের ১৯ বছর বয়সী এই নারী একজন অভিযাত্রী, যিনি সবচেয়ে কম বয়সে পালতোলা নৌকা নিয়ে কারও সাহায্য ছাড়াই স্রেফ একা সমুদ্রপথে বিশ্বভ্রমণ করেছেন। পালতোলা নৌকা নিয়ে সর্বকনিষ্ঠ অভিযাত্রী হিসেবে বিশ্বভ্রমণের অনানুষ্ঠানিক রেকর্ডটি জেসিকার কবজায়। অনানুষ্ঠানিক এই কারণে—যখন সাগর পাড়ি দেন জেসিকা, তখন তিনি ছিলেন অপ্রাপ্তবয়স্ক। আর যে পথে তিনি সমুদ্রপথে বিশ্ব প্রদক্ষিণ করেছেন, সেটি ওয়ার্ল্ড সেইলিং স্পিড রেকর্ড কাউন্সিলের সব নিয়ম মানতে পারেনি।
তার পরও জেসিকা অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বীর। ২০০৯ সালের ১৮ অক্টোবর সিডনি হারবার থেকে রওনা হয়েছিলেন জেসিকা। টানা ২২০ দিনে দুই হাজার ৩০০ নটিক্যাল মাইল পাড়ি দিয়ে ২০১০ সালের ১৫ মে নিজের জন্মদিনের মাত্র তিন দিন আগে আবার সিডনি হারবারে ফিরে এসে অভিযাত্রা শেষ করেন জেসিকা। জেসিকা এই যাত্রাপথে পাড়ি দিয়েছেন প্রশান্ত মহাসাগর, আটলান্টিক মহাসাগর ও ভারত মহাসাগর।
জেসিকা ওয়াটসন মঞ্চে ওঠার আগে তাঁর ওপর একটি ভিডিও চিত্র দেখানো হয় বড় পর্দায়। আমরা দেখতে থাকি ১৫ মের এই দৃশ্য। সিডনি হারবারে অপেরা হাউসের সামনে হাজার হাজার মানুষ। ক্যানেবরা থেকে ছুটে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ড। নির্দিষ্ট সময়েই তিনি অপেরা হাউসের সামনে। কিন্তু জোরালো বাতাস নেই হারবারে। তাই জেসিকা নৌকায় আসতে পারছেন না। বেশ কিছুক্ষণ পর তীরে ভেড়ে জেসিকার তরি এলা’স পিঙ্ক লেডি। ক্লান্ত বিধ্বস্ত জেসিকাকে জড়িয়ে ধরে বরণ করে নেন জুলিয়া গিলার্ড। আর হাজারো জনতা তখন ফেটে পড়েছে উল্লাসে। জয় হয় তারুণ্যের। আনুষ্ঠানিক রেকর্ডে স্বীকৃতি না মিললেও জেসিকা ওয়াটসন পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় পুরস্কার। এ ছাড়া তাঁর ঝুলিতে জমা পড়েছে ‘স্পিরিট অব স্পোর্টস, ইয়ং পারফরমার অব দ্য ইয়ার ২০১০, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির ২০১০ অ্যাডভেঞ্চারারস অব দ্য ইয়ারসহ নানা পুরস্কার।
নিউজিল্যান্ড থেকে অস্ট্রেলিয়ায় আসা রজার ও জুলি ওয়াটসন দম্পতির তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে দ্বিতীয় জেসিকার জন্ম ১৯৯৩ সালের ১৮ মে অস্ট্রেলিয়ার গোল্ডকোস্টে। জেসিকার পরিবারও বেশ মজার। প্রায় পাঁচ বছর এই পরিবার বসবাস করত ১৬ মিটার লম্বা কেবিন ক্রুজারে। এরপর তাঁর পরিবারটি থাকা শুরু করে বিশেষভাবে তৈরি দোতলা বাসে। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা চলে দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে। এই পরিবারের মেয়ের তো অভিযাত্রী হওয়ারই কথা।
অভিযাত্রার একেবারে শুরুতে পরীক্ষামূলকভাবে জেসিকা ব্রিসবেন থেকে সিডনি সমুদ্রপথে যাত্রা শুরু করেন। এখানেই পড়েন বিপত্তিতে। ২০০৯ সালের ৮ সেপ্টেম্বর রাত দুইটায় তাঁর নৌকা ধাক্কা খায় ৬৩ হাজার টন ওজনের এক মালবাহী জাহাজের সঙ্গে। জেসিকা তখন একটু ঘুমিয়ে নিচ্ছিলেন। ঘুম ভাঙার পর রাডারে জাহাজটি যখন জেসিকা দেখতে পান, তখন বেশ দেরি হয়ে গেছে। ধাক্কাটা আর এড়ানো সম্ভব হয়নি। কোনোমতে ফিরে আসতে পারেন ভাঙা নৌকা নিয়ে। নিজের বক্তব্যে সেই কাহিনি বলছিলেন জেসিকা—‘আবার নতুন করে বোট তৈরি করি। মনোবল ঠিক করতে থাকি।’ জেসিকা বিশ্বভ্রমণে বের হন এলা কোম্পানির পিঙ্ক লেডি নৌকায় করে। ‘এমনভাবে এটা সাজানো হয়েছিল যে পালতোলা নৌকাটা দেখে যেন সবাই বুঝতে পারে, একজন নারী চালাচ্ছে এই নৌকা।’ গোলাপি-সাদা রঙের পিঙ্ক লেডি যেন নারীর শক্তিকেই তুলে ধরেছে। সর্বকনিষ্ঠ নাবিক হিসেবে বিশ্বভ্রমণের পর পালতোলা নৌকার নানা ধরনের রেসে অংশ নিয়েছেন জেসিকা ওয়াটসন। এখন গড়ে তুলেছেন সিডনি হারবার রেস দল। জেসিকার কথা—‘আমার এই দলের সবাই ২২ বছরের কম বয়সী।’ কারণ জেসিকা মনে করেন, তরুণেরাই পাল্টে দেবে আগামীর বিশ্ব।
বলতে থাকেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমরা তরুণেরাই পারব যেকোনো কাজ করতে। যদি আপনার বিশ্বাস থাকে, প্যাশন থাকে তবে যেকোনো লক্ষ্য তা যতই কঠিন হোক না কেন অর্জন করা সম্ভব।

View this link
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:০১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×