ঝুমুর বারী
সন্ধ্যা নামার মুখে সবুজ মাধবপুর হ্রদের অন্য রূপ।
ছোট পাহাড়ের রংটা সব সময়ই সবুজ হয়। আর বর্ষা সেখানে যোগ করে গাঢ় সবুজ রঙের তুলির আঁচড়। চারদিকে তখন কেবলই সবুজ আর সবুজ। বর্ষায় সিলেট অঞ্চলের রূপটা হয়ে ওঠে রহস্যময়। ছোট ছোট টিলার বুকে থোকা থোকা চা-বাগান। আবার কোথাও ঘন বন। তবে সেই উচ্চতায় যদি একটা হ্রদ বা জলাধার জুড়ে দেওয়া যায়, তবে ছবিটা একেবারেই স্বপ্নের মতো হয়ে যায়। তাই তো মাধবপুর হ্রদে বর্ষার ধ্বনি আর মন খারাপ করা সাদা মেঘের ছায়া এক অপার্থিব অনুভূতি এনে দেয় ভ্রমণপিপাসুর মনে। যদিও প্রকৃতির আয়োজনটা এখানে একেবারেই সাদামাটা।
সিলেটের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর লেক বা হ্রদ। ন্যাশনাল টি কোম্পানির মাধবপুর চা-বাগানের ১১ নম্বর সেকশনে এই হ্রদ। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে গাড়িতে ৪০ মিনিটের রাস্তা। লাউয়াছড়া বনের যে রাস্তাটা, সেটায় একটু ঢুকে চা-বাগানের মাঝখান দিয়ে যাওয়ার পথটা। হ্রদে ঢোকার আগে চমৎকার বাগান। এরপর লাল মাটির রাস্তায় এই মিনিট পাঁচেকের হাঁটা পথ। এখন একটু স্যাঁতসেঁতে। এরপর একটু উঁচুতেই হ্রদটি। তবে কাছ থেকেও বোঝার উপায় নেই। সে অবাক করার মতো এক দৃশ্য। চোখ বরাবর পানির রেখা। তার ওপর নীল শাপলা। আর চারদিকে সাত পাহাড় হাত ধরাধরি করে দাঁড়িয়ে। বাঁয়ের পাহাড়ে চা-বাগান। আর ডানে বেশ কটা খালি পাহাড়। তবে বর্ষার জল সেখানেও যৌবন এনেছে। শিশুর হাতে আঁকা যেন সবুজ রঙের আলুথালু পাহাড়।
প্রকৃতি এখানে নিস্তব্ধ। মাঝেমধ্যে পানির মধ্যে মাছের আনাগোনার শব্দ। আর দূরে কোনো পাখির ডাক। সবুজের এখানে অবশ্য বেশ কটা ধরন আছে। এই যেমন ধরেন, অনেক দিন বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকা বয়স্ক চা-গাছগুলো এখন আরও আত্মবিশ্বাসী। তাই তাদের রংটা কেমন কটমটে সবুজ।
বর্ষার বাতাসে নুয়ে পড়া জঙ্গল আর গাছের ডালের সবুজটা একটু ভিন্ন। আবার পদ্ম পাতা। তার তো এখন উৎসব। বর্ষার টলটলে পানির ফোঁটা এখন দোল খাচ্ছে তার বুকে। এ রকম পরিবেশে এই বর্ষার শুরুতে আমরা কজন বন্ধু মিলে ঘুরতে গেলাম এই ছোট পাহাড়ের দেশে।
তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এই হ্রদ পুরোটা ঘুরতে সময় দরকার ঘণ্টা দুয়েক। হ্রদের পাড় ঘেঁষে চারপাশেই রয়েছে হাঁটার পথ।
আর দক্ষিণ দিকের টিলায় উঠলেই দূরে চোখে পড়বে ভারতীয় উঁচু উঁচু পাহাড়ের রেখা। আমরা যাওয়ার কিছুক্ষণ আগেই বৃষ্টি হওয়ার কারণে পুরো হাঁটার পথটাই ছিল পিচ্ছিল। তার পরও চা-বাগানের মাঝ দিয়ে হাঁটার অনুভূতিটাই অন্য রকম। সন্ধ্যা নেমে আসছিল, তাই পুরোটা ঘুরে দেখা সম্ভব হয়নি।
জেনে নিন
মাধবপুর হ্রদে যাওয়া যাবে সপ্তাহের সাত দিনই। তবে বিকেল পাঁচটার পর আর ভেতরে ঢোকা যায় না। ভেতরে যাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কাউন্টার থেকে কাটতে হয় টিকিট। গাড়ি রাখার জায়গা থাকলেও ভেতরে যেতে কিন্তু আপনাকে হাঁটতেই হবে। ২০০৫ সালের ১০ অক্টোবর কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন থেকে মাধবপুর হ্রদটিকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও হাঁটার পথ ছাড়া কিছুই ঠিক করা হয়নি। এমনকি কেউ যদি হ্রদ এলাকায় রাতে থাকতে চান, তার কোনো ব্যবস্থা নেই। একমাত্র উপায় শ্রীমঙ্গল থেকে গাড়িতে রওনা দেওয়া। যাতায়াত বা থাকার সমস্যা থাকলেও এই হ্রদ বর্ষায় আপনাকে নতুন এক বাংলার সৌন্দর্যের স্বাদ দেবে
View this link
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ২:২৫