somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অলৌকিকের লৌকিক ব্যাখ্যা

১১ ই জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৪:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্যারানরমাল ব্যাপারগুলোর প্রতি আমার আগ্রহ সেই অনেক আগে থেকেই। তবে কথাশিল্পী হুমায়ুন আহমেদের লেখার সাথে পরিচিত হবার পর আগ্রহটা বহুগুণে বেড়ে যায়।তার অনেক লেখাই প্যারানরমাল ব্যাপারগুলো বিশেষ করে টেলিপ্যাথি বা ইএসপি(এক্সটা সেনসরি পারসেপশন) এর উপর ভিত্তি করে লেখা।টেলিপ্যাথি বিশেষ করে ইএসপি এর ধারনাটা সম্পর্কে একটু সংক্ষেপে বলে নেয়া যাক।ইএসপি হল এক ধরনের বিশেষ ক্ষমতা যা ইন্দ্রিয়ের সাহায্য ছাড়া আরেকজনের অনুভূতি বা মনকে দ্রুত বুঝে নেবার ক্ষমতাকে বুঝায়।

ইএসপি বেশ জনপ্রিয় বিজ্ঞান মহলে বিশেষ করে প্যারা-সাইকোলজি নিয়ে যারা গবেষণা করেন তাদের কাছে।এই ধারনাগুলো নিয়ে অনেক সাইন্স-ফিকশন,গল্প-উপন্যাস এবং মুভিও তৈরি হয়েছে অনেক। বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় সাইন্স-ফিকশন বিশেষ করে সুপার হিরো ভিত্তিক সিনেমা এক্স-ম্যান সিরিজে টেলিপ্যাথি বা ইএসপি ক্ষমতাসম্পূর্ণ চরিত্রগুলো বেশ জনপ্রিয়। তবে এখানে একটা কথা বলে নেয়া যাক ইএসপি বা টেলিপ্যাথির কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি বিজ্ঞানীরা এখনও খুঁজে পায়নি।

যাইহোক ইএসপি নিয়ে অনেক বকবক করলাম এবার মূল বিষয়ে আসা যাক।আমি তখন তাগরা বালক, ক্লাস সিক্স বা সেভেনে পড়ি।সেই দুরন্ত শৈশবে আমি প্রথম বুঝতে পারি আমি নিজেও একজন ইএসপি ক্ষমতাধর বালক!এই পর্যন্ত পড়েই যারা জায়গায়ই ব্রেক কষেছেন তাদের বলব একটু অপেক্ষা করুণ আমি পুরো ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করছি। শৈশবের সেই সময়টাতে আমাদের এলাকায় একটা খেলা খুব জনপ্রিয় ছিল।এটাকে খেলা না বলে ম্যাজিক বলা যায়, ম্যাজিকটা হল এমন যে একজন মনে মনে একটা নাম্বার ধরবে অপরজন কিছু সংখ্যা যোগ বিয়োগ করে তা বলে দিবে ! এখানে বলে নেয়া প্রয়োজন এখানে একটা ট্রিক্স আছে।আমার বেশ কয়েকজন বন্ধুবান্ধব এই ট্রিক্সটা জেনে ফেলেছিল , কেউ একবার শিখলে কাউকে সহজে শিখাতো না।ট্রিক্সটা কি আমি জানতাম না , আমি ভাবতাম সত্যিই বুঝি এক জন আরেক জনের মনের সংখ্যাটি অলৌকিকভাবে বলে দিতে পারে।আমিও প্রচণ্ড চেষ্টা চালালাম অন্যের মনে প্রবেশ করে সংখ্যা বলে দিতে!আশ্চর্য-ভাবে একদিন আবিষ্কার করলাম আমি নিজেও কেউ মনে মনে কোন সংখ্যা ধরলে তা বলে দিতে পারি । এরপর থেকে যেই মনে মনে কোন সংখ্যা ধরত, আমি বলে দিতাম, কোন ভুল হত না! বেশ কয়েক মাস পরে আমি জেনে ছিলাম এই ম্যাজিকের রহস্য তখন সত্যিই অবাক হয়েছিলাম, আমি এতদিন তাহলে কিভাবে বলে দিতে পারতাম ! এই ব্যাপারটার কোন লৌকিক ব্যাখ্যা আমি আজও বের করতে পারি নাই।

এবার আমার জীবনে ঘটা বেশ কয়েকটা প্যারানরমাল ঘটনা এখানে সেটা শেয়ার করছি।

১। আমি তখন দেশের বাহিরে আন্ডার-গ্রাজুয়েট করছি, থাকি ইউনিভার্সিটির হোস্টেলের দ্বিতীয় তলায়, দুজন মিলে শেয়ার করতাম একটা রুম। যেই রুমে থাকি তার সামনের রুমেই একজন ছাত্র আত্বহত্যা করেছিল। আত্মহত্যার কারণ ছিল এই ছাত্রের গাল-ফ্রেন্ড গর্ভবতী হয়েছিল তারই বন্ধু দ্বারা। ছেলেটি তাই রাগে ক্ষোভে নিজেই নিজের ভবলীলা সাঙ্গ করেছিল। ঘটনার সূত্রপাত এখানেই, এর পর থেকেই আমার সাথে বিভিন্ন রকমের প্যারানরমাল ব্যাপারগুলো ঘটতে থাকে।আমি একদিন সন্ধ্যায় ক্লান্ত শরীরে রুমে এসে শরীরটা ছেরে দিয়েছি বিছানায়, রুমমেট নেই আমি একা রুমে । তখন দিনের আলো প্রায় নিভো নিভো অবস্থায়, আলো আধার খেলা করছে । চোখটা মাত্র লেগে এসেছে, কি মনে করে জানি চোখটা হালকা খুললাম । তারপর যা দেখলাম তাতে পুরো শরীর আমার ভয়ে শীতল হয়ে গেল, বুকের ভিতরটা কেমন জানি হঠাৎ ধরাস করে উঠল ! একটা লম্বা লোক, পরনে কালো কাপর দিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত মোড়ানো , হাতে মোটা একটা তরবারি, লোকটা আমার মাথা থেকে একটু দূরে । ধীরে ধীরে আমার আরও কাছে আসছে, ঘটনার আকস্মিকতায় আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম । আমি ভয়ে ভয়ে চোখটা হাত দিয়ে ভালভাবে মলে আবার তাকালাম । অবাক ব্যাপার এবার জিনিষটাকে আর দেখতে পেলাম না ! আমি আর দেরি না করে, দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে পরলাম হোস্টেলের বারান্দায় । তখনও ভয়ে আমার বুকটা ধুক ধুক করে কাঁপছে , এই ভয়কে কিভাবে অল্প কথায় প্রকাশ করতে হয় তা আমার জানা নাই ।

আরেকদিন রাতে রুমে এসেছি ঘুমোতে , পাশে আমার রুমমেট । আমি বিছানায় শুয়ে চোখের জানালাটা মাত্র বন্ধ করেছি, মনে হচ্ছে কেউ একজন আমার মাথা চেপে ধরেছে যেন উঠতে না পারি, আমি প্রাণপণ উঠার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না । এর পর থেকে প্রায়ই এই ধরনের ঘটনা ঘটত , আমি রুমে একা ঘুমাতে গেলে ভয় লাগত।

এই ঘটনা গুলোর একটা লৌকিক ব্যাখ্যা আমি দার করেছি ।হতে পারে সেটা ছিল এক ধরনের হেলুসিনেশন, তখন এমনিতেই পড়াশুনা নিয়ে অনেক প্রেশারে ছিলাম, ল্যাবের কাজ নিয়েও ঝামেলায় ছিলাম তার উপর আমার পাশের রুমেই একজন ছাত্রের আত্মহত্যার ঘটনাটা আমার মস্তিষ্কের উপর দারুণ প্রভাব ফেলেছিল।এই মানসিক প্রেশার থেকেই হেলুসিনেশনের উৎপত্তি হয়েছিল হয়ত। যাইহোক পরের সেমিস্টারে আমি হোস্টেল পাল্টে ফেলেছিলাম, তারপর থেকে আর কোন সমস্যা হয়নি ।

২। আমার নানা বাড়ীর পাশে হিজল গাছের একটি বাগান ছিল, এই হিজল গাছের বাগান নিয়ে অনেক অলৌকিক ঘটনা এলাকায় প্রচলিত ছিল।গাছগুলো নাকি এক রাতেই হয়েছিল , তাই সবাই এই গাছগুলো কাটতে ভয় পেত । অদ্ভুত ব্যাপার হল, এখানে কতগুলো গাছ আছে সেটাও কেউ জানত না, গুনতে গেলে হিসেব উলটপালট হয়ে যায়! গাছ গণনা করা নাকি অসাধ্য কর্ম, আমি একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম এই অসাধ্য কর্মটি সাধন করব । আমি তখন কলেজে পড়ি একজন বন্ধুকে সাথে নিয়ে নানা বাড়ি গেলাম গাছ গণনা করতে । অবাক ব্যাপার হল আমি আর আমার বন্ধু মিলে অনেক চেষ্টা করেও গাছগুলো গণনা করতে পেলাম না, বারবারই গণনা ভুল হয়ে যায় । পরে সিদ্ধান্ত নিলাম প্রতিটি গাছ গণনা করে সাধা চক দিয়ে দাগ দিয়ে দিব যাতে হিসেব করতে সুবিধা হয়। আমরা পঁচিশ বা ত্রিশটি গাছ গণনা করতেই অদ্ভুত এক ঘটনা ঘটল, একটা সাপ দেখলাম আমাদের দিকে তেড়ে আসছে!আমিও পিছু হটার পাত্র নই আবারও কয়েক দফা চেষ্টা চালালাম গাছ গননা করতে কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার প্রতিবারই সাপটি আমাদের দিকে তেড়ে আসছিল। আমরা সবাই ঘাবড়ে গেলাম, পরে আর আমাদের গাছ গণনা করা হল না ! যাইহোক এর ব্যাখ্যায় আমি এতটুকুই বলতে পারি পুরো ব্যাপারটিই ছিল কাকতালীয় !

এবার অন্যরকম একটা ঘটনা বলে আমার লেখার ইতি টানা যাক। তখন বিদেশে আন্ডার-গ্রাজুয়েট শেষ করে মাস খানেকের জন্য দেশে ঘুরতে এসেছি। একদিন রাতে আমি আমার এক বন্ধুকে নিয়ে কবর জিয়ারত করতে গিয়েছিলাম। রাত তখন নয়টা বা দশটা হবে, আমাদের কবরস্থানটা অনেকটাই নিঝুম, জনমানব শূন্য ছিল। আমরা দুজন ওজু করে কবরস্থানের দিকে যাচ্ছি, হঠাৎ কবরস্থানের মাঝে অদ্ভুত একটা জিনিষ লক্ষ করলাম, একটা লম্বা লোক দারিয়ে আছে, উচ্চতা প্রায় আট থেকে দশ ফিট হবে , চেহারাটা অদ্ভুত রকমের!আমি ভরকে গেলাম, তারপরও সাহস করে সামনে এগিয়ে যেতেই দেখলাম জিনিষটা অদৃশ্য হয়ে গেল। প্রথমে ভাবলাম হয়ত এটা আমার দৃষ্ট ভ্রম হবে, আমি আমার পাশে থাকা বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম “তুই কিছু দেখেছিস ?” ও বলল “হ্যাঁ” । এই ঘটনাটার কোন ধরনের ব্যাখ্যাই আমি দার করাতে পারি নাই।

আমি বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ,প্যারানরমাল ব্যাপারগুলোর একটা ব্যাখ্যা সবসময়ে দাড় করাতে চেষ্টা করি।আমার জীবনে ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটা ঘটনার ব্যাখ্যা আমি আমার-মত করে দার করেছি তার মাঝে মাইন্ড ট্রিক্স ট্রিক্স এবং শেষের ঘটনাটার কোন ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই।পৃথিবীটা অদ্ভুত তার মাঝে ব্যাখ্যা-বিহীন অনেক ঘটনাই আছে যার ব্যাখ্যা হয়ত আমরা কখনই করতে পারব না।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ২:৪২
৪৫৬ বার পঠিত
১১টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরুর রচনা.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২২ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৬

একজন সাধারণ পাঠক হলেও দেশী-বিদেশী আমার প্রিয় লেখক সাহিত্যিকদের তালিকা বেশ দীর্ঘ! বনফুল, যার আসল নাম- বলাই চাঁদ মুখোপাধ্যায়। শখের বশে তিনি কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও কবি। পেশায় চিকিৎসক ছিলেন।
বলাই চাঁদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন রাজনৈতিক দলকে খারিজ বা সরিয়ে দেওয়ার পক্ষে নয় জামাত!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২২ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৫


কোনো রাজনৈতিক দলকে সরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের নেই বলে জানিয়েছেন দলটির আমির আমির ডা. শফিকুর রহমান। বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকাকে দেওয়া এক... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাঁঝের মায়া

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ২২ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:০৮


সেদিন সন্ধ্যায় ল্যাপটপে কাজ করছিলাম। হঠাৎ অচেনা একটা নম্বর থেকে আমার মোবাইলে ফোন এলো। “হ্যালো, কে?” আমি জিগ্যেস করলাম। ওপাশ থেকে নারীকণ্ঠ অস্পষ্টভাবে কী যেন বলছিল। আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলিয়েন স্বীকৃতি না দেয়ার কারন

লিখেছেন সরকার পায়েল, ২২ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:১৯

এলিয়েন বলতে আমরা বুঝি অতি প্রাকৃত শক্তি সম্পন্ন জীব l যাদের শারীরিক সক্ষমতা মানুষ হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন l রক্ত মাংসের জীব থেকে ভিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি l রক্ত মাংস... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজী মুক্ত সামু!!

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২২ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২







মনপুরা মুভিতে একটা ডায়ালগ ছিলো যে, গাজী বেটারে তুমি চিনো না, বেশি ফাল পাইরো না। এদিকে ব্লগের গাজীকে সবাই চিনে, যারা লাফালাফি করে তারা ব্যবস্থা নেয়,গাজী কিছু করতে পারে না,ব্যান... ...বাকিটুকু পড়ুন

×