ষ্টিফেন হকিং নিঃসন্দেহে বর্তমানে এই গ্রহের সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী । আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানে তার অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে । তিনি বলেছেন বিগ-ব্যাং থেকে আমাদের এই মহাবিশ্ব তৈরি হয়েছে এতে পদার্থ বিজ্ঞানের নিয়মগুলোই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এখানে স্রষ্টার কোন ভূমিকা নাই । সত্যিই কি তাই ? বিগ-ব্যাং আমাদের এই মহাবিশ্ব তৈরির ব্যাখ্যা দিতে পারে কিনা সেটা আমি এই লেখায় তুলে ধরব ।
অনেকেই মনে করেন বিগ ব্যাং থেকে আমাদের এই মহাবিশ্ব তৈরি হয়েছে আসলে তা নয় । বিগ ব্যাং এই মহাবিশ্ব তৈরির অনেকগুলো প্রক্রিয়ার ভিতর একটি প্রক্রিয়া মাত্র ! বিগ ব্যাং এর আগে কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশোন ঘটে যা থেকে বিগ ব্যাং সংগঠিত হয় ।
কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশোন এবং বিবর্তনবাদ এই দুটি জিনিষই মূলত অবিশ্বাসীদের ধর্ম থেকে সরে যাবার মূল কারণ । বিবর্তনবাদ তত্ব অনুসারে বানরকে আমাদের পূর্বপুরুষ হিসেবে মেনে নেয়াতে আমার কিঞ্চিত আপত্তি আছে । আমি এখানে বিবর্তনবাদ নিয়ে আলোচনা করব না এটা হয়ত এই সিরিজের অন্য কোন পর্বে লেখব । এখানে মূলত কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশোন এবং বিগ ব্যাং নিয়ে আলোচনা করব ।
প্রথমেই কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশোন কি তা সংক্ষেপে বলে নেয়া যাক ।
বিজ্ঞানীদের ধারনা অনুসারে পরম শূন্য বলতে কিছু নেই কারণ প্রকৃতি শূন্যতা পছন্দ করে না । এই পরম শূন্য স্থানে মূহুত্যেই এক বিলিয়ন ভাগের এক ভাগ সময়ের ভিতর কণা এবং প্রতিকণা তৈরি হচ্ছে এবং সাথে সাথেই নিজেদের মাঝে সংঘর্ষে তা বিলীন হয়ে যাচ্ছে । কোন কারণে হয়ত এই পজিটিভ এবং নেগেটিভ এনার্জি নিজেদের ধ্বংস করতে পারে না । যার ফলসরূপ কিছু কণা থেকেই যায় , ইনফ্লেশনারি থিওরি অনুসারে তা থেকে বিগ ব্যাং হয় ।
এখানে মৌলিক একটা প্রশ্ন দেখা যায় প্রকৃতি কেন শূন্য পছন্দ করে না , প্রকৃতি কেন নিজের মাঝে ইচ্ছা অনিচ্ছা-ধারন করে ? প্রকৃতি কি কোন ব্যক্তি ? সেই ব্যক্তিটি তাহলে কে ?
বিগ ব্যাং থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টি
যাইহোক মূল প্রসঙ্গে আসা যাক । বিজ্ঞানী এডউইন হাবেল ১৯২৭ সালের আমাদের এই মহাবিশ্ব প্রতিনিয়ত সম্প্রসারিত হচ্ছে বলে পরীক্ষা করে পান । যেহেতু প্রতিনিয়ত সম্প্রসারিত হচ্ছে এর মানে বলা যায় সকল পার্টিক্যল এবং মৌলিক বল তথা এই মহা জগৎ সবকিছুই একসময় পঞ্জি-ভুত অবস্থায় ছিল , এর ঘনত্ব ছিল প্রায় অসীম । মূলত অসীম ঘনত্বের এই বস্তুটিই বিগ ব্যাং বা মহা বিস্ফোরণ হয়ে আমাদের এই মহা বিশ্বে পরিণত হয় ।
উপরের আলোচনা থেকে বুঝা গেল কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশোন থেকে বিগ ব্যাং সংঘটিত হয়ে আমাদের মহাবিশ্ব তৈরি হয়েছে । এখানে উল্লেখ্য করা প্রয়োজন কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন নিজে নিজে সম্ভব নয় কারণ কণা এবং প্রতিকণাগুলো পরস্পর সংঘর্ষের জন্য বল প্রয়োজন , গ্রাভিটির ভূমিকা আছে এতে। এই বল হঠাৎ কোথা থেকে নাযিল হল ? বিজ্ঞানের কাছে এর কোন উত্তর নাই ।
ডার্ক এনার্জি
যাইহোক এবার আরেকটা ফ্যাক্ট নিয়ে আলোচনা করা যাক । আমাদের মহাবিশ্ব প্রতি মূহুত্যে সম্প্রসারিত হচ্ছে , বিজ্ঞানীদের ধারনা ছিল এই সম্প্রসারণের হার প্রতিনিয়ত কমছে । ১৯৯০ সাথে বিজ্ঞানীরা পুনরায় পরীক্ষা করে পান আমাদের এই মহা বিশ্ব সম্প্রসারণের হার প্রতিনিয়ত বাড়ছে ! এর মানে অন্য একটা এনার্জি বা শক্তি এই মহা বিশ্বকে টেনে বড় করছে । এই বল মধ্যাকর্ষনের বিপরীতে কাজ করছে । এই বল বা শক্তিকে বিজ্ঞানীরা নাম দেন ডার্ক এনার্জি ।
আমাদের এই মহাবিশ্ব সম্প্রসারণের ৬৮ শতাংশ ভূমিকা এই ডার্ক এনার্জির । বিজ্ঞানী আইনস্টাইন অনেক আগে এই সম্পর্কে বলে গেছিলেন যেই শূন্য স্থান এখনও আমাদের এই মহা বিশ্বের অধীনে আসে নাই তার একটা নিজস্ব এনার্জি বা শক্তি আছে । এই ডার্ক এনার্জিই বা কোথা থেকে উদয় হল বিজ্ঞানীরা আজও তা বের করতে পারে নাই ।
ষ্টিফেন হকিং আরেক জায়গায় বলেন মহাবিশ্ব সৃষ্টিতে গ্রাভিটি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করেছে, গাভীটি না থাকলে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হত না ! চমৎকার বলেছেন নিঃসন্দেহে তবে প্রশ্ন হল গ্রাভিটি মাঝখানে কোথা থেকে উৎপাদিত হল , এর ব্যাখ্যা তিনি দেননি !
হকিং এর মহাবিশ্ব নিয়ে আরেকটা উক্তি আমাকে ধোঁয়াশার মধ্যে ফেলেছে ! তিনি বলেন সৃষ্টিকর্তা হয়ত সৃষ্টি জগতের পদার্থ বিজ্ঞানের নিয়মগুলো ঠিক করেছেন কিন্তু তিনি এর মাঝে আর হস্তক্ষেপ করবেন না ! তার এই উক্তি অনেকটা স্ববিরোধী কারণ তিনি নিজেই বলেছেন মহাবিশ্ব সৃষ্টিতে ঈশ্বরের ভূমিকা নেই, পদার্থ বিজ্ঞানের নিয়মগুলোই মহাবিশ্ব তৈরিতে গুরুত্বপূর্নভূমিকা পালন করেছে । জগত বিখ্যাত বিজ্ঞানী ষ্টিফেন হকিং কিভাবে এতটা সিওর হলেন যে সৃষ্টিকর্তা তার সৃষ্টিতে আর হস্তক্ষেপ করবেন না!
পরিশেষে এতটুকু পরিষ্কার যে বিগ-ব্যাং আমাদের এই মহাবিশ্ব তৈরির একটা ধারনা দিয়েছে মাত্র কিন্তু এর সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা দিতে পারেনি ।
উপরের আলোচনা থেকে কয়েকটা বিষয়ে প্রশ্ন থেকে যায় ।
১। কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশোনের জন্য যেই বল প্রয়োজন সেটা কোথা থেকে আসল ? কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশোনের মাধ্যমে কোন কিছু নাই থেকে কিছু সৃষ্টি হওয়া ! এটা কিভাবে সম্ভব ? ম্যাথম্যাটিকস দিয়ে এটা পরমান করা অসম্ভব !
২। বিগ-ব্যাং এর সময় যে অসীম ঘনত্বের সৃষ্টি হয়েছিল সেটা কি আসলে সম্ভব ! অসীম মানে যার কোন শেষ নেই !
৩। ডার্ক এনার্জি কোথা থেকে উদয় হল ?
উপরের প্রশ্ন-গুলোর উত্তর বিজ্ঞানীরা দিরে পারে নাই । ষ্টিফেন হকিং এবং ওনার সাহাবীরা হয়ত বিশ্বাস করে অলৌকিকভাবে কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন সৃষ্টি হয়েছে, অলৌকিকভাবে প্রায় অসীম ঘনত্বের সৃষ্টি হয়েছিল এমনি ডার্ক এনার্জিটাও একটা অলৌকিক ব্যাপার । তারা অলৌকিক ব্যাপারে বিশ্বাস করেন ।
তবে আমি ধীরভাবে বিশ্বাস করি বিগ ব্যাং এ মহান সৃষ্টিকর্তার প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে নইলে এটা সম্ভব হত না । ষ্টিফেন হকিং এর সাথে আমার পার্থক্য হল আমি বিগ ব্যাং এ স্রষ্টার প্রত্যক্ষ ভুমিকা বা নির্দেশে হয়েছে বলি ঈমান এনেছি আর তিনি ঈমান এনেছেন অনেকগুলো অলৌকিকতায়।
আগের পর্ব
মহাজগৎ, সৃষ্টি এবং স্রষ্টা ( ১ম পর্ব ): স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করল, নাস্তিকেরাই কি অন্ধ বিশ্বাসী নয় !
মহাজগৎ, সৃষ্টি এবং স্রষ্টা (২য় পর্ব) : ধর্ম এবং উন্নয়ন কি সাংঘর্ষিক বিষয় !
মহাজগৎ, সৃষ্টি এবং স্রষ্টা ( ৩য় পর্ব ) : মানব মস্তিষ্কের আকার ছোট হয়ে আসছে ! বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি আমাদের পিছনে নিয়ে যাচ্ছে নাতো ?
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:২৬