অনেকের ধারণা বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এই ভূমিকা আয়াতে ১৯টি অক্ষর থাকার কারনেই ১৯ সংখ্যাটি গুরুত্বপূর্ণ। কিংবা দৃশ্যত কিছু বিষয় সরাসরি ১৯ দ্বারা বিভাজ্য তাই বোধহয় সংখ্যা গুরুত্বপূর্ণ, যেমন: মোট সূরা সংখ্যা ১১৪=১৯*৬।
কিন্তু ব্যাপারটা মোটেও তা নয়, ১৯ সংখ্যাটা গুরুত্বপূর্ণ এ ধারনা মুসলমানদের স্বআবিষ্কৃত নয়। তাই যদি হত তাহলে আরো অনেক সংখ্যাকেই গুরুত্বপূর্ণ ধরা যেত। ৩ বা ৭ এসব সংখ্যার সাথে অনেক মিল বের করা যায় । আবার বিসমিল্লাহ আয়াতের মত কলেমা লা ইলাহা ইল্লালাহ এর অক্ষর সংখ্যাকেও গুরুত্বপূর্ণ ভাবা যেত।
আসলে ১৯ সংখ্যাটি গুরুত্ব পাবার কারন কোরানিক নির্দেশনা। সূরা আল মোদ্দাসসের,আল কোরানের ৭৪ নং সূরার ৩০ ও ৩১ নং আয়াতে রয়েছে
(পরম করুনাময় দয়ালু আল্লাহর নামে)
৭৪:৩০. তার ওপর (আছে) উনিশ
৭৪:৩১.আমি ফেরেশতাদের ছাড়া দোযখের প্রহরী হিসেবে (অন্য কাউকে) নিযুক্ত করিনি এবং তাদের সংখ্যাকে আমি অবিশ্বাসীদের জন্য একটি পরীক্ষার মাধ্যম বানিয়ে দিয়েছেন, যেন এর মাধ্যমে যাদের ওপর আমার কিতাব নাযিল হয়েছে তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে এবং যারা ঈমান এনেছে তাদের ঈমানও এতে করে বৃদ্ধি পেতে পারে,এর ফলে আহলে কিতাব ও মুমিনরাও যাতে কোনরকম সন্দেহে নিমজ্জিত না হতে পারে, (অবশ্য) যাদের মনে সন্দেহের ব্যাধি রয়েছে এর ফলে তারা এবং সত্য প্রত্যাখ্যানকারী ব্যক্তিরা বলবে, এ উক্তি দ্বারা আল্লাহ তায়ালা কী বুঝাতে চান? এভাবেই আল্লাহ যাকে চান তাকে পথভ্রষ্ট করেন,যাকে চান তাকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন; তোমার মালিকের বিশাল বাহিনী সম্পর্কে তিনি ছাড়া আর কেউই জানে না, এতো শুধু মানুষের উপদেশের জন্যই। (অনুবাদ-মুনির উদ্দিন আহমদ,কোরান একাডেমী)
74:30. Over it are Nineteen.
74:31. And We have set none but angels as Guardians of the Fire; and We have fixed their number only as a trial for Unbelievers,- in order that the People of the Book may arrive at certainty, and the Believers may increase in Faith,- and that no doubts may be left for the People of the Book and the Believers, and that those in whose hearts is a disease and the Unbelievers may say, "What symbol doth Allah intend by this?" Thus doth Allah leave to stray whom He pleaseth, and guide whom He pleaseth: and none can know the forces of thy Lord, except He and this is no other than a warning to mankind.
(Yusuf Ali's Quran Translation)
তারমানে আয়াত থেকে দৃশ্যত আমরা দেখতে পাচ্ছি যে দোযখের প্রহরীর সংখ্যা (১৯) হল-
ক. অবিশ্বাসীদের জন্য একটি পরীক্ষার মাধ্যম
খ.আহলে কিতাবদের বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যম
গ.যারা ঈমান(বিশ্বাস) ইতোমধ্যে এনেছে তাদের ঈমানও যাতে শক্তিশালী হতে পারে তার মাধ্যম
ঘ. মুমিন (যারা আল্লাহ ও রাসূল সা. এর নির্দেশাবলী পালন করেন) তারা যাতে কোন সন্দেহে নিমজ্জিত না হয় তার মাধ্যম
ঙ. শেষ মাধ্যমটি বোঝাটা গুরুত্বপূর্ণ, আল্লাহ ৩১ নং আয়াতের শেষে বলেছেন “ যাদের মনে সন্দেহের ব্যাধি রয়েছে এর ফলে তারা এবং সত্য প্রত্যাখ্যানকারী ব্যক্তিরা বলবে, এ উক্তি দ্বারা আল্লাহ তায়ালা কী বুঝাতে চান? এভাবেই আল্লাহ যাকে চান তাকে পথভ্রষ্ট করেন,যাকে চান তাকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন(those in whose hearts is a disease and the Unbelievers may say, "What symbol doth Allah intend by this?" Thus doth Allah leave to stray whom He pleaseth, and guide whom He pleaseth) তারমানে এই ১৯ সংক্রান্ত বিষয়ের মাধ্যমে অনেকে পথভ্রষ্টও হবে, পথভ্রষ্ট হতে পারে দু ধরনের মানুষ, প্রথমত যাদের মনে ব্যাধি রয়েছে ,দ্বিতীয়ত আনবিলিভারস বা সত্য প্রত্যাখ্যানকারীগণ। সুতারাং দোযখের প্রহরীদের সংখ্যা(১৯) হল কিছু লোকের পথভ্রষ্ট হওয়ারও মাধ্যম।
(and allah knows d best)
তাফসীরবিদগণ এ আয়াতদ্বয় সম্পর্কে সবর্দা আল্লাহই এর অনুগ্রহ প্রার্থনা করে তারপর মন্তব্য করেছেন। কারন সম্ভবত এ আয়াতদ্বয় সম্পর্কে বিশ্বস্ত কোন রেওয়াত বা সরাসরি কোন ব্যাখ্যাদানকারী হাদীসের উল্লেখ নেই। যেমন তাফসীর মারেফুল কোরআনে উল্লেখ আছে- উনিশ সংখ্যার গূঢ় তত্ত্ব আল্লাহ তাআলাই জানেন। তারপর এই তাফসীর গ্রন্থে এর একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা দান করেছেন তাফসীরকারী।
তাছাড়া মুসলমানদের নীতি অনুযায়ী, যেসব বিষয় কোরআন শরীফে পরিস্কার করে উল্লেখ নেই এবং হাদীসে তার সরাসরি ব্যাখ্যা নেই সেসব আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লাহর অনুগ্রহ কামনা করে তারপর ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত। সেসব আয়াতের ক্ষেত্রে কখনোই নিশ্চিত ভাবে বলা উচিত নয় এটিই এর একমাত্র ব্যাখ্যা বা নিশ্চিত ব্যাখ্যা। মূল পোষ্ট
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৩:৩৬