Reese Witherspoon এর একটি মুভি দেখেছিলাম, খুব ভাল লেগেছিল। মুভির নাম Wild. ব্যাক্তিগত জীবনে হতাশা আর ব্যর্থতা থেকে মুক্তি পেতে একটা মেয়ে হাইকিং করার সিদ্ধান্ত নেয় সম্পূর্ণ একা একা। শুধু সিদ্ধান্ত নিয়েই সে বসে থাকেনি, হাজার মাইল হেটে প্রমাণ করে দিয়েছে মানুষ চাইলে সব কিছুই পারে। এই মুভির আগে Reese Witherspoonকে অত ভালো লাগত না, তার খুব বেশি মুভিও আমি দেখিনি আগে। তাকে নিয়ে ইন্টার্নেটে সার্চ করতেই পেয়ে গেলাম আরেকটা মুভির নাম এবং সেই মুভির বিষয়বস্তু 'রিফিউজি'দের নিয়েই আজকের এই পোস্ট।
সাম্প্রতিক সময় মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন দীর্ঘ মেয়াদি যুদ্ধের সুবাদে আমরা সবাই রিফিউজি শব্দটির সাথে পরিচিত। কিছুদিন আগেই হাজার হাজার মানুষ সীমানা পার হয়ে গ্রীসের উপর দিয়ে বিভিন্ন উন্নত দেশে আশ্রয় নিচ্ছিল। জার্মানির মত অনেক দেশই তাদের আশ্রয় দিয়ে নিজেদের পাপের বোঝা কিছুটা হালকা করতে চাইছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে ফ্রান্সের প্যারিসে বোমা হামলার পর অনেক দেশই আর সীমানা খুলতে রাজি নয়। মানবতা দেখানোর চেয়ে জীবন বাঁচানো অনেক বেশি জরুরি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সত্যি বলতে গেলে এই সমস্যার কারণ কিন্তু আমেরিকা ইউরোপের দেশগুলোই। তারাই মধ্যপ্রাচ্যের দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ উসকে দিয়েছে। বিশেষ করে ইউএসএ বাশার সরকারকে উচ্ছেদের নামে বিদ্রোহীদের মিলিটারি ট্রেনিং দেয়, তাদের অনেকেই আইএস এ যোগ দিয়েছে। আর ইরাকে শুধু শুধু হামলা করে সেখানে জাতিগত দাঙ্গা উসকে দিয়েছে। এই যুদ্ধে আইএস যেমন তেল বিক্রি করে লাভবান হয়েছে তেমনি তাদের থেকে কম দামে তেল কিনে লাভবান হয়েছে বিভিন্ন দেশ। কিন্তু যুদ্ধের কারণে অনেক মানষের স্বাভাবিক জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে। চিন্তা করে দেখুন, প্রতিদিন ঘুমানোর আগে যদি আপনাকে ভাবতে হয় আপনি পরদিন ঘুম থেকে উঠতে পারবেন কিনা, অথবা বাইরে বের হলে আর ঠিকমত ঘরে ফিরে আসতে পারবেন কিনা- তাহলে আপনার আর আপনার পরিবারে কী হাল হত! দেশের জন্য/ ধর্মের জন্য জীবন দিব, যুদ্ধ করব এসব কথা বইয়ের পাতায় আর নেতাদের বক্তৃতায় শুনতে ভাল লাগলেও, প্রতিদিন আপনজনের মৃত্যু দেখাটা সুখকর বিষয় না। যুদ্ধ- তা যে কারণেই হোক না কেন, সাধারণ মানুষের জন্য কোনদিন কাম্য হতে পারে না।
নীল নদ দিয়ে বিভক্ত সুদান এক সময় বিশাল এক দেশ ছিল। সুদান একসময় আফ্রিকার সবচেয়ে বড় দেশ ছিল, জাতিগত দাঙ্গায় দক্ষিণ সুদান আলাদা হয়ে তা এখন তিন নম্বরে আছে। সুদান যেমন আফ্রিকান ইউনিয়নের সদস্য তেমনি আরব লীগেরও সদস্য। ১৯৮৩ সালে উত্তর আর দক্ষিণ সুদানের মধ্যে জাতিগত দাঙ্গা শুরু হয়। সিনেমার তথ্যমতে ঐ সময় উত্তর সুদানের সামরিক বাহিনী দক্ষিণ সুদানের সাধারণ মানুষের উপর হত্যা আর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালায়। সে সময়টায় অনেক শিশু, কিশোর এতিম হয়ে যায়। ইউএসএতে সে সময় কিছু রিফিউজি তরুণদের আশ্রয় দেয়া হয়, সাথে এই শর্ত থাকে যে কাজের বিনিময়ে তাদের নিজেদের উপার্জন নিজেরা করে নিতে হবে। ইউএসএ আসার সাথে সাথেই তাদের সাথে থাকা মেয়েটিকে আলাদা করে দেয়া হয় এই বলে যে, মেয়েটিকে কোন পরিবারের সাথে থাকতে হবে, সে ওদের সাথে থাকতে পারবে না। কষ্ট হলেও তারা মেনে নিতে বাধ্য হয়। নতুন জীবনে খাপ খাওয়াতে মানুষগুলোর খুব কষ্ট হয় যখন তারা দেখতে পায় যে প্রচুর খাবার ডেটওভার বলে ফেলে দেয়া হচ্ছে, যেখানে তাদের নিজের দেশের মানুষ খেতে পায় না। তারা অবাক হয়ে দেখে পৃথিবীর এক প্রান্তে মানুষ খেতে পারছে না, আরেকপ্রান্তে এত প্রাচুর্য্য, এত অপচয়। এই রিজিউজিদের অনেকেই পড়াশোনা করে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী হয়েছে, ইউএসএর নাগরিকত্ব পেয়েছে। আবার অনেকেই রাস্তা-ঘাটের গুণ্ডা বদমাশদের সাথে মিশে খারাপ হয়ে গেছে। সিনেমার কাহিনী এভাবেই এগিয়ে যায়।
তারা কি আসলেই খাপ খাওয়াতে পেরেছিল নতুন জীবনের সাথে? ক্যাম্পে ফেলে আসা অন্য রিফিউজিদের কী হয়েছে? তাদের সাথে আলাদা হয়ে যাওয়া তাদের বোনেরই বা কী হাল! এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে মুভিটি দেখে ফেলুন। ও হ্যাঁ, মুভির নাম হচ্ছে 'The Good Lie.' হতাশ হবেন না, আশা করি।