Abdullah Ibn Mahmud এর নোট।
১ এপ্রিল পালিত এপ্রিল ফুল ডে নিয়ে অনেক রকমের কাহিনী প্রচার করা হয়ে থাকে। তবে, সব কাহিনীর মধ্যে একটি Anti-Muslim কাহিনী আমাদের মুসলিমপ্রধান সমাজে ব্যাপক পরিমাণে জনপ্রিয়। কিন্তু, সেটা প্রমাণিত না। একজনের অনুরোধে এপ্রিল ফুল নিয়ে বিস্তারিত লিখলাম এ নোটে।
বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, এপ্রিল ফুল নিয়ে যত থিওরি/কাহিনী আছে, এর মধ্যে এই ব্যাপক প্রচলিত ইসলামবিরোধী কাহিনীটা আসলে তেমন গুরুত্ববাহীই না। এটা ছাড়াও আরো কাহিনী আছে।
আসুন আমরা সবগুলো থিয়োরিগুলো জানি...
থিওরি ১- ক্যালেন্ডার থিওরি
এটাই সবচেয়ে বেশি প্রচলিত কাহিনী।
১৫৬৪ সালে ফ্রান্স তাদের ক্যালেন্ডার চেঞ্জ করে। এর আগে বছর শুরু হত মার্চের শেষে। কিন্তু এটা এগিয়ে নিয়ে আসা হয় আর বছর শুরু করা হয় ১ জানুয়ারি থেকে। কিন্তু নতুন এই চেঞ্জ অনেকেই মানতে পারলেন না। তারা এই সিদ্ধান্তে অটল থাকলেন যে, ২৫ মার্চ থেকে ১ এপ্রিল পর্যন্ত তারা আগের মতই নববর্ষ পালন করবে। কিন্তু যারা পরিবর্তন গ্রহণ করেছিল তারা ওদের সাথে মজা লুটতে চাইল। যারাই তখন নববর্ষ করতে চেয়েছে তাদের পিঠে পেপার ফিশ (Paper Fish) লাগিয়ে দিয়েছে। সেই তখন থেকে ভিক্টিমদের বলা হত Poisson d'Avril বা এপ্রিল ফিশ। এমনকি এখন পর্যন্ত ফ্রান্সে এ নামেই তাদের ডাকা হয় যারা এই দিনে বোকা বনে যায়...
চাইলে এই যে, এপ্রিল ফিশ ফ্রেঞ্চ পোস্ট কার্ড দেখতে পারেন
আপাত দৃষ্টিতে এই কাহিনী গ্রহণযোগ্য মনে হলেও ক্যালেন্ডার পরিবর্তনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এই কাহিনীর ত্রুটি ধরা পড়ে। সেই ডিটেইলসে আর গেলাম না...
থিওরি ২- রোমান মিথ
রোমান মৃত্যু দেবতা প্লুটো যখন তাঁর "স্ত্রী" পারসিফন-কে অপহরণ করে আনলেন, তখন পারসিফনের মা সেরিস মেয়েকে অনেক খুঁজতে চেষ্টা করেন। কিন্তু, বোকার মত অনেক খুঁজেও পেলেন না মেয়েকে। কারণ, মেয়ে তখন আন্ডারওয়ার্ল্ডে। মাটির উপরে না। সেরিসের বোকামি স্মরণ করে ১ এপ্রিল বোকামি দিবস পালন করা হত বলে অনেকে মনে করেন।
থিওরি ৩- বাইবেলিকাল মিথ
নূহ (আ) এর কাহিনী থেকে এই থিওরি এসেছে। নূহ (আ) যখন দেখলেন পানি কমছে না, তখন তিনি একটি কবুতর পাঠান দেখার জন্য কবুতর ফিরে আসে কিনা, ফিরে আসলে সেটা হবে ডাঙ্গা খোঁজার একটা ব্যর্থ প্রচেষ্টা। ডাঙ্গা পেলে কবুতর ফিরবে না।কিন্তু, কবুতর ফিরে এল। নূহ (আ) "বোকা" বনে গেলেন। এটা স্মরণ করে এপ্রিল ফুল পালন করা হত বলে কেউ কেউ বলেছেন।
থিওরি ৪- ব্রিটিশ গথাম থিওরি
ব্রিটিশ লোককথা বলে, ব্রিটেনের নটিংহ্যামশায়ারের "গথাম" শহর ছিল বোকাদের শহর। এখানে খালি বোকারা বাস করত। ১৩শ শতকের দিকে নিয়ম ছিল, ব্রিটেনের রাজা যেখানে যেখানে পা রাখবেন তা হয়ে যাবে রাষ্ট্রের সম্পত্তি। যখন গথামের বাসীরা শুনল রাজা জন আসছেন এ শহরে, তারা বলল, তাঁকে ঢুকতে দিবে তারা না, তারা কিছুতেই গথামকে হারাবে না। রাজা ক্ষেপে গেলেন, সৈন্য পাঠালেন।
যখন সৈন্য এল শহরে, মেইন গেইট থেকে তারা দেখল সারা শহরে হুলস্থূল কাণ্ড। সব বাসিন্দা বোকার মত কাজ করছে। কী কী বোকামি সেগুলো লিস্ট না করি। কিন্তু তারা ফিরে গিয়ে এমন রিপোর্ট দিল, যে, রাজা বললেন, এমন বোকাদের শাস্তি দেয়া যায় না। তাই, তিনি মাফ করে দিলেন। গথাম স্বাধীন থাকল।
গথামবাসীদের "ট্রিক" স্মরণ করা হয় এপ্রিলের ১ তারিখ।
থিওরি ৫- জার্মান থিওরি
১৫৩০ সালের ১ এপ্রিল, জার্মানির অগসবারগ শহরে একটা আইন বিষয়ক মিটিং হবার কথা ছিল। এই মিটিং এর ফলাফল নিয়ে অনেক মানুষ অনেক টাকা বাজিকরের কাছে জমা রাখে। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত ঐদিন মিটিং হয়নি। বাজিকর টাকা ফেরৎ দেয়নি। সব টাকা গচ্চা যায়। এই বোকামি একটা উৎস হতে পারে এপ্রিল ফুলের।
থিওরি ৬- হল্যান্ডের থিওরি
১৫৭২ সালের ১ এপ্রিল। এদিন, হল্যান্ডের ডেন ব্রিএল শহরটাকে লর্ড আল্ভার স্প্যানিশ শাসন থেকে মুক্ত করে ডাচ বিদ্রোহীরা। এইদিন তারা লর্ড আল্ভাকে পুরো বোকা বানিয়ে ছাড়ে। পহেলা এপ্রিলে আল্ভার বোকামি স্মরণ করে এপ্রিল ফুল পালন করা হয়।
মূলত, এই ঘটনার পর অনেক জায়গায় বিদ্রোহ সোচ্চার হয় আর স্পেইনের কাছ থেকে স্বাধীনতা পায় হল্যান্ড। পহেলা এপ্রিলের সেই ঐতিহাসিক যুদ্ধ স্মরণে একটি পোস্টকার্ড-
থিওরি ৭ - AntiMuslim Theory
উপরের ৬টা থিওরি বিশ্বব্যাপী প্রচলিত। কিন্তু এই ৭ নাম্বার থিওরি কেবল মূলত মুসলিম বিশ্বে প্রচলিত। স্প্যানিশ খ্রিস্টানরা মুসলিমদের সাথে কী জঘন্য কাজ "করেছিল" সেটা বুঝানো হয়েছে এই থিওরিতে। বিশাল এক কাহিনী আছে এটাতে। আত তাহ্রিক পত্রিকা থেকে পেস্ট করছি কেবল "কাহিনী" অংশটুকু ইতালিক ফন্টে-
৭১১ খ্রীষ্টাব্দের অক্টোবরে মুসলমানরা কর্ডোভা জয় করেন। মুসলমানরা স্পেন জয় করার পর প্রথমে সেভিল (Seville) কে রাজধানী হিসাবে ঘোষণা করে। কিন্তু সোলাইমান ইবনু আব্দিল মালিকের যুগে স্পেনের গভর্ণর সামাহ বিন মালেক খাওলানী রাজধানী সেভিল থেকে কর্ডোভায় স্থানান্তরিত করেন। এরপর এই কর্ডোভা শতাব্দীর পর শতাব্দী স্পেনের রাজধানী হিসাবে থেকে যায়। এভাবে পযার্য়ক্রমে বৃহত্তর স্পেন মুসলমানদের নেতৃত্বে চলে আসে। ইসলামী শাসনের শাশ্বত সৌন্দর্য ও ন্যায় বিচারে মুগ্ধ হয়ে হাযার হাযার মানুষ ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে। সাথে সাথে জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও শিল্প-সভ্যতার ক্ষেত্রে বিস্ময়কর উন্নতি সাধিত হ’তে থাকে।
এদিকে ইউরোপীয় খ্রীষ্টান রাজাদের চক্ষুশূলের কারণ হয় মুসলমানদের এই অগ্রগতি। ফলে ইউরোপীয় মাটি থেকে মুসলিম শাসনের উচ্ছেদ চিন্তায় তারা ব্যাকুল হয়ে উঠে। অতঃপর আরগুনের ফার্ডিন্যান্ড এবং কাস্তালিয়ার পর্তুগীজ রাণী ইসাবেলা এই দু’জনই চরম মুসলিম বিদ্বেষী খ্রীষ্টান নেতা পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তাঁরা সর্বাত্মক শক্তি প্রয়োগ করে মুসলমানদের উপর আঘাত হানবার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। তারা মুসলমানদের দুর্বলতার সুযোগ খুঁজতে থাকে। এমন এক মুহূর্তে ১৪৮৩ সালে আবুল হাসানের পুত্র আবু আব্দিল্লাহ বোয়াবদিল খ্রীষ্টান শহর লুসানা আক্রমণ করে পরাজিত ও বন্দী হন। এবার ফার্ডিন্যান্ড বন্দী বোয়াবদিলকে গ্রানাডা ধ্বংসের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে। একদল সৈন্য দিয়ে বোয়াবদিলকে প্রেরণ করে তাঁরই পিতৃব্য আল-জাগালের বিরুদ্ধে। বিশ্বাসঘাতক বোয়াবদিল ফার্ডিন্যান্ডের ধূর্তামি বুঝতে পারেননি এবং নিজেদের পতন নিজেদের দ্বারাই সংঘটিত হবে এ কথা তখন তার মনে জাগেনি। খ্রীষ্টানরাও উপযুক্ত মওকা পেয়ে তাদের লক্ষ্যবস্ত্তর উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে পরিকল্পনা কার্যকর করতে থাকে। বোয়াবদিল গ্রানাডা আক্রমণ করলে আজ-জাগাল উপায়ন্তর না দেখে মুসলিম শক্তিকে টিকিয়ে রাখার মানসেই বোয়াবদিলকে প্রস্তাব দেন যে, গ্রানাডা তারা যুক্তভাবে শাসন করবেন এবং সাধারণ শত্রুদের মোকাবেলার জন্য লড়াই করতে থাকবেন। কিন্তু আজ-জাগালের দেয়া এ প্রস্তাব অযোগ্য ও হতভাগ্য বোয়াবদিল প্রত্যাখ্যান করেন। শুরু হয় উভয়ের মাঝে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ।
ফার্ডিন্যান্ড ও রাণী ইসাবেলা মুসলমানদের এই আত্মঘাতী গৃহযুদ্ধের সুযোগ গ্রহণ করে গ্রাম-গঞ্জের নিরীহ মুসলিম নারী-পুরুষকে হত্যা করে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিতে দিতে ছুটে আসে শহরের দিকে। অতঃপর রাজধানী গ্রানাডা অবরোধ করে। এতক্ষণে টনক নড়ে মুসলিম সেনাবাহিনীর। তারা গা ঝাড়া দিয়ে উঠে। তাতে ভড়কে যায় সম্মিলিত কাপুরুষ খ্রীষ্টান বাহিনী। সম্মুখ যুদ্ধে নির্ঘাত পরাজয় বুঝতে পেরে তারা ভিন্ন পথ অবলম্বন করে। তারা আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় শহরের বাইরের সকল শস্য খামার এবং বিশেষ করে শহরের খাদ্য সরবরাহের প্রধান উৎস ‘ভেগা’ উপত্যকা। ফলে অচিরেই দুর্ভিক্ষ নেমে আসে শহরে। খাদ্যাভাবে সেখানে হাহাকার দেখা দেয়। এই সুযোগে প্রতারক খ্রীষ্টান রাজা ফার্ডিন্যান্ড ঘোষণা করে, ‘মুসলমানেরা যদি শহরের প্রধান ফটক খুলে দেয় এবং নিরস্ত্র অবস্থায় মসজিদে আশ্রয় নেয়, তাহ’লে তাদেরকে বিনা রক্তপাতে মুক্তি দেয়া হবে। আর যারা খ্রীষ্টান জাহাজগুলোতে আশ্রয় নিবে, তাদেরকে অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রে পাঠিয়ে দেয়া হবে। অন্যথা আমার হাতে তোমাদেরকে প্রাণ বিসর্জন দিতে হবে’।
দুর্ভিক্ষতাড়িত অসহায় নারী-পুরুষ ও মাছুম বাচ্চাদের কচি মুখের দিকে তাকিয়ে মুসলিম নেতৃবৃন্দ সেদিন খ্রীষ্টান নেতাদের আশ্বাসে বিশ্বাস করে শহরের প্রধান ফটক খুলে দেন ও সবাইকে নিয়ে আল্লাহ্র ঘর মসজিদে আশ্রয় নেন। কেউবা জাহাজগুলোতে আশ্রয় গ্রহণ করেন। কিন্তু শহরে ঢুকে খ্রীষ্টান বাহিনী নিরস্ত্র মুসলমানদেরকে মসজিদে আটকিয়ে বাহির থেকে প্রতিটি মসজিদে তালা লাগিয়ে দেয়। অতঃপর একযোগে সকল মসজিদে আগুন লাগিয়ে বর্বর উল্লাসে ফেটে পড়ে নরপশুরা। আর জাহাজগুলোকে মাঝ দরিয়ায় ডুবিয়ে দেয়া হয়। কেউ উইপোকার মত আগুনে পুড়ে ভস্ম হয়ে গেল, কারো হ’ল সলিল সমাধি। প্রজ্জ্বলিত অগ্নিশিখায় দগ্ধীভূত ৭ লক্ষাধিক অসহায় মুসলিম নারী-পুরুষ ও শিশুদের আর্তচিৎকারে গ্রানাডার আকাশ-বাতাস যখন ভারী ও শোকাতুর হয়ে উঠেছিল, তখন হিংস্রতার নগ্নমূর্তি ফার্ডিন্যান্ড আনন্দের আতিশয্যে স্ত্রী ইসাবেলাকে জড়িয়ে ধরে ক্রূর হাসি হেসে বলতে থাকে, "Oh! Muslim! How fool you are!"
যেদিন এই হৃদয় বিদারক, মর্মান্তিক ও লোমহর্ষক ঘটনা ঘটেছিল, সে দিনটি ছিল ১৪৯২ খ্রীষ্টাব্দের ১লা এপ্রিল। সেদিন থেকেই খ্রীষ্টান জগৎ প্রতি বছর ১লা এপ্রিল সাড়ম্বরে পালন করে আসছে April fools Day তথা ‘এপ্রিলের বোকা দিবস’ হিসাবে। মুসলমানদের বোকা বানানোর এই নিষ্ঠুর ধোঁকাবাজিকে স্মরণীয় করে রাখার উদ্দেশ্যে সমগ্র ইউরোপে প্রতিবছর ১লা এপ্রিল ‘এপ্রিল ফুল’ দিবস হিসাবে পালিত হয়।
এ থিওরি কি আসলেই নিশ্ছিদ্র নিখুঁত??? আমরা একটু পরে পর্যালোচনা করব।
থিওরি ৮ - Anti-Islam Theory
এ থিওরি মতে, স্প্যানিশরা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিল না, কেন মুসলিমরা পরাজিত হচ্ছে না। পরে, তারা বুঝল তাদের আল্লাহ ভীতি অনেক, তাই তারা সবসময় জয়ী। তাই তারা ট্রিক করল, তারা সিগারেট আর অ্যালকোহল পানীয় প্রেরণ করল। সেগুলো পেয়ে আল্লাহ ভীতি ভুলে গেল মুসলিমরা। তাই ১ এপ্রিল তাদের পতন হল।
এটা আমার কাছে খুব বেশি হাস্যকর লেগেছে। একটা কথা, "মুসলিমরা পরাজিত হচ্ছে না" এটা ভুল। কারণ, তারা পরাজিত নিপীড়িত ছিল। কোন মতে টিকে থাকা যাকে বলে আর কি।
আর, সিগারেট?? -_- কিছু বলার নাই।
যাই হোক, এবার আসা যাক, আগের থিওরির ইতিহাস বিশ্লেষণে। "১৪৯২ খ্রীষ্টাব্দের ১লা এপ্রিল " এ ঘটনা ঘটে বলে দাবি করা হয় এ কাহিনীতে। সমস্যা হল, এ অসাধারণ হৃদয়বিদারক "ঐতিহাসিক" কাহিনীর কোনই উল্লেখ নেই ইতিহাসের পাতায়, এটাই সন্দেহ জাগায়। বরং, অন্য তথ্য আছে।
১ এপ্রিলের কোন কাহিনী নেই ইতিহাসে। ইসাবেলা কি ১ এপ্রিল গ্রানাডা দখল করেন মসজিদ পুড়িয়ে? ৭ লাখ মুসলিম মেরে?
না।
থিওরি ৭ এর কাহিনীর ৫৮ দিন আগেই ইসাবেলা গ্রানাডার দখল পেয়ে যান!! ২ জানুয়ারি। মোটেও সেটা, ১ এপ্রিল না।
A history of Medieval Spain বই থেকে কোট করলে, "১৪৯২ সালের ২ জানুয়ারি ইসাবেলা আর ফারদিনান্ড গ্রানাডায় প্রবেশ করেন। তারা শান্তিপূর্ণভাবে সেদিন গ্রানাডার শাসক দ্বাদশ মুহাম্মাদের কাছ থেকে গ্রানাডার চাবি নেন।"
কোন মসজিদ পুরানোর ঘটনা আর স্পেসিফিক সেই গণহত্যার কাহিনী নেই। কোন ১ এপ্রিল নেই।
একটা প্রশ্ন জাগতেই পারে, নিষ্ঠুরতা ইতিহাসে স্থান পায় ভাল মতই। যেমন, ক্রুসেডাররা জেরুজালেম দখল করে মুসলিমদের যেভাবে গণহত্যা করেছিল সেটা সুন্দর করে সংরক্ষিত আছে। আবার এটাও আছে, মুসলিম হয়ে সালাদিন (সুলতান সালাহউদ্দিন) কত অসাধারণ মহত্ত্ব দেখিয়েছিলেন। তাহলে স্পেইনের এত বড় একটা ঘটনা কেন উল্লেখ থাকবে না??
সত্য বলতে, স্পেইনে মুসলিমদের উপর অমানসিক অবর্ণনীয় অত্যাচার চালানো হয়েছিল... এবং সেসব ঘটনা ভালমতই আছে হিস্টোরিতে। নতুন ঘটনা ইনভেন্ট করার আসলে কী দরকার ছিল??
It's Better that, আমরা এই কাহিনী প্রচার না করি। কেবল, জানা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাক এই থিওরি। কারণ, আমরা জানি না, এটা কতটুকু সত্য বা মিথ্যা। Allah knows best.
[যারা ইতিহাসের ভাষ্য পড়তে চান, তাদের জন্য-
স্পেনের শেষ মুসলিম শাসক আবু আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ XII (স্প্যানিশ নাম 'বোয়াব্দিল') রাণী ইসাবেলা-ফার্ডিনান্ডের কাছে আত্মসমর্পন করেন ১৪৯২ সালের ২ জানুয়ারি। আত্মসমর্পন পর্ব শান্তিপূর্ণ ছিল, রাণীর সহযোগী ভুবন বিখ্যাত ক্রিস্টোফার কলম্বাস এ অনুষ্ঠানে উপস্থত ছিলেন।
এবং মোহাম্মদ XII এর সাথে রাণীর চুক্তি হয়েছিল স্পেনে বসবাসরত মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা দানের, সে চুক্তি রক্ষিত হয়নি, আত্মসমর্পন পরবর্তী সময় থেকেই বিবিধ জুলুম প্রক্রিয়া শুরু হয়। কাটাকুটি মূলত শুরু হয় ১৫০৮ সালে যখন 'ইঙ্কুইজিশন' ঘোষণা করা হলো, মানে ইহুদী এবং মুসলমানদের হয় ক্যাথলিক হতে হবে নয়তো স্পেন ছাড়তে হবে।...........জার্মানীর হিটলার আর স্পেনের ইসাবেলার পর-জাতিবিদ্বেষের মধ্যে পার্থক্য কতটুকু? মানবতাবাদী হিসেবে ম্যারানোস, মরিস্কোস শব্দগুলো ভুলে গেলে তো আর চলবে না।
১৪৯৬ সালে ইসাবেলার সম্মতিতে আর্চবিশপ তালাভ্যারা আলহামরা ডিক্রি জারি করে। এই ডিক্রি অনুসারে স্পেনের ইহুদী ও মুসলিমদের হয় ক্যাথলিক ক্রিশ্চান ধর্মগ্রহণ নয়তো দেশ ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়। ১৫০২ সালে ইসাবেলা ইহুদী-মুসলিম ও অন্যান্য ক্রিশ্চানদের বাধ্যতামূলক ক্যাথলিক ক্রিশ্চান ধর্মে ধর্মান্তরিত হবার অথবা, দেশত্যাগের আদেশ দিয়ে সরকারী ফরমান জারি করে।
গ্রানাডার পতনের পর প্রায় এক লক্ষ মুসলমান মারা যায়, চার লক্ষ মুসলমান দেশত্যাগে বাধ্য হয় ও তিন লক্ষ মুসলমান ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য হয়। ইহুদীদের ইতিহাস তো আরো করুণ। দুই লক্ষ মারা যায়, এক লক্ষ ইহুদী ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য হয়, এক লক্ষ ইহুদী দেশত্যাগ করে।
(সূত্র: Spain 1469 - 1714; A Society of Conflict, লেখক: Henry Kamen) ]
পুরোপুরি নিশ্চিত না হয়ে, যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ ছাড়া কোন ঘটনা বিশ্বাস আর প্রচার করা ইসলাম কি সমর্থন করে? ইসলামকে মহিমান্বিত করার জন্য কি মিথ্যার আশ্রয় নিতে হবে? একটা চক্র তো আছেই যারা "মিথ্যা" "ভুয়া" কথা ছড়িয়ে ইসলামকে "গ্রেট" প্রমানে ব্যস্ত। তারা আসলে নন-মুসলিমদের কাছে আমাদের হাসির পাত্র করা ছাড়া আর কিছুই করছে না। ধিক।
চিন্তা করে দেখুন তো, আমরা এরকম কাহিনী দিয়ে নিজেরাই Fooled হচ্ছি না তো? এপ্রিল ফুল!
আপনি এরকম কাহিনী বর্ণনা করলেন আর এরপর আপনার কাছে যদি তথ্যপ্রমাণ সহ এসে তাদের কেউ বলে যে, এই যে, এতক্ষণ যা বললেন সব ভুয়া; তাহলে আপনার কেমন লাগবে? এটা কি ইসলাম প্রচার চলছিল? নীল আর্মস্ট্রংকে মুসলিম প্রমাণ করে কী লাভ হয়েছিল? ফেইক মিরাকল ছড়িয়ে কী হয়?
যাই হোক, এই কাহিনী সত্য হলে সত্য... কিন্তু, মিথ্যা হলে, প্রচারকরা মিথ্যাবাদী হিসেবে পরিগণিত হবে, তাই নয় কি??
"যদি তোমাদের কাছে কোন সংবাদ আনিত হয়, তবে তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও।" (কুরআন, ৪৯:৬)
Keep that in mind...
"Happy April Fool's Day"?????
এটা কি মুসলিমদের জন্য জায়েজ? এই প্রশ্ন আসবেই। এপ্রিল ফুলে মজা নেয়ার জন্য মিথ্যা বলা হয়, Prank; এটা কি ইসলাম অনুমোদন করে?
মিথ্যা বর্জনীয়। সুতরাং, ইতিহাসে আদৌ এই দিবসে কী হয়েছিল না হয়েছিল সেটা গোণায় না আনলেও, এটা বুঝতে সমস্যা হবার কথা না যে, এপ্রিল ফুলের কাজ কারবার ইসলাম অনুমোদন দেয় না।
"তাদের প্রতি আল্লাহর অভিশাপ যারা মিথ্যাবাদী।" (কুরআন, ৩:৬১)
এ আয়াত কি যথেষ্ট না?
আল্লাহ আমাদেরকে ভুল ভ্রান্তি আর অপপ্রচার থেকে দূরে রাখুন। আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৯:৪৩