somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“নীড় হারাদের ভীড়ে।”

১৯ শে জুলাই, ২০২৩ রাত ১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুপুর ২টা বেজে ৩২ মিনিট। টরন্টোর অন্যতম ব্যাস্ত এক হাসপাতালের ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করছি। ওয়েটিং রুমের বিশাল স্ক্রিনে দেখাচ্ছে উনত্রিশ জন এখনো অপেক্ষারত। এই দেশের চিকিৎসা সেবা আমার পছন্দ হয় না। মনে হয় দেশে ভাল ছিল। টাকা দিয়ে ভাল চিকিৎসা পাওয়া সহজ। এইদেশে মেডিকাল ইন্স্যুরেন্স ছাড়া আমার প্রতিবার বাংলাদেশি টাকায় সত্তর হাজার টাকা গোনা লাগে। মাঝে মাঝে মনে হয় চিকিৎসা দেশে গিয়েই করাই কিন্তু ব্যাথাটা আর সহ্য করতে পারলাম না।

মানুষের যখন বিপদ আসে তা একেবারে সব একসাথে আসে বলে শুনেছি। আমার শারীরিক অবস্থা, দেশে জনৈক আপনজনের মৃত্যুর সাথে লড়াই আর প্রাক্তনের বিয়ে- এগুলো তো বিপদ বলেই মনে হচ্ছে। বিপদের সাথে যে দুঃখ গুলো আসে, এই কষ্টগুলোতো একই রকম অনুভূত হছ্ছে।
সেদিন বলছিলো ও আমাকে, বিয়ে করে ফেলছে শীঘ্রই। প্রথমে কাবিন। তারপর ওয়ালিমা। এরপর বউকে নিয়ে ছোট ভাড়া বাসাটায় উঠে পড়বে। ওদের ছোট্ট টোনাটুনির সংসার। বাসাটা ছোট হলেও নাকি অনেক খোলামেলা। আধুনিক সব সুবিধা আছে।

আমার ভাবনাগুলো কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে, অবাধ্য হয়ে উঠছে। ভাবতে চাইছিনা তবুও ভাবাচ্ছে যে ওই বাসায় তো আমার থাকার কথা ছিল। সকাল সকাল উঠে কাজে বেরিয়ে পড়তে তুমি। আমি বারান্দায় বসে ঊদাস দুপুরে আনমনা হয়ে মেঘেদের দেখতাম, ভেবে আকুল হতাম কখন আসবে তুমি। সন্ধ্যায় যখন বাড়ি ফিরতে, আমায় জড়িয়ে চুমু খেতে, খুনসুটি করতে চাইতে। আর আমি বলতাম আগে খেয়ে দেয়ে বিশ্রাম করো ঠাকুর! আমিতো আর চলে যাচ্ছিনা! তোমার জন্যই তো আমার সব। তুমি এসব শুনে মুচকি হাসতে, ভাবতে মেয়েটা কখনো বদলাবে না। খাবার টেবিলে তোমার পাতে মাছের বড় টুকরাটা তুলে দিতাম জোর করে, তুমি বাধ সাধতে বরাবরের মত। আমি ভাব করতাম আমার মাছ বড় বিশ্রী লাগে খেতে। তুমি বুঝতেনা তোমার যত্ন নেয়াটাই যে আমার সবচাইতে বড় তৃপ্তি, ওটা তো মাছ-মাংসে নেই। তুমি খেতে আর আমি তোমায় দুচোখ ভরে, মন ভরে কেবল দেখতাম আর দেখতাম আর অবাক হতাম এত সুখও কি কারো কপালে থাকতে পারে?! খাওয়া শেষে দুজন দুটো চায়ের কাপ নিয়ে চলে যেতাম দখিনের বারান্দাটায়। ধোঁয়া ওঠা গরম চায়ে চুমুক দিতে দিতে তোমার সারা দিনের জমে থাকা সব গল্প শুনতাম। তোমাকে হাসতে দেখে আমার সারা দিনের ক্লান্তিগুলো কোথায় যেন উবে যেত। রাতে বাতিটা নিভিয়ে দিয়ে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়তাম তোমার বুকে। তোমার বুকের ভেতরের ধুকপুক আওযাজটা কেমন যেন ছন্দময়, ঘুম পাড়িয়ে দিতো আমায়। গভীর ঘুমে তলিয়ে যেতাম আমি এক বুক আনন্দ নিয়ে।

স্বপ্নেরা সত্যি খুব সুন্দর হয়। জেগে উঠলেই যত সব বিপত্তি। কিন্তু জেগে থাকাটাই যে জগৎের নিয়ম যা ভাঙার সাধ্য বিধাতা কাউকে দেননি, যেমন দেননি নিয়তি বদলে ফেলবার ক্ষমতা।

তুমি অনেক ভাল থেকো প্রিয়তম। এ জীবনে আমার হলে না। পরের জনমে আকাশ হয়ো প্রিয়, আমি পাখি হয়ে ছুঁয়ে যাবো তোমার সাদা মেঘে ঢাকা সীমাহীন নীল দিগন্ত।

-+-+-+-+-+-+-+-+-+-+--+-+-+-+-+-+-+-+-+-

সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০২৩ ভোর ৪:৪৫
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রেমিকাকে বা বউকে প্রেম নিবেদনের জন্য সেরা গান

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ১১ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৯

নীচের দেয়া গানটাতে হিন্দি, বাংলা, গুজরাটি, পাঞ্জাবী এবং ইংরেজি ভাষায় প্রেম নিবেদন করা হয়েছে। নীচে গানের লিরিক্স এবং বাংলা অর্থ দিলাম। আশা করি গানটা সবার ভালো লাগবে। এই হিন্দি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ডায়েরী- ১৫৩

লিখেছেন রাজীব নুর, ১১ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১:৪৫



কেন জানি মন মেজাজ বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে।
কিছুই ভালো লাগছে না। ইচ্ছা করছে ঘোড়ায় চড়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি। হাতে থাকবে চাবুক। যেখানে অন্যায় দেখবো লাগাবো দুই ঘা চাবুক। সমস্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

সব আমরাই করেছি

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১১ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৩১

পাছায় হাজার লাত্থি, গালে কষে চর,
এমনি করে কেটে গেলো ১৭ বছর।
ছাত্র তরুণ, সাধারণ জনতা বুবুরে দিলো খেদায়া,
হঠাৎ করেই গর্ত থেকে উঠলো এরা চেগায়া।
চোখের পানি নাকের পানি করলো একাকার,
ডুকরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ঐতিহাসিক দিন: বাল সাম্রাজ্যের পতন

লিখেছেন নতুন নকিব, ১১ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৫

একটি ঐতিহাসিক দিন: বাল সাম্রাজ্যের পতন

ছবি অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।

প্রিয় পাঠক, গতকাল ১০ মে ২০২৫। এই দিনটি কোনো সাধারণ দিন ছিল না। এটি ছিল ঐতিহাসিক এমন একটি দিন, যা বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা নিয়ে ছোট্ট দুটি কথা।

লিখেছেন অন্তর্জাল পরিব্রাজক, ১১ ই মে, ২০২৫ রাত ১১:৪৩


আওয়ামী লীগের কার্যক্রম তো নিষিদ্ধ হল। অনেক আলোচনা সমালোচনা চারিদিকে। থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কিছু কথা আছে যেগুলো এড়ানো যায়না। আফটার অল,অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এহেন সিদ্ধান্ত ঠিক এদেশের আমজনতার ম্যাণ্ডেট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×