আমার বন্ধু অনির্বাণ । একই ক্লাসে পড়তাম দু'জন । আমাদের বন্ধুত্ব ছিল মেঘ আর বৃষ্টির মতই নিবিড় ।
ঘুড়ি উড়াতে সবচেয়ে ভালোবাসতো অনির্বান । চৈত্র মাসের মাতাল হাওয়ায় ঘুড়ি উড়ানোটা ওর জন্য যেন আরো বেশী উপভোগ্য হয়ে উঠতো । ওর অদম্য স্পৃহায় অনুপ্রানিত হয়ে আমিও শিখ্লাম ঘুড়ি উড়ানো । দু'জন মিলে ঘুড়ি উড়াতাম চুটিয়ে । আমার ঘুড়িটাকে বরাবরই ভো-কাট্টা করতো অনির্বানের ঘুড়ি । সেই কাটা ঘুড়িটাকে দেখতাম একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছে দূর দিগন্তে, তাকে ধরবার সাধ্য যে হয়ে ওঠেনি কারো !
সেবার শীতের ছুটিতে পিঠে-পুলির দাওয়াত রক্ষা করতে গিয়েছিলাম বড় মামার বাড়ী । ছুটি্তে যোগাযোগ ছিলনা আমাদের । লম্বা ছুটিটা যেন কোথা দিয়ে পিঠে খেতে খেতেই চলে গেল ! বাড়ী ফিরলাম , শুরু হল নতুন বছরের নতুন ক্লাস । প্রথম দিনটিতে অনির্বানের দেখা পেলামনা ,ভাবলাম - "প্রথম দিনই তো !" দীর্ঘ হতে লাগলো আমার অপেক্ষার প্রহর - কিন্তু এলোনা অনির্বান । ঠিক করলাম,ওর বাড়ী যাবো । বাড়ীতে গিয়ে দেখি চারদিকে হাহাকার । কোথায় অনির্বান?! বরং শুনলাম, কঠিন জ্বরে ভুগে কোন এক শীতের সকালে সবাইকে কাঁদিয়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছে আমার প্রানপ্রিয় বন্ধুটি ।
"বলার ছিলনা কিছুই
গোধূলীর মত চলে গেলে
দিয়ে গেলে সন্ধ্যার হাহাকার"
চৈত্র মাসের বিকেলের কাটা ঘুড়ির মতই আমার জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছে সে । এখনো যখন ঘুড়ি দেখি, মনে হয় আকাশ জুড়ে ছুটে বেড়ানো ঐ ঘুড়িগুলোর মতই সাদা মেঘের আড়াল থেকে আমার দিকে তাকিয়ে মুচ্কি হাসছে অনির্বান.....
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০১১ রাত ২:১২