somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোল নম্বর ২৩

০৬ ই মে, ২০১৬ সকাল ১০:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রতিবারই এমনটা হয়। আমার ২৩ রোল
নম্বরের সঙ্গে গোল বাঁধিয়ে ফেলে
রোল নম্বর ৩৩। প্রথম সংখ্যার ওলট
পালোট আর কী! সে দিন যেমন
হেডমাস্টারমশাই, যিনি আমাদের ক্লাস
নাইনের অঙ্কের শিক্ষক, হেঁকে
উঠলেন রোল ২৩ বলে। আমি যেই
গুটিগুটি উঠে দাঁড়িয়েছি, অমনি তাঁর মুখ
বিরক্তিতে বেঁকে উঠল, আরে তুমি না
হে। ডাকতে ভুল হয়েছে। রোল ৩৩,
দিব্যজ্যোতি মুখার্জি, উঠে দাঁড়াও। অঙ্কে
তুমি একশোয় একশো। আর এই যে তুমি,
বলেই আমার দিকে তাকালেন,
একশোতে তিরিশ। ছিঃ!
ধপাস করে বসে পড়লাম বেঞ্চে, মুখ
কাঁচুমাচু। কিন্তু পরেই হাততালি দিয়ে
দিব্যজ্যোতিকে অভিনন্দন জানাতে থাকি।
দেখি সবাই হাসছে মুখ টিপে।
হেডমাস্টারমশাই আবার আমায় নিয়ে
পড়লেন। কটমট চোখে তাকিয়ে বলেন,
সব কটা অঙ্ক শেষ স্টেপে ভুল।
পড়াশোনা করো না কেন?
ঘাড় চুলকে বলি, আসলে গবেষণা নিয়ে
ব্যস্ত, স্যর।
গবেষণা? কীসের? উনি নাক কুঁচকে
বলেন।
ঢোঁক গিলে বলি, পরে বলব, স্যর।
কিন্তু পরে আর হল না। ওঁর ধমকে তখনই
গড়গড় করে বলে দিতে হল আমার
গবেষণার কথা। জীবনবিজ্ঞান আমার প্রিয়
বিষয়। যদিও পরীক্ষায় পেয়েছি মোটে
৩৫। যা-ই হোক, বইপত্তর আর ইন্টারনেট
চষে বেড়িয়ে আমার গবেষণা
এগোচ্ছে বেশ তরতর করে। কয়েক
রকমের ওষুধ আবিষ্কার করতে হবে, যার
মূল্য যৎসামান্য কিন্তু কার্যগুণ অসামান্য। এক
বার খেলেই মানুষের শরীরে রোগ
যন্ত্রণার সঙ্গে সঙ্গে পেটের
ভেতর দাউ দাউ খিদের জ্বালাও মিটে
যাবে চিরতরে। খুব কঠিন আবিষ্কার যদিও,
তবু চেষ্টা আমাকে করতেই হবে। যাতে
গরিব মানুষগুলো অন্তত বাঁচে। এই সুন্দর
পৃথিবী, এত সুন্দর সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত,
চারিদিকে কত ফুল, পাখি, গাছগাছালি, কিন্তু
খিদে আর রোগভোগের শত্রুতায় তারা সব
সময় মুখ শুকিয়ে ঘুরে বেড়ায়। এটা আর
হবে না। এক বার খুব কাছের এক বন্ধুকে
এ সব কথা শোনাতেই ও হাঁ করে খানিক
তাকিয়ে বলে, এর সঙ্গে মাথা সারানোর
ওষুধটাও আবিষ্কার করে রাখিস। পরে তোর
কাজে লাগবে।

তা যে যা বলে বলুক, আমি খেটে যাচ্ছি
দিনরাত এক করে। তবে মগজসংক্রান্ত
একটা ওষুধ অবশ্যই আবিষ্কার করা দরকার।
ছাত্রছাত্রীরা এক বার তা সেবন করলে
আর পড়া ভুলে যাওয়ার দুশ্চিন্তা থাকবে না।
সারা দিনে এক বার পড়ো, কিন্তু মগজ তা
ধরে রাখবে দিনের পর দিন।
গবেষণার বিষয়গুলো শোনার পর
হেডমাস্টারমশাই একটা হুম মতো শব্দ
করলেন। কিন্তু তার পর থেকে উনি আমায়
নামের বদলে শুধু রোল ২৩ বলে
ডাকতেন। কারণ, জানি না, তবে আমি
ধীরে ধীরে সবার কাছে হয়ে
উঠলাম, রোল ২৩।

দিব্যজ্যোতি এই স্কুলের সেরা ছাত্র।
তবে আমায় বিশেষ পাত্তা দেয় না।
অঙ্কে তিরিশ পাওয়া ছাত্র, হয়তো তাই। সত্যি
কেন যে এত খারাপ ফল হয় আমার? বাবা-
ছেলের বয়সের অঙ্কটা টুকতেও ভুল
করলাম। এক বার মনে খটকাও লেগেছিল।
কিন্তু ভাবলাম অঙ্কের বাবা তো, ছেলের
চাইতে বয়সে ছোট হলেও হতে
পারে।

ছোটকা রেজাল্ট দেখে খুব জোরে
কান মুলে দিল। মা দুগালে দুটো চড়। বাবা
ঘরময় পায়চারী করতে করতে হুঙ্কার
ছাড়ছিল। ভাবলাম, গবেষণাটা শেষ হোক,
তখন সবাই নিজের ভুল বুঝবে। মা হঠাৎ
সামনে এসে বলে, কী নির্লজ্জ,
দেখেছ? এত বকা খেল, তবু চোখে
এক ফোঁটা জল নেই?
সত্যি আমার চোখে দুঃখ পুকুরটুকুর নেই।
থাকলেও শুকনো খটখটে। মাস্টারমশাইরাও
তো কত তিরস্কার করেন। কান্না পায় না
মোটেই। বরং চোখে আমার একটা স্বপ্ন-
পুকুর আছে। জলের মতো
স্বপ্নগুলোও টলটল করে।

স্কুলে আজ পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।
দিব্যজ্যোতির গর্বিত মুখ। আমার বুকটাও ওর
গর্বে ফোলা ফোলা লাগছে। আমিও একটা
পুরস্কার এনেছি ওর জন্য। স্কুলে গিয়েই
একটু আড়ালে ডেকে দিয়ে দিলাম। পরে
যদি অত পুরস্কারের ভিড়ে আমারটা নিতে না
পারে।
হেডমাস্টারমশাই নাম ঘোষণা করছেন।
দিব্যজ্যোতি মুখার্জি পুরস্কারের ভারে
প্রায় চাপা পড়ে আর কী, তবু মুখে হাসি।
একেক সময় ভার বহন করতেও সুখ হয়
মনে। হঠাৎ তিনি ডেকে উঠলেন, ক্লাস
নাইন, রোল নম্বর ২৩।
চমকে উঠি। আমায় ডাকছেন কেন? শাস্তি
দেওয়া হবে? হাঁটুর কাঁপাকাঁপি সামলে
কোনও রকমে মঞ্চে উঠলাম।
হেডমাস্টারমশাই হাসছেন। কাছে
যেতেই একটা পুরস্কার বাড়িয়ে দিলেন।
আমি হতবাক, শরীর থরথর কাঁপছে। উনি পিঠ
চাপড়ে বলেন, তুমি ক্লাসের সব চাইতে
সুভদ্র ছেলে, খুব বড় মনের অধিকারী।
শুনেছি আমাদের বাগানের মালির
রোগাভোগা ছেলেটাকে তুমি রোজ
টিফিন খাওয়াও, বাড়ি থেকে ওষুধ নিয়ে
আসো। এমন সুন্দর আর দরদি মনটাকে
আগলে রাখতে পারলে আগামীতে
তোমরাই হবে দেশের সেরা নাগরিক। তাই
গুড কনডাক্টের জন্য এটা তোমার
পুরস্কার।
আমার হাঁটুতে হাঁটুতে এ বার জোর
গুঁতোগুঁতি চলছে। যে কোনও মুহূর্তে
মাটিতে ঠাস হতে পারি। ভাগ্যিস উনি আমায় বুক
দিয়ে আগলে আছেন। বলেন,
গবেষণা কত দূর এগোল?
আমার ঠোঁট নড়ল, কিন্তু কথা হারিয়ে
গেছে। দুচোেখ বর্ষা নেমেছে।
প্রথম বর্ষা। চোখের দিঘি ভরে উঠছে।
কুল ছাপিয়ে জল ভাসিয়ে দিচ্ছে আশপাশ।
আমি কেঁদেই চলি। কাঁদতে কাঁদতেই
হেসে বললাম, গবেষণাটা আমার স্বপ্ন-
গাড়িতে চেপে হুহু করে ছুটছে, স্যর।
খুব শিগগিরি স্টেশনে পৌঁছে যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০১৬ বিকাল ৫:৩০
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×