জন্ম: যত্রতত্র জন্মাবেন না। এ কোনও গোপন কথা নয়, যে, আমগাছে আমই হয়, শত চেষ্টায়ও আমেরিকান ফলে না। রাজার ছেলে প্রিন্স হয়, ডায়নার বর অরণ্যদেব। গাঁয়ের কলেজে ক্যাডার জন্মায়, প্রেসিডেন্সিতে লিডার। মুম্বইতে কপূর ফলে আর জেএনইউ-তে পয়দা হলে সিধে পলিটব্যুরোয় ওয়াইল্ড কার্ড এন্ট্রি। কনভেন্টে সুন্দরী জন্মায় মফস্সলে গাঁইয়া, নিউ ইয়র্কে উডি অ্যালেন হয় আর কলকাতায় ফাটাকেষ্ট। সায়েবের ব্যাটা পেট থেকে পড়েই ফরফরিয়ে ইংরিজি বলে, আর বাঙালির বাচ্চা কেত করে মাইকেল হলে শেষমেশ চোখের জলে ‘হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন’ লেখে। জোড়াসাঁকোয় জন্মে জোব্বা পরে ‘সং অফারিংস’ লিখলে গ্রামেগঞ্জে লোকে দেবজ্ঞানে কিছু দিন পুজো-আচ্চা করে, কিন্তু যে-কোনও দিন মার্কণ্ডেয় কাটজু এসে ময়ূরপুচ্ছধারী কাকের স্বরূপ ফাঁস করে দেন। তাই এ সব কমপ্লিকেটেড ঝুটঝামেলায় না ঢুকে নিজের অ্যাম্বিশনানুযায়ী খাদ্যশৃঙ্খলের ঠিকঠাক জায়গায় কেয়ারফুলি জন্মস্থান বেছে নিন। রবীন্দ্রগান গাইতে হলে শান্তিনিকেতনে আবির্ভূত হোন। বলিউড ফিল্মস্টার হতে গেলে পরিচালকের ব্যাটা হয়েই জন্মান। আর নোবেল পেতে হলে সিধে ইংরিজি কিংবা স্প্যানিশকে মাতৃভাষা বানান।
কর্ম: কর্ম করুন বেছেবুছে। জন্মই পেডিগ্রির গ্যারান্টি নয়, তারকাত্ব রক্ষার জন্য চাই কঠোর কর্মযোগ। আগে স্টার হয়ে জন্মান, তার পর মাপমত ঝাঁপ মারুন, ঝোপ বুঝে কোপ। অস্কারের মঞ্চে যুদ্ধবিরোধী স্লোগান দিন। ফেসবুকে বীরবিক্রমে আইস-বাকেট চ্যালেঞ্জ খেলে জটিল রোগকে নির্মূল করুন। লো-প্রোফাইল জিনিসপত্রে ফালতু জড়াবেন না। মনে রাখবেন, পশুক্লেশ নিবারণের নিমিত্ত বাঘছাল-বিকিনিতে ছবি হয়, গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর বিপক্ষে গরুর গাড়ির সঙ্গে পোজ দিলে এথনিক বিউটি ঝরে পড়ে, অন্তর্বাস বিক্ষোভের পক্ষে-বিপক্ষে বিবৃতিতে স্টেটাস বৃদ্ধি, কিন্তু বর্ধমানে মার খেয়ে ঠ্যাং ভেঙে গেলে, কিংবা ধর্মতলায় অনশন করে খাবি খেলেও পেডিগ্রি বাড়ে না। জীবন ছোট, এফর্ট ঠিক জায়গায় দিন।
মৃত্যু: এ-সব অবশ্য সকলের কম্মো নয়। যথাস্থানে জন্ম, যথোপযুক্ত কর্মে যাঁরা অপারগ, সেই পাতি পাবলিকরা অন্তত ঠিক ভাবে মরুন, তাতেও কাজ হতে পারে। আমাশা অজীর্ণে যাবেন না, বহুত বোরিং। সাব-সাহারান দুর্ভিক্ষ পুরনো হয়ে গেছে। পদপিষ্ট হয়ে পাঁচ-সাতশো লোক হরবখত মরছে, রেটে কৃষক আত্মহত্যা চলছে। নতুন কিছু করুন। সুইসাইড করতে হলে দিল্লিতে জনসভার সামনে গলায় দড়ি দিতে পারেন, সর্বভারতীয় পেডিগ্রি বেড়ে যাবে। আর গ্রিসের উপকূলে ঠিকঠাক ফটোজেনিক পোজ দিয়ে যদি মারা যেতে পারেন, তবেই জীবন মোক্ষ। সোশাল মিডিয়া ফেটে যাবে, দুনিয়ার লোক চোখ কচলে ‘আহা রে’ বলবে, সঙ্গে ‘ও মা, ও-দিকে একটা যুদ্ধও হচ্ছিল নাকি?’ ফাউ। চান্স কম, তবু লড়ে যান। কারণ, লোকে তো লটারিও পায়, আর পেডিগ্রির আশা মরিতে মরিতেও মরে না।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০১৬ রাত ১০:৩১