আমি পেশাগতভাবে একজন শিক্ষক। যদিও ‘শিক্ষকতার কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করবো’ এমনটা কখনো ইচ্ছে ছিলে না। কিন্তু সময়ের স্রোত আমাকে বসিয়ে দিয়েছে এই জায়গাটিতে। অনেক সময়ই আমি নিজেকে এই শিক্ষকতার যোগ্যতায় ভাবতে পারিনা! কেননা শিক্ষকের যোগ্যতায় যে গুণটি সর্বাগ্রে দরকার সেটি বোধ হয় আমার নেই তা হল কঠোর নিয়ম মেনে ঐতিহাসিক দিনের পণ্ডিত মশায় ধাঁচের ছাত্র-ছাত্রী কন্ট্রলিং। তবে, কেন জানি ছাত্র-ছাত্রীরা অল্প কিছু দিনের মধ্যেই আমাকে ভীষণভাবে কাছে টেনে নিয়েছে! যে ক্লাশেই যাই সবাই আমাকে পেয়ে যার পর নাই খুশি! বুঝতে পারি এর অন্যতম কারণ আমার পড়ানোর বিষয়টি অত্যন্ত ছোট্ট একটি বিষয়- আইসিটি তার সাথে আমার পড়ানোর ধরণ – মানে আমি কোন হোমওয়ার্ক দেই না অল্প একটু পড়া আর নীতিকথা ও জীবনবোধের সাথে সম্পৃক্ত কিছু হাস্য রসের গল্প! মাঝে মাঝে ব্রেন স্টর্মিং জন্য ব্লাকবোর্ড ব্যবহার করে কুয়িজ ভিত্তিক গেইম। জাতীয় শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত এই বিষয়টি নতুন ভাবে যুক্ত করা হয়েছে। তাই সব শ্রেণির ( স্বল্প মেধাবি, মধ্যম মেধাবি এবং অন্যান্য) ছাত্র-ছাত্রীদের কথা চিন্তা করে এই নতুন বিষয়টিতে আধুনিক ধারার সৃজনশীল ব্যতীত কেবল বহু নির্বাচনি ( জ্ঞান, অনুধাবন, অর্জিত জ্ঞানের প্রয়োগ মূলক, জ্ঞানের উচ্চতর ধারনা) প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া হয়। পাঠ্যপুস্তকটিতে অন্তর্ভূক্ত পাঠ্য বিষয়ও অল্প। ক্লাসের জন্য নির্ধারিত পুরো সময় ধরে এবং কঠোর পান্ডিত্যপূর্ণ ভাবে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে শাসিয়ে ধমক দিয়ে ক্লাস রুমটিকে কবর স্থান সম নিরব করে ক্লাস পরিচালনা করাও বিবেকে বাঁধে! তাই আমার ক্লাসে অল্প অল্প পড়ালেখার ফাঁকে মাঝে মাঝে হাসির রোল আর অল্প বিস্তর কথা বার্তাও জমে উঠে। যদিও এরুপ অবস্থাতে মাঝে মাঝে আমাকে পড়তেও হয়েছে কিছটা বিব্রতকর অবস্থায়! মানে ‘পড়বি তো পড় একেবারে মালির ঘাড়ে’ টাইপের বিব্রতকর অবস্থা! মানে আমাদের প্রিন্সিপাল স্যার- মাঝে মাঝেই আমাকে পেয়েছেন সেই বিব্রতকর অবস্থায়!! একদিকে যে সময়ে ক্লাসে হাসির রোল ও কথা বার্তা অন্যদিকে দরজার সামনে ঠিক সেই সময় বারান্দায় প্রিন্সিপাল স্যার এসে খাঁড়া!!
যা হোক বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার আলোকে এটা বুঝতে পারি যে, বর্তমান সময়ে জ্ঞান অর্জনের নামে বাড়িতে কিংবা স্কুলে আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে যেভাবে শিক্ষা অর্জনের সিষ্টেমের ফাঁদে আটকে ফেলা হয়েছে তাতে তাদের নাভিশ্বাস অবস্থা! অনেক কষ্টে-সৃষ্টে শৈশব ও কৈশোরের উচ্ছল আনন্দ বিশর্জন দিয়ে এই ফাঁদের দূরত্ব যারা পার হয় তারা হয়তো জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয় কিন্তু আমাদের ছেলে-মেয়েদের বিরাট একটা অংশ যে, শিক্ষা অর্জনের সিষ্টেমের চাপে পিষ্ট হয় এটা সুনিশ্চিত! তারা পড়ালেখার চাপ উপেক্ষা করে মাঝে মাঝেই জীবনের চারপাশে খোঁজে নির্মল আনন্দের ফোয়ারা! এরই ধারাবাহিকতায় নিজের কৌতূহল মেটাতে এক সময় পা বাড়ায় সমাজের নিষিদ্ধ চোরাগলিতে! ধীরে ধীরে একজন দুজন করে উচ্ছন্নে যায় অসংখ্য কিশোর, অসংখ্য তরুণ! তাদের নামের আগে যুক্ত হয় বখাটে যুবক কিংবা যুবতী! এক সময় পত্রিকার পাতায় শিরোনাম হয়- বখাটে যুবকের দ্বারা পাঁচ বছরের শিশু ধর্ষিত! বখাটে যুবকের দ্বারা স্কুল কিংবা কলেজ ছাত্রীর শ্লীলতা হানি! নেশায় আসক্ত ছেলে কিংবা মেয়ের দ্বারা মা-বাবা খুন! এভাবেই হয়তো চলবে আমাদের জীবন ধারা, আমাদের সমাজ ব্যবস্থা!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৯